Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

প্রতিটি ছাদে বাগান হোক

Icon

শাহ পরান

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিটি ছাদে বাগান হোক

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা শহরে ২ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন চার লাখেরও বেশি মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। গাছপালা কেটে, ফসলি জমি ভরাট করে নতুন নতুন আবাসন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা শহরের গাছপালার পরিমাণ ছিল ২৬.৬৮ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে কমে ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে যথাক্রমে ১৫.৯৩ শতাংশ এবং ৮.৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ঢাকা শহরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০০৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে তা আরও বেড়ে গেছে। গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রাজধানী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী আদর্শ শহর হিসাবে গড়ে তুলতে এ অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঢাকায় গাছপালার সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আর তা সম্ভব শহরের প্রতিটি ছাদে পরিকল্পিত বাগান করার মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি শহরের সব ছাদে বাগান করা যায়, তাহলে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসবে ।

ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী আদর্শ শহর হিসাবে গড়ে তুলতে শহরের প্রতিটি ছাদে বাগান করার কোনো বিকল্প নেই। ২০২২ সালের গেজেটভুক্ত হওয়া রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) জরিপের তথ্যমতে, রাজউক এলাকায় প্রায় ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবন রয়েছে। দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে এখন এ সংখ্যা ২৫-৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক ভবনের ছাদকে সবুজায়ন করতে হলে প্রয়োজন বৃহৎ পরিকল্পনার। আর বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষকে ছাদবাগানের উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ছাদবাগান সম্পর্কে সভা-সেমিনার করতে হবে, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ছাদবাগানবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে এ বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকাকে সবুজায়ন করার লক্ষে কাজ করছে। এ জন্য শহরে সব মিলিয়ে ৬০-৭০ জন সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ঢাকা শহরের ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন ছাদবাগান স্থাপন করার বিষয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। আর যেসব ছাদ স্থাপন হয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা, রোগ বালাই, পোকামাকড় প্রতিরোধে তারা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শহরের ২৫-৩০ লাখ তথা এ বিপুলসংখ্যক ছাদবাগান স্থাপন করা ও পরবর্তী পরামর্শ প্রদানের জন্য ৬০-৭০ জন সদস্য যথেষ্ট কিনা, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

শহরের কিছু বাসিন্দা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ছাড়াই স্ব-প্রণোদিত হয়ে শখের বসে ছাদবাগান করে থাকেন; কিন্তু ছাদ বাগান স্থাপন থেকে শুরু করে পরিচর্যা, রোগবালাই দমন, পোকামাকড় দমন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে পরবর্তীতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সেজন্য ঢাকায় পর্যাপ্ত দক্ষ কৃষি কর্মকর্তা প্রয়োজন। ঢাকায় ১৩০টা ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লা রয়েছে। ছাদবাগান স্থাপন থেকে শুরু করে সব পরামর্শের জন্য প্রতিটি মহল্লায় একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার প্রয়োজন। তাহলে ঢাকার প্রতিটি ছাদকে সবুজায়ন করা সম্ভব। গ্রামের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন প্রদর্শনী, প্রণোদনা-পুর্নবাসনসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। কৃষি অফিসের সঙ্গে কৃষকদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য ট্রেনিং কর্মসূচি, মাঠ দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ঢাকা শহরে কৃষির উন্নয়নের জন্য কোনো কর্মসূচি নেই। নেই কোনো প্রকল্প, নেই কোনো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা যখন নতুন একটি ভবনে ছাদবাগান স্থাপনের চেষ্টা করে, তখন অনেক ভবন মালিক তাকে ছাদে উঠতে দিতে পর্যন্ত অনীহা প্রকাশ করেন। আবার কিছু ভবন মালিক প্রশ্ন করেন, ছাদবাগান করব কিন্তু আপনারা সরকার থেকে কী সহায়তা দেবেন? এরকম শত প্রতিকূলতার মধ্যে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছাদবাগান স্থাপন ও স্থাপনকৃত বাগান সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু ওই প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ ২৫-৩০ লাখ ভবনে ছাদবাগান করাটা ৬০-৭০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়।

এমন অবস্থায় ঢাকা শহরকে গ্রিন সিটি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করি। সিদ্ধান্তগুলো হলো-১. ঢাকাকে গ্রিন সিটি করার জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া। ২. শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে-মহল্লায় একজন করে স্মার্ট/দক্ষ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। ৩. নতুন ভবন নির্মাণে রাজউক কর্তৃক অনুমোদন নেওয়ার শর্তে ছাদবাগান থাকবে মর্মে লিখিত নেওয়া। ৪. ছাদবাগানিদের ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। ৫. ছাদবাগানিদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ৬. ঢাকায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ছাদবাগানবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা। ৭. প্রতিটি ওয়ার্ডে ছাদবাগানিদের নিয়ে মাঠ দিবস, সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে মাইকিং করে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। ৮. ঢাকায় কর্মরত কর্মকর্তাদেরকে, ছাদকৃষিতে সফলতার তথ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা। ৯. ছাদকৃষির সম্মানিত কৃষকদের বিভিন্ন বীজ সহায়তা, নার্সারি থেকে চারা বিনামূল্যে সরবরাহ করা। ১০. ছাদকৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ছাদবাগানিদের জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার প্রদান করা।

ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা হবে গ্রিন সিটি, বসবাস উপযোগী একটি শহর। অন্যথায়, এ রাজধানী বসবাস অনুপযোগী শহরের তালিকার শীর্ষে থাকবে। তাই বর্তমান নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়গুলো গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। কী কী পদক্ষেপ নিলে ঢাকা শহরের মানুষ নির্মল বাতাসে বেঁচে থাকতে পারবে, সেসব পদক্ষেপ আমাদের জরুরিভিক্তিতে নিতে হবে।

প্রকৌশলী, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম