পোশাক খাতে অস্থিরতা ও অর্থনীতির ক্ষতি
আশফাক আহমেদ
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত অন্যতম। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়া ও প্রতিবেশী দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির খবর এ খাতের জন্য অশনিসংকেত, সন্দেহ নেই। কারণ জিডিপিতে অবদান ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে রপ্তানিমুখী এ খাতটি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ : কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে ২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আমাদের চেয়ে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার কম তৈরি পোশাক রপ্তানি করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, আর শীর্ষে বরাবরের মতোই রয়েছে চীন।
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অথচ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন ও সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে এদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দেশের বাজারে চলে গেছে, যা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের জন্য গভীর সংকট হিসাবে এ পরিস্থিতিকে দেখা হচ্ছে।
দেশের তৈরি পোশাক খাত ধীরে ধীরে আজকের এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই খাতটির উত্তরণ ও বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তবে বিগত সরকারের পতনের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, এ খাতটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার নানা চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। আর এ অস্থিরতাকে কিছু মহল নিজের স্বার্থে ব্যবহার করারও চেষ্টা করে। গত এক মাসে তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রভাব খাটানো শুরু করেন। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে আসে।
কোনো প্রতিষ্ঠানই একক শক্তিতে গড়ে ওঠে না। প্রতিষ্ঠানের সুনামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার কর্মী। এর সঙ্গে জড়িত থাকে কোটি কোটি টাকার উৎপাদন ও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতের সরবরাহ-শৃঙ্খল ব্যবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে বিদেশে আমাদের ক্রেতাদের কাছে কী বার্তা যাবে? এ অসন্তোষে লাভ হচ্ছে কার, তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত এ রকম সংকটগুলোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তা দ্রুত সমাধানের পথ বের করা।
অবাধে অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লাগামহীন দুর্নীতি, ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অর্থনীতিকে একদম খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এ মুহূর্তে যদি তৈরি পোশাক খাতের মতো রপ্তানিমুখী খাতকে নৈরাজ্যের মুখে ঠেলে দিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বেকারত্বের বোঝা আরও বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে অসন্তোষ। যদিও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবুও আশঙ্কা তো থেকেই যায়।
প্রাবন্ধিক