বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছি
সেলিম আল রাজ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হুহু করে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির ফাঁদে জনজীবন অতিষ্ঠ। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য জীবনযাত্রায় সৃষ্টি হচ্ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বুকভরা কষ্ট নিয়ে নিম্ন ও মধ্য-আয়ের মানুষ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছে। পরিবার-পরিজনের অতিপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের অধিকাংশ মানুষ।
ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক পণ্য। গত রমজানের তুলনায় এবার অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে চাল, মাছ, মাংস, ডিম, তেল, চিনি, ছোলা, মরিচসহ সব ধরনের পণ্য। বিগত বছর এক কেজি দেশি শুকনা মরিচের মূল্য ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছে একশ টাকার বেশি। এক হালি লেবুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুন, শসা, খেজুরেরও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। গরুর মাংস ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে দুবাইয়ে এক কেজি গরুর মাংসের দাম পড়ে পাঁচশ টাকা। সে দেশে নিজস্ব কোনো খামার নেই। চাহিদার সবটুকু তারা ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশে থেকে আমদানি করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে প্রচুর গবাদি পশুর খামার ও পোলট্রি ফার্ম থাকা সত্ত্বেও সবকিছুর নিয়ন্ত্রণহীন দাম, লাগামহীন পরিস্থিতি। অনেক কম দামে আমদানিকৃত খেজুর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত।
বিশ্ব বাজারে দাম কমার পরও আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ছে না সেভাবে। একবার কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে, এদেশে আর তা কমানো যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশ রমজান মাসে ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করে, লাভের পরিমাণ কম করার মানসিকতা দেখায়। আমরা তাদের বিপরীত। অসাধু ব্যবসায়ীদের জাঁতাকলে পিষ্ট আমজনতা। মাহে রমজান শেষে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের পড়তে হবে আরেক বিড়ম্বনায়। গলা টিপে ধরবে পরিবহণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। স্বাভাবিক ভাড়া থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হবে যাতায়াতে। এ ছাড়াও মিষ্টি ও ফল দোকানিরা ওত পেতে বসে আছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। উপরন্তু নানা ফন্দিফিকিরে ব্যবসায়ীরা অর্থদণ্ডের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপায়। বুকভরা কষ্ট নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ বলতে চাই-সরকার বাহাদুর, বাজারে যে আগুন লেগেছে, তা স্থায়ীভাবে নেভানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিন; নতুবা এর পরিণতি শুভ হবে না।
প্রভাষক, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