Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

হালফিল বয়ান

কেন বাড়ছে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার

Icon

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কেন বাড়ছে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার

সংগৃহীত ছবি

উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার ইংরেজিতে মব জাস্টিস, মব রুল, মবোক্রেসি, ওখলোক্রেসি নামে পরিচিত; যা একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষের দ্বারা আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী কর্তৃত্ব ও দাপট কায়েম করাকে বোঝায়। সরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা এবং শাসনব্যবস্থার শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আইন ও বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এ গোষ্ঠীবদ্ধ প্রবণতার মধ্যে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রত্যক্ষ ছাপ বিদ্যমান। সংখ্যা ও শক্তির জোরে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথা, প্রতিষ্ঠান, আইন-কানুনকে অবজ্ঞা করে সহিংস পন্থায় নিজের কার্যসিদ্ধি করা কিংবা প্রতিপক্ষকে নিধন বা নির্মূল করাই উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার বা মব জাস্টিস; যার সঙ্গে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সম্পর্ক বিপরীতমুখী।

খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ সালের কাছাকাছি সময়ের গ্রিক ইতিহাসবিদ পলিবিয়াস এ ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি অ্যারিস্টটলের তিনটি শাসনব্যবস্থার আলোচনায় গণতন্ত্রের একটি অবক্ষয়িত রূপ হিসাবে প্রতিস্থাপন করে নতুন ধারণা ‘ওখলোক্রেসি’ ব্যবহার করেন। শব্দগতভাবে গণতন্ত্র হলো ‘জনগণের শাসন’, যা সাধারণ ইচ্ছার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়। অন্যদিকে, ওখলোক্রেসি হলো ‘উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার’, যা রাজনৈতিক বিষয়ে একটি দূষিত ইচ্ছা, বিভ্রান্তি, অযৌক্তিকতা বলপ্রদর্শনের মাধ্যমে করতে সচেষ্ট হয় এবং সুশাসন ও আইনের বিপরীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচারের নামে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চাপিয়ে দেয়। ওখলোক্রেসি শব্দটি অর্থ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘মব রুল’ বা ‘মবোক্রেসি’র সমার্থক, যা নতুন শব্দ হিসাবে ১৮ শতকে উদ্ভূত হয়েছিল, যেখানে ‘মব’ শব্দটি ‘জনসাধারণের ভিড়’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তখন ইংরেজ সমাজ অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ছিল এবং লন্ডন বা প্রাদেশিক শহরগুলোতে বিরক্ত মানুষের দ্বারা দাঙ্গার সৃষ্টি হতো। রানি অ্যানের শাসনকালে (১৭০২-১৭১৪) ‘মব’ বা উত্তেজিত জনতা কথাটি ব্যাপক প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব পায় তখন কোনো পুলিশ বাহিনী ও জনশৃঙ্খলা না থাকার কারণে।

ইউরোপ ক্রমশ গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের দিকে ধাবিত হলেও উন্মত্ত জনতার তাণ্ডব বা মব জাস্টিস থেমে থাকেনি। ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থানে মব বিচার আরও বাড়ে। নাৎসি জার্মানিতে ১৯৩৮ সালে ‘ক্রিস্টালনাখট’ ছিল রাষ্ট্রসমর্থিত মব আক্রমণের একটি উদাহরণ, যেখানে প্রতিপক্ষের ব্যবসা, উপাসনালয় ও ব্যক্তিদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালানো হয়। সর্বসাম্প্রতিককালেও মব জাস্টিস দেখা গেছে উন্নত বিশ্বসহ নানা দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের আক্রমণ বা জার্মানিতে রাজনীতিকদের প্রতি জনতার আক্রোশ সবই সহিংস মব জাস্টিসের উদাহরণ।

বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্রহীনতা, সুশাসনের অভাব এবং জাতি ও গোষ্ঠীগত দাঙ্গার ক্রমবর্ধমান ধারায় জনউচ্ছৃঙ্খলতা আফ্রিকার দেশগুলোতে চরম আকার ধারণ করেছে; যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘মব জাস্টিসের আফ্রিকান সিনড্রোম’। যেমন, উগান্ডায় মব সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছিল বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে। একপর্যায়ে তা মারাত্মক আকারে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ২০১৩ সালে দেশটিতে উত্তেজিত মবের হাতে মৃত্যুর ঘটনা ৪২৬টি থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে দাঁড়ায় ৭৪৬-এ। উগান্ডায় মব সহিংসতার সূচনা হয়েছিল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ও বিচারব্যবস্থার প্রতি দেশটির জনগণের অনাস্থা থেকে। পরে তা সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করায় মব জাস্টিস প্রতিরোধে ২০১৯ সালের পর আলাদা একটি বিভাগ খুলতে হয়েছিল উগান্ডা সরকারকে। তাছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া ইত্যাদি দেশেও মব জাস্টিসের ঘটনা বেড়ে প্রাণঘাতী ও মারাত্মক আকার নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২২ সালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৭ হাজার। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯৪টি বা প্রায় ৭ শতাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মব সহিংসতায়। নাইজেরিয়ায় ১০ বছরে অন্তত ৫৫৫টি মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেছে।

আফ্রিকার দৃষ্টান্ত থেকে দেখা যায়, বাজার বা ব্যস্ত সড়কের মতো জনাকীর্ণ এলাকাগুলোয় মব সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। মব সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে দেশগুলোর সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে দায়ী করা হয়। তাছাড়া ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে নানা কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে অভিযুক্তদের মব সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচুর নজির রয়েছে। দারিদ্র্য ও অশিক্ষা আফ্রিকায় মব জাস্টিসের ঘটনা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খল গণবিচারের উদাহরণ লক্ষ করা যায় ভারতে; যেখানে ধর্মের নামে, জাত-পাত, বংশ ও কৌলীন্যের ছদ্মাবরণে প্রতিপক্ষকে নৃশংসভাবে হতাহত করা হয়। বিশেষত ধর্মীয় ও মতবাদের দিক থেকে যারা ভিন্নতা পোষণ করেন, তাদের নিধনের জন্য ধর্ম কিংবা উগ্র ধর্মীয় রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের চেতনায় সংখ্যাগরিষ্ঠকে উত্তেজিত ও উন্মত্ত করে লেলিয়ে দেওয়া হয়। নিরীহ ও দুর্বল সংখ্যালঘু বা মাইনোরিটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এ ধর্মান্ধ ও রাজনৈতিকভাবে আগ্রাসী গোষ্ঠীর মব জাস্টিসের কারণে ভারতের বহুত্ববাদী সমাজ, সংসদীয় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ভঙ্গুর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার, মব জাস্টিস, মব রুল, মবোক্রেসি, ওখলোক্রেসিসংশ্লিষ্ট ঘটনা-দুর্ঘটনা বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৬। ওই মাসে সংঘবদ্ধ পিটুনিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে ঢাকায়, ৭টি। এছাড়া ২০২৪ সালে সারা দেশে মারা যায় ১৪৬ জন। ২০২৩ সালে ৫১ জন, ২০২২ সালে ৩৬, ২০২১ সালে ২৮ এবং ২০২০ সালে মারা যায় ৩৫ জন। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে দলবদ্ধ পিটুনিতে নিহত হয় ২১ জন। ফেব্রুয়ারিতে মবের শিকার হয়ে মৃত্যু হয় সাতজনের। আর মার্চের প্রথম চার দিনেই মব জাস্টিসের নামে মারা যান দুজন। আর গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।

শুধু রাজধানী বা বড় শহরেই নয়, নিভৃত পল্লি-গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচারের তাণ্ডব। কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই গণপিটুনিতে জীবন্ত মানুষকে দিনদুপুরে হত্যা করা হচ্ছে। বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করা হচ্ছে। দলবদ্ধভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রান্ত করা হচ্ছে নারকীয়, বর্বর কায়দায়। সাধারণ ও শান্তিপূর্ণ জনজীবনের সামনে ‘মব জাস্টিস’ এক মূর্তিমান বিভীষিকা ও পৈশাচিক আতঙ্কের নাম। হাল আমলে সবার মনে একই প্রশ্ন, কেন বাড়ছে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার বা মব জাস্টিস? গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার বা মব জাস্টিস আমাদের কোন অন্ধকারে নিয়ে যাবে? মব জাস্টিসের বাড়বাড়ন্তের পটভূমিতে সমাজ ও রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বহু প্রত্যাশিত রক্তপাতহীন নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত হতে পারবে কি?

সবচেয়ে বড় যে বিপদ মব জাস্টিসের কারণে হচ্ছে, তা শুধু নাগরিক নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তিহানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শাসনের স্থিতিশীলতার জন্যও প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। রাষ্ট্র ও সরকারের চোখের সামনে ও নাকের ডগায় সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে যা খুশি করার প্রবণতা সুশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও চ্যালেঞ্জের শামিল, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো শুধু মব জাস্টিসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্করণই নয়, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের বীজস্বরূপ। সমাজে এসব বীজ অবাধে রোপিত হয়ে বিষবৃক্ষ বিস্তার লাভ করলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। রাষ্ট্র ও সমাজ নিপতিত হবে অতল নৈরাজ্য, নৈরাশ্য ও অরাজকতার গহ্বরে এবং জনতার যাবতীয় শুভ উদ্যোগ ও অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও পালাবদলের সময় যখন ক্ষমতা-কেন্দ্র অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী ও কম স্থিতিশীল থাকে, তখনই মব জাস্টিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। একাত্তর-পরবর্তী অস্থিতিশীল শাসনকালে শহরে-বন্দরে আকছার গণপিটুনিতে মানুষ মারা হয়েছে। হাট-বাজার, ব্যাংক লুট করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ বা শত্রুর তকমা দিয়ে নাজেহাল করা হয়েছে বহু মানুষকে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য গ্রাম। সদ্য বিগত ফ্যাসিবাদী আমলেও জঙ্গি, সন্ত্রাসী লেবেল লাগিয়ে নিরপরাধ মানুষের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন করা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠকে উদ্দেশমূলকভাবে ভিন্নমত ও সংখ্যালঘু মতবাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে নানা অবাস্তব ও কাল্পনিক ট্যাগ লাগিয়ে; যার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ রুখে দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারী শাসন ও ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু বিপ্লব বা বিদ্রোহের ক্ষেত্রে মব যেমন ইতিহাস পালটে দিয়েছে, তেমনি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে কখনো কখনো তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় অনেক দেশ বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধের দিকেও চলে গেছে। আমরা এখন এমনই একটি সংকুল পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে বিপ্লব-পরবর্তী শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও দৃঢ় শাসন নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও দৃঢ় শাসনের পূর্বশর্ত পরিপূরণ না করে সংস্কার, নির্বাচন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা তর্কসাপেক্ষ বিষয়। সবকিছুই মব জাস্টিসের ত্রাসে তছনছ হলে আশাবাদ হতাশায় পরিণত হতেও সময় লাগবে না।

অতএব, সরকারকে নিজের ক্ষমতা কাঠামোর স্পষ্ট জানান দিতে হবে। সরকারের বাইরে রাজনৈতিক দল, সামাজিক বা অন্য কোনো শক্তি যদি নিজস্ব পরিধিতে বিকল্প ক্ষমতা কাঠামো তৈরি করে যাকে খুশি তাকে গণপিটুনি দিতে থাকে, যখন-তখন কারও বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করতে থাকে, কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, কাউকে কাউকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করতে কিংবা জুতার মালা পরিয়ে কান ধরে উঠবস করাতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কর্তৃত্ব বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস কিংবা ভরসাও তখন অটুট থাকতে পারে না। ফলে সাধারণ আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে নয়, সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দিক থেকে উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার বা মব জাস্টিসকে পর্যালোচনা করে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, হাতে আইন তুলে দলবদ্ধ হয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে কাউকে হত্যা, মারধর, ঘরে-দোকানে আক্রমণের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং এতে সুশাসনের বদলে হতাশা ও নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধসে পড়ায় মব সহিংসতার ঘটনাগুলো ক্রমেই বাড়তে থাকে, যা রোধ করতে না পারায় জনমনে আতঙ্কও বাড়ছে। জনমনের এ ভীতি দূর করতে হবে। সুশাসনের এ বিপদকে অবশ্যই বিদায় করতে হবে। বিপ্লবের ক্ষেত্রে মব ইতিবাচক হলেও বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে কখনো কখনো তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বা একাধিক ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরি হওয়ায় কোনো কোনো দেশ গৃহযুদ্ধের দিকেও চলে গেছে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিচে বিভাজিত সমাজব্যবস্থা ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাই জরুরিভিত্তিতে মব জাস্টিস, মব রুল, মবোক্রেসি, ওখলোক্রেসি ইত্যাদির অবসানকল্পে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম