Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বন্ধের আগে নিরীক্ষা করুন

Icon

রন পল

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধের আগে নিরীক্ষা করুন

ছবি: সংগৃহীত

আপনি যখন মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাইটগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, তখন আপনাকে জানানো হচ্ছে, এই সাইটটি খোলা যাচ্ছে না। কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবর-নতুন ট্রাম্প প্রশাসন শুধু ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিতই করেনি, বরং এটিকে আবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করা হতে পারে। আবার ইলন মাস্কের বিবৃতি যুক্ত করে অন্যান্য গণমাধ্যম এমন রিপোর্টও প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে, এটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

তাই যদি হয়, তাহলে ইউএসএআইডি বন্ধ করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নেওয়া অনেক নাটকীয় পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক মার্কিন নাগরিক এখনো মনে করতে পারেন, ইউএসএআইডি একটি সরকারি সংস্থা, যা বিদেশে দুর্যোগকবলিত স্থানে ত্রাণ বিতরণ করে থাকে। তারা এখনও ইউএসএআইডির লোগোযুক্ত চাল বা শস্যের বস্তাকেই স্মরণ করতে পারেন; কিন্তু ইউএসএআইডি আসলে তা নয়। আদতে ইউএসএআইডি বিশ্বব্যাপী মার্কিন সরকারের ‘শাসন পরিবর্তন’ কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইউএসএআইডি প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিদেশে ‘এনজিও’ গঠন করে, যা ছায়া সরকার হিসাবে কাজ করে এবং নির্বাচিত সরকারগুলোকে দুর্বল করে দেয়, যেগুলোকে মার্কিন হস্তক্ষেপকারীরা উৎখাত করতে চায়। বিদেশে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিপর্যয়ের পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউএসএআইডির হাত দেখা যায়। ইউক্রেন থেকে জর্জিয়া এবং তা থেকেও অনেক দূর পর্যন্ত, ইউএসএআইডি বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, যা আমেরিকানদের ক্ষেত্রে ঘটলে তাদের ক্ষুব্ধ করত।

যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউএসএআইডির কার্যক্রমে ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করলেন, আমরা দ্রুতই জানতে পারলাম এ সংস্থাটি কতটা ক্ষতিকর। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইউক্রেনের গণমাধ্যমগুলো ইউএস ডলারের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। জানা গেছে, দেশটির ৯০ শতাংশ গণমাধ্যমই মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়! এর মানে হলো, ইউক্রেনে প্রায় কোনো স্বাধীন গণমাধ্যম নেই, শুধু ভুয়া সংবাদমাধ্যমগুলো আছে, যারা মার্কিন প্রশাসনের প্রচারণার লাইন মেনে চলে। কেউ কি মনে করেন, এই সম্পূর্ণ মার্কিন অর্থায়িত ‘সংবাদমাধ্যমগুলো’ এমন কোনো গল্প প্রকাশ করবে, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রকাশ করতে চায় না?

এটি স্পষ্টতই অনৈতিক, বিপজ্জনকও বটে। ইউক্রেন সম্পর্কে মার্কিন মূলধারার গণমাধ্যমের বেশিরভাগ গল্প স্থানীয় মিডিয়ার ‘প্রতিবেদন’ থেকে উদ্ভূত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের খবর থেকে শুরু করে হতাহতের সংখ্যা এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর অবস্থা পর্যন্ত সব খবর মার্কিন সরকার-সমর্থিত মিডিয়া আউটলেট দ্বারা লেখা হচ্ছে এবং এরপর মার্কিন ও অন্যান্য পশ্চিমা মিডিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ছে। এটি একটি প্রচারণা চক্র, যা শুধু মার্কিন নাগরিকদেরই প্রভাবিত করছে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আউটলেটগুলোতে-যেমন কংগ্রেসে ভুল তথ্য সরবরাহ করছে, যারা ইউক্রেন সম্পর্কে খবরের জন্য মার্কিন মূলধারার মিডিয়া প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে।

তাই এটি আশ্চর্য নয় যে, ওয়াশিংটনে অনেকেই এই নিরাশাজনক যুদ্ধকে সমর্থন করে যাচ্ছেন! কিন্তু ইউএসএআইডি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজেই রয়েছে, তা নয়। ইলন মাস্ক সম্প্রতি নিউইয়র্ক পোস্টের এক নিবন্ধ এক্স হ্যান্ডলে পুনরায় পোস্ট করেছেন, যেখানে রিপোর্ট করা হয়েছে, ইউএসএআইডি ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সকে ৫৩ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে উহানের ল্যাবে করোনাভাইরাসের গেইন-অফ-ফাংশন গবেষণা সমর্থনের জন্য! ইউএসএআইডি কি কোভিডের তহবিলেও সাহায্য করেছে? আমেরিকানদের জানার কিন্তু অধিকার আছে।

বিদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মার্কিন নাগরিকরা নিজেদের অত্যন্ত উদার প্রমাণ করেছে। ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সহায়তা সংস্থাগুলো বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের শিকারদের আরও কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারে। ইউএসএআইডির একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ নিরীক্ষার প্রয়োজন। মার্কিন নাগরিকরা জানার অধিকার রাখেন তাদের নামে বিদেশে ঠিক কী করা হচ্ছে। তারপর এজেন্সিটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে এবং এর কর্মচারীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে। এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও মহান করার পথে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অ্যান্টিওয়ারডটকম থেকে অনূদিত

রন পল : টেক্সাসের সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম