বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সমীকরণটা বুঝতে হবে

জেহসান ইসলাম
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

১৯৪৬ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু আবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিত বক্তব্য না দিলে উপমহাদেশ হয় তো আজও একটি অখণ্ড ফেডারেল দেশ থাকত। উপমহাদেশ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের যুদ্ধংদেহী মনোভাব কেবিনেট মিশন প্ল্যান অনুযায়ী আপাতত থামিয়ে দিয়ে একটি ফেডারেল দেশ গঠনের পক্ষে উভয়ে একমত হয় এ শর্তে যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কেবিনেট মিশনের পরিকল্পনা অটুট থাকবে। কিন্তু নেহরু যখন সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে জাতীয় পরিষদ গঠিত হবে, সে পরিষদ কেবিনেট মিশনের পরিকল্পনা মানতে বাধ্য থাকবে না, মুসলিম লীগ ও জিন্নাহ নেহরুর এ বক্তব্যের মধ্যে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান এবং তারা পুরো পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে এসে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের জন্য আবার জোর দাবি তোলেন। এ দাবি আদায়ের জন্য জিন্নাহ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র ডাক দেন। এরপর উপমহাদেশ, বিশেষ করে পাঞ্জাব, বাংলা ও বিহার দেখেছে হিন্দু-মুসলমানদের পরস্পরকে নিধনের এক রক্তাক্ত হোলিখেলা। তার পরের ইতিহাস সবার জানা। স্বেচ্ছায় কংগ্রেসের সভাপতির পদ ছেড়ে নেহরুকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মওলানা আজাদ পরে দুঃখ করে বলেছিলেন, তিনি চরম ভুল করেছেন।
অনেকেই মনে করেন, গান্ধী, নেহরু, আজাদ-এরা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও উপমহাদেশ বিভাজনের বিপক্ষে। প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে জিন্নাহ ও আজাদ অসাম্প্রদায়িক হলেও গান্ধী ও নেহরু তা ছিলেন না। বরং অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে লুকানো ছিল তাদের সাম্প্রদায়িক চরিত্র ও মুসলমান বিদ্বেষ। ১৯৩০ সাল নাগাদ কংগ্রেসের নেতৃত্বে বরাবর মুসলমান নেতাদের বিরাট প্রভাব ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত আসা গান্ধী কংগ্রেসে মুসলমান নেতাদের প্রভাব কমাতে তৎপর হন এবং নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি বুঝতে পারেন, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ উপমহাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্বভারতীয় হিন্দুদের জাগ্রত ও সচেতন করতে না পারলে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) কেন্দ্রিক কংগ্রেসের এলিট শ্রেণিতে মুসলমানদের প্রভাবকে দুর্বল করা কঠিন হবে। অতএব, তিনি এ মিশনে উঠেপড়ে লাগলেন এবং নিজেকে একজন ত্যাগী ও নিখাদ আচরণবাদী হিন্দু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সব প্রয়াস গ্রহণ করেন এবং সফল হন। মূলত এ নিয়েই জিন্নাহর সঙ্গে গান্ধীর দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যা আমৃত্যু অব্যাহত ছিল। আর জিন্নাহ, যার দাদা ছিলেন গুজরাটের হিন্দু ও পরে একজন রূপান্তরিত মুসলমান, ছিলেন একজন নামেমাত্র মুসলমান, ইসলামের কোনো আচার-আচরণ তার ধাতে ছিল না। কংগ্রেসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। তবে জিন্নাহর ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের গুণাবলি ছিল ঈর্ষণীয়। অপরদিকে নেহরু ছিলেন উচ্চাভিলাষী রাজনীতিবিদ। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িকতা দেখাতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হিন্দুদের প্রভাব ও আধিপত্য রক্ষিত হতো। তার মধ্যে ছিল রাজনীতিতে নিজেকে বিখ্যাত করার প্রবল বাসনা, যা তার বাবা মতিলাল নেহরু তার মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেজন্য পিতা-পুত্র উভয়ে ছিলেন গান্ধীর লেজ। এর চেয়ে বরং সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল ছিলেন প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক। অতএব, তাকে বুঝতে ও অনুমান করতে কম অসুবিধা হতো।
ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রায় হাজার বছর উপমহাদেশে বিভিন্নভাবে মুসলমানদের শাসন ও প্রভাব ছিল। মাঝে মাঝে এলিট হিন্দু শ্রেণি বা আঞ্চলিক পর্যায়ের শাসকরা বিদ্রোহ করলেও উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। ইংরেজদের শাসনের অবসান তাদের সে সুযোগ এনে দেয়। তাই মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা মুসলমানদের হাজার বছরের শাসনের গ্লানি তাদের মধ্য থেকে মুছে যায় না, বরং তাদের নেতারা সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে এটিকে আরও ভয়াবহভাবে উসকে দেয়। এ কারণে মুসলমানদের প্রতি তাদের যে পরিমাণ বিদ্বেষ দেখা যায়, তার কিঞ্চিত পরিমাণও ইংরেজদের প্রতি দেখা যায় না। উপরন্তু মুসলমানদের শাসন অবসানে তাদের অনেকেই ইংরেজদের ত্রাতা হিসাবে গণ্য করে। এসব কারণে তারা চেয়েছিল, অখণ্ড উপমহাদেশে হিন্দুশাসন প্রতিষ্ঠিত করে আগের প্রতিশোধ নিতে। সে ইচ্ছা থেকেই গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল ও তাদের সহচররা অখণ্ড উপমহাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন; একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায্যতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসাবে নয়। আরএসএস ও এর উত্তরসূরি বিজেপির মধ্যে তো এসবই প্রকাশ্য ও প্রবল। তাই বিজেপি উপমহাদেশের যে মানচিত্র ব্যবহার করে, তার মধ্যে কোনো সীমান্তরেখা নেই।
বর্তমান বাংলাদেশ অংশ কখনো পাকিস্তান রাষ্ট্রের মূল পরিকল্পনায় ছিল না। কারণ যেসব অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠনের পরিকল্পনা করা হয় আর ওইসব অঞ্চলের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ‘Pakistan’ নাম ঠিক করা হয়, তার মধ্যে ‘বাংলা’ বা ‘পূর্ব বাংলা’ নেই। বরং ঘটনার পরিক্রমায় আর বাংলার মুসলমান নেতাদের প্রচেষ্টা ও আগ্রহে পূর্ব বাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশ, পাকিস্তানের অংশ হয়। অর্থাৎ বলা চলে, পূর্ব বাংলা অংশকে পাকিস্তান ফাও হিসাবে পেয়ে যায়। শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আচরণের মধ্যেও তা ফুটে ওঠে। যখন র্যাডক্লিফ ভারত পাকিস্তানের সীমান্তরেখা আঁকেন, কলকাতাকে পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু কলকাতা ও তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হাতছাড়া করতে অনিচ্ছুক নেহরুর চাপে মাউন্টব্যাটেন তা পরিবর্তন করে পশ্চিম বাংলার সঙ্গে যুক্ত করে দিলেও পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আপত্তি বা প্রতিবাদ করা হয়নি। অথচ কলকাতা গড়ে উঠেছিল পূর্ব বাংলার অর্থে। স্বাধীনতার পরপরই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভাষাসহ আরও নানা বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। আসলে ধর্মকে বাদ দিলে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে কোনো মিলই ছিল না। বলা যায় ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যেও টানাপোড়েন ছিল, পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার মুসলমানদের প্রকৃত মুসলমান হিসাবে গণ্য করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, জাতীয়তাবাদী নেতাদের ভারতীয় দালাল হিসাবে আখ্যায়িত করত। পাকিস্তানের দুই অংশের বিষয়ে মওলানা আজাদের ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ বইয়ের একটি উক্তি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছিলেন, ‘It is one of the greatest frauds on the people to suggest that religious affinity can unite areas which are geographically, economically and culturally different.’ তিনি আরও বলেছিলেন, এ ধরনের রাষ্ট্র পঁচিশ বছরের বেশি অবিভক্ত থাকতে পারে না। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। তেইশ বছরের মাথায় পূর্ব বাংলা, পরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। অনেকে মনে করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব ভালো অবস্থানে চলে গিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত চিত্র আসলে তা ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ নির্ভুলভাবে বিশ্বাস করে, ভারতের সহযোগিতার আসল উদ্দেশ্য ছিল চিরশত্রু পাকিস্তানকে বিভক্ত ও দুর্বল করা। আর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভারতের সহযোগিতা নিয়ে স্বাধীনতা লাভ। ফলে উভয়ের জন্যই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাওয়ার একটি জয়-জয় পরিস্থিতি বিরাজ করলেও অন্তর্গত মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক ছিল। বাংলাদেশের মানুষ দেখছে, স্বাধীনতার পর থেকে ভারত তাদের ওপর নানাভাবে আধিপত্য বিস্তার করে একটি অসম ও অন্যায্য সম্পর্ক তৈরি করছে এবং স্বার্থ হাসিল করছে, বাংলাদশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ভারত আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগামীদের দিয়ে তাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করছে, অপরদিকে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রাপ্য অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করছে। বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, ফারাক্কা, তিস্তা, সীমান্ত হত্যা ছাড়াও বাংলাদেশিদের হীন করে দেখার মনোভাব মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বিগত পনেরো বছর আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশকে নানাভাবে লুণ্ঠনের পথ পরিষ্কার রাখার জন্য ভারতের উলঙ্গ ও ন্যক্কারজনক ভূমিকা সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। যার ফল, আগস্টের গণবিপ্লবে শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণ।
আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান যে সংকট চলছে, তা বুঝতে হলে অবশ্যই উপমহাদেশের ইতিহাসের আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বাংলাদেশকে তার করণীয় ঠিক করতে হবে। ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, আবার অপরদিকে সংখ্যালঘুর চিত্র একই। ফলে ধর্মকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ আমল থেকে যে টানাপোড়েন সম্পর্ক চলে আসছে, শাসকগোষ্ঠী অথবা সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেণি সবসময় তা উসকে দিয়ে ব্যবহার করছে। অথচ দৈনন্দিন জীবনে উপমহাদেশজুড়ে হিন্দু-মুসলমান প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পাশাপাশি নির্বিবাদে বসবাস করে আসছে এবং এখনো করছে, কোনো ধরনের উসকানি না হলে তাদের মধ্যে অন্তত ধর্ম নিয়ে কোনো বিবাদ হয় না।
প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশই পরস্পরকে এড়িয়ে চললে তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। দুটি দেশই অনেক দিক দিয়ে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের এখানে যেমন ভারতবিরোধিতা আছে, ভারতেও একইভাবে বাংলাদেশবিরোধিতা আছে। দুপাশের অতি প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিরা উসকে না দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের উচিত ভারতের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কীভাবে দুদেশের মধ্যে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্কোন্নয়ন করা যায়, তা চেষ্টা করা। কেবল বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপির বক্তব্য খুব বেশি আমলে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আগামীতে দুদেশের সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে। সে পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করেই সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা ও সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। আর একইসঙ্গে বিশ্বাস করতে হবে, ভারত তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার স্বার্থে চাইবে না বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হোক। প্রতিবেশীসুলভ পরশ্রীকাতরতা ছাড়াও প্রথমে উপমহাদেশ এবং পরে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হলে তা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ও রাজ্যগুলোর জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার কারণ ও উদাহরণ হতে পারে, যা অবশ্যই ভারতের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রতি যে আচরণ দেখানো হচ্ছে, তা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এতদিনের বিশ্বাসকে আরও পাকাপোক্ত করছে। ভারতকে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা ও মানুষের মনোভাব মানতে ও বুঝতে হবে। আর ভারত যদি মনে করে, তার বিশাল সামরিক শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের ওপর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি চাপিয়ে দেবে, তাহলে তাদের বিশ্ব ইতিহাসের পাশাপাশি ১৯৮০ দশকে শ্রীলংকায় শান্তিরক্ষীর নামে সেনা পাঠানোর করুণ পরিণতি থেকে পাঠ নিতে হবে। ভারতকে বুঝতে হবে ছোট বড় সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করার ফল সুখকর হবে না, বরং পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সবদিকে তা ছড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণাতীত করে তুলবে। তাই বিশ্বমঞ্চে নিজেকে ‘মুই একটা কিছু’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার উচ্চাভিলাষ পূর্ণ করতে হলে প্রতিবেশীকে হুমকি-ধমকি দিয়ে নয়, তাদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ দেখিয়ে চেষ্টা করতে হবে। আর ভারতের বোঝা উচিত বাংলাদেশের মানুষ ‘জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
জেহসান ইসলাম : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট