বাইফোকাল লেন্স
ভারতীয় মিডিয়ার অব্যাহত অপপ্রচার পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের অন্তরায়
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আচরণের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ভারত সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক্টিভিস্টদের কথা শুনে মনে হয়, ক্ষমতার মসনদ থেকে শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশের মানুষ বড় মাপের ভুল করে ফেলেছে। গত ১৫ বছর হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশ থেকে একতরফা যে সুবিধা আদায় করে নিয়েছে, তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভারত বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা যা দিয়েছেন, ভারত তা প্রত্যাশাও করেনি। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বেশ কয়েকবার এ কথা বলেছেন। ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে, ভারতের পূর্বাঞ্চলে সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১৩টি পয়েন্টে রেল যোগাযোগের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, হাসিনার গদিচ্যুতির জন্য তা বোধহয় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে, গত বছর সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্বাক্ষরও করে এসেছিলেন। কথিত আছে, কী কী শর্তে ভারতকে রেল সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা গোপন রাখার জন্য শেখ হাসিনা নাকি সেই সমঝোতা স্বাক্ষরের ফাইলটি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, হাসিনার দ্রুত পুনর্বাসনে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে সার্বক্ষণিক অস্থিতিশীল রাখার জন্য তাদের হাতে যত ধরনের টুলস্ আছে, তা একে একে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, উগ্র বক্তব্য, সাম্প্রদায়িক উসকানি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কতিপয় উপস্থাপকের বিকৃত লম্ফঝম্ফ, বাংলাদেশকে হেয় করার ভারতের এক ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্যে ভরা প্রতিবেদন পরিবেশন করে অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকারপ্রধানকে অপমান করতেও ছাড়ছে না। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নামের আগে অনাকাঙ্ক্ষিত টাইটেল বসিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করে লেখা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তারা তাদের বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ভারতের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত দু-একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃত দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হতে পারবেন না মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীরা-অধ্যাদেশ আনছে ইউনূস সরকার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ড. ইউনূসের নামে আগে ‘মোল্লা’ টাইটেল বসিয়ে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা জমানার অবসানের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার কাজ শুরু করেছেন মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস।’ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চর ও দালাল আখ্যায়িত করে প্রতিবেদনটিতে ড. ইউনূসের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে বেছে বেছে বসিয়েছেন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের চর, মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী এবং পাকিস্তান ও মার্কিন দালালদের। এবার অধ্যাদেশ এনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’ ড. ইউনূসকে ‘রাজাকার’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি পত্রিকাটি। লিখেছে, ‘‘ভবিষ্যতেও যাতে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কেউ না থাকেন, তার রাস্তা প্রশস্ত করতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ ২০২৪’ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘রাজাকার’ হিসাবে পরিচিত মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস। মহম্মদ আলি জিন্নাহকে জাতির পিতা হিসাবে মানতে যারা অস্বীকার করছেন, তাদের কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে আসীন হতে পারবেন না।’’ ভারত বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে গণ্য করে বলে প্রচার করে; অথচ ভারতেরই গণমাধ্যম, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ে এমন নোংরা ভাষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, কোন অভিরুচির পরিচয় দিচ্ছেন, তারাই জানেন। সে দেশের গণমাধ্যমের এমন অভদ্র আচরণ বিস্ময় জাগায় বৈকি!
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মাত্র ২১ দিনে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে তিন শতাধিক মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সুবিচার করছে বলা যাবে না। ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা, আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রকৃত বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ বাংলাদেশে যে এতগুলো মানুষ খুন হলো, সে ব্যাপারে তাদের মুখের কোনো বক্তব্যই আমরা শুনতে পেলাম না। তবে, এ বিষয়ে কথা না বললেও হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে, তা গোটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বলে প্রচার করছে। ভারতের বেশকিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশে এথনিক ক্লিনজিং হচ্ছে বলে দাবিও করেছে। পরবর্তীকালে বিবিসির রিউমার স্ক্যানারের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এসবই ছিল ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছড়ানো অতিরঞ্জিত গুজব।’
গুজব ছড়াতে বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও কম যায়নি। এ বিষয়ে তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর সহিংসতায় ৯ হিন্দু নিহত হয়েছে। অথচ এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ ৯ জন নিহতের ঘটনায় সাতটি ঘটনা ছিল রাজনৈতিক কারণে; বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংসতার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ। গভীরভাবে খতিয়ে দেখা গেছে, ৯ জনের মধ্যে অন্তত তিনজন মারা গেছেন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট। তিনজন মারা যান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন। বাকি তিনজন মারা যান শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর। অথচ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এ ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬ আগস্ট থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ঐক্য পরিষদের বিবৃতি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে সমন্বিতভাবে ১১ মিলিয়নের বেশি শেয়ার হয়েছে। আর আগস্ট থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত গুগল নিউজ ইনডেক্সে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে ঐক্য পরিষদ নিয়ে রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েট প্রেস ও আল-জাজিরাসহ ইংরেজিতে অন্তত ১৩৩টি নিউজ আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। এ দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক উদ্যোগের পেছনে ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে। ঐক্য পরিষদের আগের এমন অনেক কর্মকাণ্ডই মানুষের ভেতর এ ধারণা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখার জন্য ভারতের হাতে যতগুলো টুলস্ আছে, তা একে একে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। হিন্দু নিধন ইস্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। একটি মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে ভারতের গণমাধ্যম, সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। সে সময়ও রিউমার স্ক্যানার, পার্বত্য চট্টগ্রামের এ পরিস্থিতি নিয়ে ১১ গুজব শনাক্ত করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি শান্ত হতে না হতেই চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের মাধ্যমে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আরও একটি সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। ইসকনের ধর্মীয় নেতারা ইসকনকে ধর্মীয় সংগঠন হিসাবে দাবি করলেও অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ত থাকতে দেখা গেছে। ইসকনের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ নিঃসন্দেহে তেমনই একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মুভমেন্ট ছিল বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনী নামানো নিয়েও ভারতের কিছু অনলাইন মিডিয়া গুজব ছড়িয়েছে। ভারতের রিপাবলিক টিভি বলেছে, ‘সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের হিন্দুদের ঘরে ঘরে ঢুকছে। তারা মার খাচ্ছে। কচুকাটা হচ্ছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসকনের এ ধরনের মুভমেন্ট ছিল, হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি করা।
ইদানীং ভারতের কয়েকটি টিভি চ্যানেল চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ দাবি করে উসকানিমূলক প্রচারণায় মেতে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার সময় চট্টগ্রাম ভারতের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল বলে তারা দাবি করছে। বলা হচ্ছে, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে মাস্টার দ্য সূর্যসেন ও প্রীতিলতা স্বাধীন ভারতের মূল ভূখণ্ডের জন্য চট্টগ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা একাধিকবার বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের পাঠানো সেই বার্তা নিয়ে লেখা চিঠি নাকি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল চাপা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মিথ্যা তথ্য সংমিশ্রণ করে আরও প্রচার করা হচ্ছে, চট্টগ্রামকে ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হোক; এ দাবি নিয়ে সেই সময় রাঙামাটির ব্রিটিশবিরোধী উপজাতীয় নেতা স্নেহকুমার চাকমা যান ভারতে। কিন্তু ৫০ দিন অপেক্ষা করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই দিন দিন সহ্য করে আসতে হচ্ছে চট্টগ্রামের হিন্দু ও বৌদ্ধদের প্রতারণা ও অত্যাচার।
প্রকৃত ঘটনা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে (চট্টগ্রাম নয়) ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্নেহকুমার চাকমা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মওলানা আবুল কলাম আজাদ, বল্লভ ভাই প্যাটেলসহ তৎকালীন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তাদের কাছে থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে না পেরে রাঙামাটি ফিরে এসে স্নেহকুমার চাকমা তার দলবল নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু ১৭ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হিসাবে ঘোষণা করলে ভারতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। গত কয়েকদিন ধরে ভারতের টিভি চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি দিয়ে যা বলছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। তারা বলছে, ‘এখন কৌশলগতভাবে চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হয়ে গেলে আসাম থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি ল্যান্ডলোক রাজ্যেরই বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দরজা খুলে যাবে। ফলে, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ রাজ্যগুলোর পণ্য পরিবহণে এতদিন যে প্রচুর খরচ গুনতে হতো, চট্টগ্রাম বন্দর হাতে পেলে তা একদম মিটে যাবে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের আশপাশটা যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে যায় বা ভারতের অংশ হয়ে যায়, তাহলে বঙ্গোপসাগর যারা দখল করার চিন্তা করছেন, তা ভয়ংকর হয়ে যাবে।’
ভারত সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত গণমাধ্যম থেকে এ ধরনের ধারাবাহিক অপপ্রচার বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য চিন্তার বিষয়। তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। তবে আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করছি, ভারতের এমন ধারাবাহিক অপপ্রচারের পরও এ বিষয়ে আমাদের গণমাধ্যমগুলো সম্পূর্ণ নীরব। সরকারও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত। তারা যদি মনে করেন, ভারতের কিছু টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন এক্টিভিটস এ ধরনের অপপ্রচার বা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, তাহলে ভুল করবেন। এ ধরনের প্রোপাগান্ডা প্রচারকারী কোনো অনলাইন চ্যানেল সে দেশে সরকারের আশকারা এবং গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, ভারতের এ ধরনের অপপ্রচারের পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? বেসরকারি উদ্যোগেই কি শুধু বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে নেমেছে এ টিভি চ্যানেলগুলো? নাকি এসব দুরভিসন্ধিমূলক প্রচারণার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। প্রয়োজনে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর এমন অপপ্রচার বন্ধে ভারত সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে পারে। ভারত যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র মনে করে, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের এ অনুরোধ রক্ষা করবে। ভারতকে অবশ্যই এ অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
১৬ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনস’ নামক এক অধিবেশনে ‘ব্রিজিং ডিভাইডস: নেভিগেটিং দ্য কমপ্লেক্সিটিস অব ইন্ডিয়া বাংলাদেশ রিলেশন্স’ শিরোনামে এক আলোচনায় ভারতীয় একজন আলোচক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নতুন সরকার যদি ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু দেখা যাবে।’ তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও বলতে চাই, বাংলাদেশ যদি ভারতের দিক থেকে নিরাপদ থাকে, তাহলে ভারতেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। আমরা প্রতিনিয়ত ভারতের কাছে প্রকৃত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণই প্রত্যাশা করি।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা