গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও অন্তর্বর্তী সরকারের শতদিন
সাইফুল হক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আশাজাগানিয়া অমিত সম্ভাবনা নিয়ে গেল জুলাই-আগস্টের গণপ্রতিরোধ-গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর ইতোমধ্যে ১০০ দিনের বেশি পার হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা কি কিছুটা ফিকে হতে শুরু করেছে? এত বিশাল সমর্থনের পরও দ্বিধা দোলাচলে থাকা একটি দুর্বল অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো, সরকার কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না, সরকার কি পথ হারিয়ে ফেলছে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন জনগণের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। সরকার কি তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে চায়? রাজনৈতিক দলসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে কি সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে-এসব বিষয়াদিও আলোচনায় উঠে আসছে।
১০০ দিনেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বা জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, সংকটের সমাধান লাভ করা যাবে না সত্য, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে-সরকারের সামগ্রিক কাজকর্মে এ লক্ষণ থাকা জরুরি। বিশাল প্রত্যাশার চাপ নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই, কিন্তু সরকারের দক্ষতা, যোগ্যতা, পেশাদারত্ব ও দূরদর্শিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কিছু বিষয় তাদের বিতর্কিত করে তুলছে।
এ সময়কালে সরকারের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করা গেছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি নজিরবিহীন উত্তেজনা ও অস্থির পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর, দেশের ভেতর-বাইরের নানা চাপ, ষড়যন্ত্রমূলক বহুমাত্রিক অপতৎপরতা, পতিত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা অপরাধী চক্র ও কায়েমি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর নানা ধরনের অসহযোগিতার মুখে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের বেশি পার করাও সাফল্য ও স্বস্তির বিষয়। ভারতের মোদি সরকারের বৈরী মনোভাব সত্ত্বেও গণ-অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার পরিচালনায় নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা থাকলেও গত ১০০ দিনে দেশের ভঙ্গুর সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে, বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক না হলেও অর্থনৈতিক তৎপরতা কিছুটা সচল হতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানকালে নৃশংস গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে; ধীরগতিতে হলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে ১০টির বেশি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরিতে সক্রিয় রয়েছে। নাগরিকদের মতপ্রকাশ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিপন্থি ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার ছিল জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা। এজন্য সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে সত্য; কিন্তু বাজার পরিস্থিতি এখনো বেসামাল; দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। অতি আবশ্যক কয়েকটি খ্যদ্যপণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার বা কমিয়ে আনা হলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য অব্যাহত আছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ১৮ দফা চুক্তির অনেক এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বকেয়া মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে রয়েছে শ্রমিক-মেহনতি মানুষের বিক্ষোভ। জনজীবনে রয়েছে উদ্বেগজনক নিরাপত্তাহীনতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে এখনো পেশাদারি দক্ষতায় কার্যকর করা যায়নি।
সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারসহ গত ষোল বছরে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এসব বিচারের তৎপরতা চলছে, তাতে অধিকাংশ মামলারই ‘মেরিট’ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুরোনো আমলের মতো গায়েবি ও মিথ্যা মামলা রুজু করা হচ্ছে; পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত প্রতিশোধাত্মক মনোভাব থেকে যাকে-তাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার রাস্তাও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। অনেক মামলা রীতিমতো সারবত্তাহীন ও হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এত বড় গণ-অভ্যুত্থানের পরও মামলা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার সবকিছু আগের মতোই রয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা না হওয়ায় আহতদের পরিবারসহ মানুষের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০০ দিনে সরকারের উপদেষ্টাদের নানা বেফাঁস ও আবেগী কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হলেও যেটি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে না, তা হলো, এটি কোনোভাবেই একটা বিপ্লবী বা বিপ্লবমুখী সরকার নয়। এই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কোনো বিপ্লবী শ্রেণি বা তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করেনি। ফ্যাসিবাদবিরোধী গণজাগরণ-গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় বিপ্লবী প্রবণতা ছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু এ সম্ভাবনা ধারণ করার কোনো মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বা শ্রেণিচৈতন্যমূলক প্রস্তুতি ছিল না; যেটুকু ছিল, তা প্রধানত আবেগপ্রসূত। কিন্তু কেবল আবেগের পুঁজি দিয়ে তো আর বেশিদূর যাওয়া যায় না; গরু পিটিয়ে তো আর ঘোড়া বানানো যাবে না। এখন প্রতিদিন এ বুঝের ঘাটতিই চোখে পড়ছে।
বস্তুত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শোষকশ্রেণির ফ্যাসিস্ট অংশ থেকে একই শ্রেণির উদারনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন একাংশের কাছে ক্ষমতার বদল ঘটেছে; যাদের অনেকেরই এ গণজাগরণ-গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাদের অনেকেরই হয়তো দিন বদলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ও এজেন্ডা রয়েছে। কিন্তু তাদের রয়েছে শ্রেণিগত সীমাবদ্ধতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা। তারপর রয়েছে তাদের ওপর নানা গোষ্ঠী ও অংশের অসংখ্য ধরনের চাপ। এ কারণে তাদের পক্ষে সব প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়, এটি তাদের দায়িত্বও নয়। তারা যদি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ গণতান্ত্রিক পরিসরকে খানিকটা এগিয়ে নিতে পারেন রাজনৈতিক দিক থেকে, এটাই হবে তাদের বড় সাফল্য।
এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে বিদায় নেওয়া। এর মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু আগের সরকারের বিতর্কিত আইনেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো। দক্ষ, অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো কিনা, তা বোঝা যাবে তাদের কাজে। যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ও অনাস্থা তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার কেন পতিত সরকারের আইনে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে গেল, তা বোধগম্য নয়। কোনো কারণে নতুন নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হলে তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরে বর্তাবে। এখন নতুন নির্বাচন কমিশনের অগ্রাধিকারমূলক কাজ হচ্ছে দ্রুত ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শুরু করা এবং অতি জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে স্বল্পতম সময়ে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করা; আর অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকেও এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জরুরি সংস্কারসহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথনকশা এবং তাদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকারমূলক কাজের ঘোষণা দেওয়া; যাতে সরকারের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্ট হওয়া বিতর্কের অবসান ঘটে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ, আল জাজিরাকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে জাতীয় নির্বাচন ও সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়েও অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে। সংস্কার বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়ে সরকার তাদের মেয়াদকালকে প্রলম্বিত করতে চায় কিনা, এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ছাত্র-তরুণদের দৃশ্যমান রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায় কিনা-জনপরিসরে এসব আলোচনা উঠে এসেছে। যদি বোঝা যায়, সরকার এ পথে হাঁটছে, তাহলে খোদ সরকারের উদ্দেশ্য ও দলনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। আর এভাবে সরকার যদি নিজেদের বিতর্কিত করে তোলে, তাহলে সামনে পদে পদে তাদের হোঁচট খেতে হবে; সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
সরকারের মধ্য থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা যদি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত রাখেন, তাহলে তারাও শুরুতেই কথিত ‘কিংস পার্টি’ হিসাবে চিহ্নিত হবেন এবং গোড়াতেই বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবেন। এ পরিস্থিতি নতুন রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে তাদের ইতিবাচক সম্ভাবনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর সত্যি সত্যি তারা যদি তাদের ‘বিপ্লবের পথে’ এগিয়ে যেতে চান, তাদের উচিত হবে সরকার থেকে বেরিয়ে এসে আমূল পরিবর্তনকামী ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লবী দল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেওয়া। কিন্তু তাদের দোলাচল ও সিদ্ধান্তহীন অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, অন্তর্বর্তী সরকারকেও তারা সংকটে ফেলে দিতে পারেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এ মুহূর্তে খানিকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, সে কারণে তাদের উত্থাপিত ইস্যুর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন রয়েছে কিনা, এ প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ চরিত্র-বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আগামী দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন যদি বড় হতে থাকে, তাহলে রাজনৈতিক দল ও বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাজের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়তে থাকবে; রাজনৈতিক দল ও জনগণের বিপুল সমর্থনের সরকার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জরুরি সংস্কারগুলোর বাস্তবায়নও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে ও তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এসব বিষয় কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় মীমাংসিত হবে, এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তারা কি এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন, নাকি ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসবের সুরাহা হবে? আর এসব ব্যাপারে জনগণের অভিপ্রায় বা কীভাবে বোঝা যাবে-এসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর প্রয়োজন। তা না হলে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষাবলম্বী রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিভক্তি বিভাজনই কেবল বাড়তে থাকবে; বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিসহ নানা অপশক্তি।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে তাদের কাজের সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার ঘোষণা করে সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দল, গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন ও জনগণকে আস্থায় নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া; প্রয়োজন ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সাফল্যকে সংহত করা। আমরা আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে চাই, বিভিন্ন মহলের নানা এজেন্ডার চাপে সরকার পথ হারাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর হতে দেওয়া যাবে না। আমরা আশাবাদী, দীর্ঘ ১৬ বছর ও ৩৬ দিনের জানবাজি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম, সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাকে এবার আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে লাগাতে পারব।
সাইফুল হক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি