Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

একুশের চেতনা যুগে যুগে অনুপ্রেরণা জোগাবে

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একুশের চেতনা যুগে যুগে অনুপ্রেরণা জোগাবে

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী সরকারে পতনের মধ্য দিয়ে দেশ নতুন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এমনই এক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পালিত হতে যাচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি মানুষ এ দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যই স্মরণীয় হয়ে আছে, তা নয়। এ দিনটি বাংলাদেশের মানুষের অস্তিত্বে মিশে আছে এবং থাকবে চিরদিন। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতি তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়নি।

বাংলাদেশের মানুষের এ বিরল ত্যাগ ও বিসর্জনের স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্যই জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করে থাকে।

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববাংলা সংগত কারণেই পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। তারা ভেবেছিল, পাকিস্তানের অধীনে তারা একটি সত্যিকার স্বাধীন দেশের নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবে।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দেশ ভাগের পর এ অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারে, পাকিস্তানের শাসন কাঠামোর আওতায় এদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার মোটেও নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৪৮ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই। পাকিস্তানি শাসকচক্র সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাষার ওপর আক্রমণ চালায়। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।

একমাত্র উর্দুই হবে সর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা। কিন্তু সেই সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই ছিল বাংলা ভাষাভাষী। অথচ রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণে তাদের যুক্তিসংগত দাবি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়। সেই সময় যদি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।

যা হোক, পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে ড. মো. শহীদুল্লাহসহ এদেশীয় বুদ্ধিজীবীরা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু তাদের সেই যৌক্তিক দাবির প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতি না দেখিয়ে পাকিস্তানি শাসকচক্র ঘোষণা করে, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশন চলাকালে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ছাত্রদের মিছিলে গুলি করে। এতে রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই শহিদ হন। আহত হন বিপুলসংখ্যক ছাত্র। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছর বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা মাতৃভাষার দাবিতে সংগ্রাম করে।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনীর নির্মমতা এ অঞ্চলের স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, তারা পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সঠিক কাজ করেনি। তাই তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হন। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা আমাদের বাঁচতে শেখায়। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা আমাদের আত্মোপলব্ধি ঘটায়। এ অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারে, পাকিস্তানি শাসকচক্র কোনোদিনই তাদের ন্যায়সংগত অধিকার মেনে নেবে না।

পাকিস্তানি শাসনাধীনে পদে পদে লাঞ্ছনা ও শোষণই তাদের ললাট লিখন। তাই তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে এ অঞ্চলের মানুষকে ভীরু এবং নিজেদের স্বার্থ সম্পর্কে খুব একটা সচেতন নয় বলেই মনে করা হতো। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি সেই চিরাচরিত ধারণাকে সম্পূর্ণ পালটে দেয়। এতে মানুষ প্রমাণ করে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তারা প্রতিবাদী হয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উদ্যোগী হতে পারেন।

একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের মনে দৃঢ়সংগ্রামী হয়ে ওঠার প্রত্যয় জাগায়। আমরা যদি প্রত্যক্ষ করি তাহলে দেখব, পরবর্তী প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা মূল শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। একুশ মানে মাথা নত না করা-এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় চেষ্টা করেছে।

আমরা যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে এক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। ইতিহাস সাক্ষী, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যখন কোনো ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে লিপ্ত হয়, তখন স্বেচ্ছাচারী সরকার সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহের বিস্ময়কর প্রভাব কখনো শেষ হওয়ার নয়।

যখন জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হয়, তখনই কোনো না কোনো পর্যায়ে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এবং অত্যাচারীর মসনদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারলে কোনো আন্দোলনই বৃথা যায় না।

পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের পতনের পেছনেও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। আসলে একুশ আমাদের স্বাধীনভাবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শেখায়। সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। এ আন্দোলনের পেছনেও একুশের চেতনা কাজ করেছে।

একুশের মূল চেতনা হচ্ছে অন্যায়ের কাজে মাথা নত না করা এবং রক্ত দিয়ে হলেও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা। বাংলাদেশের মানুষ এ পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন করেছে, তার প্রতিটির পেছনেই কোনো না কোনোভাবে বৈষম্য এবং ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্য কাজ করেছে। একুশের চেতনাও ছিল ঠিক তাই। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কোনো আন্দোলনকেই একুশের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করা যায় না।

একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা শুধু বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর চেতনা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপক। একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। একুশ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সাধারণ মানুষের ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। এ অঞ্চলে ভাষাভিত্তিক একটি আঞ্চলিক রাষ্ট্র গঠনের বীজ একুশের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রোপিত হয়। পাকিস্তান ছিল ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্র আর বাংলাদেশ হচ্ছে ভাষাভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য অনেক গভীর ও সুদূরপ্রসারী।

সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়বাহী একটি ঘটনা। ভাষা আন্দোলনে মূলত শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্বে দেয়। কিন্তু তাদের সেই আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল।

ভাষা আন্দোলন ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত দাবি। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক কেন তার নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারবেন না? কেন তাকে বিদেশি ভাষায় কথা বলতে এবং দাপ্তরিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে হবে? মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। কোনোভাবেই সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মানুষের সমর্থন ও পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা ছিল। ভাষা আন্দোলন জাতীয় জীবনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাংলা মায়ের যেসব শ্রেষ্ঠ সন্তান জীবন দিয়েছেন, তাদের সেই আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না, যেতে পারে না। একুশের চেতনা আমাদের যুগ যুগ ধরে পথ দেখাবে, প্রেরণা জোগাবে। প্রতিটি দুর্যোগ-বিপাকে একুশের চেতনা জাতিকে পথ দেখিয়ে চলেছে।

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে বিশ্বের এক নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে না নিয়ে আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ফ্যাসিবাদী শাসকের অনমনীয় মনোভাবের কারণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এক দফা অর্থাৎ সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয়েছিল, তারাও একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিল। তারা শত অত্যাচার-নির্যাতনের মুখেও পিছু হটেনি। তারা একুশের চেতনায় অনুপ্রাণিত ছিল।

ভাষা আন্দোলনও ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে ভাষার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। আর এবারের ছাত্র আন্দোলনও ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এ বৈষম্য ছিল সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধার নামে সৃষ্ট বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশ পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার সবগুলোর পেছনেই বৈষম্য নিরসন এবং ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের ইস্যুটি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হওয়ার পর সমাজ থেকে সব বৈষম্য দূরীকরণ হয়েছে, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। এখানো আমাদের দেশে সামাজিক বৈষম্য প্রচণ্ডভাবে বিরাজমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের দুটি প্রধান চেতনা বা উপলক্ষ্য ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের অধিকার আদায় এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণ। এ দুটি অধিকার আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি।

বিগত সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। দেশের ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সমাজে দুটি শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একশ্রেণির মানুষ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছেন। আরেক শ্রেণির মানুষ ক্রমেই দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সরকারি দলের নেতারা এবং সরকারসমর্থক গোষ্ঠীগুলোই এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। একশ্রেণির মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ নানা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। ফলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করে সেই ঋণের অর্থ লুটে নিয়েছে সরকারসমর্থক একটি বিশেষ মহল। ফলে দেশ এখন কার্যত বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৪ হাজার ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার।

গত ডিসেম্বর শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৪ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামীতে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করে তা থেকে বিগত সময়ে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নামে গৃহীত ঋণের একটি বড় অংশই লোপাট করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি করা হয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এদেশের জনগণকে ভোগ করতে হবে।

এযাবৎকালে সৃষ্ট সমাজের সব অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা নিরসনে একুশের চেতনা যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রেরণা জোগাবে।

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম