Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

জনবান্ধব সাইবার সুরক্ষা আইন চাই

Icon

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন করে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সাইবার সুরক্ষা আইনটি বিতর্কিত। বর্তমান সরকার বিগত সরকারের প্রবর্তিত সাইবার নিরাপত্তা আইনটির পরিবর্তে যে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা নতুন মোড়কে পুরোনো নিবর্তনমূলক আইন বলে অনেকের অভিযোগ। এ আইনে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় বিগত সরকারের বিতর্কিত দুটি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে বলে টিআইবিসহ সচেতন নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মূলত বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। এখানে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, বরং মতপ্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করার একধরনের প্রক্রিয়া দেখা যায়। এটা বড়ই দুঃখজনক ও অমানবিক। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সে-ই গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর খবরদারির চেষ্টা চালায়। বলা বাহুল্য, সাইবার সুরক্ষা আইনটি তৈরি করার আগে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, টিআইবিসহ বিভিন্ন এনজিও এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল। টিআইবি জানিয়েছে, সরকার এটা একটা জগাখিচুড়ির অধ্যাদেশ তৈরি করেছে। সাইবার, ইন্টারনেট, ডিজিটাল সব মিলিয়ে গোঁজামিল করা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা নাম হলেও মূলত এটা আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের একধরনের পুনরাবৃত্তি। বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বা নজরদারি অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল অধিকারের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু অধ্যাদেশে এটার কোনো বালাই নেই, বরং মতপ্রকাশকে খর্ব করার এক ধরনের অপচেষ্টা দেখা যায়, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যে আইনটি মানুষের মতপ্রকাশের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করে, সে আইনের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, নতুন বছরের শুরুতে ভারত সরকারও ঠিক আমাদের মতো ডিজিটাল মিডিয়ার ওপর করা নজরদারি অর্থাৎ তথ্য নিয়ন্ত্রণে বিধি প্রকাশ করে এখন সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে তাদের এ আইন কার্যকর করার আগে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ মানুষের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ রেখেছে, যা আমাদের সাইবার সুরক্ষা আইনে রাখা হয়নি।

গণতন্ত্রের একটি প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। গত ১৬ বছরে অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছেন বাংলাদেশে। অনেকে বরণ করেছেন নির্বাসন। মনে রাখা উচিত, মূলত মুক্ত ও উদার সমাজের ভিওি এবং উন্নয়ন ও প্রগতির শর্ত, মানুষের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যুগ যুগ ধরে সংবাদপত্র নানামুখী চাপের মধ্য দিয়ে ক্রমবিকাশ লাভ করছে। এ চাপ কমবেশি সব দেশেই রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের চাপ অতিমাত্রায় বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রের ওপর এক ধরনের হুমকি বা চাপ সৃষ্টি করে, আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাইবার সুরক্ষা আইনটিতে পুলিশি হয়রানির যথেষ্ট সুযোগ রাখা হয়েছে, যা কারও কাম্য নয়। এতে করে দেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হয়রানির মাত্রা আগের আইনের থেকে কমবে না, বরং বাড়বে। তাই সাইবার সুরক্ষা আইনটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

গণমাধ্যমকর্মী, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম