Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ট্র্যাকিংয়ের জন্য আদর্শ চন্দ্রনাথ পাহাড়

Icon

তানবির শেখ

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত তখন সাড়ে ১০টা, বিদায় নিচ্ছি এ শহর থেকে। ট্রেন রাতের অন্ধকার ভেদ করে দ্রুত ছুটছে, আমাদের গন্তব্য সীতাকুণ্ড। পরদিন সকাল ৮টায় কুয়াশাভেজা সীতাকুণ্ড স্টেশনে পা রাখলাম। এখানে সকালের খাবার শেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। এখান থেকেই শুরু হলো আমাদের ভ্রমণাভিযান।

শুরুর দিকের রাস্তা অনেকটা সমতল। নয়নাভিরাম পাহাড়ি সৌন্দর্যের মাঝে আমরা হেঁটে চলছি। চন্দ্রনাথ পাহাড় সীতাকুণ্ড বাজার থেকে চার কিলোমিটার পুবে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অপূর্ব। ট্র্যাকিংয়ের জন্যও একটি আদর্শ জায়গা। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, নির্জনতার মাঝে সবুজ গাছপালা, পশুপাখির ডাক এবং শীতল বাতাসের সঙ্গে আপনি পাবেন মানসিক প্রশান্তি।

দুর্গম পাহাড়ি পথে ১১৫২ ফুট উপরে ওঠা সহজ কাজ নয়, তবুও আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ওই চূড়ায় পৌঁছানো। রাস্তার দুই পাশে ছিল নানা দৃশ্য। তবে সতর্ক থাকতে হয়, খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠার সময় একপাশে পড়বে পাহাড়, অন্য পাশে খাদ। একবার পা ফসকালেই পড়ে যেতে হতে পারে হাজার ফুট নিচে। তাই সাহস ও সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হয়। আবার কিছু জায়গায় পথটা এতটাই সরু যে, দুজনের একসঙ্গে ওঠানামা করাও প্রায় অসম্ভব। মাঝেমাঝে প্রাচীনকালের তৈরি সিঁড়ি, যার উপরে রয়েছে নামফলক। নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশে মাঝেমাঝে শুনতে পাওয়া যায় চেনা-অচেনা পাখির ডাক। এখানে রয়েছে ঝরনাও, যা সংগীতের মতো শোনায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির। প্রতিবছর এ মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবচতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এ পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা বসে। প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসে স্থানীয় হিন্দুরা এখানে আয়োজন করে এক বড় ধরনের উৎসব। এটি শিবচতুর্দশী মেলা নামে পরিচিত, যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগ দেন।

পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। যাওয়ার পথে ছোট একটি ঝরনা দেখা যায়, যার কাছ থেকে পাহাড়ে ওঠার পথ দুটি দিকে চলে গেছে। ডানপাশের পথটিতে পুরোটা জুড়ে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে, আর বাঁ পাশের পথটি সম্পূর্ণ পাহাড়ি। এত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলেও আশপাশের সবুজে ঘেরা অকৃত্রিম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মুগ্ধ করে। পাহাড়ে ওঠার ফাঁকে ফাঁকে ছবি তোলা যায়। মাঝেমাঝে থেমে বিশ্রাম নেওয়া যায় চায়ের দোকানে। চন্দ্রনাথ মন্দিরের উপরে ওঠার পর আশপাশের দৃশ্য অতিমনোরম। চারপাশের সবুজ যেন কোনো শিল্পীর নিপুণ হাতে রংতুলিতে আঁকা। এখান থেকে সীতাকুণ্ডের প্রায় পুরোটাই দেখা যায়। দূরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে এক ঐশ্বরিক অনুভূতি মন জুড়িয়ে দেবে। প্রাবন্ধিক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম