Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি বিশ্লেষণ

Icon

সাঈদ খান

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি বিশ্লেষণ

ফাইল ছবি

বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি কেবল বিএনপির নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন নয়, বরং এটি জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক শক্তির চিন্তাভাবনার মিশ্রণ। এ কর্মসূচি জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রের সুরক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, স্বাস্থ্য খাতের আধুনিকায়ন, মানবাধিকার সংরক্ষণ, দুর্নীতির প্রতিরোধ, কৃষির টেকসই উন্নয়ন এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গঠন। এটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি রচনা করে জনগণের অংশগ্রহণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

এ কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি মডেল হতে পারে, যা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে। ৩১ দফার প্রতিটি দিকই রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামো পুনর্গঠনের মৌলিক নীতিমালা হিসাবে কাজ করবে। এগুলোর সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে একটি উন্নত, মর্যাদাশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত করবে, যেখানে আগামী দশকের মধ্যেই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জিত হবে।

বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার প্রথম দফা

‘প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির পরিবর্তে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন এবং সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সব মত ও পথের সমন্বয় এবং অংশীদারত্বমূলক প্রচেষ্টা।

এটি কেবল সম্ভব হতে পারে, যখন আমরা অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি ভবিষ্যৎমুখী সামাজিক চুক্তি তৈরিতে সম্মত হতে পারি। এ চুক্তি এমন একটি কাঠামো নিশ্চিত করবে, যেখানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান থাকবে এবং সব নাগরিক তাদের ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ পাবে।’

মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ

বর্তমান ও অতীতের রাজনীতিতে বিভাজন, বিরোধ এবং প্রতিশোধের যে ধারা রয়েছে, তা বাদ দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। প্রতিযোগিতার জায়গায় পারস্পরিক সহযোগিতা এবং একে অপরের মতামতকে মূল্যায়ন করার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা। রাজনীতিতে ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করা এবং বিরোধীদের পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসাবে নয়, বরং সহযোগী হিসাবে দেখা। বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে দমন করার পরিবর্তে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। মামলা, দমননীতি বা কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধীদের দুর্বল করার প্রচেষ্টা বাদ দেওয়া।

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সম্মান পাবে। সব শ্রেণি-পেশা ও জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে রাষ্ট্রকে সবার জন্য সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা। সমস্যা সমাধানে সহিংস বা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বদলে সংলাপ ও আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। প্রতিহিংসার বদলে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং কল্যাণমূলক চিন্তাধারার প্রচলন ঘটানো।

জাতির ভিত্তি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, যা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং আঞ্চলিক পরিচয়ের পার্থক্যের ঊর্ধ্বে একটি সম্মিলিত জাতীয় পরিচয়কে তুলে ধরে। এটি জাতিগত এবং সামাজিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং সবাইকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসে।

এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে ধনী-গরিব, ধর্মীয় গোষ্ঠী বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে কেউ অবহেলিত বা বঞ্চিত হবে না। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করা। প্রশাসনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করে তাকে জনগণের সেবায় নিরপেক্ষ রাখা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলোকে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি গঠন করা। এ চুক্তি হবে জনগণের পারস্পরিক আস্থা, অংশগ্রহণ এবং একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে। সামাজিক চুক্তি বলতে বোঝায়, জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে এমন একটি অঙ্গীকার, যেখানে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করবে এবং রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে।

প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি বাদ দিলে জাতি একটি শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দপূর্ণ এবং উন্নয়নমুখী পরিবেশে বসবাস করতে পারে। এটি শুধু রাজনৈতিক বা সামাজিক ঐক্যের জন্যই নয়, বরং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যও অপরিহার্য। এ ধরনের চর্চা পরিহার করে একত্রিত কাজ করার মাধ্যমে একটি টেকসই ও সমন্বিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা বা কাঠামো, যেখানে সব নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য সুযোগ এবং সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এটি একটি ন্যায়সংগত সমাজ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেখানে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী, জাতি বা শ্রেণি প্রাধান্য পায় না, বরং সবাই রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে পারে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র এমন একটি সমাজব্যবস্থার প্রতীক, যেখানে সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, সুযোগ এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। এখানে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই; রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায় উন্নয়নের সমান অংশীদার হয়। এটি ন্যায়, সাম্য এবং অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য অপরিহার্য।

