Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাউল গানের মেলায় কেন হামলা?

Icon

সালেহ উদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাউল গানের মেলায় কেন হামলা?

‘গান গাই আমার মনরে বোঝাই/মন থাকে পাগলপারা/আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া।’ কে চায় শাহ আবদুল করিমের এই গানটার গলা টুঁটে ধরতে, সুর স্তব্ধ করতে? কেন?

তুমি দিন থাকতে দ্বীনের সাধন/কেন করলে না/সময় গেলে সাধন হবে না। কোন ধর্মের লোক লালনের এ গানটা গাওয়া নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেন? আমাদের ইমাম ও ধর্মগুরুরা যুগ যুগ একই কথা বলে আসছেন, সময় থাকতে নিজ নিজ ধর্ম পালন করো, পরে সময় শেষ হলে ধর্ম-কর্ম পূর্ণ হবে না।

এ বাউল গানগুলো কথায় ও ভাবে সত্য, সুন্দর ও সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের আরও কাছে নিয়ে আসে। আমাদের দেশে চিরকাল চর্চা হয়ে আসছে বাউল, সারি, মুর্শিদি গান। গাওয়া হয় বৈরাগ্যের গান, যাতে বেজে ওঠে মানুষের মনের সুপ্ত শূন্যতার সুর। আছে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, পল্লিগীতি, কবিগান-গানের আরও কত প্রকারভেদ। এগুলো রচনা করেছে এদেশেরই জনগণ।

বাউল গান হলো ভাবের গান, অনুভূতির গান আমাদের বাউলদের মুখে মুখে হেঁটে বয়ে বেড়াচ্ছে যুগযুগ। এগুলো সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ হয়েছে শুধু সাম্প্রতিককালে। কিন্তু জনপ্রিয়তা ও চর্চার জন্য এগুলো বেঁচে রয়েছে মানুষের মুখে মুখে অনেক যুগ ধরে। গজল ও কাওয়ালিকেও আমরা আপন করে নিয়েছি, যদিও অনেক সময় ভাষাটা উর্দু বা হিন্দি। কাওয়ালি যদিও আমাদের মাটি থেকে আসেনি, তবুও ভাব ও সুরের জন্য আমাদের দেশে কাওয়ালিও বেশ জনপ্রিয়। কাওয়ালি মুসলমান সুফিদের ভক্তিমূলক সংগীত। এর চর্চা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ভারত উপমহাদেশের সব দেশেই প্রবল।

এ নানাবিধ সংগীত ধারা মানুষকে শুধু আনন্দই দেয়নি, মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করেছে, মানুষের বিশ্বাসকে জাগ্রত করেছে এবং মানুষের চিন্তাকে নির্মল করেছে। শাহ আবদুল করিমের ভাষায় এগুলো সেই গান-‘যে গান গাইলে মিলে-আঁধারে আলোর সন্ধান’। এভাবে বাউল সাধকরা আমাদের মনের খোরাক জুগিয়েছেন কত কত যুগ ধরে!

যে সংগীত ও সুর যুগযুগ বাঙালির চিত্ত আলোড়িত করেছে, মনকে বিকশিত করেছে, হঠাৎ কারা যেন বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে সেই সংগীতের চর্চাগুলো। লালনগীতির গানের আসরে হামলা হচ্ছে, বাউল সংগীতের ‘পাগলপারা’য় লাঠিপেটা হচ্ছে, আধ্যাত্মিক চর্চায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ হামলার উৎস কখনো বহিরাগত লাঠিয়াল, কখনো স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্ররা এবং কখনোবা কোনো কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আমাদের দেশে ‘মব হামলা’ বা ‘বিচারবহির্ভূত বিচার’ সংস্কৃতির যে বিস্তার লাভ ঘটছে, এগুলো তারই সম্প্রসারণ। একগুচ্ছ লোক জোর করে তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয় অন্যদের ওপর। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ এ হামলাকে বন্ধ করতে কোনো চেষ্টা করেনি, বরং সংগীতের আসর তাড়াহুড়া করে জোর করে বন্ধ করেছে। পুলিশের এ প্রশ্রয় পেয়ে, এ হামলা দিনদিন সংক্রমিত হচ্ছে অন্য নতুন স্থানে। সাম্প্রতিক কয়টি ঘটনা :

জানুয়ারির ৯ তারিখ, ময়মনসিংহ শহরের ঘটনা : ‘ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর মাজারে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠান হামলা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর গভীর রাতে কয়েকশ মাদ্রাসাছাত্র গিয়ে হামলা চালিয়ে ২০০ বছরের পুরোনো মাজারটির একটি অংশও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’

ঘটনা ৭ জানুয়ারি ফতুল্লায় : বাউল শিল্পী দেওয়ান রাসেল বলেন, ‘রাতে বাউলচর্চা কেন্দ্রে বাউলদের নিয়ে গান করছিলাম। এ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি ফোর্সসহ সমিতিতে আসেন। ওসি আমাদের গান বন্ধ করে দিয়ে সংগীত সরঞ্জাম ঢোল, হারমোনিয়া, প্যাড, ড্রাম জব্দ করে নিয়ে যান। তখন ওসির কাছে জানতে চাই, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জবাবে ওসি বলেন, ‘রাতে বাউল গানের আসর বসার ফলে সড়কে চুরি, ছিনতাই ও মাদকসেবীদের উৎপাত বেড়ে যাচ্ছে। চাইলে দিনভর গান করা যাবে, কিন্তু রাতে গানের আসর বসানো যাবে না।’

ওসি সাহেব বলতে চাচ্ছেন, যারা রাতের বেলা বাউল গান শুনে, তাদের অনেকে পরে রাস্তাঘাটে চুরি-ছিনতাই করে। গুলিস্তান, হকার্স মার্কেট, বায়তুল মোকাররমে পকেটমার বেশি হয় রাতের বেলায়। সেজন্য রাতের বেলায় এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আসলে অপরাধ দিনে হোক বা রাতে হোক, যারাই করুক, তা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নামাজের পরে মসজিদ থেকে জুতা চুরি হয়, তাই বলে মসজিদ অবশ্যই বন্ধ হবে না।

এর কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে ‘লালন মেলার’ আসর বন্ধ করা হয় হেফাজতের আপত্তিতে। মেয়েরা গানের সঙ্গে নাচ করবে, এটাতে তাদের আপত্তি। বলা হয়েছে, যুবকরা আসরে গিয়ে বিপথে যাচ্ছে। অবশ্যই যুবকদের বিপথে যাওয়া কেউ পছন্দ করেন ন। লালন মেলা বন্ধ হলেই যুবকদের বিপথে যাওয়া বন্ধ হবে না। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাজে অপরাধ বাড়াচ্ছে, অনেককিছুই হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এখন কিছু লোক লালনগীতি, বাউলগীতি, গ্রাম্যমেলা এগুলোকে দায়ী করে মূল সমস্যাকে আড়াল করছেন।

২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বরে এক জাতীয় দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে, ‘যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় বাউল গানের আসরের অনুষ্ঠানস্থলে আজ সোমবার দুপুরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ সন্ধ্যা থেকে দুই দিনব্যাপী সেখানে সাধুসংঘ বাউল গানের আসর শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওই হামলার পর বাউল গানের আসর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আয়োজকরা জানান, বিশ্ব বাউলসম্রাট সুফিসাধক ফকির লালন শাহর স্মরণে মনিরামপুর উপজেলার পাড়দিয়া গ্রামের উত্তরপাড়ায় ফকির মন্টু শাহ নামের পরিচিত এসএম ফজলুর রহমানের বাড়িতে ১২ বছর ধরে সাধুসংঘ বাউল গানের আসর হয়ে আসছে। এ বছর ছিল ১৩তম সাধুসংঘ বাউল গানের আসর।’

যে অনুষ্ঠানটি নির্বিঘ্নে ১২ বছর ধরে হচ্ছে, কী এমন পরিবর্তন এলো, এখন হামলা করে এ অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে?

ধর্মের যা করণীয়, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তা করা বাধ্যতামূলক, যদিও না করার দায়িত্ব ওই ব্যক্তির একান্তই নিজস্ব। এর বাইরেও ধর্মকে ঘিরে ক্রিয়াকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়। যেমন আমাদের দেশে মিলাদ, আমরা সবাই সুর করে মিলাদ পড়ি কোনো শুভ সূচনাতে এবং বালামুসিবতেও। ওয়াজ মাহফিল, হামদ ও নাত, ঈদ পুনর্মিলনী এগুলো কোনোটাই ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। আমরা নিজেদের মতো বেছে নিই, কোনোটা কারও বেশি পছন্দ।

ধর্ম ঘিরে আরেকটা অতিরিক্ত চর্চা বের হয়েছে, সেটি ধর্মীয় দর্শন। এগুলোও নানারূপে সাধারণ লোকদের নাগালে এসেছে নানাভাবে-ধর্মীয় ব্যাখ্যা, বিভিন্ন চিন্তাবিদের লেখা বইপত্র, ধর্মীয় সংগীত। ধর্মীয় সংগীত কখনো ইসলাম ধর্ম নিয়ে, আবার কখনো সর্বজনীন মানবিক ধর্মে-আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে অনেকভাবে আকৃষ্ট করেছে। অনেক বাউল সংগীতে সৃষ্টিকর্তার সর্বজনীন উপস্থিতি নিয়ে বন্দনা করা হয়েছে।

একসময় কাজী নজরুল ইসলামকে বলা হতো ‘বিদাতি’, বলা হতো ইসলামবিরোধী। নজরুলের ‘খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে’ গানটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। যারা সমালোচনা করেছেন, তারা তখন গানের মর্মবাণী, ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে যে মাদকতা বা আত্মতা থাকে, তা বুঝতে পারেননি। এখন নজরুলকে ধরা হয় ইসলামি সংগীতের একজন শীর্ষ সাধক। আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে সংগীত চর্চা হয়েছে-ইসলামে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণসংগীত ও ধর্মসংগীত নতুন নয়। সৌদি আরব ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশেই ইসলামি সংগীতের কদর অনেক।

যারা তখন না বুঝে বা না জেনে ‘ধর্মীয় পুলিশ’ হয়ে নজরুলকে নিয়ে কুৎসা রটাতেন, তাদেরই উত্তরসূরিরা এখন আমাদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে হানা দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই বুঝে করছেন, আবার অনেকেই না বুঝে দল মেলাচ্ছেন।

আমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের প্রার্থনার ভাষা, কথা, আর্জি, লয় অনেক সময়ই নানা রকম। কেউ উচ্চৈঃস্বরে, কেউ মিহি সুরে, কেউ সুর করে, কেউ বেসুরে, কেউ কান্নায় আপ্লুত, আবার কেউ চোখ বন্ধ করে নিস্তব্ধ-সবারই প্রার্থনার ধরন আলাদা; কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তার কাছে নিবেদনের আর্তি সবারই সমান।

‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায়/ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খি নায়’। যারা এ মিস্ত্রিকে চিনবেন না বা তার তৈরি ময়ূরপঙ্খি নাওকে বুঝবেন না, তাদের কোনো অধিকার নেই বাউল গানকে বিচার করার।

‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি।/কেমনে আসে যায়।’ এই অচিন পাখিকে যারা চিনবেন না, তারা নিজের মনের খাঁচাতেই উঁকি দিতে পারেন। অবশ্য যারা বাউল গানের এসব প্রতীকী অন্তঃদর্শন বুঝবেন না বা বুঝতে চেষ্টা করবেন না, তাদের জন্য বাউলরা আরও সোজা করে গান লিখে গেছেন-‘ধর্ম কর্ম আপনার মন/করে ধর্ম সব মোমিনগণ।/লালন বলে ধর্মের করণ/প্রাপ্তি হবে নিরঞ্জন।’ ধর্মে-কর্ম করে যে মুমিনরা আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার মন জয় করতে পারবেন, এ কথাটা লালন কত সহজ করে তার গানে বলে দিলেন। এ কথাটা নতুন কিছু নয়। আমাদের ধর্মীয় ইমামদের থেকেও আমরা তা শুনেছি বারবার। পবিত্র কুরআন শরিফে সূরা ইউনূসের আয়াত ৯তে আছে, ‘যারা বিশ্বাসী এবং সৎকর্ম করেছেন-তাদের বিশ্বাসের জন্য সৃষ্টিকর্তা তাদের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাবেন।’

যারা এ বাণী প্রচারে বাধা দেবেন, তাদের সৃষ্টিকর্তা কখনো ক্ষমা করবেন না। রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাদের প্রতিহত করতে হবে।

‘কী ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’-হাছন রাজার এই কথাটা আমরা যে কতবার শুনেছি তার বাউল গানে। আমাদের ধর্মীয় গুরুরা যখন বলেন, ‘এই দুনিয়ার স্বাদ আহ্লাদ, বিলাসিতার কোনো দাম নেই-আসল ঘর ঐপারে’, এর সঙ্গে হাসন রাজার বাণীর তফাত কোথায়? ইসলামের রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১১৪)

সংক্ষেপে বলা যায়, যার যেমন চিন্তাশক্তি, তিনি তত বেশি ভাববেন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে, ধর্মকে নিয়ে, তিনি নিজের মনের ভাষা দিয়ে তা প্রকাশ করবেন এবং তা অন্য অনেকে শুনতে আকৃষ্ট হবেন। আপনারা যারা তাদের ভাষা বুঝবেন না, তাদের দয়া করে ভুল বুঝবেন না। তাদের বাণীতে অনেকে আন্দোলিত হবেন, সেটাকে খারাপভাবে নেবেন না।

মাজার নিয়েও অনেকের অনেক বক্তব্য। কাউকে মাজারে যেতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু যারা মঈনুদ্দিন চিশতি বা হজরত শাহজালালের মাজারে গিয়ে শান্তি পাবেন, তাদের বাধা দেওয়ার আমরা কে? ভারতে গোড়া হিন্দু রাজনীতিবিদরা, তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অগ্রগামী, তারা ভারত থেকে তাজমহল, কুতুব মিনারের মতো মুসলিম নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক দরগাহগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে গত দশ বছর ধরে, কিছু কিছ ভাঙচুর এরই মধ্যে হয়েছে। আমরা কি আমাদের দেশে তাদের অনুসরণ করব?

আমাদের দেশে অনেক স্থানীয় মাজার আছে, যেখানে গিয়ে গ্রামবাসী শান্তি খোঁজেন। মানুষের অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-বেদনা, রোগ-শোক নিরাময়ের সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন মানুষ শান্তি খোঁজে সম্ভাব্য সব জায়গায়। অনেকে প্রতারিত হন, অনেকে স্বস্তি পান। অন্য কারও এতে কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়। এগুলো ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও নয়। যে মাজারে যাবে, সে নামাজ পড়বে, যে অসুস্থ মায়ের জন্য মাজারে শিরনি পাঠাবে, সে অসুস্থ মায়ের জন্য আল্লার কাছে নামাজের পর দোয়া করবে। এতে তো কোনো সংঘর্ষ নেই। আমাদের দেশে এ রীতি চলে আসছে শতবর্ষ ধরে।

আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত ৯ জানুয়ারি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ‘হামলার ব্যাপারে অনেক সময় স্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; আমরা সেজন্য দুঃখিত। এখন থেকে কোনো গানের আসর অথবা মাজারে হামলা হলে আমরা ব্যবস্থা নেব; কাউকে ছাড় দেব না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আশা করি, এ গানের আসরগুলোতে এবং মানুষের মতো করে সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক চর্চায় অন্যরা নাক গলাবেন না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগিয়ে আসবেন মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে।

প্রতি সপ্তাহে সব পত্রিকায় সাহিত্য সাময়িকী বের হয়, আমরা নব্বই শতাংশ লোক এসব কবিতা, গল্প পড়ি না এবং বুঝি না, প্রেম-পিরিত-ভালোবাসা সম্পর্কে কোথায় কী লেখা আছে, তা নিয়ে মাথাও ঘামাই না। যারা সমঝদার, তারা পড়েন এবং উপভোগ করেন। আমরা এ সাময়িকীগুলো প্রকাশে বাধা দিইনা বা আগুন দিইনা বলেই যারা উপভোগ করেন, তারা পড়তে পারেন। আমাদের এ সহিষ্ণুতা যে তাদের আনন্দ ও মানসিক বিকাশে অনেক সাহায্য করে, তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। চিনে মাওসেতুঙের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়, অনেক বইপত্র সাময়িকী পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সাহিত্য ও সংগীত বিকাশের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, মনে করা হতো এগুলো অপ্রয়োজনীয়।

‘যেই গান গাইলে মিলে, আঁধারে আলোর সন্ধান/প্রাণ খুলে গাও, গাইতে যাদের বাসনা।’ যারা বাউল, কাওয়ালি, জারি, সারি বা অন্য গান গাইতে চান, তাদের দয়া করে গাইতে দিন। যারা শুনতে চান, তাদের দয়া করে শুনতে দিন।

সালেহ উদ্দিন আহমদ : লেখক, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ডাকসুর সাবেক সম্পাদক (১৯৭০-৭২)

salehpublic711@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম