
প্রিন্ট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৩ এএম

মাসুদ করিম
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. নওশাদ হকের জন্ম ১৯৭০ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনবিদ্যায় অনার্স করার পর যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন পিএইচডি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞান সংস্থায় চাকরি নেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা সিএসআইআরও-এর প্রধান বিজ্ঞানী। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় কয়লা থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন করে কার্বন ডাইঅক্সাইডমুক্ত জ্বালানি প্রবর্তনের পথিকৃৎ। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ড. নওশাদ হকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম
যুগান্তর : আপনি বাংলাদেশি একজন বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলিয়ায় কীভাবে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী হলেন? আপনার বিরাট ক্যারিয়ারের শুরুর দিক সম্পর্কে একটু বলুন।
নওশাদ হক : আমি অনেক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে থাকি। ২০০৫ সালে এসেছি। আমার বয়স বাংলাদেশের বয়সের প্রায় সমান। জন্ম ১৯৭০ সালে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামে, বড় হয়েছি সেখানে। আমি অনেক সময় বলি-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালি’ আপনারা পড়েছেন, অনেকটা সে রকম। তখন আমাদের গ্রামটা ওই রকমই ছিল। এখন সম্ভবত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি সেখানকার গ্রামের স্কুলে পড়েছি। আমার বাবা স্কুলশিক্ষক ছিলেন। তার কাছেই আমার শিক্ষার হাতেখড়ি। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে রাজশাহী কলেজে পড়ি। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বনবিদ্যা বিভাগে অনার্স করি। তখন এ বিষয়ে মাস্টার্স ছিল না। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বনবিদ্যায় শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি। সেখানে থেকে মাস্টার্স করার জন্য যুক্তরাজ্যে বৃত্তি পেলাম। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজিতে মাস্টার্স করলাম। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পিএইচডি স্কলারশিপ পেলাম। ১৯৯৮ সালে পিএইচডি করতে সিডনিতে এলাম। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পুরোনো সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি করলাম। সেখানে আমি সায়েন্স থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে এলাম। এদেশে বেসিক সায়েন্স থাকলে উচ্চশিক্ষায় সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মিক্সিং হয়। এটা শেষ করার পর আমি নিউজিল্যান্ড গেলাম। অকল্যান্ড থেকে ৩ ঘণ্টা ড্রাইভ দূরত্বে রোটরোয়া শহরে ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলে একটা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি করার পর বিজ্ঞানী পদে যোগ দিই। নিউজিল্যান্ড ছোট দেশ। তাই অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্স এজেন্সি সিএসআইআরওতে চাকরির সুযোগ পেলে ২০০৫ সালে এখানে যোগ দিই।
যুগান্তর : অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্স এজেন্সিতে আপনি কী বিষয়ে কাজ শুরু করেন?
নওশাদ হক : এখানে প্রথমে এসে কাজ করতাম ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফরেস্ট প্রোডাক্টের ওপর। কাঠ কী করে শুকাতে হয়, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কিল ছিল, সেগুলোকে নিয়ে আমার গবেষণা ছিল। অল্প কিছু সময় কাটালাম। তারপর সিএসআরও অনেক বড় সংস্থা। অস্ট্রেলিয়ার ৯০ ভাগ সরকারি গবেষণা আমরা করি। অস্ট্রেলিয়া হলো খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমি খনিজসম্পদের গবেষণায় যুক্ত হই। অস্ট্রেলিয়া ৯০০ মিলিয়ন টনের মতো লোহার আকরিক তৈরি করে। খনি খনন করে তা উৎপাদন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, ভারত আকরিক তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রধান খনিজসম্পদ বলা যায় এই লোহার আকরিক। বিশ্বের মোট আকরিক উৎপাদনের ৫০ ভাগের কাছাকাছি উৎপাদন করে অস্ট্রেলিয়া। ব্রিজ, ঘরবাড়ি তৈরির বড় উপাদান লোহা। লোহা ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। দ্বিতীয় হলো অ্যালুমিনিয়াম। পৃথিবীতে ৭০-৮০ মিলিয়ন টন প্রাথমিক অ্যালুমিনিয়াম তৈরি হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি অ্যালুমিনিয়াম আছে। পৃথিবীতে অনেক কিছু অ্যালুমিনিয়াম থেকে আসে। যেমন: কোকাকোলার ক্যান। অ্যালমিনা তথা অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডও অস্ট্রেলিয়া খনি থেকে আহরণ করে। তামা, সিলভার, সোনা, লিথিয়াম-সব ক্ষেত্রেই বিশ্বের এক নম্বর কিংবা দুই নম্বর কিংবা শীর্ষ পাঁচে অস্ট্রেলিয়া আছে।
যুগান্তর : অস্ট্রেলিয়ায় কয়লার অবস্থা কী?
নওশাদ হক : অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসে প্রধানত খনিজসম্পদ যেমন: লোহার আকরিক (প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার); জ্বালানি, যেমন: ইউরেনিয়াম, এলএনজি ও কয়লা থেকে। প্রায় ৭০-৮০ বিলিয়ন ডলার আয় হয় কয়লা রপ্তানি করে। কয়লার মজুত অনেক। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, এলএনজি এগুলোয় সমস্যা হলো, এগুলো জ্বালিয়ে তাপশক্তি উৎপাদন করলে প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। কয়লা আছে, এটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু বায়ুদূষণ মোকাবিলা করতে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন বায়ু, সৌরশক্তি এগুলো দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় অনেক। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক জায়গা আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে সমস্যা হয়। তখন আমরা বললাম, হাইড্রোজেন তৈরি করি। হাইড্রোজেন রপ্তানি করি। তরলীকৃত হাইড্রোজেন হতে পারে, কম্প্রেসড হাইড্রোজেন হতে পারে অথবা তরলীকৃত হাইড্রোজেন রপ্তানিতে শিপিং সমস্যা হলে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে অ্যামোনিয়া তৈরি করে রপ্তানি করব। বাংলাদেশেও কয়লা আছে। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া স্টেটের কয়লা অনেকটা ব্রাউন। ব্রাউন কয়লাকে বলা হয় লিডনাইট তথা ইয়ং কয়লা। বাংলাদেশের কয়লা অনেক পুরোনো। কালো রঙের এনফাসাইট কয়লা ডায়মন্ডে শাইনিং করে, এটি সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা, যা বাজারে পাওয়া যায়। এটা ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো কয়লা। ব্রাউন কয়লা হলো আরও আগের পর্যায়ের কয়লা। ফলে ব্রাউন কয়লায় প্রচুর পানি থাকে। এটা শুধু আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি। বাংলাদেশের কয়লা অনেক বেশি গুণগত মানসম্পন্ন, যা রপ্তানি করা যায়। আরও অনেক কিছু করা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় যে কালো কয়লা আছে, সেটা রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ব্রাউন কয়লা থেকে পানি বের না করলে খুব বেশি কাজে লাগানো যায় না। মেলবোর্নে একসময় কয়লা থেকে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি প্রভৃতি থেকে। কয়লায় কার্বন ও হাইড্রোজেন আছে। এখনকার শিল্প প্রায় পুরোটাই তাপ, কার্বন জ্বালিয়ে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, কার্বনকে জ্বালালে তাপের সৃষ্টি হয়, একই সঙ্গে বাতাসের সঙ্গে জ্বললে কার্বন ডাইঅক্সাইড সৃষ্টি হয়। কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানো হলো লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি ও সমাজ পরিচালনার জন্য জ্বালানি প্রয়োজন। এ সমস্যার সমাধান করতে আমরা গ্যাস বানাব। গ্যাস বানালে হবে হাইড্রোজেন গ্যাস, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ইত্যাদি। কার্বন ডাইঅক্সাইডকে আলাদা এবং হাইড্রোজেনকে আলাদা করতে হবে। প্রকৃতি থেকে যে হাইড্রোজেন আসে, সেটাকে বলা হয় গ্রে হাইড্রোজেন আর কয়লা থেকে যে হাইড্রোজেন আসে, সেটাকে বলা হয় ব্ল্যাক বা ব্লু হাইড্রোজেন। আর কার্বন ডাইঅক্সাইড যেটা আসে, সেটাকে মাটির নিচে পুঁতে