Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

হালফিল বয়ান

যে কথা বলে গেল শিশু আছিয়া

Icon

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যে কথা বলে গেল শিশু আছিয়া

ফাইল ছবি

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেল মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়া। নারী হয়ে ওঠার আগেই সে হারালো নারীত্ব, সম্ভ্রম ও জীবন। জীবনের শুরুতেই তথাকথিত মানুষদের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে সে বলে গেল : হে মানুষ, আবার তোমরা মানুষ হও!

মানুষকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথও। ২৬ চৈত্র ১৩০২ রচিত ‘বঙ্গমাতা’ কবিতায় জানিয়েছেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী/রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’ কবিতার শুরুতে তিনি আশা করেছিলেন, ‘পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে/মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।’

রবীন্দ্রনাথের আশা পূর্ণ হয়নি। বঙ্গমাতার সন্তান মানুষ হয়নি। যদি মানুষই হতো, তাহলে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সাত বছরের মধ্যে ১৯৪৭ সালে উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় উন্মত্ত হয়ে বঙ্গমাতার ব্যবচ্ছেদ করত না। আনুমানিক ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুর মূল্যে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশ ভাগ করত না। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তাদের বসতভিটা ছেড়ে শরণার্থী হতে বাধ্য হতো না।

ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির পরও মানুষের জন্য মানবিক মর্যাদা সমুন্নত হয়নি। ১৯৭১ সালে রক্ত সাগর পেরিয়ে অর্জন করতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতার পরও মানবিকতা উচ্চমূল্য পায়নি। গণপিটুনি, হাইজ্যাক, ব্যাংক লুট, হত্যা ধর্ষণ ঘিরে ধরে সমাজকে। আমজাদ হোসেনের চিত্রনাট্যের ভিত্তিতে সে সময় (১৯৭৩ সালে) খান আতাউর রহমানকে নির্মাণ করতে হয় কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’।

২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের পর দ্বিতীয় স্বাধীনতার লগ্নে আবার যেন তীব্র হয়ে ফিরে এসেছে মানুষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। মব কিলিংয়ের নামে বলপূর্বক গণবিচার, আকছার আইন হাতে তুলে নেওয়া, মজুতদারি ও ভেজালের মচ্ছব তৈরি করা এবং নারকীয় ও বর্বর নারী, শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের সিরিজ ঘটনাগুলো যেন সমাজের তথাকথিত মানুষদের তীব্র কশাঘাতে বলছে, ‘আবার তোরা মানুষ হ’।

অবক্ষয় ও পতন এতটাই তলানিতে চলে গেছে যে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন ও সহিংসতায় আপন বা পরিচিতজনরাই এগিয়ে। ৮৫ শতাংশ ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ধর্ষক বা যৌন নির্যাতনকারী ভিকটিমের পরিচিত। মাগুরায় আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় তারই বোনের স্বামীর সহায়তায়। মানিকগঞ্জ সদরে বিয়ের অনুষ্ঠানে তিন বছরের এক কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। রাজধানীর গুলশান এলাকায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেফতার হয়েছে। গত এক সপ্তাহে চারজন কন্যাশিশু ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে এসেছে, যারা নিগৃহীত হয়েছে আপন মানুষদের দ্বারা। যেসব মানুষকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। এবং একইসঙ্গে বলতে হবে ‘আবার তোরা মানুষ হ’।

মানুষ যদি প্রকৃত মানুষ না হয়, তাহলে শুধু আইন দিয়ে নারী-শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো বর্বর ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে আইন রয়েছে-খুন করলে ফাঁসি। এটা প্রায় সবাই জানেন; কিন্তু খুন কি বন্ধ হচ্ছে? খুনিরা কি আইন বোঝে? প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে খুন-ধর্ষণের কঠোর শাস্তির কথা লিপিবদ্ধ আছে। যদি আইন দিয়ে অপরাধ দূর করা যেত, তাহলে কোনো সমাজে খুন-ধর্ষণ হতো না। নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের ক্ষেত্রে আপনজন-পরিচিত ব্যক্তিরাই এগিয়ে। তবে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিচার সম্পন্ন করতেই হবে। ঘরে-বাইরে নারী ও কন্যাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রকৃত মানুষকে মানুষ হিসাবে এগিয়ে আসতে হবে নারী, শিশু, অবহেলিত ও প্রান্তিকদের নির্যাতনের কবল থেকে মুক্ত রাখার প্রত্যয়ে।

হতাশার বিষয় হলো, দেশে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে মানুষ নামের প্রাণীগণ এবং সমাজ এক ধরনের নীরব। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, ধর্ষক বা নির্যাতনকারীদের মতো অমানুষদের পক্ষেও কিছু মানুষ নামধারী অবস্থান নিচ্ছে। ফলে নারী ও কন্যা নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। আসলে, জুলাই বিপ্লবের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়নহীতা বিরাজ করার সুযোগ নিচ্ছে নির্যাতনকারীরা। হঠাৎ করেই যে নারী ধর্ষণ-নির্যাতন বাড়ছে এমনটা নয়। তবে হঠাৎ করেই বেশি খারাপ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ খুবই জরুরি। রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ কঠোর হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্র কঠোর হচ্ছে না বলেই নারীকে ঘরে বন্দি রাখতে যা যা প্রয়োজন, তা-ই করা হচ্ছে। নারীর পোশাক থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীবিদ্বেষী হয়ে উঠছে পুরুষরা। নারীরা ঘরে-বাইরে নিরাপদ থাকবে, নিরাপদে হাঁটবে, উন্নয়নে শামিল হবে, জাতি গঠনে সঙ্গী হবে-এমন পরিবেশ রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজকেই পরিগঠন করতে হবে।

আইন ও সালিশকেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের গবেষণা অনুযায়ী, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপন কিংবা পরিচিতদের দ্বারাই নারী ও শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং আইনি সুরক্ষা পাচ্ছে না। মোদ্দা কথায়, রাষ্ট্র ও সমাজ অমানুষের কবল থেকে নারী ও শিশুদের বাঁচাতে ও সুরক্ষা দিতে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না। এজন্যই সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনের ঘটনার অধিকাংশই আড়ালে থেকে যায়। আপনজন বা পরিচিতিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তরাও চায় না এসব নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হোক। অনেক সময় ঘটনা মিথ্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

নারী শিশু সহিংসতার বিরুদ্ধে ঘর ও সমাজ থেকেই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, কিছু মানুষ তার অবদমিত ইচ্ছা পূরণের জন্য সহজ পথ খোঁজে। তারা শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী-কন্যাশিশুদের টার্গেট করে। কারণ অপরাধীরা ধরেই নেয়-শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও প্রকাশ করতে পারবে না। তাই এমন একটা সমাজ দরকার, যেখানে নারীর প্রতি যে কোনো সহিংসতার ও বিকৃত কামের বিরুদ্ধে সেই সমাজ সোচ্চার হয়ে উঠবে। বিশেষ করে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কমিটি করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো ঘটনা কমত। তাছাড়া যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ বন্ধে উপায় হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের বিচার। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হলে অপরাধ কমে আসবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের দিক থেকে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও মৃত্যুর পর সারা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরে প্রতিবাদ হয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। একটি নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতির জন্য একদিনের বা আকস্মিক প্রতিবাদই যথেষ্ট নয়। যদিও দেশব্যাপী প্রতিবাদ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করায় সরকারও এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নির্যাতন, নিপীড়নের অভিযোগের জন্য টোল ফ্রি হটলাইন চালু করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথাপি এ অপরাধ নির্মূলের জন্য প্রয়োজন লাগাতার আন্দোলন-সংগ্রাম। এক সময় এসিড নিক্ষেপের ঘটনা খুবই বেড়ে গিয়েছিল। কঠোর আইন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ায় এসিড অপরাধের হার অনেক কমে গেছে। শিশু ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিষয়েও কঠোর আইন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।

সত্য যে, নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য আইন করা হয়েছে, বিভিন্ন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কী ব্যবস্থা আছে, তা সবার কাছে স্পষ্ট নয় এবং প্রশাসনের পক্ষেও সেগুলো প্রতিপালনের উদাহরণ নেই। ফলে এসব কাগুজে আইন ও নিয়ম ঠিকমতো কাজ করছে না। তাছাড়া, শাস্তিভিত্তিক বিচারব্যবস্থায় যদি বিচার না হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে, তাহলে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়বেই। মোটাদাগে, অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘসূত্রতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আইন কাজ করে না এবং সঠিক শাস্তি নিশ্চিত হয় না। আর আইন কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারলে সেই আইন কেউ মানতে চায় না। নারী ও শিশুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য রাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে যে আইন, অন্য সেবা ও নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করেছে, সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষিত রাখাই প্রধান দায়িত্ব। সমাজের দায়িত্ব হলো আইনের কাঠামোয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় নারী ও শিশুরা নিরাপদ রয়েছে কিনা, সেটা দেখা। কিন্তু যে সমাজ পরিচালনা করে কর্তৃত্ববাদী বর্বর ও পশুবৃত্তির কতিপয় পাণ্ডা, সেখানে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা কেমন করে সম্ভব হবে?

কঠোর আইন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর সমাজের সজাগ অবস্থানের পরও মানুষকে প্রকৃত মানুষ করার প্রচেষ্টা নেওয়া জরুরি। এ কাজ করতে পারে পরিবার, ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে যে সমাজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের সেঞ্চুরি হয় কিংবা যে সমাজের পরিবারে নারী ও শিশুরা অবদমিত ও নিগৃহীত থাকে, সেখানে আইন ও শাস্তিই সমস্যার সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তথাকথিত মানুষকে প্রকৃত মানুষে রূপান্তরিত করাও জরুরি। সমাজে অমানুষ ও পাশবিক বর্বররা দাপাদাপি করলে মাগুরার আছিয়ার মতো আরও অনেক অবোধ শিশু নারকীয় নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে অকালে চলে যাবে পৃথিবী থেকে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে ও পরে নির্যাতিত কন্যাশিশু আছিয়া মাগুরা, ঢাকা মেডিকেল, সিএমএইচ হয়ে কবরগাহের শীতল ও নীরব ঠিকানায় চির ঘুমে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে এ সত্যই উন্মোচিত করে গেল যে, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যত নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়নি এখনো। এমনকি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে প্রথম নারী দিবসেও হায়েনাদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি নারী ও শিশুরা। শিশু ও নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে একটি নিরাপদ সমাজ গঠন এখনো সুদূরপরাহত। নারী নির্যাতনসহ সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায় জনস্বার্থে তা দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন।

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম