‘গ্লোবাল সাউথ’ বলে কিছু নেই

জাঁ-নোয়েল ব্যারো
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের বলা হচ্ছে, পৃথিবী ‘গ্লোবাল নর্থ’ এবং ‘গ্লোবাল সাউথে’ বিভক্ত। কিন্তু এর অর্থ আসলে কী? কী অর্থনৈতিক পার্থক্য? ২০টি শীর্ষ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির সাতটি ‘দক্ষিণে’ অবস্থিত। ‘দক্ষিণে’ কিছু দেশ তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় ৮০ গুণ ধনী। জলবায়ুর পার্থক্য? জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বের প্রতিটি দেশকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোকে। ১০টি বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী দেশের মধ্যে, যদি আমরা প্রতি বাসিন্দার কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন অনুযায়ী বিচার করি, তাহলে উত্তরে ও দক্ষিণে এটি সমানসংখ্যক।
আমরা কি অভিবাসন পার্থক্যের কথা বলছি? অভিবাসনের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে ঘটে। রাজনৈতিক বিভাজন? উত্তর ও দক্ষিণ উভয় ক্ষেত্রেই যারা সমষ্টিগত সমাধান সমর্থন করে এবং এর বিপরীতে যারা বৈশ্বিক বিষয়গুলো থেকে সরে আসার চেষ্টা করে, তাদের মধ্যে একটি বিভাজন রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ উভয়েরই আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ উভয়েরই কিছু দেশ আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং কিছু দেশ তা লঙ্ঘন করে।
হ্যাঁ, আমরা একটি খণ্ডিত পৃথিবীতে বাস করছি, কিন্তু এটি কি উত্তর ও দক্ষিণের ভৌগোলিক বিভাজনের লাইন বরাবর হচ্ছে? অবশ্যই না। জাতিসংঘও এই কৃত্রিম বিভাজনকে স্বীকৃতি দেয় না। এটি সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন এমন দেশগুলোর শ্রেণিবিভাগে গুরুত্ব দেয়।
বাস্তব বিভাজনের লাইন হলো সেই লাইন, যারা আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে, তাদের সঙ্গে বাকিদের আলাদা করে। জি-২০ বৈঠক এবং অন্যসব জায়গায় আমাদের আলোচনা হওয়া উচিত উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সংঘাত নিয়ে নয়, বরং আইনের সমর্থকদের এবং শক্তির ক্ষমতার সমর্থকদের মধ্যে বিভাজন নিয়ে।
ফ্রান্সে আমাদের নৈতিক দিকনির্দেশনা উত্তর বা দক্ষিণ দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং নির্ধারিত হয় ন্যায় দ্বারা। আমরা কোনো সংকট বা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দিক থেকে আমাদের চোখ ফিরিয়ে নিই না। একটি আক্রমণের শিকার দেশ এবং একটি আক্রমণকারী দেশ-এই পার্থক্যটি উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় না।
এ কারণেই ফ্রান্স নিন্দা জানায় গাজা এবং পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘনের, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের (২০২৪) সন্ত্রাসী হামলার, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আক্রমণযুদ্ধের এবং সুদানে সুদানি সশস্ত্র বাহিনী এবং আরএসএফ দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার। এ কারণেই ফ্রান্স লেবাননে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। এ কারণেই ফ্রান্স গ্রেট লেক অঞ্চলে সংঘাত বন্ধ করতে কাজ করছে, যেখানে এম-২৩ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে চলেছে।
এ কারণেই ফ্রান্স কাজ করছে, যাতে সিরীয়রা একটি সার্বভৌম, শান্তিপূর্ণ সিরিয়ায় শান্তি ও স্বাধীনতার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, যা তাদের আঞ্চলিক পরিবেশে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। এবং আমি এ অঞ্চলের প্রতিটি সফরে আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছি।
কারণ ফ্রান্স দ্বিমুখী ভূমিকা পালন করে না। ফ্রান্সের কণ্ঠস্বর, যা সবসময় সমতা ও আইনকে রক্ষা করে, তা আইনকে চ্যালেঞ্জ করার সময়েও শোনা যাবে, যদি আমরা এই আইনকে শক্তিশালী করি। এর মানে হলো, বৈশ্বিক শাসনে সবারই একটি ভূমিকা রয়েছে, কাজেই এটি সংস্কার করতে হবে। মাল্টিলেটারালিজম সংস্কারের পথে প্রতিটি সেকেন্ড, যা আমরা নষ্ট করি, তা তার প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধতার দাবি জোরদার করে।
ফ্রান্স চায়, শান্তি এবং বৈশ্বিক শাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো এখন থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হোক, যখন আমাদের দেশ জি-৭-এর সভাপতিত্ব করবে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী আসন্ন। আসুন আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাই, যাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আজকের পৃথিবীকে প্রতিফলিত করে, এবং যাতে বৈশ্বিক শাসনে আমাদের আফ্রিকান অংশীদারদের নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটি সঠিক স্থান দেওয়া যায়।
আমাদের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর উদ্যোগে প্যারিস প্যাক্ট ফর পিপলস অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটের কার্যকর বাস্তবায়নেও অগ্রগতি সাধন করতে হবে। কারণ কোনো দেশকে দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া উচিত হবে না। আমাদের যথেষ্ট উন্নয়ন সহায়তার জন্য বেসরকারি অর্থায়ন প্রয়োজন এবং আমাদের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থন করার জন্য নতুন ধারণার উদ্ভাবন করতে হবে।
আরব নিউজ থেকে ভাষান্তরিত
জাঁ-নোয়েল ব্যারো : ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী