বাইফোকাল লেন্স
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ

একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৭ জানুয়ারি ছিল কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪তম বার্ষিকী। এ দিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ আয়োজিত গণজমায়েতে ফেলানীর মা-বাবাসহ হাজারও প্রতিবাদী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। গণজমায়েতে বক্তব্য দিতে গিয়ে ফেলানীর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বলেন, ‘ওই সরকার বিচার করে নাই। নতুন সরকার কিছুতেই যেন ছাড় না দেয়; আমার ফেলানী হত্যার বিচারটা যেন সুষ্ঠুভাবে করে।’ গণজমায়েতে উপস্থিত ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম আবেগতাড়িত গলায় বলেন, ‘এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার আছিল, আমাগো শুধু আশায় আশায় রাখছে। আমার মেয়েকে যারা কাঁটাতারে ঝুলিয়ে মারছে, আমি তাদের বিচার চাই।’ এ উপলক্ষ্যে ওইদিন বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজুভাস্কর্যের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন থানায় সীমান্তে হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অন্য আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন এ দিনটি স্মরণ করে সমাবেশের আয়োজন করে। এসব সমাবেশ বক্তারা সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করে ভারত যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
ফেলানী হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে এসব সমাবেশে অনেকে কথা বললেও আমি ভাবছিলাম ফেলানীর মা-বাবার কথা। তারা ১৪ বছর ধরে হত্যার আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের শাস্তি দাবি করে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন; কিন্তু বিচার পাননি। আমি ভাবছি, যে ভারত সরকার, বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে, হত্যার শিকার অর্ধশতাধিক কোমলমতি শিশুসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষের রক্তে স্নাত শেখ হাসিনাকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারে, সেই ভারত কি ফেলানী হত্যার সুবিচার করবে? বরং এক কিশোরী ফেলানীর হত্যার বিচার শেষ হতে না হতেই আরেক কিশোরীকন্যা স্বর্ণা দাসকে ওরা গুলি করে মারল! গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্তে, বাঁচার জন্য শত অনুনয়-বিনয় করেও ঘাতক বিএসএফের গুলির আঘাতে ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাসের শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায়। বিএসএফের গুলি স্বর্ণা দাসের পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। স্বর্ণা তখনো বেঁচেছিল। সঙ্গে থাকা মা সঞ্জিতা রানী দাস মেয়েকে বাঁচানোর জন্য রাতের আঁধারে গুলিবিদ্ধ মেয়ের হাত ধরে কিছুটা জায়গা টেনে নিয়ে আসেন; কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, বিএসএফের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচার জন্য মা হয়েও হাত ছেড়ে দিয়ে কাঁটাতারের পাশে জলাশয়ে মেয়েকে ফেলে আসতে বাধ্য হন সঞ্জিতা। স্বর্ণা দাসের হত্যার ৮ দিন পর, আরেক বাংলাদেশি কিশোর বিএসএফের হত্যার শিকার হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি সীমান্তে জয়ন্ত কুমার সিংহ নামের এক কিশোরকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। ফেলানী, স্বর্ণা ও জয়ন্ত কেউই চোরাকারবারি ছিল না। তাদের কারও হাতেই কোনো অস্ত্রও ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, কাঁটাতারে আটকে যাওয়া ১৫ বছরের নিরস্ত্র কিশোরী ফেলানী কিংবা মায়ের হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে যাওয়া ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা ও কিশোর জয়ন্ত কীভাবে অস্ত্রধারী বিএসএফের জন্য হুমকির কারণ হয়? সীমান্তে মানুষ হত্যার পর, আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ গুলি করতে বাধ্য হয় বলে ভারত যে এত বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়, ফেলানী, স্বর্ণা এবং জয়ন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সত্যতা কতটুকু প্রমাণ করে?
সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে জানা যায়, বিএসএফ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা না করে বা সতর্ক সংকেত না দিয়েই নির্বিচারে গুলি চালায়। হিউম্যান রাইট ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ বাংলাদেশিদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনা নিয়ে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ নামে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ভুক্তভোগীকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পেছন থেকে পিঠে গুলি করে বিএসএফ। তারা আরও বলেছে, এযাবৎ সীমান্ত হত্যায় যতগুলো মামলা হয়েছে, সে মামলার কোনো তদন্তেই বিএসএফ প্রমাণ করতে পারেনি, হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছে কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া গেছে; যার দ্বারা তাদের প্রাণসংহার বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। সুতরাং হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিএসএফের গুলি চালানোর দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে।’ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যায় বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি ভারত খুব কমই গুরুত্ব দিয়েছে। ভারত এ ধরনের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ না বলে ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’ বলে আখ্যায়িত করে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে বারবার অনুরোধ করার পর ভারত অবশ্য সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী, ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয়েছিল; কিন্তু তারপরও বিএসএফ চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত হত্যার অপরাধে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও ভারত বাংলাদেশকে জানানোর সৌজন্যবোধটুকুও দেখায়নি। কোনো বিএসএফ সদস্য ফৌজদারি অপরাধ করলেও ভারত সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় না। অর্থাৎ সরকারের অনুমোদন না থাকলে ভারতের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিএসএফকেও ফৌজদারি কার্যবিধির বাইরে রাখা হয়েছে। বিএসএফ সদস্যদের এভাবে জবাবদিহিতার বাইরে রাখার কারণেই দিন দিন সীমান্ত হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফেলানীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তখন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর দৃশ্যসংবলিত ছবি যখন ফলাও করে প্রচার হয়, তখন চারদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফেলানী হত্যা নিয়ে ভারতের কোনো কোনো মহলেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে, ভারত বাধ্য হয়ে মুখরক্ষার জন্য হলেও বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আয়োজন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৩-১৫ সালে বিএসএফের বিশেষ আদালত দুবার বিচার করেও আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই ভারতের ‘মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ বা ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে রিট করে। প্রায় এক দশক হয়ে গেলেও ভারতের সুপ্রিমকোর্ট আজও সেই রিটের নিষ্পত্তি করেননি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ গুলি ও নির্যাতন করে প্রায় ৬১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। পৃথিবীতে শুধু ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সীমান্ত ছাড়া আর কোনো সীমান্তে এভাবে মানুষ হত্যা করা হয় না। ভারতের সঙ্গে চীন, পাকিস্তান, নেপালের সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া, সীমান্তে আর কোথাও এমন হত্যাকাণ্ড হয় না। তবে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ নেপাল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গোবিন্দ গৌতম নামে এক যুবক নিহত হয়েছিল। এ ঘটনায় নেপালে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং নেপালের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ রকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ভারতের তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো হয় ও গোবিন্দ গৌতমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। অথচ ফেলানীকে হত্যার পর তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্দেশ দিলেও ভারত সরকার তা আমলে নেয়নি।
ভারত সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রায়ই গরু পাচারকারীদের দোষ দিয়ে থাকে। ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে ভারতের এ অভিযোগ যথার্থ নয়। তাদের ভাষ্য, ‘আত্মরক্ষার জন্যই বিএসএফ গরু চোরাকারবারিদের গুলি করতে হয়।’ তাদের এ অভিযোগ সবক্ষেত্রে সঠিকও নয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাইপথে যে গরু আসে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে বর্তমানে এর হার অনেক কমেছে। কতিপয় কর্মকর্তাসহ বিএসএফের সাধারণ সদস্যরাও যে এসব চোরাইপথের পাহারাদার, সে কথাও অস্বীকার করা যায় না। সীমান্তের এপার-ওপার দুই পারের গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিএসএফও যে জড়িত, এর প্রমাণ তো আগেই হয়ে গেছে। তাদের সায় ছাড়া গরু পাচার কখনো সম্ভব নয়। ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো থেকেই কেবল গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে না, হাজার কিলোমিটার দূরের প্রদেশ থেকেও ট্রাক, ট্রেন ও অন্যান্য বাহনে গরু প্রথমে সীমান্তবর্তী এলাকায় জড়ো করা হয় এবং তারপর সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়। এ সম্পূর্ণ প্রসেসের সঙ্গে বিএসএফ কর্মকর্তারা যে জড়িত, সে ব্যাপারে কয়েক বছর আগে বিএসএফের এক কমান্ড্যান্ট তার মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। মহাপরিচালকের কাছে দেওয়া সেই চিঠির ভাষা ছিল এ রকম, ‘দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের হেডকোয়ার্টার্স থেকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ আসত, সীমান্তে নিয়োজিত কোম্পানি কমান্ডার এবং পোস্ট কমান্ডাররা যেন পাচারকারীদের সঙ্গে গরু পাচারে সহযোগিতা করে।’ তারপর তিনি জানান, ‘দক্ষিণবঙ্গ হেডকোয়ার্টার্সের এসব শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ রকম নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বাহিনীর ভেতরই তো নজরদারি বিভাগ আছে, সিনিয়র অফিসাররা আছেন। তারা কেন চোখ বুজে ছিলেন? যাদের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, গরু পাচার চক্রে জড়িত ছিলেন, তারা সিনিয়র কর্মকর্তারই একাংশ।’ এসব কারণেই গরু পাচার কমেনি। কারণ এর থেকে কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়ে থাকেন। অর্থের এ ভাগাভাগিই সীমান্ত হত্যার অন্যতম কারণ। বিএসএফ কর্মকর্তাদের বোঝাপড়ার এ অর্থে টান পড়লেই সীমান্তে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের ৭০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বিএসএফের নেতৃত্বদানকারী এক ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ভারতের সিবিআই গোয়েন্দাদের হাতে গরু পাচার থেকে পাওয়া বিপুল অঙ্কের অর্থসহ ধরা পড়েন। এ ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল বিএসএফ। এসব খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিতও হয়েছে।
ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনেই নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে বা নির্যাতন করে হত্যা করার বিধান নেই। নিরস্ত্র কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়লেও অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার কোনো ক্ষমতাও বিএসএফের নেই। বিএসএফ যেটা করতে পারে, তা হলো অপরাধীকে আটক করে উপযুক্ত ব্যবস্থার জন্য আদালতে পাঠাতে পারে। কিন্তু ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য স্বীকৃত সব আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল অমান্য করে সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। জয়েন্ট ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকল’-এর ধারা ৮(আই)-এ এসব ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গরু পাচারের বেলায় ধারা ৮(এম) অনুসারে পাচারকালে গরু এবং গরু পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য অপর পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিকটবর্তী থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। অথচ বিএসএফ এসব অগ্রাহ্য করে সন্দেহভাজনদের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই সরাসরি গুলি করে হত্যা করছে। আশ্চর্য লাগে, যখন দেখি, সীমান্ত হত্যার অপরাধ স্বীকার না করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপরই দোষ চাপানো হয়। ভারত এভাবে ভুল পথে পা ফেলেও যখন উচ্চস্বরে কথা বলে, তখন তার আধিপত্যবাদের আসল চেহারাটা নিখুঁতভাবে ফুটে ওঠে। গত পনেরো বছরে বিএসএফ ছয় শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করলেও বাংলাদেশের তরফ থেকে তখন কোনো জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়নি। ভারতের প্রতি শেখ হাসিনার অকৃত্রিম আনুগত্যই এর জন্য দায়ী। শেখ হাসিনার এ নতজানু মনোভাব সীমান্ত হত্যায় ভারতকে আরও আগ্রাসী করে তুলেছিল। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সীমান্ত হত্যার যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথভাবে তার প্রতিবাদ করেছে। শুধু প্রতিবাদ করে বসে থাকলেই হবে না, ফেলানী ও স্বর্ণা দাসের সুবিচারের জন্য সরকারকে আরও সোচ্চার হতে হবে। আর ভারত যদি সীমান্ত হত্যা বন্ধ না করে, তাহলে তাদের আগ্রাসী চেহারার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা