মার্কিন মদদে বিশ্বের বিরুদ্ধে ইসরাইল
জন জে. ডানকান
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
কয়েক মিলিয়ন ডলারের প্রচারাভিযানের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ও প্ররোচনায় ইসরাইল আজ বিশ্বের বিরুদ্ধে। গত ২০ নভেম্বর গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একমাত্র ‘না’ ভোটটি দেয়। ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে যা করছে, তার বিরুদ্ধে বাকি বিশ্ব কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। কিছু আমেরিকান খ্রিষ্টান ইসরাইলের সমালোচনা করতে ভয় পায়, কারণ বাইবেলে বলা হয়েছে, যারা ইসরাইলকে আশীর্বাদ করবে, তারা আশীর্বাদ পাবে। তবে ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্ট উভয় গ্রন্থে একথাও বলা হয়েছে, ঈশ্বর চান আমরা শান্তির অন্বেষা করি এবং তা অনুসরণ করি। এবং বাইবেলের দশটি আদেশের (টেন কমান্ডমেন্টস) মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি হলো ‘তুমি হত্যা করো না।’
আমার নিজের খ্রিষ্টান বিশ্বাস আমাকে বিশ্বাস করতে চালিত করে, গাজার হাজার হাজার শিশুকে যারা হত্যা করেছে-এবং এখনো হত্যা করছে, ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন। বাইবেলের ম্যাথিউ ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-যিশু একটি ছোট শিশুকে তার কাছে ডেকে বললেন, ‘... যে কেউ নিজেকে এই ছোট শিশুর মতো নম্র করে, সে স্বর্গের রাজ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। যে কেউ আমার নামে এরকম একটি ছোট শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকে গ্রহণ করে।’
ইসরাইল নববর্ষের দিনে গাজায় আরও ২৮ জনকে হত্যা করে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ ২ জানুয়ারি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বোমাহামলার সংখ্যা বাড়াতে চলেছেন। এরপর ৪ জানুয়ারি নিহত হন আরও ৬৫ জন।
এটা সত্যিই আমাকে দুঃখ দেয় এবং মাঝে-মধ্যে আমি রাগান্বিত হই এটা জেনে, এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে আমেরিকার সরবরাহকৃত বোমা দিয়ে।
শিকাগো ইউনিভার্সিটির দীর্ঘদিনের অধ্যাপক জন মেয়ারশাইমার এ দেশের (আমেরিকা) সবচেয়ে সম্মানিত পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের একজন। গত ১৫ মাসে গাজায় ইসরাইল যে ভয়ংকর নিষ্ঠুর উপায়ে বোমাবর্ষণ করে, অনাহারে রেখে হাজার হাজার নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে, তিনি তার অন্যতম প্রধান সমালোচক। ৩১ ডিসেম্বর মেয়ারশাইমার সাবস্ট্যাকে (আমেরিকার একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ১৭৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন সম্পর্কে লিখেছেন। উল্লেখ্য, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কয়েক দিন আগে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিশদ বিবরণ দিয়েছে। এছাড়াও ডিসেম্বরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা সম্পর্কে ২৯৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অ্যামনেস্টি রিপোর্টের কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। দীর্ঘ তদন্তের পর ইসরাইলের হামলাকে আদালত বলেছিল ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ।’ এর আগে গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত একটি অনুসন্ধানে প্রমাণ পায়, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা করছে।
মেয়ারশাইমার লিখেছেন, তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন, ‘যারা ইসরাইলের গণহত্যাকে সমর্থন করেছে বা নীরব ছিল, তারা তাদের আচরণ এবং রাতে ঘুমানোর ন্যায্যতা প্রমাণ করতে বলে। ইতিহাস তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করবে না।’
গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এমন এক সহিংসতা হিসাবে, যা কিছু মানুষকে একটি গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে টার্গেট করে এবং এর লক্ষ্য হলো একটি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা। ১৯৪৮ সালে গৃহীত গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তিসংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিল।
এটি প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে ইহুদিদের সঙ্গে যা ঘটেছিল, তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে করা হয়েছিল। আসলে তখন যা ঘটেছিল, তাতে আপনি মনে করবেন, ইহুদি জনগণ যে কোনো জায়গায় গণহত্যার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হবে। আমি মনে করি, সবাই বুঝতে পেরেছে, যদি এটি ইসরাইল ছাড়া অন্য কোনো দেশ করত, তাহলে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম ভূমিকা রাখত এবং এ গণহত্যার বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্ব দিত।
আরেক বিশ্ববিখ্যাত পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ জেফরি শ্যাসও এ যুদ্ধের সময় ইসরাইলের অন্যতম শক্তিশালী সমালোচক ছিলেন (প্রকৃতপক্ষে এটিকে যুদ্ধের চেয়ে একটি হত্যাযজ্ঞ বলাই শ্রেয়, কারণ এটি ছিল একতরফা)। কলম্বিয়ার দীর্ঘদিনের অধ্যাপক এবং নিজে একজন ইহুদি হয়েও স্যাক্স বলেছেন, নেতানিয়াহু ‘বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও বিপজ্জনক ব্যক্তিদের একজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু ইসরাইলকে তার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাহীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন-সম্পূর্ণ কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা।’
অ্যান্টিওয়ারডটকম থেকে অনূদিত, ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত
জন জেমস ডানকান জুনিয়র : যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী, সাবেক বিচারক ও রিপাবলিকান দলীয় রাজনীতিক