Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

মশামুক্ত থাকার প্রাকৃতিক কৌশল

Icon

ড. মো. ফেরদৌস আলম

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মশা একটি আতঙ্কের নাম। কারণ ছোট এ কীটটি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, হলুদজ্বর, ফাইলেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, জিকাভাইরাসসহ নানা ধরনের জীবননাশী রোগের কারণ। বর্তমানে দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ চলছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ সময় তাই আমাদের অধিক সচেতনতা অবলম্বন জরুরি।

এডিস মশার লার্ভা যাতে জন্মাতে না পারে, সেজন্য ঘরের ও আশপাশের যে কোনো জায়গায় পানি জমতে না দেওয়া; ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা; ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা-নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেলের মতো বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়াসহ নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করছি। এ সচেতনতামূলক কাজগুলো আমরা করে থাকি সাধারণত এডিস মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধে। পাশাপাশি এডিস মশা যাতে করে আমাদের কামড়াতে না পারে সে জন্যও আমরা কয়েল, এরোসল, ব্যাট, শরীরে ক্রিম-স্প্রে ব্যবহারসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।

উপর্যুক্ত প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি আমি প্রাকৃতিক উপায়ে বিনা ব্যয়ে বাসাবাড়ি বা অফিসে মশামুক্ত থাকার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।

সাত-আট বছর আগের কথা, আমি কিছুদিন ধরে মশার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম, মশা সন্ধ্যা-রাতে আলোর দিকে এবং সকালে-দিনে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়। রাতে যেহেতু বাসগৃহে আলো জ্বলে, তাই মশা আলোর দিকে গমন করে অর্থাৎ জানালা-দরজা-ভেন্টিলেটর খোলা থাকলে গৃহে প্রবেশ করে। আবার সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়। বাসগৃহে অপেক্ষাকৃত কম আলো থাকে বলে মশা থাকতে চায় না। আমি আমার বাসায় বিষয়টি শেয়ার করলাম এবং সন্ধ্যা হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে দরজা-জানালা-ভেন্টিলেটর বন্ধ করা এবং সূর্য ওঠার ঘণ্টাখানেক পর খোলার চেষ্টা শুরু করলাম। কিন্তু আমার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে বাধা এলো যে, এভাবে দরজা-জানালা সব বন্ধ করলে গরম লাগে, দম বন্ধ হয়ে আসে ইত্যাদি। তাই এ কাজে খুব একটা সফলতা পেলাম না।

কিন্তু ২০১৭ সালে আমার ছেলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় এবং প্ল্যাটিলেট ক্রিটিক্যাল লেভেলে নেমে যায়। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা নিতে হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর সে বাসার দরজা-জানালা-ভেন্টিলেটর সময়মতো বন্ধ করা ও খোলার দায়িত্ব গ্রহণ করল। বাসার সবাই সচেতনভাবে সূর্য ডোবার ঘণ্টাখানেক আগে দরজা-জানালা-ভেন্টিলেটর বন্ধ করা এবং সকালে সূর্য ওঠার ঘণ্টাখানেক পর তা খোলার দায়িত্ব পালন শুরু করল। একজন ভুলে গেলে পরিবারের আরেকজন স্মরণ করিয়ে দেয়। কোনোভাবেই দরজা-জানালা বন্ধ-খোলার রুটিন ভঙ্গ না করার এক প্রত্যয় তৈরি হলো। আমরা এ প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখলাম, কয়েকদিনের মধ্যেই বাসার মধ্যে থাকা সব মশা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেল। কারণ মশার আয়ুষ্কাল ১০-৪০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। ওই প্রক্রিয়া অবলম্বনের পর থেকে প্রায় সাত বছর হয়ে গেল, আমাদের বাসায় দিনে বা রাতে কোনো মশা থাকে না। আমরা কোনো মশারি বা মশা নিধনের কৃত্রিম ওষুধও ব্যবহার করি না। প্রাকৃতিকভাবেই আমরা বাসায় মশামুক্ত থাকি।

আমার এ অভিজ্ঞতা আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন, তারাও বাসায় প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়ানোর পদ্ধতিটা বাস্তবে প্রয়োগ করে মশামুক্ত আছেন এবং মশারি বা মশা নিধনের কোনো কৃত্রিম ওষুধ ব্যবহার করেন না। আমরা সচেতনতার সঙ্গে এ দরজা-জানালা বন্ধ-খোলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি মশামুক্ত থাকতে পারি, তাহলে মশাবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে পারব।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম