Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নতুন বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকট

Icon

ব্রি. জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন (অব.)

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকট

১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা বোধাপায়ার আরাকান দখলের মধ্য দিয়ে স্বাধীন আরাকান বার্মার সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীকালে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর ১৯২৮ সালে আরাকান ইংরেজদের দখলে আসে। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হলে আরাকান বার্মার অন্তর্ভুক্ত একটা রাজ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই আরাকানের জনগণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে আসছিল। স্বাধীনতা হারানোর বহু বছর পর আরাকানের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড লীগ অব আরাকানের সশস্ত্র শাখা আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে রাখাইনের ঘাঁটিগুলো থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে তাদের উপস্থিতির জানান দিতে সক্ষম হয়। রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চকপিউ, সিতওয়ে ও মুনাং শহরতলি এখন তাতমাদাও তথা মিয়ানমার আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাখাইনের পরিস্থিতি নিরাপদ ও স্থিতিশীল নয়। মিয়ানমার বিমানবাহিনী সিতওয়ে ও পাউকটাও এলাকায় বিমান আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে; ফলে মৃত্যু, ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতি বেড়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমান রাখাইন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের প্রবাহ সামলানো, সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং এ অঞ্চলের জটিল ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। উপযুক্ত কূটনৈতিক, মানবিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়া এ সমস্যাগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের দখলে থাকা এলাকাগুলোতে নতুন করে শক্তি বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে চাপের মধ্যে রাখছে, যাতে তারা শক্তি বৃদ্ধির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারে। রাখাইন থেকে মিয়ানমার আর্মির দৃষ্টি সরাতে আরাকান আর্মি পার্শ্ববর্তী ম্যাগওয়ে, বাগো ও আইয়ারওয়াদি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। ওইসব এলাকায় সেনাবাহিনীর অস্ত্রের কারখানা রয়েছে। আরাকান আর্মি সেসব এলাকার পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের চকপিউ টাউনশিপে মিয়ানমার জান্তার নৌঘাঁটিতেও হামলা চালাচ্ছে। চকপিউতে চীনের তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, একটি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ চীনের অর্থায়নে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প রয়েছে। সম্প্রতি জান্তা সরকার মিয়ানমারে চীনের স্বার্থরক্ষার জন্য চীনা বেসরকারি সুরক্ষা সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে মোতায়েন করার বিষয়ে প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিসেস আইন পাশ করেছে। এ আইন পাশের পর চকপিউতে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। সেনাবাহিনীও সিতওয়ে এবং এর আশপাশের এলাকায় বিমান আক্রমণ চালাচ্ছে, যাতে আরাকান আর্মির আক্রমণ প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হয়।

বাকি শহরতলিগুলো আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি আরাকান আর্মি এখন রাখাইনে তাদের জয়কে সুসংহত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখাইনের অন্যান্য এলাকায় জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা যায়, আরাকান আর্মি স্থানীয় রোহিঙ্গাদের এলাকা ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে এবং অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের থাকার অনুমতি দিচ্ছে, একইসঙ্গে তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতেও উৎসাহিত করেছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মতো আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কর্মকাণ্ড থেকে অনেকে ধারণা করছে, আরাকান আর্মির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন। তবে আরাকান আর্মি এটি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইনের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সংগঠনগুলো তেমন কিছুই করতে পারছে না।

রাখাইন অঞ্চলে বর্তমানে প্রচুর অস্ত্র রয়েছে। আরাকান আর্মির কাছেও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আছে। নিজস্ব অস্ত্রের পাশাপাশি তাদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিশাল মজুত রয়েছে। আরাকান আর্মি ইউনাইটেড পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (ইউপিডিএফ) এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র পাচার হচ্ছে বলে জানা যায়। রাখাইনের চলমান এ সংকটের কারণে সামনের দিনগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল আবারও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এটি বাংলাদেশের পাশাপাশি এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।

আরাকান আর্মি চলমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধান চায়। মিয়ানমার সরকার যদি তাতে সম্মত না হয়, তাহলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হবে এবং এ অঞ্চল আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে চীন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছে। যুদ্ধবিরতি সফল হলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে শুধু আরাকান আর্মিকে মোকাবিলা করতে হবে। সেনাবাহিনীর যুদ্ধকৌশল বিবেচনায় নিলে এ পরিস্থিতিতে তারা রাখাইন পুনরুদ্ধারে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে আবারও আক্রমণ শুরু করতে পারে। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে নিয়মিত সরবরাহে বাধা প্রদান করায় সেখানে মানবিক সংকট চলছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাখাইনের সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা ২১টি ক্যাম্প ও কয়েকটি গ্রামে রয়েছে। সংঘাতে নতুন করে রাখাইনরাও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং রাখাইন অঞ্চলে চলমান মানবিক সংকটের ওপর চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং তা মোকাবিলায় মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকেও প্রস্তুতি নিতে হবে।

মিয়ানমারের চলমান সংকটে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রাখাইন মিয়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির রেশ ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি, বাংলাদেশের নাগরিকের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিল এবং তাদের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে সে সময়। বিজিপি ও মিয়ানমারের সৈনিক ও কর্মকর্তারা আরাকান আর্মির হামলার শিকার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়। সেসময় বাংলাদেশ প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পন্থা ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করছে, রোহিঙ্গাদের জমি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাদের গৃহহীন করছে। এর ফলে বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বোমার শব্দে সীমান্ত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং সীমান্তবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্ত দিয়ে নতুন করে ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পণ্য আনার সময় সিতওয়েতে মিয়ানমার সরকারকে এবং নাফ নদের সীমান্ত অতিক্রমের সময় আরাকান আর্মিকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সীমান্তপথে মাদক, অস্ত্র চোরাচালান ও মানব পাচার চলছে। স্থল ও সমুদ্র এলাকায় আরাকান আর্মি সৃষ্ট গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করছে এবং বাংলাদেশের বন্দরের দিকে আসা পণ্যবাহী জাহাজ আটক করছে। তাই কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিকে ভালো বলে যাবে না। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে কক্সবাজারে বিজিবির উখিয়া ব্যাটালিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নাফ নদ এবং সীমান্ত সড়কে টহলে রয়েছে এবং তারা সীমান্তে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে দেরিতে হলেও আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যোগাযোগ করেছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত জুলিয়া বিশপের সঙ্গে বৈঠকের সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মির জন্য একটি বিবৃতির খসড়া তৈরি করা হয়। সেখানে আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে নিজের স্বার্থ রক্ষায় যাদের সঙ্গে কাজ করার দরকার, বাংলাদেশ তা করবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মির কাছে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে রাখাইনে ফেরত নিতে হবে। রাখাইন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে বলে আরাকান আর্মি আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা যায়। রাখাইনে পণ্য সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশের বিকল্প তেমন একটা নেই। ভারতের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম চালানো সহজ নয়। রাখাইনের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা খাতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তা স্বীকৃতি পাবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ১০৬টি দেশের উদ্বেগ আছে এবং এ নিয়ে চলতি বছরেই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

রাখাইনকে স্থিতিশীল করার জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়তে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরাকান আর্মিকে সক্রিয়ভাবে রাখাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও সমাজে একীভূত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দক্ষ কূটনীতি অনুসরণ করার পাশাপাশি এর সমর্থনে সামরিক শক্তি এবং হুমকি নিরসনমূলক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

ব্রি. জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন (অব.) : মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম