Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাইফোকাল লেন্স

এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা ইউ কে চিং মারমা

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মোৎসর্গে স্বাধীনতার যে মহাকাব্য রচিত হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ যুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এত অল্প সময়ে, এত বড় অর্জন সম্ভব হয়েছিল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের ফলে। মহান এ স্বাধীনতাযুদ্ধে এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও পিছিয়ে ছিল না। সমাজের অন্যান্য মানুষের মতোই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও রয়েছে স্বতন্ত্র গৌরবগাথা। একাত্তরের মার্চের প্রথম থেকেই সর্বস্তরের মানুষ যেমন যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে প্রস্তুত হয়েছিলেন এ দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দেশপ্রেমিক মানুষও। রাজশাহী-দিনাজপুরের সাঁওতাল, ওরাঁও; ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনার গারো, হাজং, কোচ জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার উপজাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, বড়লেখা, চুনারুঘাট, মাধবপুর, বৈকণ্ঠপুর, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জের আনুমানিক ৮৩টি বাগানের উপজাতি জনগোষ্ঠী ও চা-শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে কমপক্ষে ৬০২ জন নিহত এবং দেড় শতাধিকের মতো আহত ও নিগৃহীত হয়েছিলেন। মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিল ৮৩ জনের। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমাসহ শত শত উপজাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে দখলদারমুক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের সেই অবদান অস্বীকার করি কী করে! একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উপজাতির সংখ্যা সহস্রাধিক। সংখ্যাহীন এমন অনেক উপজাতি যোদ্ধা রয়েছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অসাধারণ বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব রেখে এ দেশের বিজয়কে সহজতর করেছেন। অথচ স্বাধীনতার পর তথাকথিত সমাজপতিদের দ্বারা ক্রমাগত অবহেলা, বঞ্চনা, নিগ্রহ ও অস্বীকৃতির কারণে অনেকের মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ধামাচাপা পড়েছে, আবার অনেককে দেশান্তরিত হতে বাধ্য করেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এমনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যাদের পরিবার অর্থের অভাবে অর্ধাহার-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। বছর ঘুরে যখন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ফিরে আসে, তখন দেশব্যাপী যে এত উৎসবের আয়োজন করা হয়, সে উৎসব-আয়োজনে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে বেঁচে থাকা এসব প্রান্তিক মহান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কথা আমরা কতজনই বা স্মরণ করি।

ইউ কে চিং মারমা বীরবিক্রম, তেমনই একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বোচ্চ খেতাবধারী একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা। বান্দরবান জেলার মারমা জনগোষ্ঠীর এ বীরসৈনিক জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ দেশকে মুক্ত করেছেন। একাত্তরের মার্চে যখন তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, তখন তার পরিবার সঙ্গে ছিল না। পরিবার পড়েছিল বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে; তার স্ত্রী ছিল তখন সন্তানসম্ভবা। আর তিনি ছিলেন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) নায়েক পদমর্যাদার সৈনিক হিসাবে রংপুর জেলার হাতিবান্ধা বর্ডার আউট পোস্টে বা বিওপিতে। তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দেশব্যাপী পাকিস্তানি হায়েনারা যখন বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার দুদিনের মাথায় নায়েক ইউ কে চিং মারমা হাতিবান্ধা বিওপি’র বাঙালি ইপিআর সৈনিকসহ বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহের সময়ে ইউ কে চিং নিজ হাতে বিওপি’র দায়িত্বে কর্মরত একজন অবাঙালি সুবেদার ও দুজন সৈনিককে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মূলত উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর জেলায় যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রংপুর, লালমনিরহাট, পাখিউড়া, কাউয়াহাগা, বাঘবান্ধা, চৌধুরীহাট, জয়মনিরহাট, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, রায়গঞ্জ ও কুলাঘাট অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। অথচ স্বাধীনতার পর জীবনসায়াহ্নে এসে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থাভাবে জীবন-জীবিকা অর্জনে যার শেষ নেই কষ্ট করে গেছেন। জীবন চলার পথে আর্থিক দৈন্য তার নিত্যসঙ্গী ছিল। স্ত্রী, দুই পুত্রসন্তান ও এক কন্যা নিয়ে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন অবস্থার সংসার জীবন ছিল তার। ২০১৪ সালে ২৫ জুলাই এ বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনাবসান হয়।

১৯৫২ সালে ১৯ বছর বয়সে ইউ কে চিং ইপিআরে যোগদান করেন। একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি নায়েক পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তাকে হাবিলদার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮২ সালে তৎকালীন বিডিআর থেকে সুবেদার পদে অবসরগ্রহণ করেন। একাত্তরের ৩ মার্চ তিনি রংপুরের ১০ নম্বর উইংয়ের অধীন লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা বিওপিতে যোগ দেন। ২৯ মার্চ ভোর ৪টায় হাতিবান্ধা বিওপি’র বাঙালি ইপিআর সদস্যরা একযোগে বিদ্রোহ করে পরদিন ভারতের সোনারহাটে কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আরব আলীসহ প্রায় শতাধিক ইপিআর ও অন্যান্য মুক্তিবাহিনী সদস্যের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হন।

আগেই উল্লেখ করেছি, ইউ কে চিং মারমা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে উল্লেখ করার মতো বেশ কয়েকটি সফল অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে কাউয়াহাগা হাট অপারেশন অন্যতম। এ অপারেশনটি ইউ কে চিং মারমার একক নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল। তবে এ অপারেশন নিয়ে কথা বলব না। তার চেয়েও বড় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম ভুরুঙ্গামারী যুদ্ধে ইউ কে চিং মারমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে কথা বলব। ভুরুঙ্গামারীতে পাকিস্তানি জওয়ানরা রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, গণহত্যা চালিয়ে ভুরুঙ্গামারীর মানুষদের তটস্থ করে ফেলে। সিদ্ধান্ত হয়, বীরউত্তম লেফটেন্যান্ট আশফাকুস সামাদ ও লেফটেন্যান্ট আবদুল্লাহর নেতৃত্বে দুই দিক থেকে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে এ অঞ্চল থেকে তাদের বিতাড়িত করা হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভুরুঙ্গামারী-জয়মনিরহাট সড়কে রোড ব্লক দেওয়ার জন্য ইউ কে চিং মারমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউ কে চিং মারমার অধীন এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা এবং অতিরিক্ত একটি এলএমজি ও ওয়্যারলেস সেট দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, ভুরুঙ্গামারীতে আক্রমণ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনারা এ পথে যেন পালিয়ে যেতে না পারে অথবা জয়মনিরহাট বা অন্য কোনো স্থান থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে কোনো ধরনের সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা যায়। ১২ নভেম্বর ভোর ৪টায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ শুরু হয়। এ আক্রমণে ভারতের এক কোম্পানি সৈন্যও অংশগ্রহণ করে। ইউ কে চিং মারমা আক্রমণের আগে থেকেই প্লাটুন নিয়ে রোড ব্লক স্থাপন করে অবস্থান নেন। আক্রমণ শুরুর পরপর ভুরুঙ্গামারী বাজারের দিক থেকে রোড ব্লকের ওপর ক্রমাগত মর্টার ফায়ার আসতে থাকে। এ অবস্থায় ইউ কে চিং মারমা তার দলবল নিয়ে অবস্থান দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন। ওদিকে যৌথ বাহিনী ও পাকিস্তানি উভয় দলই মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষের মর্টার, আর্টিলারি শেলিং, ভারী মেশিনগানের ফায়ারের প্রচণ্ড শব্দে পুরো ভুরুঙ্গামারী এলাকায় এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিছুক্ষণ পর লেফটেন্যান্ট সামাদ ওয়্যারলেসের মাধ্যমে নির্দেশ দেন পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও যেন ইউ কে চিং মারমা দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান ধরে রাখে, যাতে পাকিস্তানিরা পালিয়ে যেতে না পারে। লেফটেন্যান্ট সামাদের কথায় বোঝা গেল, যুদ্ধের মোড় ঘুরছে এবং যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভোরের দিকে বাজারের দিক থেকে ইউ কে চিং মারমার প্লাটুন অবস্থানের ওপর ঘন ঘন গুলিবর্ষণ আসতে থাকে। গুলিবর্ষণ প্রচণ্ডতায় একজন মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদতবরণ করেন। ইউ কে চিং মারমা বুঝতে পারলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা রোড ব্লকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড গুলিবর্ষণে এতটুকু বিচলিত না হয়ে ইউ কে চিং মারমা তার নেতৃত্বের গুণে প্লাটুনের মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এরূপ পরিস্থিতিতেও তার দলের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের ওপর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পালটা গুলিবর্ষণের ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শত্রু পক্ষের গুলির তীব্রতা কমতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানিরা যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের ফলে এ পথ দিয়েই জয়মনিরহাটে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল; কিন্তু ইউ কে চিং মারমার দৃঢ় নেতৃত্বের ফলে রোড ব্লকের তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়। ফলে, তারা বাধ্য হয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মূল সড়ক এড়িয়ে জয়মনিরহাট ও রায়গঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে প্রায় ৪০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানিরা পালিয়ে যাওয়ার পর ইউ কে চিং মারমা তার প্লাটুন নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া ক্যাম্প ভুরুঙ্গামারী সার্কেল অফিসে যান এবং অফিস ভবন তল্লাশি করে একটি তালাবদ্ধ কক্ষে আটক ২০ জন নির্যাতিত নারীর সন্ধান পান। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি শান্ত হলে, এসব অসহায় নারীকে অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধজয়ের পর ভুরুঙ্গামারীতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ইউ কে চিং মারমা ডজনের বেশি অপারেশনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনা ছিল রায়গঞ্জের যুদ্ধ; যে যুদ্ধে সুবেদার আরব আলী নেতৃত্বে ইউ কে চিং মারমা ও তার দলের সদস্যদের শত্রুর কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আশফাকুস সামাদ বীরউত্তম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ইউ কে চিং মারমা সেই ঘটনা আজীবন স্মরণে রেখেছিলেন। তিনি শুধু বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণই করেননি, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে নেতৃত্বও দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের এসব যুদ্ধাভিযান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার এ অবস্মরণীয় অবদানের কথা স্বাধীনতার ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লিখে রাখা উচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউ কে চিং মারমাকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ইউ কে চিং মারমার মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা নতুন প্রজন্মের কাছে বর্ণনা করা উচিত। কিন্তু, আমরা কি তা করছি? করছি না! তাদের এ মহান অবদানের অনেক কাহিনি আজও তথাকথিত সভ্য সমাজের চোখের আড়ালেই রয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত সভা-সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমেও খুব বেশি গুরুত্ব পায় বলে মনে হয় না। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ছাড়া সারা বছর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্যকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে যেভাবে তুলে ধরা কর্তব্য ছিল, সেভাবে তুলে ধরা যায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাখ্যা দিয়ে এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে আসছে। দলীয় স্বার্থে একটি রাজনৈতিক দল তো পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই নিজেদের পকেটবন্দি করার চেষ্টা করেছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেই নতুন প্রজন্মের স্বচ্ছ ধারণা নেই, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবদানের কথা কতটুকুই বা জানবে? একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলা ও বাঙালি জাতীয়তা নিয়ে আমাদের গর্ব কখনোই পরিপূর্ণ হবে না, যদি না আমরা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ মহান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা বুকভরে গ্রহণ না করি।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম