
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০১ এএম
আমেরিকান ভোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ গ্লোবাল বেসলাইন শুল্ক ঘোষণা করেছেন; দাবি করেছেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতির ‘মুক্তি দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। তবে যদি এই শুল্ক বজায় থাকে, তাহলে এটি মার্কিন অর্থনীতি, আমেরিকান ভোক্তা এবং বিশ্বে দেশটির অবস্থানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।
১০ শতাংশ শুল্কটি মূলত বেসলাইন। ট্রাম্পের মার্কিন অর্থনীতির মুক্তির প্রচেষ্টায় আরও অনেক বেশি উচ্চ শুল্ক আরোপিত হয়েছে। একটি উদাহরণ হলো তার ২৫ শতাংশ শুল্ক, যা সব গাড়ি আমদানির ওপর কার্যকর হয়েছে তার ‘মুক্তি দিবসে’। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার নীতির উদ্দেশ্য মার্কিন উৎপাদন ভিত্তির পুনরুদ্ধার করা, কিন্তু এই সক্ষমতা অর্জনের জন্য সময় দেওয়া হয়নি। ট্রাম্প অবশ্য এ বিষয়গুলোর প্রতি খুব কম গুরুত্ব দেন। গাড়ির যন্ত্রাংশের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্কও এক মাসের জন্য বিলম্বিত হয়েছে এবং মে মাসে কার্যকর হবে। এতে গাড়ির দাম বেড়ে যাবে এবং সরবরাহ চেইনগুলো আটকে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি গাড়িনির্ভর অর্থনীতি। ভোটারদের একটি বড় অংশ এ পদক্ষেপের দ্বারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্যান্য পশ্চিমা দেশের তুলনায়। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ট্রাম্পের মার্চে আরোপিত শুল্ক ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। বেশির ভাগ মার্কিন গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ দুই দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দাম বৃদ্ধির ধারণাটি প্রায় সর্বজনীন।
কিন্তু এ প্রবণতা অন্য অনেক সরবরাহ চেইনের মধ্যেও পরিলক্ষিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশগুলোর ওপর উচ্চ শুল্ক চাপানো হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যগুলো ২০ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হবে। জাপানি পণ্যসম্ভারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। তাইওয়ানের পণ্য, যার সরবরাহকৃত চিপ মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ৩২ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হবে। ভারত ও ভিয়েতনাম, যেসব দেশে ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসন কাজ শুরু করার পর থেকেই মার্কিন সরবরাহ চেইনগুলোর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, তারা যথাক্রমে ২৬ ও ৪৬ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতির আঘাত মোকাবিলার জন্য তেমন প্রস্তুত নয়। দেশটি এখনো কোভিড-১৯ মহামারির সময় বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনগুলোর সংকটের কারণে সৃষ্ট সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির আঘাত মোকাবিলার জন্য লড়াই করছে এবং ২০২২ সালের রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনে হামলার আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলা করছে। ট্রাম্পের শুল্কের মূল্যস্ফীতির প্রভাব শিগগিরই অনুভূত হবে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মুক্তবাণিজ্যকে উৎসাহিত করায় তা দেশের উৎপাদনের শেয়ার কমাতে সহায়ক হয়েছে। তবে আমেরিকার ভোক্তারা সম্ভবত এই এজেন্ডার সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হয়েছে। তারা ট্রাম্পের নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
১৯৮০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যারা তার সঙ্গে অংশীদার হবে তাদের জন্য বাণিজ্যকে তার সমৃদ্ধির বার্তার কেন্দ্রে রেখেছিলেন। রক্ষণশীলদের দ্বারা প্রশংসিত অর্থনীতিবিদ এবং রিগানের উপদেষ্টা মিল্টন ফ্রিডম্যান লিখেছিলেন : ‘আমাদের শুল্ক আমাদের যেমন ক্ষতি করে, অন্য দেশগুলোরও ক্ষতি করে। যদি অন্যান্য দেশ শুল্ক না রাখে, তাহলে আমাদের শুল্ক বাদ দিলে আমরা উপকৃত হবো...আমাদের দেশে এবং বিদেশে স্বাধীনতার আদর্শকে সমর্থন করার জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।’
রিগানের ডেমোক্র্যাটিক বিরোধীরা দেরিতে এ পরিবর্তন গ্রহণ করেছিল। যখন বিল ক্লিনটন ১৯৯৪ সালে উত্তর আমেরিকা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি কংগ্রেসের সামনে উপস্থাপন করেন, তখন আরও অনেক রিপাবলিকান সিনেটর এটি সমর্থন করেছিলেন। তবে ট্রাম্প তার সর্বশেষ পরিকল্পনাগুলোর ওপর কোনো কংগ্রেসীয় তদারকির পরিকল্পনা করেন না, এমনকি যেখানে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেখানেও।
তবে কংগ্রেস এখনো তার ভূমিকা পালন করতে পারে। ট্রাম্পের শুল্ক তুলনামূলক দুর্বল ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। তিনি দাবি করছেন, তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তার কারণে’ এগুলো আরোপ করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের (IEEPA) আওতায় সেগুলোকে বৈধতা প্রদান করেন। অর্ধশতাব্দীর পুরোনো এ আইন ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী মার্কিন আইন, কারণ এটি নির্বাহী শাখার ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণের অনুমতি দেয়। এটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার এবং মার্কিন প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং ট্রাম্পের পূর্ববর্তী বেশির ভাগ শুল্কের কর্মকাণ্ডের জন্যও এটি প্রযোজ্য।
তবে প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করতে হলে তাকে একটি মৌলিক জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে এবং এর যৌক্তিকতা প্রদান করতে হবে। যদিও কংগ্রেস কখনো এটি করেনি, তবুও কংগ্রেস IEEPA-এর অধীনে ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে ১৯৮৫ সালের জাতীয় জরুরি আইন দ্বারা।
আলজাজিরা থেকে ভাষান্তরিত
ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস : লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক ও পররাষ্ট্রনীতি পরামর্শক