ট্রাম্পের উচিত এখনই উদ্যোগ নেওয়া

ডেভ ডিক্যাম্প
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাই সবাই মিলে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করি। রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানরা মারা যাচ্ছে। আমি চাই এসব মৃত্যু বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’ প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় দুই সপ্তাহ পরও রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানরা মারা যাচ্ছে-শুধু সৈন্যা মারা যাচ্ছে, এমনটি নয়। ২৯ জানুয়ারি রাশিয়ার বেলগোরোদ ওব্লাস্টে ইউক্রেনের একটি ড্রোন মা ও তার দুই বছরের শিশুকে হত্যা করে। পরের দিন একটি রাশিয়ান ড্রোন উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আঘাত করে। এতে ছয়জন নিহত হয়, যাদের বয়স্ক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দূত কিথ কেলগকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ১০০ দিন সময় দিয়েছেন বলে জানা গেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইস্টারের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে স্থায়ী শান্তি চুক্তি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানানো হবে।
এখন পরিস্থিতি এমন যে, যখন-তখন অনেক ইউক্রেনিয়ান ও রাশিয়ান মারা যাচ্ছে। কেন এত মৃত্যু? ইউক্রেনকে চলমান যুদ্ধে সফল হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এখন বিশেষ কিছুই করার নেই। এটি সবাই জানে, সময় এখন রাশিয়ার পক্ষে। শান্তি অর্জনের জন্য ইউক্রেনকে বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা ১০০ দিনের মধ্যেই।
প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতি-হতাহতের ঘটনা ছাড়াও যুদ্ধ বন্ধের আরও কারণ রয়েছে। এ বিষয়ে ঝুঁকি বৃদ্ধির বিশেষ কারণ ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলো প্রতিদিন রাশিয়ায় উড়ছে এবং কখনও কখনও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অত্যন্ত সংবেদনশীল অবকাঠামো এগুলোর লক্ষ্য। অনেকের বিশ্বাসের বিপরীতে, ইউক্রেন ড্রোন বিষয়ে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। জানা গেছে, দায়িত্ব পালনের শেষ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন গোপন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় ড্রোন উন্নয়নে ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার কথা রয়েছে। বস্তুত পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়েই রাশিয়ার ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
রাশিয়া দেখিয়েছে, তারা পশ্চিমা সমর্থিত চলমান যুদ্ধে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যেতে চায় না; এবং এখন এমন সম্ভাবনা আরও কম। কারণ নতুন মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধ শেষ করার কথা বলছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার কিছু বিবেকহীন ব্যক্তি, এমনকি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উসকানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এক্ষেত্রে রাশিয়াকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।
ফাঁস হওয়া মার্কিন পরিকল্পনায় এমন তথ্য রয়েছে যে, শান্তি চুক্তি হয়ে গেলেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক আইন তুলে নেওয়ার আহ্বান জানাবে। এমন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির পক্ষে নির্বাচন না করার অন্য কোনো অজুহাত থাকবে না এবং চুক্তি স্বাক্ষর করার পর তিনি (জেলেনস্কি) তার দেশের ভূখণ্ডের একটি অংশ হারাতে বাধ্য হবেন।
জেলেনস্কি জানেন, তার ক্ষমতায় থাকার দিন এখন গণনা করা হচ্ছে এবং এ যুদ্ধ তার উত্তরাধিকারীকেই পরিচালনা করতে হবে। রাশিয়ার আক্রমণের প্রথম সপ্তাহে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিবর্তে এমন একটি যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে স্মরণ করা হবে, যে যুদ্ধে তিনি কখনোই জিততে পারেননি। রুশ আক্রমণের প্রথম সপ্তাহেই যদি একটি চুক্তি করা সম্ভব হতো, তাহলে ইউক্রেনকে আজকের তুলনায় অনেক বেশি অক্ষত রাখা যেত।
ইউক্রেনিয়ান ও রাশিয়ানদের স্বার্থে-যারা আগামী দিনগুলোতে মারা যেতে পারেন-এবং বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের উচিত এখনই জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলা যে, যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে।
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে Antiwar.com-এ প্রকাশিত
ভাষান্তর : মোহাম্মদ কবীর আহমদ
ডেভ ডিক্যাম্প : Antiwar.com-এর সাংবাদিক