Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কি সহসাই দূর হবে?

Icon

ড. সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কি সহসাই দূর হবে?

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। অবশ্য উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। গত প্রায় ৩ বছর ধরে আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করে চলেছি। আমরা সাধারণভাবে মূল্যস্ফীতি বলতে বুঝি, ভোক্তার ক্ষেত্রে গড় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া। অর্থনীতির পরিভাষায় কোনো একটি বা দুটি নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে আমরা মূল্যস্ফীতি বলি না। দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে। তারা নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের গড় মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাসকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে। এই নির্দিষ্ট পণ্যগুলো আবার দুভাগে ভাগ করা হয়। কোনোটি শহরের জন্য, আবার কোনোটি গ্রামের জন্য। শহরের জন্য মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের জন্য ৪২২টি পণ্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর গ্রামের ক্ষেত্রে ৩১৮টি পণ্যকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করা হয়। এসব পণ্যের গড় মূল্য যদি বৃদ্ধি পায়, তাকে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবার যদি এসব পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস পায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিবেচ্য পণ্যগুলোর গড় মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির শতাংশকেই নিম্নমুখী অথবা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার অর্থ এই নয় যে, সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সামান্য কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি উচ্চ মূল্যস্ফীতি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, যদি তা বিবেচ্য পণ্যগুলোর গড় মূল্যকে বাড়িয়ে দেয়। স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার কমে যাওয়া বা মূল্য হ্রাস পাওয়াকেই মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। অথবা স্থানীয় মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়াটাকেও মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতির প্রবণতা সৃষ্টি হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় কমে যায়। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা স্বল্প এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি যখন উচ্চ মাত্রায় চলে যায়, তখন তাকে অর্থনীতির জন্য দানব বলে চিহ্নিত করা হয়। এ অবস্থায় ভোক্তা আগের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে একই মাত্রায় পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারে না। ফলে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হয়। আমরা যাদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ মনে করি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের কল্যাণের স্তর অনেকটা নিচের দিকে নেমে আসে। তারা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো শ্রমজীবী। তারা চাইলেই মজুরি আনুপাতিকভাবে বাড়াতে পারে না। যারা উচ্চ আয়ের মানুষ এবং চেষ্টা করলেই আয় বাড়াতে পারেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি তাদের জন্য খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না।

গত প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশের মতো মূল্যম্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটের ওপর রয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য দানব হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এই দীর্ঘ সময় দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কেন বিরাজ করছে এবং কেন তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না? অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আর্থিক সক্ষমতার বিবেচনায় উচ্চ আয়, মধ্যম আয়, উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত, যে শ্রেণির দেশই হোক না কেন, একটি দেশের অর্থনীতিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য বা সহনীয় বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, তা হলো, সীমিত ও সহনীয় মাত্রায় মূল্যস্ফীতি থাকা খারাপ নয়। এটা প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যদি নেতিবাচক পর্যায়ে চলে যায় অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি যদি ডাবল ডিজিটে চলে যায়, তখন শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়াতে চাপ সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদকের যদি মজুরি বাড়ানোর সামর্থ্য না থাকে উৎপাদিত পণ্যের ঘাটতি দেখা দেবে। কাজেই যদি মূল্যস্ফীতির হার অস্বাভাবিক উচ্চপর্যায়ে চলে যায়, তা মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন যখন কম হয়, সে অবস্থায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে গড় মজুরি বৃদ্ধির হার যেখানে ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ, সেখানে মূল্যস্ফীতির গড় হার হচ্ছে সাড়ে ৯ শতাংশ। ফলে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা এবং প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে।

আমরা যদি গত ৪ বছরের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব, অভ্যন্তরীণ বাজারে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতির পেছনে করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন কাজ করেছে, তেমনি আমদানিকৃত কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যয়ও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে বিগত সরকার আমলে জ্বালানি তেলের মূল্য একবারে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়। জ্বালানি তেলের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির প্রবণতাকে উসকে দেয়। সে সময় জ্বালানি তেলের মূল্য একবারে এভাবে বৃদ্ধি না করে যদি পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হতো, তাহলে পরিস্থিতি এতটা জটিল নাও হতে পারত। স্থানীয় বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য অভ্যন্তরীণ কারণ এবং বাহ্যিক কারণ সমভাবে দায়ী। এ অবস্থায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো বা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎসগুলোর পূর্ণ ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আর মূল্যস্ফীতির বাহ্যিক কারণগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের সবার আগে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে হবে। এখানো ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের মধ্যে ৪ থেকে ৫ টাকা পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। দেশে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবেশ না করে এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার যতদিন স্থিতিশীল না হবে, ততদিন মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাবে।

অভ্যন্তরীণ যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না, তার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। ফলে বাজারে পণ্যের জোগানের সংকটের পাশাপাশি মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য ক্রয় করতে পারেনি। আগামীতে বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। জুলাই মাসে দেশব্যাপী যে ছাত্র আন্দোলন হয়, এর ফলে উৎপাদন এবং পরিবহণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশব্যাপী উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। মূলত এসব কারণেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী চাপ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।

একইসঙ্গে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি ব্যয় সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমেছে। এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু দেখতে হবে কোন কোন পণ্য আমদানি কমছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ৮ শতাংশের মতো। কিন্তু একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে আগামীতে শিল্প খাতের উৎপাদন নিশ্চিতভাবেই কমতে যাচ্ছে। শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হ্রাস পেলে সেটা কোনোভাবেই অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসজাত পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে হবে। জুলাই আন্দোলনের সময় কৃষি, শিল্প ও সেবা, প্রতিটি উৎপাদন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যার কারণে। বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী মৌসুমে যদি কৃষি উৎপাদন ঠিকমতো হয়, তাহলে এ ক্ষতি হয়তো কিছুটা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদেন হলে মূল্যস্ফীতির ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আগামীতে কৃষি খাত কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় রয়েছে। আমাদের ৬টি ফার্টিলাইজার কারখানার মধ্যে ৫টিই নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। কাজেই আমাদের সার আমদানি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সার সংগ্রহ করে তা কৃষকের কাছে পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে সার আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। সার সংকটের কারণে সারের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আর তেমনটি হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ এবং মূল্য, উভয়ই বেড়ে যেতে পারে।

কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদানের ইস্যুটিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। সরকার চাচ্ছে কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে। আর উন্নয়ন সহযোগীরা চাচ্ছে কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হোক। কাজেই সরকারকে কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হলে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। সরকার যদি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর আহরণ করতে না পারে, তাহলে কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। এখনো ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৮ শতাংশের কম। বিশ্বের যেসব দেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। নানা ধরনের জটিলতার কারণে প্রত্যাশিত মাত্রায় ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করতে না পারার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য আমাদের বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা রয়ে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যও স্তিমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের কারণে এ সেক্টরের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব কারখানা কখন চালু হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে বায়ারদের দেওয়া অর্ডার মোতাবেক সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। শিল্প খাতে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই বিঘ্ন ঘটেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার কারণে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স আসা কমে গেলে তা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য যেভাবে হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল, তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উল্লেখ্য, এখনো সব ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থায় জ্বালানি তেলের ব্যবহার অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ওঠানামার ওপর আমাদের দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না কমবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে।

বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে থাকে, তার অধিকাংশই আমদানিকৃত কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজনির্ভর। কাজেই আগামীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার যদি স্থিতিশীল না থাকে, তাহলে শিল্পের আবশ্যিক উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সার্বিক বিবেচনায় নিকট ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কতটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। (অনুলিখন : এম এ খালেক)

ড. সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম