জলবায়ু চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন কতদূর?
এম এ হালিম
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বজুড়ে মানুষের অসচেতন কর্মকাণ্ডের ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন তথা অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে আশির দশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ও জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। আইপিসিসি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব প্রশমনের কৌশল নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
১৯৯০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৫তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি কার্যকর ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির ধারণা বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি ফর অ্য ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইএনসি/এফসিসিসি) গঠন করা হয়। আইএনসি/এফসিসিসি ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) নাম পরিগ্রহ করে। ইউএনএফসিসিসির উদ্যোগেই ১৯৯৫ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মানুষের উদ্বেগ ও প্রতিকার নিয়ে প্রগাঢ় আলোচনা হয়, যা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ (কনফারেন্স অফ পার্টিজ) হিসাবে অভিহিত। ১৯৯৭ সালে জাপানের কিওটোতে অনুষ্ঠিত কপ৩-এ শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০১২ সালের মধ্যে ৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ সীমিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, যা ঐতিহাসিক ‘কিওটো প্রটোকল’ নামে পরিচিত।
এ ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর কপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং দিকনির্দেশনা ও অঙ্গীকার রেখে যাচ্ছে। কপ২৬-এ (যুক্তরাজ্য ২০২১) ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেনের নির্গমন ৩০ শতাংশের নিচে রাখতে ৯০টি দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়। কপ২৭-এর (মিসর ২০২২) গুরুত্বপূর্ণ সফলতা ছিল, প্রথমবারের মতো একটি লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠন বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া, যার উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতা করা।
গত ১১ নভেম্বর থেকে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ২৯ শুরু হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণ করছেন অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছাড়াও ২০০ দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ এবং যুব ও ছাত্রসহ অর্ধলক্ষাধিক প্রতিনিধি। বাংলাদেশ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। এবারকার কপ আয়োজনের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে কার্বন দূষণ কমানোর প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা এবং জলবায়ু অভিঘাতের ভুক্তভোগী দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
প্রতিবছরই কপে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কপ৩-এর (১৯৯৭) প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণ ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববাসীকে আশাবাদী করার সূচনা। এভাবে প্রতিটি কপেই নতুন ধারণা, প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি থাকে। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১-এ ‘প্যারিস চুক্তি’ অনুসারে ২১০০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে ১৯৭টি দেশ প্রতিশ্রুতি দেয়। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বর্তমান উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও কার্বন নিঃসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে শতাব্দী শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২.৮৩ থেকে ৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে আরও প্রতিশ্রুতি ছিল, উন্নত দেশগুলো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল গঠন করবে।
বিশ্বব্যাপী শিল্পায়ন প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ, যা উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। গত এক শতকে উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে যাবে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ শতাব্দী শেষে পৃথিবী থেকে ৪৩টি দেশ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। অথচ কার্বন নিঃসরণ তথা উষ্ণায়নের জন্য দায়ী দেশগুলো নির্বিকার। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত-এসব দেশ শিল্পায়নে ভূমিকা রাখলেও তারা ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী এলনিনোর প্রভাবেও তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কিছু উদ্বেগজনক শিরোনাম হচ্ছে-‘প্রচণ্ড গরমে ফুটন্ত কড়াইয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ’, ‘তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ’, ‘দক্ষিণ মেরুতে রেকর্ড তাপমাত্রা’, ‘গাছপালা আর কার্বন শোষণ করতে পারছে না’ ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে; যেমন-সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানি ও জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, দাবানল ইত্যাদি। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন কপ২৯-এর প্রাক্কালে বলেছেন, উত্তর আফ্রিকা, মেক্সিকো, ভারত, সৌদি আরব ও ইউএইসহ আরবজুড়ে ঘটেছে মারাত্মক তাপপ্রবাহ। ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় খরা, ব্রাজিলের দাবানল, যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ভঙ্গকারী হারিকেন। আফ্রিকার জলবায়ুর প্রভাবজনিত ক্ষতি জিডিপির ৫ শতাংশ। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রশমনে অর্থায়নের সংকট কমিয়ে আনা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান রেখেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাতে ভূমিকা রাখছে ক্রমবর্ধমান ই-বর্জ্যও। বিশ্বে প্রতিবছর ৬২ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়, যার অধিকাংশই রিসাইকেল হয় না, বরং মাটি ও বাতাসকে দূষিত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া অবাধে বন উজাড় হচ্ছে, যা কার্বন নিঃসরণের হুমকি বাড়াচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজানের বন উজাড় হচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
২.
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাত থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের বৈশ্বিক জলবায়ু সূচক-২০২১ অনুসারে দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এর সাক্ষ্য মিলবে; যেমন-তীব্র তাপদাহ, ঋতু বৈচিত্র্য হারানো, পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, কোথাও শীতকাল বা অসময়ে বৃষ্টির ফলে আগাম বন্যা আবার কোথাও সময়মতো ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, নদীভাঙনের ফলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি (আইডিপি) ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা নগণ্য (০.৪০ শতাংশ) হলেও একটি ছোট দেশ হিসাবে এর প্রভাব অবহেলাযোগ্য নয়। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, ইটভাটায় গাছ ও কয়লার ব্যবহার, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি কারণে একদিকে যেমন কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে, অন্যদিকে উন্নয়নের নামে অবাধে বৃক্ষনিধন ও বন উজাড়ের ফলে কার্বন শোষণের ক্ষেত্র সীমিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত ১ মে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। আমি নিজেও পেশাগত কারণে খুলনার পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ অনেক এলাকায় কথা বলে জেনেছি পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে নারী-পুরুষের চর্মরোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের উদ্বেগের কথা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় উপকূলের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের সময় পানিতে ডুবছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সমুদ্রের উচ্চতা ৬.৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনসহ অনেক নিম্নাঞ্চল ডুবে যাবে।
জলবায়ুর প্রতিঘাত প্রশমনে অনেক উদ্যোগের কথা শোনা যায়; যেমন-ইটিপি ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দৈনন্দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা প্রচলন, পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন উঠিয়ে কালো ধোঁয়া কমানো, অবৈধ বৃক্ষনিধন প্রতিরোধ ইত্যাদি। অন্তর্বর্তী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে নবায়যোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, ২০২৫ সাল থেকে সরকারি স্থাপনা নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তবে সবার আগে দরকার মানুষের সচেতনতা। দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার বায়ুদূষণের ১০ শতাংশই যানবাহন থেকে সৃষ্ট। একটি বাস রাস্তায় নামলে অন্তত ২০টি ছোট গাড়ির জ্বালানি তথা কার্বন নিঃসরণ কমে। কার্বন শোষণের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হিসাবে সবুজায়নের বিকল্প নেই, যা যে কোনো নাগরিকই সহজে করতে পারেন।
৩.
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার, যা থেকে বাঁচতে চলছে মানুষের উদ্যোগ, প্রচেষ্টা ও নানা কর্মকাণ্ড। বছর কয়েক আগে মালদ্বীপ সমুদ্রের নিচে এবং নেপাল হিমালয়ের চূড়ায় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ সামুয়ার প্রেসিডেন্ট সমুদ্রে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। এসব প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও এর মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলো তাদের উৎকণ্ঠার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। তবে মানুষের প্রয়োজনেই শিল্পায়ন থামিয়ে রাখা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রশমন (রিডাকশন) ও অভিযোজনের (অ্যাডাপটেশন) উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশমনের উদ্যোগ হিসাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিকল্প জ্বালানি যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, সৌর ও বায়োবিদ্যুৎ ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎচালিত যানবাহন এবং পরিবেশবান্ধব বাহন হিসাবে সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কপ২৯-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ইউএনইপি জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গে বর্তমান চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলার দরকার, যার প্রাপ্তি এখনো অনিশ্চিত। প্যারিস চুক্তি থেকেও বিশ্ব এখনো অনেক দূরে। অন্যদিকে চলমান কপে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছে না। প্যারিস চুক্তির অন্যতম অঙ্গীকার, তথা কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং তহবিল গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সংশয় জাগছে, কারণ দেশটির হবু প্রেসিডেন্ট তার আগের মেয়াদে প্যারিস চুক্তি থেকে সেদেশের প্রতিনিধিকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এবারও নির্বাচনি প্রচারে তিনি কয়লা, তেল ও গ্যাস উত্তোলনে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা পুনরুল্লেখ করেছেন। কাকতালীয়ভাবে কপ২৮ (২০২৩), কপ২৯ (২০২৪) ও কপ৩০ (২০২৫)-এর আয়োজক দেশ যথাক্রমে আজারবাইজান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল তথা জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ হওয়ায় কার্বন নিঃসরণে তাদের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। এদিকে অন্যান্যবারের মতোই কপ২৯-এও লবিস্টের প্রভাব বিদ্যমান। জানা যায়, এবার ১৭ শতাধিক লবিস্ট অংশগ্রহণ করছে, যারা অতীতের মতোই তাদের (ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দেশ) বাণিজ্যিক স্বার্থে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের টার্গেট কমাতে প্রভাব অব্যাহত রাখবে বলে আশঙ্কা। উপরন্তু, ক্ষতিপূরণ তহবিলের টার্গেটে পৌঁছানোর অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই। অথচ বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতে তারা ট্রিলিয়ন ডলার সহযোগিতা করতে কার্পণ্য করে না। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বিশ্ব প্রতীক্ষায় আছে-জলবায়ুর অভিঘাত থেকে পরিত্রাণ পেতে ২২ নভেম্বর শেষ হতে যাওয়া চলমান কপ২৯ কী বার্তা দেয়।
এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি; দুর্যোগ, জলবায়ু ও মানবিক বিষয়ক বিশ্লেষক
halim_64@hotmail.com