ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন কবে?
মোহাম্মদ আবদুল মাননান
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ত্রয়োদশ তথা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে রাজনীতির ময়দান এখন সরগরম। প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচন কবে হতে পারে কিংবা কবে হতে যাচ্ছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের তারিখ নিয়ে মোটা দাগে কতগুলো বিষয় বিবেচনার আছে। বস্তুত, রাজনৈতিক দলের দোষ-ত্রুটি যতই থাক না কেন, দেশের সরকার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই হতে হবে এবং এটিই গণতন্ত্রের রীতিনীতি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নানা সমালোচনা থাকলেও এটিই এখনতক ভালো পন্থা বলেই পৃথিবীময় স্বীকৃত। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনই শেষ কথা এবং সেই শাসক বাছাইয়ের পদ্ধতি হচ্ছে জনভোট।
এদেশে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথার্থ হয়নি; আওয়ামী লীগের এ নিয়ে নানা বয়ান থাকতেই পারে, কেননা নির্বাচন নামীয় প্রহসনে তারাই একমাত্র সুবিধাভোগী ছিল। এ তিনটি জবরজঙ্গল নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে প্রকৃতপক্ষে দলটিকে স্বৈরাচার বানিয়ে দিয়েছে; দলটি এবং প্রধান প্রধান নেতার নামের পাশে স্বৈরাচার শব্দটি স্থায়ীভাবে গ্রথিত হয়ে আছে আর এতে দলটিরই বরং ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে-যদিও এ প্রক্রিয়ায় দলটির কতিপয় নেতাকর্মী বিস্তর সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছে, বারোটা বেজেছে সর্বপ্রাচীন-বৃহৎ-সংগঠিত দলটির; যা দলটির অধিকাংশজন মানতেও চায় না। বলাই হয়, আওয়ামী লীগ সমালোচনা নিতেই পারে না। বিগত সরকার তিনটি নির্বাচনে জনভোটকে ভয় পেয়ে জনতার পরিবর্তে নির্ভরশীল হয়েছিল বাহিনী, আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক আর দলীয় হার্মাদ বাহিনীর ওপর; জনভিত্তি এড়াতেই দলটিকে নানাকিছু করতে হয়েছে-সর্বত্র দলীয়করণেও শেষরক্ষা হয়নি এবং সেই ইতিহাস একদমই চোখের সামনে, লিখিত আছে দেওয়ালে দেওয়ালেও।
স্বৈরাচার পতন-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই মুখ্য কাজ হওয়ার কথা ছিল-অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজই সেটি। এর আগে চারবার অস্থায়ী সরকার এসেছিল দেশে এবং ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকার ব্যতিরেকে বাকি তিনটি সরকার কেবল সরকারের জন্য প্রযোজ্য প্রাত্যহিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একটি নির্বাচন আয়োজনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছিল-নির্বাচনের পর তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজ নিজ কাজে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু এবারের অন্তর্বর্তী সরকার জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় সংস্কার কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিয়েই নির্বাচন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটিই সরকারের দর্শন বলে প্রতিভাত। দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জুলাই-আগস্টে শহিদ পরিবারের প্রতি নজর, অভ্যুত্থানে আহত-পঙ্গুদের পুনর্বাসন-চিকিৎসা, দুর্নীতি-চাঁদাবাজি রোধ, দখল প্রতিরোধ, পাচারকৃত অর্থ ফেরানো, কর্মসংস্থান, দুর্নীতিবাজদের পলায়ন ঠেকানো ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের চেয়ে শুরুতে সংস্কার কমিশন গঠনে অধিক মনোনিবেশ করেছে বর্তমান সরকার। এ কথা ঠিক, একটি সরকারের স্বৈরাচার না হওয়ার উপায় খোঁজা এবং গ্রহণযোগ্য জনভোটের জন্য সংস্কার সর্বজনগ্রাহ্য দাবি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি সেক্টরে সংস্কার, যা গত পনেরো বছরে খাদে পড়ে গিয়েছিল। সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে এ বাণীও যুক্ত হয়েছে, স্বাধীনতার পর কোনো রাজনৈতিক সরকার সুষ্ঠু ভোটের পদ্ধতি প্রচলনে মনোনিবেশ করেনি। আরও বলা হচ্ছে, পতিত স্বৈরাচার সরকার সংবিধানেরও খোলনলচে পালটে দিয়েছে, দিয়েছে কেবল ক্ষমতার চেয়ার স্থায়ী করতে। ফলে সংস্কার তো লাগবেই। মূলত এসব ধারণা থেকেই বর্তমান সরকার সংস্কারে অধিক আগ্রহী; এ আগ্রহ অভ্যুত্থান-পরবর্তী জনদাবির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সামনে থাকা অংশগ্রহণকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও সংস্কারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে-মাঠে না থাকায় এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ঘরানার দল। পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগকে বাদ দিলে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও সংস্কারের জন্য এ সরকারকে যুক্তিসংগত সময় দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল-দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একাধিক বক্তৃতায়ও এসবের প্রতিফলন ঘটেছে; তবে দলটি নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দাবি করে আসছিল। বিএনপির সে দাবি এখনো আছে। জামায়াতে ইসলামী বরং বিএনপির চেয়েও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশি সময় দেওয়ার পক্ষে মতামত জারি রেখেছিল। আওয়ামী জোটের ক’খান দল বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুধীজনও সংস্কারের পক্ষের শক্তি। কিন্তু সংস্কারের জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকার কতদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে, এ নিয়ে শুরু থেকেই সবার মধ্যে প্রশ্ন ছিল। যদিও আমজনতা একটি নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে নেই, কিন্তু অস্থায়ী সরকার কতদিন দরকার, এ প্রশ্ন সর্বত্র আছেই এবং থাকাটাই স্বাভাবিক।
বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে কাক্সিক্ষত নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় জানার পর আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে বিতর্ক এবং আলাপ-আলোচনা জোরালো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এ ভাষণের আগে সেনাপ্রধান বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমকে ‘আঠারো মাস’ বলেছিলেন। আরও দু-তিনজন উপদেষ্টাও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জবাব দিয়েছেন। সেনাপ্রধানের ওই আঠারো মাসের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল, এ নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হবে সরকারের সিদ্ধান্তে। জনাদুয়েক উপদেষ্টার নির্বাচনের সময় নিয়ে কথার পিঠে একই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব তাদের ব্যক্তিগত মতামত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সরকারের অবস্থান মিডিয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারেন, কিন্তু একজন উপদেষ্টার কথাকে কাউন্টার করা তার ক্ষেত্রে যায় কিনা বোঝার আছে। বিজয় দিবসের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনসংক্রান্ত ঘোষণারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রেস সচিব, যা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের কিছুটা ভিন্ন বলে অনেকে মনে করছেন। ড. ইউনূস স্পষ্টত বলেছেন, রাজনৈতিক দল চাইলে অল্পকিছু সংস্কার করে নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষের দিকে, আর প্রত্যাশিত সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হলে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। অথচ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এটিকে ২০২৬ সালের জুন-জুলাই বলে উল্লেখ করেছেন; তিনি সরকারপ্রধানের প্রথম অপশন এড়িয়ে গেছেন; বাদ পড়েছে ‘রাজনৈতিক দল চাইলে’র প্রসঙ্গটি।
বিজয় দিবসের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের নির্বাচনসংক্রান্ত অংশ নিয়ে নানা দোলাচল চলছিল। সেটা প্রেস সচিবের কথায় আরও দুলেছে যেন। এ সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পরপর প্রায় সবাই ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশী ছিল-ব্যতিক্রম ছিল জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ছোট দল এবং আন্দোলনকারী সমন্বয়করা। আওয়ামী লীগ এবং তদ্বীয় মিত্র ছাড়া সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, সুধীজন সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে নিঃশঙ্কচিত্তে সমর্থন জানিয়েছে। বিজয় দিবসে ঘোষিত দুটি সময়ের কথাটা বিএনপি নিতে পারেনি। বিএনপি রোডম্যাপের কথা পুনরুল্লেখ করে নির্বাচনের দিন জানতে চাইছে এবং স্পষ্টত দলটি ২০২৬-এ যেতে আগ্রহী নয়। ইতোমধ্যেই তারা এ নিয়ে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। সভা করেছেন সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং তাদের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করার কারণ আছে। একটি মহল মনে করছে, ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আরও কর্মসূচি অপেক্ষা করছে। পক্ষান্তরে জামায়াতে ইসলামী গোড়াতে সরকারকে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সময় দিতে চাইলেও বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনবিষয়ক ঘোষণার পর কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং ২০২৫ সালেই নির্বাচন-বিএনপির এমন দাবির সঙ্গে জামায়াতের সুর মিলে যাচ্ছে। বাকি থাকে নাগরিক সমাজের একাংশ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সমন্বয়করা নির্বাচনের জন্য সরকারকে বেশি সময় দিতে চায় এবং মাঠে এ আওয়াজ জারি রেখেই চলেছে। শেখ হাসিনার বিচার ব্যতীত নির্বাচনের ঘোর বিরোধী তারা এবং এ বিচার ব্যতিরেকে যারা নির্বাচন চায়, তাদের নানা অভিধায় অভিষিক্ত করতেও পিছপা হয়নি। কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ভাষ্য-একটি বিচারের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিচার শেষ করতে অর্ধযুগও পেরিয়ে যেতে পারে। তারা আরও বলছেন, বিচার যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, সেহেতু রাজনৈতিক সরকারও এ বিচার শেষ করতে পারে।
সমন্বয়কদের সংস্কারের দাবি এবং এ কাজে সরকারের মেয়াদ প্রলম্বিত করার বাসনায় সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার গোড়ার দিকের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে মর্মে অনেকের ধারণা। মোটা দাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি-দখলবাজি রোধ, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাসহ নানা কাজে আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারছে না। ফলে যেসব সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সরকারের বিপরীতে একটি অরাজনৈতিক সরকারে আস্থা রয়েছে, তারা কিছুটা হলেও আশাহত হয়েছে। সরকারকে এখন শুনতে হচ্ছে, কী এমন পরিবর্তন হলো! এখানে উল্লেখ করার আছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ সংবিধান সংশোধন কিংবা অন্যান্য সংস্কার সেই অর্থে বোঝে না। দ্বিতীয়ত, সমন্বয়করা একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়াসী এবং সেটি এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শুরুতে তাদের সংস্কারের পক্ষে যারা সমর্থন জুগিয়েছিল, তারা সরতে শুরু করেছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, মানুষ ভোট দিতে যাবে এবং পছন্দমতো ভোট দিয়ে নির্দ্বিধায় বাড়ি ফিরতে পারবে, এমন সংস্কার অন্তে ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। সংস্কারবাদীদের একাংশ বলছে, সংস্কার একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া; চলছে, চলবে-চালাতে হবে। এদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভবই না এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে যেসব সংস্কার সম্ভব, তার দীর্ঘায়ু নির্ভর করবে রাজনৈতিক সরকারের ওপর। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০০৭ সালেও সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি, বরং সংস্কারের প্রবক্তারা ‘সংস্কারবাদী’ বলে গালির শিকার হয়েছিল।
মানতেই হবে, পনেরো বছর জাতির ঘাড়ে চেপে থাকা স্বৈরাচার খেদানো একটি সফল অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনের সামনে থাকা ছাত্রনেতাদের মতের অমিল উপান্তে পৌঁছে চরম ঝগড়া-বিবাদে মোড় নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না-এতে পতিত দলটির সুবিধা হতে পারে, যা কারোরই কাম্য নয়। সমন্বয়করা দল করতেই পারে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নতুন দল গঠন সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সমন্বয়করা দল সৃষ্টি করলে বা কোনো দলের সদস্যপদ গ্রহণ করলে তিনি বা তারা আর সমন্বয়কের মর্যাদা পাবেন না; তখন একটি রাজনৈতিক দলের মতোই তার/তাদের অবস্থান হবে। ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখন একজন সমন্বয়ককে যেভাবে নিচ্ছে, দলে ঢুকলে সেভাবে নেবে না। সরকারও একই আচরণ করবে-সমন্বয়কদের দল বলে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ থাকবে না, তাতে মস্তবড় প্রশ্ন দেখা দেবে। আর নতুন দল গঠনে সরকারের বিন্দুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে, যা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দল গঠনের সুবিধার্থে সরকার যদি নির্বাচন বিলম্বিত করে, তাতেও সরকার জনরোষানলে পড়তে পারে এবং তেমন হলে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরকারের বিপরীত মেরুতে চলে যেতে বাধ্য হবে। বলতেই হবে, নির্বাচনের দিন-তারিখের জন্য যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলন করতে হয়, তা সরকারের জন্য খুবই বিব্রতকর হবে, সরকার নানা ঝামেলায়ও পড়তে পারে। বলা বাহুল্য, সবাই একবাক্যে বলছি, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশ ব্যর্থ হবে-আমরা ব্যর্থতার অতলে হারিয়ে যাব। অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সব দল ও জনসাধারণের অকুণ্ঠ সমর্থন আর শর্তহীন আস্থার কথা মাথায় রেখেই সব কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে। নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় একটি যুক্তিসংগত সমাধান হবে বলেই বিশ্বাস করি। সবকিছু বিবেচনা করে ২০২৫ সালের শেষপাদে নির্বাচন করা সমীচীন হবে কিনা, তা প্রধান উপদেষ্টাকে তার পারিষদ নিয়ে এখনই ভেবে দেখার দরকার আছে।
মোহাম্মদ আবদুল মাননান : প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক