উচ্চশিক্ষায় বেকারত্বের ভয় কাটুক
ইকবাল হোসেন ইমন
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শিক্ষা মানুষের মনে আশা ও সাহসের সঞ্চার ঘটায়। প্রবাদ আছে, জ্ঞানই শক্তি; কিন্তু বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দেশে বেকারত্বের যেসব পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়, তাতে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বরাবরই আতঙ্কজনক এবং ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। সম্প্রতি বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক সংবাদে উঠে এসেছে, দেশে গত তিন বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী। তবে উচ্চশিক্ষিত এ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই এখনো কর্মহীন। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সালের পূর্ণাঙ্গ শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, তখন দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮২ হাজার, বর্তমানে যা ২৬ লাখেরও বেশি। এ বেকারদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৯৯ হাজার, যা মোট বেকারের প্রায় ৩১ শতাংশ। ফলে দেশে এখন প্রতি তিনজন বেকারের মধ্য একজন উচ্চশিক্ষিত।
একজন শিক্ষার্থী যখন উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়, তখন থেকেই তার মাঝে চেপে বসে বেকারত্বের ভয়। শিক্ষা-গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার পরিবর্তে শুরু করে চাকরির পড়া। কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরি বাজারে প্রবেশের জন্য মানানসই নয়। গতানুগতিক ধারায় স্নাতক-স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাবহারিক কোনো দক্ষতা গড়ে ওঠে না। এজন্য বেকারত্বের ভয় সঠিক শিক্ষা অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া বেকারত্বের ভয় ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচতে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো জঘন্যতম পথও বেছে নেয়। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিল ৯৮ জন। তাদের একটি বড় অংশ আর্থিক ও সামাজিক চাপে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত ছিল।
একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে যখন ভর্তি হয়, তখন থেকেই পারিবারিক আশা-আকাঙ্ক্ষার চাপ তাদের ঘিরে রাখে। যথেষ্ট ম্যাচিউরড হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পারিবারিক অভাব-অনটন ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তাদের আশ্বস্ত করতে পারে না। এ শিক্ষাব্যবস্থার অবনতির কারণে অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে মানবিক মূল্যবোধের ভয়াবহ ঘাটতিও থেকে যায়। ফলে উচ্চশিক্ষিতদের একটি অংশ হয়ে ওঠে দুর্নীতিবাজ ও সামাজিক অপরাধী। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য, দেশকে একটি মানবিক ও বিশ্বমানের রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এদেশের তরুণদের তাই কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। এজন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তরুণদের মধ্য থেকে বেকারত্বের ভয় কাটিয়ে দিতে হবে। বিপুল জনসংখ্যার এদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতান্তই কম। চলতি বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার। এ অবস্থা থেকে দেশকে দ্রুত মুক্ত করতে হবে। দেশের সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাছাড়া দেশে এখন রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগানোর সুবর্ণ সুযোগ। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, দক্ষ প্রশিক্ষণ ও যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে অনন্য সমৃদ্ধ এক রাষ্ট্র।
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া