বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে
মো. আসাদুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি খাতে অস্থিরতা চলছে। বিশ্ববাজারে রাশিয়া জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের একটি বড় জোগানদাতা। এ যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বিতরণব্যবস্থা, বিশেষ করে ইউরোপে অনেকটা বিপর্যস্ত। ইউরোপ রাশিয়া থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে থাকে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত কোনো কোনো দেশ যেমন: জার্মানির চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ করে থাকে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করেছে। সর্বশেষ নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি পূর্ববর্তী অক্টোবরের শতকরা ১১.১ থেকে কিছুটা কমে ১০.৭ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা শতকরা ২ থেকে অনেক বেশি।
মুদ্রাস্ফীতির এ ঊর্ধ্বগতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থেকে শুরু করে সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ছে। খাদ্যদ্রব্য, নিত্যব্যবহার্য পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্বের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী ক্রয়ক্ষমতা হারানোর উপক্রম হয়েছে। জ্বালানি খাতে ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরকার ব্যয়সংকোচন নীতি গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, যোগাযোগ কিংবা সামাজিক খাতে ব্যয় কমিয়ে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহে জ্বালানি সহায়তা বাবদ অর্থ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ অর্থ সহায়তা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে আদায় বা সমন্বয় করা হবে শর্তে দিতে হচ্ছে। তবে অতি অসহায় গ্রাহক বিশেষ করে পেনশনার, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী কিংবা সিঙ্গেল মাদারদের জন্য বাড়তি জ্বালানি খরচ মেটাতে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাসাবাড়ির জ্বালানি বিলের বার্ষিক সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ এবং গ্যাস কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের থেকে বার্ষিক কত রেভিনিউ আদায় করবে, এর একটি সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চহারে জ্বালানি সরবরাহ করে অধিক আয় করছে।
জ্বালানি অনুদান বা সহায়তা বাবদ ব্যয় মেটাতে সরকারকে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর এ অপ্রত্যাশিত লাভের ওপর উইন্ডফল ট্যাক্স আরোপ করতে হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার এ ট্যাক্স বাবদ আগামী ছয় বছরে ৪০ বিলিয়ন পাউন্ড আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। শীতকালে পশ্চিমা বিশ্বে জ্বালানির চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় ঘর, গাড়ি, কর্মস্থল প্রভৃতি গরম রাখার জন্য অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার করতে হয়। উচ্চবিত্তের জন্য এ অতিরিক্ত জ্বালানি তথা বিদ্যুৎ বা গ্যাসের ব্যয়নির্বাহে কোনো সমস্যা না হলেও নিম্ন-আয়ের মানুষকে খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র কিংবা অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির ব্যয় কমিয়ে জ্বালানির জন্য ব্যয় সংস্থান করতে হয় অথবা জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে দিতে হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তার স্বাস্থ্য বা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। মূলত এটাই হলো জ্বালানি দারিদ্র্য (Energy Poverty)। প্রায়ই পত্রিকায় বা টেলিভিশনে মানুষকে কম খেয়ে ঘর গরম রাখার জন্য অর্থ সংস্থানের খবর শোনা যায়। জ্বালানি সংকটের এ বছর শীতপ্রধান অনেক দেশে সাধারণ মানুষ সেই পুরোনো পদ্ধতিতে কাঠ বা কয়লা পুড়িয়ে ঘর গরম রাখার চেষ্টাও করছেন। ঘর গরম রাখার বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিশেষ করে ফ্যান, হিটার বা ফায়ারপ্লেসের ব্যবসা বেড়েছে। তবে এসব স্বল্পমূল্যের বৈদ্যুতিক পণ্য, যার অধিকাংশ চীনে উৎপন্ন; তা কতটুকু বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বা নিরাপদ, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জ্বালানির এ সংকটকালে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো-সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে শুরু করে জ্বালানি ব্যবসায়ী, বড় করপোরেটগুলো মানুষকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী থাকতে শিক্ষা দিতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে; যেমন: চার সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবার প্রতিদিন এক মিনিট শাওয়ার কম ব্যবহার করলে বছরে ৮০ ব্রিটিশ পাউন্ড জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় করতে পারে। এমনিভাবে ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াশার, ধোয়া কাপড় শুকানোর মেশিন, মাইক্রোওয়েভ প্রভৃতি দিনের কোন সময় কীভাবে ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে, তা বলা হচ্ছে; কিংবা ধোয়া কাপড় মেশিনে না শুকিয়ে বাইরে রোদে বা ঘরে শুকানোয় চেষ্টা করা যেতে পারে-এটাও বলা হচ্ছে। ইলেকট্রিক কেতলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে-বেশি পরিমাণে না নিয়ে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু পানি গরম করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। শীতকালে ঘর, কর্মস্থল, যানবাহন, বিনোদনকেন্দ্র, শপিংমল প্রভৃতি গরম রাখতে হয়। এসব ক্ষেত্রে ভেতরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রিতে রাখলে গ্যাস খরচ কম এবং তা স্বাস্থ্যসম্মত হবে, এ বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
স্মার্ট বিদ্যুৎ মিটার ব্যবহার করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে গ্রাহক প্রতি ঘণ্টায় কত বিদ্যুৎ বা গ্যাস খরচ হলো, তা জানতে পারে এবং সচেতন হতে পারে। এছাড়া ঘরের তাপ যাতে বাইরে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ি যাতে জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে বিষয়ে লোকাল কাউন্সিল এবং সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি ঘরের হিটিং সিস্টেম উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন অনুদান, স্বল্প সুদে ঋণ প্রভৃতি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনে বিশেষ ক্যামেরা (Thermal Imaging Camera) সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে মানুষ চিহ্নিত করতে পারে-ঘরের কোনো দিক দিয়ে তাপ বেরিয়ে যাচ্ছে।
তাপ বেরিয়ে গেলে ঘরের উষ্ণতা কমে যাবে এবং বেশি জ্বালানি খরচ হবে। ঘরের তাপ যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হয়। যে বাড়ি থেকে যত কম তাপ বেরিয়ে যাবে, সে বাড়ির জ্বালানি দক্ষতা তত বেশি। অনেক ক্যাম্পেইন গ্রুপ আছে, যেমন: এনার্জি সেভিং ট্রাস্ট, যারা বাসাবাড়ি পর্যায়ে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে মানুষকে কারিগরি পরামর্শ দেওয়া থেকে শুরু করে আর্থিক সহায়তা পেতে সাহায্য করে। এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা কাজ করেন, যারা নিরপেক্ষভাবে গ্রাহক, জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি নীতিনির্ধারকদেরও জ্বালানি ব্যবহার বা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে গবেষণালব্ধ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ কাজে তারা সরকার, জ্বালানি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন ট্রাস্ট থেকে ফান্ডিং পেয়ে থাকে।
মূলত যুদ্ধের কারণে সরবরাহজনিত ঘাটতির ফলে জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য জ্বালানি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক মুনাফার জন্য সরকার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো উভয়ই সমালোচনার সম্মুখীন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এসব প্রতিষ্ঠানও স্বল্প আয় কিংবা অসহায় মানুষকে জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা বা অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানাধীন। তবে জ্বালানি সরবরাহকারীরা যাতে বিভিন্ন কায়দায় বেশি জ্বালানি বিল আদায় করতে না পারে, সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা যথেষ্ট নজরদারিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। গ্রাহকদেরও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে-কীভাবে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিলে ভুল থাকলে তা বের করা যাবে এবং বিল প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত বিল পরবর্তী বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।
আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, এসব দেশে গ্রাহক প্রতিযোগিতা মূল্যে জ্বালানি কিনতে পারে এবং প্রয়োজনে নির্বিঘ্নে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির গ্রাহক হতে পারে। এর জন্য একটি ফোনকলই যথেষ্ট। যেখানে কম মূল্যে বিদ্যুৎ বা গ্যাস পাওয়া যাবে, গ্রাহক সেখানে যাবেন। এ পরিবর্তনের জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নিজ উদ্যোগে নতুন গ্রাহকের জ্বালানি ব্যবহারজনিত সব তথ্য সাবেক কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করে হিসাব চালু করবে। গ্রাহককে শুধু তার ব্যাংককে নতুন কোম্পানির হিসাবে মাস শেষে বিলের অর্থ পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিতে হবে।
জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পক্ষে জ্বালানি মূল্য খুব বড় ধরনের হেরফের করার সুযোগ কম। বেশি মূল্য হলে গ্রাহক হারানোর ঝুঁকি আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক ধরে রাখার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক আছে; যারা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে গ্রাহকের আর্থিক সংগতি এবং চাহিদানুযায়ী জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। অনেক সময় বিপদগ্রস্ত গ্রাহককে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জ্বালানি ট্যারিফ কমিয়ে কিংবা বিশেষ সহনীয় কিস্তি করে দেওয়া হয়, যাতে গ্রাহক বিল দিতে পারে। এজন্য সরকার থেকে সাবসিডি আকারে বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়; অথবা কর রেয়াত দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া হয়। এত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে-অনেক গ্রাহক, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষ, পেনশনার, সিঙ্গেল মাদার বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি; যারা সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এ জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বাড়তি জ্বালানি বিলের জন্য সরকার এবং জ্বালানি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু আর্থিক সহায়তা দেওয়ার মধ্যে দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে মানুষকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ায় পাশাপাশি তার সার্বিক আর্থিক সাক্ষরতা (Financial Literacy) তথা শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে অনেক ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট কীভাবে সীমিত আয়ে চলা যেতে পারে, সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে কোথায় সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য পণ্য পাওয়া যেতে পারে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ডের সুদাহার সহনীয় পর্যায়ের বা সুদ ব্যতিরেকে পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়, কোন সুপার মার্কেটে কোন পণ্যের মূল্য কম বা কখন গেলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যায়, কোনো ইউটিলি কোম্পানির সার্ভিস চার্জ কম প্রভৃতি। ব্যক্তিগত ঋণ কীভাবে ম্যানেজ করা যায়, সে বিষয়েও উপদেশ দেওয়া হয়। অতিমারির সময় মানুষ যখন কাজ হারিয়ে ফেলে, তখন অনেক স্থানে ফুড ব্যাংক চালু করা হয়; যা এখন অনেকটা সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে ইউরোপের অনেক দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এসব ফুড ব্যাংক সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে সাধারণ মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় ব্যক্তিপর্যায়ে এ আর্থিক সাক্ষরতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বাজেট প্রণয়নে এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং সচেতনতা থাকতে হবে। শুধু কঠোর আর্থিক কৃচ্ছ্রতা অবলম্বন করে মন্দা মোকাবিলা সম্ভব নয়। ২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দায় ইউরোপে আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধন নীতি কাজ করেনি; বরং এতে দারিদ্র্য বেড়ে যায়, চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদনশীলতা নিরুৎসাহিত হয়ে মন্দা পরিস্থিতি প্রলম্বিত করেছিল।
গ্রাহক তার চাহিদানুযায়ী জ্বালানিসহ অন্যান্য ইউটিলি সার্ভিস ব্যবহার করবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে তাকে সচেতন হতে হবে। আর সচেতনতা তখনই সৃষ্টি হবে, যখন গ্রাহক পর্যায়ে এতদবিষয়ে পর্যাপ্ত আর্থিক ও কারিগরি জ্ঞান বা তথ্য থাকবে। আর গ্রাহককে এ জ্ঞান বা তথ্য প্রদানের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ইউলিটি সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা আরও বেশি প্রযোজ্য। গ্রাহক যদি সাশ্রয়ী হওয়ার আর্থিক দিকটি অনুধাবন করতে পারেন, তাহলেই তিনি এর জন্য আগ্রহী হবেন। হিসাব কষে বুঝিয়ে বলতে হবে-এক ঘণ্টা কম বিদ্যুৎ ব্যবহারে কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বিদ্যুৎ বিলে তার যথাযথ প্রতিফলন থাকতে হবে। সাশ্রয়ী গ্রাহকের জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টিও চিন্তা করা যেতে পারে। যেমন-যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল গ্রিড কর্তৃপক্ষ তাদের এনার্জি সেভিং স্কিমের আওতায় গ্রাহকদের বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পিক টাইমে বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিলে ডিসকাউন্ট দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় পুরোটাই আমদানিকৃত জ্বালানি ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ায় পাশাপাশি বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সরকারি দপ্তরে বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করতে প্রতিটি দপ্তর সার্ভে করে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করে কঠোর নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ নীতি বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব দপ্তরের সর্বোচ্চ নির্বাহীর ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও তথ্য প্রদানের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির প্রচলন, এগুলোর সহজলভ্যতা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মো. আসাদুল ইসলাম : সাবেক সিনিয়র সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়
ashadislam@hotmail.com