Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

অপরাধীদের কোনো ছাড় নয়

Icon

এরশাদুল আলম

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপরাধীদের কোনো ছাড় নয়

প্রতীকী ছবি

ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস হলো। সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ, প্রবেশন পিরিয়ডও শেষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এখনো আসেনি। সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বা উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। যৌথবাহিনী ছয় মাস ধরেই মাঠে আছে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও আছে। কিন্তু পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ফলে ঠিক ছয় মাসের মাথায় যৌথবাহিনী একটি অভিযান শুরু করতে বাধ্য হলো। সরকারকে বাধ্য হয়েই এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

৫ আগস্টের পর পতিত দলের সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আইনানুযায়ী ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনলাইনে ও অফলাইনে তাদের আস্ফালন বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে তারা ঢুকে পড়েছে। এমনকি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনেও তারা সরব। এমনকি তারা উসকানিও দিচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগের জন্য আন্দোলন করছিল। সেখানে গোপালগঞ্জ থেকে আসা এক যুবক বোরকা পরে শিক্ষিকা সেজে আন্দোলন করছে। এভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ তথা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছদ্মবেশে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এ সরকারকে ব্যর্থ করাই তাদের একমাত্র এজেন্ডা। তাদের পলাতক নেত্রীর সিরিজ ফোনালাপেও সেটা স্পষ্ট। সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র ও কার্যক্রম বহাল আছে। তিনি তার কর্মীদেরও সেই নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন এবং কর্মীরা সে অনুযায়ী একের পর এক নাশকতা করেই যাচ্ছে। এমন অবস্থায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা খুবই জরুরি ছিল। সরকার সেটি অনুধাবন করেছে।

গাজীপুরের সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে যৌথবাহিনীকে অপারেশনে নামতে হলো। সেটিও পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম সহযোগী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর এবং সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল বাহিনীর কারণেই। তারা নতুন করে গাজীপুরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে যৌথবাহিনী সারা দেশেই অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযান অবশ্যই সফল হতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই স্থিতিশীল করতে হবে। শুধু সন্ত্রাস দমন নয়, ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য যারা সড়ক অবরোধ করে দিনের পর দিন ভোগান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের ব্যাপারেও কিছুটা কঠোর হতে হবে। কঠোরতা মানেই গুলি বা জলকামান নয়। বিশৃঙ্খলা দমনে পুলিশের আরও নানা কৌশল আছে, সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা বলও প্রয়োগ করতে হবে। দিনের পর দিন সড়ক অবরোধ করে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে গোষ্ঠীস্বার্থ আদায় কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

যৌথবাহিনীকে দেশের স্বার্থে পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ অভিযান পুলিশের ইমেজ পুনরুদ্ধারের এক বড় সুযোগ হতে পারে। বিগত সরকারের সময় পুলিশের দলীয় ব্যবহারের ফলে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি তলানিতে ঠেকেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা। এ কথা অনস্বীকার্য, পুলিশের অধিকাংশ সদস্যই নিরীহ ও নির্দলীয়। সবাই অপরাধী নয়। কিছু সদস্যের জন্যই এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পরিবর্তিত সময়ে সব পুলিশ সদস্যকেই সম্মিলিতভাবে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। এ অভিযানের মাধ্যমে পুলিশ তার হারানো ভাবমূর্তি ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে পারে।

এই সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে থেকে আওয়ামী দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তবে যতই উসকানি দিক, জনগণ থেকে তারা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দল হিসাবে আওয়ামী লীগের নতুন কোনো অর্জন এতে যোগ হবে না। আওয়ামী লীগের অর্জন ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়ে গেছে। ইউনূস সরকার চিরদিন থাকবে না। নির্বাচন দিয়ে তারা চলে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায়, তবে তাদের জনগণের কাছেই ফিরতে হবে। কিন্তু সে উপলব্ধি দলের কার্যক্রমে বা দলের নেত্রীর কাজে বা কথায় প্রতীয়মান নয়। হত্যা, হিংসা, ষড়যন্ত্র ও দেশবিরোধী কথোপকথন ও পরিকল্পনা শেখ হাসিনার প্রতিটি ফোনালাপে উপস্থিত। কিন্তু দেশের মানুষ এসব বয়ান আর নেয় না। ১৫ বছরের আওয়ামী বয়ান যে এদেশে কাজ করেনি, গদি হারিয়ে পালানোর পরও দলের নেত্রীই সে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন না। দলের কর্মীরা বুঝবে কীভাবে? হেদায়েত আল্লাহর হাতে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের সাফল্য কামনা করি। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশ, পতিত শক্তির অনেক ধৃত অপরাধী জামিনে বের হয়ে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক পুলিশের সঙ্গে রয়েছে তাদের ১৫ বছরের সখ্য ও দোস্তি। এর বদৌলতে অনেক নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আজ হাজতের বাইরে। তারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলাও করছে। তাদের কাছে অস্ত্র আছে।

ছয় মাস হলো অস্ত্র উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ১৫ বছরে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের হাতে যে অবৈধ অস্ত্র গেছে, তা উদ্ধার হয়নি। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানে যাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, তাদের অনেকেই এখনো গ্রেফতার হয়নি; তাদের অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। যৌথ অভিযানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আগে গ্রেফতার করতে হবে। যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখে তলে তলে জামিনের ব্যবস্থা করে দিলে অভিযান ফলপ্রসূ হবে না।

জনগণ আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে সরকারের কঠোরতা চায়। সরকারকে সফল করতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে আমরা যে ঐক্য গড়েছিলাম, তা ধরে রাখতে হবে। ফ্যাসিস্টবিরোধী সব দলের জন্যই এটি একটি লিটমাস টেস্ট। এখানে মাঝামাঝি কোনো পথ নেই। পতিত সরকারের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা অস্থিতিশীলতা তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে সবাইকেই সমস্বরে আওয়াজ তুলতে হবে। সরকারকে কঠোর হতে হবে। সরকার কঠোর হলে এর বিরুদ্ধে আমরা যদি আবার সুশীল হয়ে যাই, তাতে স্বৈরাচারই প্রশ্রয় পাবে। সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছুই বেআইনি। বেআইনি সংগঠন ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইন কঠোর। কাজেই, যারা আইনপ্রয়োগ করবেন, তাদেরও কঠোর হতে হবে।

এরশাদুল আলম : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট

Jamuna Electronics
wholesaleclub

img img
Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম