ইংরেজি শিক্ষাদানের সংকট ও উত্তরণ
এএমএম হামিদুর রহমান
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
একথা অনস্বীকার্য, বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগের সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম। সেই সঙ্গে এ ভাষা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার প্রধান বাহন। এছাড়া এ ভাষা সংবাদ সম্প্রচার, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কারণে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বহুকাল থেকে বিবেচিত হয়ে আসছে। শুরুটা যদিও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ঘটেছিল, কালের বিবর্তনে এটি বর্তমানে আমাদের দেশে মাতৃভাষার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসাবে সর্বস্তরে পাঠদান করা হয়ে থাকে। এর গোড়াপত্তন ঘটে প্রথম শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয় হিসাবে এবং শেষ হয় উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, এ দীর্ঘ ১২ বছর অসফলতার সঙ্গে আবশ্যিকভাবে পাঠদানের পর ছাত্রছাত্রীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে, তখন তাদের ইংরেজি দক্ষতার অপ্রতুলতার কারণে সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য English Remedial Course, Basic Grammar and Writing, Listening/Speaking/Reading/Writing Development Courses, English for Academic Purposes, English for Employability প্রদান করে থাকে। এরপরও বহু শিক্ষার্থী ইংরেজি ভাষার জ্ঞান ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য TOEFL বা IELTS পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় না। এখন সময় এসেছে, শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতার কারণগুলো অনুসন্ধান করা এবং চিহ্নিত সমস্যাগুলো উত্তরণের পথ খোঁজা।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা?’ বহু বছর ধরে যথাযথভাবে বিদেশি ভাষা শিক্ষাদান নীতিগুলো সঠিকভাবে প্রণীত না হওয়ায় এবং সময় সময় যে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় দেশে বিভিন্ন শিক্ষাস্তরে বিদেশি ভাষা হিসাবে ইংরেজি শিক্ষাদান একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যার প্রকৃতি নিরূপণ একটি দুরূহ ব্যাপার। তবে মূল সমস্যার সূত্রগুলো অনুসন্ধান করতে হলে এ বিষয়গুলো অনুধাবন করতে হবে-১. একটি বাস্তবমুখী ভাষানীতি প্রণয়ন : কাকে, কখন থেকে, কত বছর বয়সে এবং কীভাবে একটি বিদেশি ভাষা শেখাতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে তা নিরূপণ। ২. শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রয়োজন কী, রাষ্ট্র বা সমাজ কোন ভাষায় তাদের কাছে কী কী দক্ষতা প্রত্যাশা করে, তা সুনির্দিষ্টকরণ, শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক পটভূমি, শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের আগ্রহ ও লভ্য সুযোগ-সুবিধাগুলোর সম্ভাব্য ব্যবহারের প্রচেষ্টা। ৩. ভাষা শিক্ষার উপকরণ ও সুযোগগুলোর প্রতুলতা ও বিদ্যাপীঠে শিখন-শিক্ষাদান পরিবেশ, ছাত্রসংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বব্যাপী ভাষা শিক্ষাদানের বিশেষ দক্ষদের অভিমত, একটি ভাষার ব্যাকরণের সূত্রগুলো মুখস্থ করে ও অনুবাদ অনুশীলন করে সুচারুরূপে শেখা যায় না। এজন্য ভাষাটি শিখতে হবে সেই ভাষায় শ্রবণ, কথন, পঠন ও লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে। এ দক্ষতাগুলোর পরিকল্পিত ও বারবার অনুশীলন, যেমনটি হয়ে থাকে মাতৃভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে। ৪. এজন্য প্রয়োজন হয় অল্পসংখ্যক ছাত্রের শ্রেণিকক্ষ। আন্তর্জাতিকভাবে একটি ভাষা শিখন শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ছাত্র সংখ্যা হওয়া উচিত ১২, যাতে শিক্ষক প্রত্যেক ছাত্রকে ও চারটি Skill-এর জন্য প্রচুর অনুশীলন করাতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, ভাষা শেখার মূলমন্ত্র তিনটি-Practice Practice and Practice. আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অল্পসংখ্যক ছাত্রের নীতির বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব নয়। তবে এ সংখ্যা কোনোক্রমেই ২০ বা ৩০-এর বেশি হওয়া উচিত নয়। কারণ একটাই-প্রত্যেক ছাত্রকে শুনতে, বলতে, পড়তে এবং লিখতে দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং শিক্ষক প্রতিনিয়ত তাদের পাশে থেকে ভাষা শিখনের দক্ষতার কাজে সহায়তা করে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, স্কুলপর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ৫০-১০০ জন ছাত্র এবং কলেজ পর্যায়ে তা ১০০-৩০০ জন পর্যন্ত হতে পারে। এ অকল্পনীয় ছাত্রসংখ্যার শ্রেণিতে একজন শিক্ষক কেবল বক্তৃতাদানের (লেকচার) মাধ্যমে পাঠদান করে থাকেন, যা ভাষা শিখন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি ভাষা শিখতে হলে প্রতিটি Skill-এর ক্ষেত্রে প্রভূত অনুশীলন প্রয়োজন। যতদিন তা না ঘটবে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদেশি ভাষা শিক্ষাদান একটি সোনার হরিণই থেকে যাবে এবং কোনোক্রমেই এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে না। ৫. প্রসঙ্গক্রমে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন আমাদের প্রচলিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য উপকরণ ভাষা শিখনে সাফল্য লাভের জন্য উপযোগী কিনা। ১৯৭৪ সালের ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বিদেশি ভাষা হিসাবে ইংরেজি শেখানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়, যেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করার সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথমে তৃতীয় শ্রেণি থেকে (১৯৮০ সালে) এবং পরে প্রথম শ্রেণি থেকে (১৯৯২ সালে) ইংরেজি ভাষাকে আবশ্যিক বিষয় হিসাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পাঠদান করলাম, কিন্তু সেই পাঠদান প্রণালি যদি কার্যকর না হয়, তবে আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থতাই পর্যবসিত হবে, যেমনটা এতদিন হয়ে আসছে।
১৯৮০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদানকে সফল করার জন্য অনেক আন্তরিক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে সঠিক পরামর্শ প্রদানের জন্য সঠিক বিশেষজ্ঞ নির্বাচনে অসাফল্য এবং পরিকল্পিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের সঙ্গে বাক্যালাপের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন গবেষকের লেখায় যা জানতে পাই, তা নিম্নরূপ-
১. প্রাথমিক পর্যায়ে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর ইংরেজি শিক্ষাদানকালে নিয়োজিত শিক্ষকরা এ ভাষা ব্যবহারে পারদর্শী নন এবং শিক্ষাদানের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে অবহিত নন অথবা সেগুলো প্রয়োগের ব্যাপারে অনাগ্রহী। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষক ইংরেজি শিক্ষাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। তদুপরি আমাদের গ্রামঞ্চলের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। একদিকে অদক্ষ শিক্ষক, অন্যদিকে শিখন পরিবেশের দৈন্য, এ পর্যায়ের ইংরেজি শিক্ষাদান বিঘ্নিত করছে।
২. মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের তুলনামূলকভাবে অনেকটা অগ্রসর মনে করা হয়, কেননা তারা বিভিন্ন সময়ে ELTIP, EIA, SEQAEP, SESSIP, TQI ইত্যাদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা, তারা CLT এবং আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পাওয়া সত্ত্বেও তা তাদের শ্রেণিকক্ষে বাস্তবায়ন করেন না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং নিজেদের অনাগ্রহের ফলে প্রচলিত grammar translation method (GTM)-এর মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যান। এ শিক্ষাদান পদ্ধতিতে শিক্ষককে তেমন পরিশ্রমী বা সৃজনশীল হতে হয় না, যা communicative language teaching (CLT) প্রয়োগের ক্ষেত্রে হতে হয়।
৩. উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরেও GTM ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং শিক্ষকরা Lecture method অবলম্বন করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিপুল হওয়ার কারণে শ্রবণ, কথন, পঠন ও লিখন দক্ষতাগুলোর অনুশীলন সম্ভব হয় না। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকরা ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এবং তাদের অধিকাংশই ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। যদিও অধুনা ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবর্তিত হয়েছে, কলেজগুলোয় এমন শিক্ষক সংখ্যা নগণ্য।
৪. সব সমস্যার মূলে রয়েছে সনাতনী পরীক্ষা পদ্ধতি। যদিও ইংরেজি পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচিসমূহে Communicative Language Teaching-এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং পাঠ্যপুস্তকে এবং পাঠদানে তার প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষকরা তা বাস্তবায়নে পরন্মুখ। এর কারণ হলো, NCTB Curriculum-এর পাঠ্যসূচি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বোর্ড পরিচালিত পরীক্ষাগুলোর ইংরেজি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অনুসৃত হয় না।
১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ESP Curriculum Unit-এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তৎকালীন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা নিরূপিত হয়েছিল এরূপ : Students are at instructional level at class viii texts, but their real reading level is class vii standard. শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে না কমেছে, তা স্থগিত কারিকুলাম প্রণেতারা নিরূপণ করেছিলেন কিনা জানা নেই, তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে ইংরেজি সাহিত্য পঠন ও তার সমালোচনামূলক মূল্যায়নের যে অভীক্ষা প্রণীত হয়েছে, তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সপ্তম শ্রেণিতে আরও সংযোজিত হয়েছে-7.4. Ability to connect emotionally with a literary text and express personal feelings on it. 7.4.1 Students analyse the features of the literary texts. 7.4.2 Students produce texts following the features of literary texts, based on their experience/imagination.
অষ্টম শ্রেণিতে আছে : 8.5. Appreciate the use of stylistics and ornamentation (imagery, metaphor, simile, etc.) in a literary text.
নবম শ্রেণিতে আছে : 9.5. Ability to appreciate aesthetic values in English literary texts and internalize aesthetic values in one's articulation.
উপরোক্ত অভীক্ষাগুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব পাঠ্যপুস্তক রচিত, মুদ্রিত ও শ্রেণিকক্ষে পঠিতব্য হয়েছে, তাতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শেকসপিয়র বিশেষজ্ঞ বানানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে মনে হয়। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে King Lear-এর কিছু অংশ সংযোজিত হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বইয়ে As You Like It-এর একটি অংশ সংযোজিত হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ে The Merchant of Venice নাটকের কিছু অংশ নেওয়া হয়েছে। নবম শ্রেণির বইয়ে Macbeth নাটকের অনেকটা সংযোজিত হয়েছে। এর সঙ্গে Tragic Hero, Tragic Flaw, Supernatural Elements, Theme of Revenge ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাখ্যা, বর্ণনা ও আলোচনা করা হয়েছে। জানা গেছে, দশম শ্রেণির বই লিখিত হয়েছিল, কিন্তু প্রকাশিত হয়নি। শোনা যায়, এ বইয়ে শেকসপিয়রের Hamlet নাটক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের জানামতে, Macbeth ও Hamlet-এর মতো গভীর অর্থবহ নাটকগুলো সারা বিশ্বে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পঠিত ও আলোচিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে শেকসপিয়রের এত নাটক সংযোজন অবিবেচনাপ্রসূত কাজ হয়েছে বলে মনে হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজি ভাষা শেখার মূল উদ্দেশ্য হলো সেই ভাষা শুদ্ধভাবে পড়তে, বলতে ও লিখতে পারা ও শুনে বুঝতে পারা এবং একে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বিশ্বের অন্য ভাষাভাষীদের সঙ্গে ব্যবহারে দক্ষ হওয়া, সাহিত্য সমালোচক হওয়া নয়। একটি ভাষা শিক্ষাদান ক্ষেত্রে সাহিত্য চর্চার প্রয়োজন হয় না, তবে সহজ সুন্দর কবিতা, মনোমুগ্ধকর ছোটগল্প ইত্যাদি অবশ্যই ব্যবহার করা যায়-শিক্ষায় আনন্দলাভ করার জন্য এবং অন্য ভাষাভাষীদের জীবন সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু কখনোই তাদের শেকসপিয়র বিশেষজ্ঞ করার প্রয়োজন নেই। গল্প পড়ার জন্য Tales from Shakespeare ব্যবহার করা যেত, সাহিত্য সমালোচনা নয়। দ্বিতীয়ত, মাধ্যমিক পর্যায়ের খুব নগণ্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করতে যাবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের খুব কমসংখ্যক শিক্ষক হয়তো ইংরেজি সাহিত্যে BA Hons. ও MA করে থাকবেন। সুতরাং, তারা Macbeth ও Hamlet-এর মতো নাটকের শৈল্পিক বিচার ইংরেজিতে খুব কাঁচা ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে বোঝাতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা যেতে পারে।
পরিত্রাণের উপায়
১. প্রাথমিক পর্যায়ের সব ইংরেজি শিক্ষককে স্বল্পমেয়াদি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তারা সেই প্রশিক্ষণ শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে পারছেন কিনা, তা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করতে হবে। ২. মাধ্যমিক পর্যায়েও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নীতিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য একটি আলাদা বিশেষজ্ঞ দল গঠন করতে হবে। ৩. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যারা শুধু MA in ELT/ TESOL ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাদের নিয়োগ করতে হবে। সব কর্মরত শিক্ষকের ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে Jano প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করতে হবে। ৪. বিভিন্ন স্তরের ইংরেজি পাঠক্রমে পাঠ্যসূচির পরিমার্জন করতে হবে, যাতে সঠিক ও প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়। এ কাজে ভাষা শিক্ষাদান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ৫. সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন। এটি পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত করতে হবে। শ্রবণ ও কথন দক্ষতা নিরূপণের কলাকৌশল সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এ দক্ষতাগুলো পরীক্ষা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বে। ৬. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি English Language Teaching Task Force গঠন করা যেতে পারে, যাদের কাজ হবে সর্বস্তরে ইংরেজি শিক্ষাদান কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ দলে আমাদের দেশের প্রবীণ ইংরেজি শিক্ষাদান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ করা যেতে পারে।
সমস্যা অনেক, কিন্তু সব সমস্যার সমাধান আছে। এ মুহূর্তে আমাদের শিক্ষাবিষয়ক নীতিনির্ধারকরা একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করতে পারেন, যেখানে সব স্তরের ইংরেজি শিক্ষক, শিক্ষক-প্রশিক্ষক, ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষেশজ্ঞ ও গবেষকরা উপস্থিত থেকে ভবিষ্যৎ ইংরেজি শিখন ও শিক্ষাদান বিষয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন এবং একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার পথনির্দেশ করবেন।
এএমএম হামিদুর রহমান : অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; সাবেক অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়