অভ্যুত্থানে পতিতদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়
সাকিব আনোয়ার
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বৈরাচারী শাসকরা যখন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়, তখন তাদের অধিকাংশই দেশত্যাগে বাধ্য হয়। ক্ষমতায় থাকার সময় যেসব দেশ তাদের সমর্থন করে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাহায্য করে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব স্বৈরশাসকরা তাদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিকভাবে তারা আশ্রয় পেতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থায়ী আশ্রয় পায় না। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্বৈরাচারের সহযোগী রাষ্ট্রগুলো উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ বোঝার চেষ্টা করে। এ কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা আপদকালীন আশ্রয় দেয়। আরেকটি কারণ হলো, অন্যান্য মিত্র দেশের শাসকদের কাছে নিজেদের আস্থা টিকিয়ে রাখা।
তবে অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসকদের দেশে ফিরে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার আর সুযোগ থাকে না। এছাড়া দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের কারণে এ ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারীরা আর নিজেদের পুনর্বাসিত করতে পারে না। তাই আশ্রয়দাতা দেশের কাছে তাদের আর কোনো গুরুত্ব থাকে না। তাদের কেন্দ্র করে এসব সরকারের ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা থাকে না। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসকদের জীবন শেষ হয় আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
গত কয়েক দশকে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অনেক স্বৈরশাসক। কিন্তু দেশত্যাগ করে পালানোর পর তাদের বেশির ভাগই দেশে ফিরতে পারেননি। আমৃত্যু নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। আর হাতেগোনা যে কয়জন দেশে ফিরতে পেরেছেন, তাদের কেউই রাজনীতিতে নিজেকে পুনর্বাসন করতে পারেননি। দেশে ফিরতে পারলেও জীবনের বাকি সময় কারাগারেই পার করতে হয়েছে তাদের। গত কয়েক দশকের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা এরকম বেশ কিছু উদাহরণ খুঁজে পাব।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্কোস, চিলির স্বৈরশাসক অগাস্তো পিনোশে, পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ, তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক জাইন এল-আবিদিন বেন আলি, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি, শ্রীলংকার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে আর প্রধানমন্ত্রী, তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগকারী স্বৈরশাসকদের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা এবং সিরিয়ার বাশার আল আসাদ।
আশির দশকে ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন। অথচ সে ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ছিল না দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্কোসের। ভয়ংকর সেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে চিত্রকর্ম সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। মার্কোস একা নন। তার স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসও ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনের জন্য ব্যয় করছিলেন লাখ লাখ ডলার।
মতপ্রকাশের কোনো সুযোগ ছিল না। সরকারি বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হন ফিলিপাইনের প্রায় ৩ হাজার নাগরিক। এমনি এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মার্কোসের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে ফিলিপাইনের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নাগরিক। আন্দোলন রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানে। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে দেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে আশ্রয় নেন মার্কোস। তিন বছরের মাথায় নির্বাসনেই মৃত্যু ঘটে মার্কোসের।
স্বৈরশাসক জাইন এল-আবিদিন বেন আলি তিউনিসিয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন ২৩ বছর। ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। আরব বসন্তের সূচনাকারী হিসাবে পরিচিত তিউনিসিয়ার অভ্যুত্থানটি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পায় জেসমিন রেভল্যুশন বা জেসমিন বিপ্লব নামে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সপরিবারে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বেন আলি। এরপর তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি। নির্বাসিত অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৮৩ বছর বয়সে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
আফগানিস্তানের ২০১৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেন আশরাফ গানি। ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক শহর দখলের অভিযান শুরু করে দেয় তালেবানরা। কয়েক দিনের মধ্যেই তালেবানরা রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি চলে আসে। দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আশরাফ গানি। হেলিকপ্টার ভরে নগদ অর্থ নিয়ে ওমান হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান। তখন থেকে সেখানেই মানবিক আশ্রয়ে আছেন তিনি।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। এরপর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন ২০০১ সালে। একইভাবে ২০০৪ সালে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেন। সংবিধান স্থগিত করে নিজের শাসনকালকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেন। ২০০৭ সালের শেষদিকে বোমা হামলায় নিহত হন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন পারভেজ মোশাররফ। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার দলের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে অভিশংসনের মুখে পড়েন পারভেজ মোশাররফ। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন বার বার। কিন্তু সফল হননি। বেশ কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত গত বছর দুবাইয়ের এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসকদের কেউ কেউ নিজ দেশে ফিরতে পারলেও রাজনীতিতে ফিরতে পারেননি। নিজ দেশেও করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে বলিভিয়ার স্বৈরশাসক ইভো মোরালেসের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। শুরুতে ছিলেন জনপ্রিয়। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে হয়ে ওঠেন স্বৈরশাসক। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৯ সালে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চাইলেন তিনি। কারচুপির সেই নির্বাচনের পর শুরু হলো বিক্ষোভ। গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে মেক্সিকোতে পালিয়ে যান তিনি। পরে দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে আর সেভাবে ফিরতে পারেননি তিনি।
চিলির স্বৈরশাসক অগাস্তো পিনোশের পরিণতি হয়েছিল আরও করুণ। দেশে ফিরতে পারলেও জীবনের বাকি সময় কারাগারেই পার করতে হয়েছে তাকে। ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডনে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ১০ অক্টোবর স্প্যানিশ একটি আদালতের পরোয়ানার ভিত্তিতে লন্ডন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায় ব্রিটিশ সরকার। দেশে ফেরার পর তার বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট ঘটনায় দায়ের করা মামলার দায় নিয়েই ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পিনোশে যখন মারা যান, তখনো তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ৩০০ ফৌজদারি অপরাধের মামলা চলছিল।
এবার অতি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যাক। ২০২২ সাল। শ্রীলংকা নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করল। দেশটির প্রেসিডেন্ট তখন গোতাবায়া রাজাপাক্ষে আর প্রধানমন্ত্রী তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। দেউলিয়া ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জনরোষের মুখে পড়ে রাজাপাক্ষে পরিবার। শ্রীলংকার অর্থনীতির মারাত্মাক পরিণতির জন্য দায়ী করা হয় এই পরিবারকেই। দেশটির মোট অর্থনীতির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ছিল তাদের অলিগার্কদের নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল নিষ্ঠুরভাবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অপরাধেরও অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। গোতাবায়া রাজাপাক্ষে দেশত্যাগ করে প্রথমে মালদ্বীপে, পরে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখানে তাকে ১৪ দিনের ‘ভিজিট পাশ’ দেওয়া হয়। সেখানে অবস্থানকালেই নিজের পদত্যাগপত্র দেশে পাঠান তিনি। এরপর থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এর প্রায় দেড় মাস পর ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ নিয়ে তিনি ফেরত আসেন নিজ দেশে। কিন্তু এখনো রাজনীতিতে ফিরতে পারেননি গোতাবায়া রাজাপাক্ষে।
গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেও ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালান তিনি। এর আগে পরপর তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চরমভাবে হরণ করা হয়। বিরোধী মতের ওপর চলতে থাকে নিপীড়ন, নির্যাতন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের পাশাপাশি তাদের নামে দেওয়া হয় লাখ লাখ মামলা। স্বজনতোষী নীতির মাধ্যমে একটা অলিগার্ক শ্রেণি তৈরি হয়, যাদের হাতে চলে যায় দেশের গোটা অর্থনীতি। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। এ লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থ পাচারে স্বয়ং শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার যুক্ত ছিল। এসব চলতে থাকে প্রকাশ্যেই। নির্লজ্জ, নির্লিপ্ত মিথ্যাচারকে একটা কলায় পরিণত করেছিলেন তিনি। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত এবং বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন খুব স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়। স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাড়ে ১৫ বছর ধরে চলা লড়াই গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয় কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে। পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। তার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে। ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার মা আর রাজনীতি করবেন না বলে শুরুতে ঘোষণা দেন, যদিও পরে রাজনীতিতে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনার অন্যতম অনুষঙ্গ-শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। তিনি কি দেশে ফিরতে পারবেন? ফিরতে পারলেও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে পারবেন? তার কি বিচার হবে?
স্বৈরশাসকরা দেশে ফেরত আসতে না পারার কারণ হলো, দেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের অনুকূলে থাকে না তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে। নিজের দল ক্ষমতায় এলেও নেতারা একজন আরেকজনের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে চান না। এজন্য বিদেশে একবার চলে গেলে নিজ দলের সরকার থাকলেও দেশে আসা সম্ভব হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, জনগণ চায় না তারা ফিরে আসুক। জনগণ তাদের ফেরাতে চায় কেবল বিচারের মুখোমুখি করতে। এ কারণে ফেরত এলেও রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসন ঘটে না।
এ ধরনের ঘটনায় রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ থাকে, যদি দল হিসাবে তারা খুবই শক্তিশালী হয়। শক্তিশালী না হলে ফেরার খুব বেশি সুযোগ থাকে না। আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয়। তাদের পুরো শক্তি ছিল একজনের মধ্যে। আর তাকে ঘিরে ছিল একটা অলিগার্ক শ্রেণি। ২০১৪, ১৮ ও ২৪-এর প্রহসনের নির্বাচন এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বিরোধী মত দমনের জন্য রাজনৈতিক দলের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে দেউলিয়া করেছে। যে নিপীড়ন, নির্যাতন হত্যাযজ্ঞ তারা চালিয়েছে; লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে যেভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, তাতে তারা কয়েক প্রজন্মের সমর্থন হারিয়েছে। দেশে ফেরা তাদের জন্য খুব একটা সহজ হবে না। আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সরকার যে পন্থা অবলম্বন করেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে স্মরণ করিয়েছে। এ দল এখন মানুষের কাছে একটা বিভীষিকা। শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফিরলেও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ফলে তার রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই বললেই চলে। আর সব স্বৈরশাসকের মতো শেখ হাসিনার জন্যও সম্ভবত করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
সাকিব আনোয়ার : রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
mnsaqeeb@gmail.com