Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

আফ্রিকার জন্য রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার ইতিবাচক দিক

Icon

আদামু বি. গারবা

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর আফ্রিকাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওডিআই গ্লোবাল, আফ্রিকান ইকোনমিক রিসার্চ কনসোর্টিয়াম (এইআরসি), ইকোনমিক রিসার্চ ফোরাম (ইআরএফ) এবং পার্টনারশিপ ফর ইকোনমিক পলিসির (পিইপি)’র প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আফ্রিকায় যেমন সংকট মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা গড়ার ক্ষেত্রে নীতিগত প্রভাব দেখা দিয়েছে, তেমনি এ অঞ্চলে খাদ্য এবং কৃষিপণ্য সরবরাহেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতিবেদনে মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মোজাম্বিক, মরক্কো, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সুদানের ওপর কেস স্টাডি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেখা গেছে, সরাসরি বাণিজ্য সংযোগ কম হলেও খাদ্য ও সার আমদানির জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ওপর আফ্রিকা নির্ভরশীল।

এ সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী তেল এবং খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, তেল ও খাদ্যের দাম যুদ্ধের পর এখন অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আফ্রিকাতেও বার্ষিক জিডিপি ৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিতে পারে। তবে এর প্রকৃত প্রভাব সম্ভবত আরও বেশি হবে; কারণ ২০২২ সালের পর তেল ও খাদ্যের দাম যথাক্রমে ৪০ ও ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে সুদের হার বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা পালাক্রমে পুঁজি বহিঃগমন, মুদ্রার মূল্যহ্রাস এবং আফ্রিকার অনেক দেশের জন্য ঋণের উচ্চ ব্যয়ের সৃষ্টি করেছে। একটি দেশের ওপর প্রভাবের মাত্রা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা, আর্থিক উন্মুক্ততা এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার ওপর নির্ভর করে। এ সংঘাতটি আফ্রিকার ম্যাক্রোইকনোমিক এবং সামাজিক কার্যক্রমের অবনতির ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ সংকটগুলো আফ্রিকার উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ধীর করে দিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ২০২২ সালে, ৫৪৬ মিলিয়ন আফ্রিকানের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন নতুন দরিদ্র মানুষ যুক্ত হয়েছে এবং পাঁচজন আফ্রিকানের মধ্যে একজন উচ্চ পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, কেনিয়া এবং মিসর এক সময় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে যথাক্রমে ৮৫ ও ৬৭ শতাংশ গম আমদানি করত। বর্তমানে কৃষির জন্য অত্যাবশ্যক সারও দুর্লভ ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। মিসর, ইথিওপিয়া, মরক্কো, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সারের চাহিদা অনুযায়ী ১১ থেকে ৪১ শতাংশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আমদানি করত। এখন খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, যা লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে; যা জাতীয় বাজেট ও পরিবারের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কিছু দেশে জ্বালানির দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, এ উচ্চমূল্য সে দেশগুলোর সরকার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অথবা দেউলিয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি করেছে। অর্থনৈতিক চাপ অনেক আফ্রিকার পরিবারকে তার প্রয়োজনের বাইরে খরচ করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করেছে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্বল জনগোষ্ঠী।

পশ্চিম আফ্রিকাতেও পরিস্থিতি একই। নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক সংকট যুদ্ধের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দৈনন্দিন জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সার সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি করেছে, ফলে সারের দাম বেড়ে গেছে। একইভাবে, ময়দা, চাল, গম ও রান্নার তেলের মতো প্রধান খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দেশের দুর্বল কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে এবং স্থানীয় মুদ্রাকে দুর্বল করেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিয়ে গেছে।

(আরটি নিউজ থেকে ভাষান্তর)

আদামু বি. গারবা : নাইজেরিয়ার সাবেক (২০১৯/২০২৩) প্রেসিডেন্ট প্রার্থী

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম