
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
গাজায় গণহত্যা : বিশ্ব নীরব!

এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67f59387909a1.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের নৃশংস হামলায় যেন জনমানবহীন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। গাজায় অবস্থানকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। ফিলিস্তিনকে বিশ্ব রাজনৈতিক শক্তির একটি বড় অংশ স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ফলে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের মতো যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করে না। বরং জাতিসংঘের সহযোগী রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিন তাদের মানবাধিকার রক্ষা, যুদ্ধাবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্বের রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এ নির্যাতন, হামলা ও গণহত্যার মাত্রা যেন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও যুদ্ধাবস্থা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ, এমনকি কিছু মুসলিম অধ্যুষিত দেশও ওই ইস্যুতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, যা সত্যিই দুঃখজনক।
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এ সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। বরং চলমান পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে নানাবিধ সহযোগিতা করে আসছে দেশটি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলে সামরিক সহায়তা প্রদানে তৎপর ছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বে চলমান সব ধরনের যুদ্ধাবস্থা নিরসনের আশ্বাস দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে সহায়তা জারি রাখবে বলে স্পষ্ট করেন। এ ছাড়া গাজা থেকে অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবও করেন। তবে ফিলিস্তিনের জনগণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করতে অসম্মতি জানায়। মার্কিন সহায়তায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, ওই সময়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর ছিল।
সরকারি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা ৬২ হাজারের অধিক। এ ছাড়া গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। মার্চের গোড়ার দিকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়, যা স্পষ্টই যুদ্ধাপরাধের শামিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য বন্ধ করার জন্য মূল হোতাদের চিহ্নিত না করে হামাসকে দায়ী করে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এ সবকিছুর পরও যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়ার পেছনে হামাসের কর্মকাণ্ডকে দায়ী করা হয়েছে। দিনশেষে গাজা ট্র্যাজেডি বন্ধ করার জন্য এ আনুষ্ঠানিকতা ও আবেদন ইসরাইলের স্বেচ্ছাচারিতা ও গণহত্যা বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না বলেই স্পষ্ট হচ্ছে।
গত সপ্তাহেও গাজায় হামলা চালিয়ে নির্বচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটি। উদ্বেগের বিষয় হলো, এ বর্বোরোচিত সামরিক হামলায় নিহতদের সিংহভাগই শিশু। ইসরাইলের হামলায় বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, ফিলিস্তিনের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে বর্তমানে রয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। তাই বহু মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। ঘাস লতাপাতা ও যৎসামান্য শুকনা রুটির মাধ্যমে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সময় সময় গাজার অধিবাসীদের কান্নার আওয়াজে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে তারা আগলে রেখে চলেছেন নিজ মাতৃভূমি ও মুসলিমদের পুণ্যভূমি মাসজিদুল আকসাকে। গাজার প্রত্যেক মানুষ এই যুদ্ধাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন। মুসলিম হিসাবে আমাদের উচিত ইসরাইলি স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। চলমান গণহত্যা বন্ধে বিশ্বের সব মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, তিনি যেন এহেন পরিস্থিতি থেকে ফিলিস্তিনের মজলুম ভাইবোনদের দ্রুত মুক্তি দেন, শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন।
শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়