সংরক্ষণ করি কিংবা এমনভাবে ব্যবহার করি যাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড যেন বাতাসে না যায়। ফলে আমরা খুব কম কার্বন ডাইঅক্সাইডে হাইড্রোজেন পাচ্ছি। আমাদের দেশে দেশে ইউরিয়ার প্রয়োজন হয়। ইউরিয়া হলো অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংমিশ্রণ। অ্যামোনিয়া হলো নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন। আমরা হাইড্রোজেন বানালাম। বাতাসে প্রচুর নাইট্রোজেন আছে। একত্রিত করলে হলো অ্যামোনিয়া। এর সঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংমিশ্রণ করলে হবে ইউরিয়া। ইউরিয়া আমরা কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারি। কয়লা থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন করে গ্যাসলাইনে কিংবা কম্প্রেস করে তরল হাইড্রোজেন এলএনজির মতো জাহাজে করে রপ্তানি করব। অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৬ দিনে জাপানে গিয়ে হাইড্রোজেন রপ্তানি হয়েছে। পাশাপাশি অ্যামোনিয়া তৈরি করেও কাজে লাগাতে পারি। কয়লা থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনের অনেক প্ল্যান্ট চীনে আছে। হাইড্রোজেন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দূরবর্তী লক্ষ্য থাকবে। তবে তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হলো হাইড্রোজেনচালিত গাড়ি। ট্রেন, বাস, ফেরিতেও হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যাবে। এ মুহূর্তে হাইড্রোজেন উৎপাদনের বেশির ভাগ যায় অ্যামোনিয়া উৎপাদনে, যা থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হচ্ছে। তেল শোধনাগারেও একটা বড় অংশ ব্যবহার হয়। বাজারে হাইড্রোজেনচালিত গাড়ি এসেছে।
যুগান্তর : অস্ট্রেলিয়া কি হাইড্রোজেন রপ্তানি শুরু করেছে?
নওশাদ হক : হাইড্রোজেনের বিভিন্ন ভ্যারাইটি আছে। যেমন: গ্রিন হাইড্রোজেন, ব্লু হাইড্রোজেন, গ্রে হাইড্রোজেন প্রভৃতি। গ্রে হাইড্রোজেন গ্যাস থেকে আসে, যার কার্বনের পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা মনে করছি, গ্রিন হাইড্রোজেনই ভবিষ্যৎ যা সৌরশক্তি থেকে আসে। কিন্তু এ মুহূর্তে যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার প্রচুর কয়লাশক্তি, বিশেষ করে ব্রাউন কয়লা যা ভিক্টোরিয়া স্টেটে বেশি, তা নিয়ে জাপান সরকার আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। কয়লাকে আমরা যদি গ্যাস বানাই তা হবে হাইড্রোজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড। আমরা কার্বন ডাইঅক্সাইডকে আলাদা করে কোথাও সংরক্ষণ কিংবা ব্যবহার করতে পারি। হাইড্রোজেন আলাদা করে তা তরলায়িত করে একটা জাহাজে দিয়ে রপ্তানি করা যায়। জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ পরীক্ষামূলকভাবে এভাবে হাইড্রোজেন নিয়েছে। টোকিও অলিম্পিকের জন্য প্রথমে চিন্তা করা হয়েছিল। একবার ভয়েজ করেছে। আনলোড করেছে কোবে পোর্টে। ওটা ছিল ছোট জাহাজ। এখন বড় আঙ্গিকে করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ চিন্তা করা হচ্ছে হাইড্রোজেন সবুজ হোক কিংবা ব্লু-যেটাই হোক-দুটিতেই কার্বনের পরিমাণ কম। এটা বড় আঙ্গিকে কীভাবে করা যায়, সেটা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
যুগান্তর : বাংলাদেশে কি হাইড্রোজেনের ব্যাপক ব্যবহারে যাওয়া উচিত?
নওশাদ হক : ৯০টির বেশি দেশ হাইড্রোজেন কৌশল নিয়ে কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ায় হাইড্রোজেন কৌশল আছে। বাংলাদেশের উচিত তাৎক্ষণিকভাবে হাইড্রোজেন বিষয়ে কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা।
যুগান্তর : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার কী ধরনের সহযোগিতা আছে এবং কী ধরনের সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে?
নওশাদ হক : এ মুহূর্তে কিছু ছোটখাটো সহযোগিতা আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালগুলোয় বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা পিএইচডি করতে আসে। ওপেন স্কলারশিপ কর্মসূচি আছে। আমরা কিছু টার্গেটেড পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, যেমন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা সিএসআইআরও এবং বাংলাদেশ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ বিসিএসআইআর (সায়েন্স ল্যাবরেটরি)-এ দুই সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারকও হয়েছিল। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে এবং গবেষণার অবকাঠামো যেমন ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা মনে করছি, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ওইসব বিষয়ের ওপর পিএইচডি করানো দরকার, যেগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের কাজে লাগে। যেমন-নদীর বালু থেকে মূল্যবান পদার্থ বের করা।
যুগান্তর : বাংলাদেশে সমুদ্র কিংবা নদীর বালু থেকে কী ধরনের মূল্যবান পদার্থ বের করা সম্ভব?
নওশাদ হক : সমুদ্রের বালু নিয়ে চিন্তা করা ঠিক হবে না। কারণ কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট ভ্যালু আছে। সরকারের সেটা অগ্রাধিকার নেই। বাংলাদেশে প্রচুর নদীর বালু আছে। সেই বালুতে টাইটানিয়াম নামের খনিজ পদার্থ আছে। টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড। পরিমাণটা একটু কম হলেও যেহেতু বালু প্রচুর আছে, সেটা আমরা ল্যাবরেটরিতে আলাদা করে দেখিয়েছি যে, সেখান থেকে টাইটানিয়াম পাওয়া সম্ভব। এটা বড় করে টাইটানিয়াম খনিজসম্পদ করা যেতে পারে। শিল্পে টাইটানিয়ামের অনেক ব্যবহার আছে। এটা রপ্তানিও করা যেতে পারে। টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড রঙের মূল উপাদান। টাইটানিয়াম দিয়ে ধাতুও বানানো যেতে পারে। ওই ধাতব পদার্থ দিয়ে বিমানসহ বড় বড় কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।
যুগান্তর : মোবাইল ফোন ব্যবহারের পর যেগুলো নষ্ট হচ্ছে-সেগুলো দিয়ে কী করা যায়?
নওশাদ হক : এটার আসলে অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বালু থেকে ধাতব পাওয়ার পর কাছাকাছি যে সম্ভাবনা, সেটা নষ্ট মোবাইল ফোনে রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কোটি মোবাইল ফোনের গ্রাহক আছেন। বছরে হয়তো তিন কোটি মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ হাজার মোবাইল ফোন একত্রিত করলে এক টন বর্জ্য হবে। সেই বর্জ্যরে মধ্যে সোনা, রুপা, আরও কিছু বিরল ধাতু আছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রথম নমুনা এনে এর মধ্যে কী আছে তা বের করেছি। কী করে কম খরচে এটাকে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে সেসব গবেষণা আমরা করছি।
যুগান্তর : বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে আপনার সুস্পষ্ট প্রস্তাব কী?
নওশাদ হক : আমার মনে হয়, সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। এটা বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। অনেক দেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফাউন্ডেশন, কাউন্সিল অথবা ইনস্টিটিউট আছে। যেমন: অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া কাউন্সিল, অস্ট্রেলিয়া-মালয়েশিয়া ফাউন্ডেশন। এ রকম বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কিছু একটা হতে পারে। আমরা বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা করছি। এটাকে আরও বড় স্কেলে উচ্চপর্যায়ে সম্পর্ক বাড়ানো যেতে পারে। সেগুলোর জন্য কী কী করা দরকার সেটা আমরা সবাই মিলে আলোচনা করতে পারি।