রিকশাচালক, হকার, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বেদে, চা-শ্রমিক, আদিবাসী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বস্তিবাসী, নারী শ্রমিক, শিশুশ্রমিক, কামার-কুমার, তাঁতি, জেলে, ধোপা, মুচি, নাপিত, কুলি-মজুর, গৃহকর্মী, ফেরিওয়ালা, নার্স, ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক, হেলপার-ড্রাইভার, নিরাপত্তা কর্মী, মেথর, ডোম, যৌনকর্মী, পথশিশু, হরিজন সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এমন রাষ্ট্রে নাগরিকদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা পেশার ভিত্তিতে কোনো প্রকার ভেদাভেদ থাকে না। আইনের চোখে সবাই সমান এবং ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি প্রতিটি নাগরিকের অপরিহার্য অধিকার। এ নীতির মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মর্যাদাপূর্ণ ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব, যেখানে প্রতিটি মানুষ তাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করে। কর্মসংস্থান, সম্পদের সুষম বণ্টন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে সবার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়। সমাজের সব ধর্ম, জাতি, ভাষা এবং লিঙ্গের মানুষকে মর্যাদার সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মূল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা এবং সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করে। বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এসব সুযোগ সহজলভ্য করা হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং অনগ্রসর জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার সুরক্ষা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা, সম্পদের সুরক্ষা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা, যাতে তারা নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়। জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা। গণতন্ত্রের চর্চা যেন সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা পায়।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের গুরুত্ব

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো গড়ে তোলা সময়ের দাবি। প্রয়োজন যুগোপযোগী একগুচ্ছ কর্মসূচি।

১. দারিদ্র্যবিমোচন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ।

২. নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন।

৩. ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ।

৪. মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আইনি সহায়তা সবার জন্য সহজলভ্য করা।

৫. স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিকাশ এবং গণমানুষের স্বার্থসংরক্ষণে কার্যকর নীতি গ্রহণ।

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের উদাহরণ : স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো (যেমন-সুইডেন, নরওয়ে) : সমান অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিশ্বে পরিচিত। কানাডা বহুজাতিক এবং বহুভাষিক জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত হয়েছে।

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা মানে শুধু একটি রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি নয়; বরং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি-যেখানে নাগরিকদের স্বপ্নপূরণ, সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান রাষ্ট্রের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার প্রধান রোল মডেল হতে পারে।

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপক্ষে, বরং জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিশ্বাসী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে, গণতান্ত্রিক জীবনধারা এবং গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসাবে জাতীয় সংসদকে শক্তিশালী করে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়।

জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুসৃত খালেদা জিয়া সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করেছে। বিএনপি সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদভিত্তিক একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং সফলভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।

বিএনপি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে, সব মত ও পথের মানুষের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে সামাজিক বৈষম্য দূর করা হবে এবং জ্ঞানবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যৎমুখী মানবিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে।

বিএনপি প্রতিশ্রুতি দেয়, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদভিত্তিক একটি সম্মিলিত, বৈষম্যহীন এবং সম্প্রীতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। এ রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার নির্বিশেষে সবাইকে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে, একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে এগিয়ে যেতে থাকবে।

সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র

শান্তি ও সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র। সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং সংস্কৃতির মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একসঙ্গে বসবাস করে। এখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্র বৈচিত্র্যের মধ্যেও একতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি, ন্যায় এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

বৈশিষ্ট্য : বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং তা নিশ্চিতকরণে এ রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাষার বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা করে এবং তা রক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে। প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে জনগণের মতামত, অধিকার এবং অংশগ্রহণের গুরুত্ব দিয়ে ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বিভেদমূলক আচরণ কঠোরভাবে প্রতিহত করা হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে নিয়মিত সংলাপ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, ধর্ম এবং সংস্কৃতির দেশ। এখানে সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা শুধু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য নয়, বরং জাতীয় উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

করণীয় : ধর্মীয় বিভেদ দূর করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার চর্চা বৃদ্ধি করা। সামাজিক সংহতি জোরদার করা, বিভক্তির পরিবর্তে একতাকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা। শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো। বৈচিত্র্য ও সহাবস্থানের মূল্যবোধসম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিদ্বেষমূলক আচরণ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগ করা। স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সংলাপ এবং সহযোগিতা বাড়ানো।

সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা মানে শুধু একটি রাষ্ট্রকে শান্তিপূর্ণ রাখা নয়; বরং নাগরিকদের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করা, যা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাধা নয়, বরং সহায়ক। বাংলাদেশ যদি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে মডেল হতে পারে, তবে এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি অনন্য উদাহরণ হিসাবে দাঁড়াবে।

সাঈদ খান : ডিরেক্টর, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিইউজে

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম