Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ট্রাম্প কি এখন ইউক্রেনের পক্ষ নেবেন

Icon

লিউক কফি

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাম্প কি এখন ইউক্রেনের পক্ষ নেবেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে ফিলাডেলফিয়ায় নির্বাচনি বিতর্কের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন সম্পর্কে একটি সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। মডারেটরের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘এটি এমন একটি যুদ্ধ, যা সমাধানের বিষয়টি নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই এটি মিটিয়ে ফেলব।’ তিনি কয়েকবারই দাবি করেছিলেন, ওভাল অফিসে প্রবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধটি শেষ করতে পারবেন।

তবে নভেম্বরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্প তার সুর বেশ খানিকটা বদলেছেন। এমনকি তিনি স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতি তার চেয়ে বেশি জটিল ও কঠিন; যা তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন। এমনও বলেছিলেন, এটি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার চেয়ে বেশি কঠিন হতে পারে।

গত ২০ জানুয়ারি তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন সন্ধ্যায় ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি এখনো ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তার একদিনের সময়সীমা পূরণ করতে পারবেন কিনা। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে রসিকতা করে বলেছিলেন, এটি অর্জন করতে তার এখনো ‘অর্ধেক দিন’ বাকি আছে।

এটা স্পষ্ট, গত এক বছরে ট্রাম্প যা বলেছেন, তার বেশির ভাগই ছিল প্রচারণার জন্য। সম্ভবত তিনি সত্যিই বিশ্বাস করেননি যে তিনি দ্রুতই এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারবেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত দুটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, অনেকেই এটি স্বীকার করেন যে, ইউক্রেনে রুশ হামলার সমাধান করতে ট্রাম্পের আশপাশের অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগবে। ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতাদের প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার জন্য তার বিশেষ দূত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলগকে যুদ্ধের সমাধান খুঁজতে ১০০ দিন সময় দেওয়ার ট্রাম্পের নির্দেশের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আশ্চর্যজনকভাবে সত্য, ট্রাম্প এবং তার নিয়োগকারীরা এ যুদ্ধে ইউক্রেনের অবস্থানের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। কেলগ প্রকাশ্যে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী পিট হেগসেথ তার নিশ্চিতকরণ শুনানির সময় বলেছিলেন, ‘আমরা জানি আগ্রাসী কে। আমরা জানি ভালো লোক কে। আমরা দেখতে চাই, যুদ্ধের সম্ভাব্য রেজ্যুলেশন যেন যতটা সম্ভব ইউক্রেনীয়দের জন্য সুবিধাজনক হয়।’ ট্রাম্পের পেন্টাগন ট্রানজিশন টিমের প্রধান রবার্ট উইলকি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলবেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে অথবা ‘আমরা জেলেনস্কিকে তার যা যা প্রয়োজন তা দেব।’

ট্রাম্প নিজেও মস্কোর ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দোষ চাপিয়েছেন। এ সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ক্রেমলিনের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি রাশিয়ার জন্য যাচ্ছি, যার অর্থনীতি ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন খুব বড় এক অনুগ্রহের ওপর আছেন। এখনই স্থির করুন এবং এ হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করুন।’ তিনি দাবি করেছিলেন, রাশিয়া এ সংঘাতের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে; বলেছেন, মস্কো ছিল এ সংক্রান্ত অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধা। রাশিয়াকে লক্ষ্য করে আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্কারোপের হুমকি দেওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা এটি সহজ কিংবা কঠিন উপায়ে করতে পারি-এবং সহজ উপায় সর্বদা ভালো।’

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ আলটিমেটাম মস্কোকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। কয়েকজন ভাষ্যকার এবং রাশিয়ার কিছু গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছে, জো বাইডেন আর হোয়াইট হাউজে নেই। এদিকে, সামনে ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আশাবাদেরও কারণ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাজনৈতিক কার্ড ভালো খেলেছেন। যদিও গ্রীষ্মকালব্যাপী পশ্চিমা নেতাদের ট্রাম্পের সমালোচনা করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জেলেনস্কির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নিশ্চিত করে, তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লোকদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ট্রাম্পের নির্বাচনি জয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই নেতা ফোনে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও দুজনের যোগাযোগ ভালোই দেখা যাচ্ছে।

এ ছাড়া রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সাহসী হস্তক্ষেপের ছয় মাস পর ইউক্রেনীয়রা সফলভাবে একাধিক রুশ পালটা হামলা প্রতিরোধ করেছে, কিছু উত্তর কোরিয়ার সৈন্য এর সঙ্গে জড়িত। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ভূখণ্ড ধরে রাখার কিয়েভের ক্ষমতা ভবিষ্যতের যে কোনো আলোচনার জন্য মূল্যবান সুবিধা প্রদান করবে।

জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে একটি ন্যায়সংগত শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে। কয়েক ডজন দেশের অংশগ্রহণে সৌদি আরব, মাল্টা ও সুইজারল্যান্ডের মতো স্থানে ইউক্রেনের নেতৃত্বে একাধিক শান্তি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাশিয়ার কাজানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে অর্থপূর্ণ সমর্থন বা ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা করেছে মস্কো। ইউক্রেনীয় কূটনীতি ফল দিচ্ছে, সম্ভাব্য ভবিষ্যতের আলোচনার ভিত্তি তৈরি করছে।

এরপর কী? অস্বীকার করার উপায় নেই, ট্রাম্প যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আন্তরিক। কীভাবে তিনি এটি অর্জন করবেন, তা একটি বড় প্রশ্ন। যদিও নতুন প্রশাসনের আরও পর্যালোচনার জন্য মার্কিন বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে; তবে স্পষ্ট করা হয়েছে, এটি ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স ইঙ্গিত দেয়, মার্কিন কার্গো প্লেন, সম্ভবত ইউক্রেনের জন্য সাহায্যে ভরা, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে একটি পোলিশ এয়ারফিল্ডে অবতরণ করেছে। আপাতত, ট্রাম্প রাশিয়াকে চাপ দিয়ে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

ট্রাম্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য বৈশ্বিক মঞ্চে যোগ্য ও শক্তিশালী হয়ে ওঠা। তিনি বোঝেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের যে কোনো রেজ্যুলেশন, যা ইউক্রেনকে দুর্বল বা আরও দুর্বল করে দেবে, সেটাকে রাশিয়ার বিজয় এবং আমেরিকার পরাজয় হিসাবে দেখা হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এক সপ্তাহের কর্মকাণ্ড দেখে তাই ইউক্রেনের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদের কারণ রয়েছে। এ পর্যন্ত ভালোই মনে হচ্ছে।

আরব নিউজ থেকে অনূদিত

লিউক কফি : যুক্তরাষ্ট্রের হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম