গ্রেট ভোলা সাইক্লোন থেকে রিমেল
এম এ হালিম
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আজ ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলবাসী এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়, যা ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’ নামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পায়। কারণ, সে ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা জেলাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একমাত্র তজুমুদ্দিন থানায়ই ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যা ওই এলাকার সে সময়ের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা নিয়ে কোনো স্পষ্ট হিসাব পাওয়া না গেলেও তখনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে তা ছিল ৩ লাখ, কোনো কোনো সূত্র ৫ লাখ উল্লেখ করেছে। গত শতক পর্যন্ত বিভিন্ন আলোচনা ও বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ ৫ লাখই বলা হতো।
১৯৭০ সালের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক আগে থেকে জানা সম্ভব ছিল না। তাই ১ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সাউথ চায়না সাগর এবং গালফ অফ থাইল্যান্ডে সৃষ্ট নিম্ন ও লঘুচাপ সম্পর্কে জানা গেলেও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির তথ্য পাওয়া যায় ৮ নভেম্বর। পরদিন ৯ নভেম্বর ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সংবাদ দেয়, যা ১০ নভেম্বর আরও শক্তি অর্জন করে। ১১ নভেম্বর নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং ওইদিন অপরাহ্ন থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের চোখ (Cyclone eye) স্পষ্ট হতে থাকে, যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানে; তখন সেটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৭ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, তখন পূর্ণ জোয়ার থাকায় উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল ডুবে থাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য। বলা হয়, পাকিস্তান ও ভারতের বৈরিতার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সময়মতো পূর্ব পাকিস্তান আবহাওয়া দপ্তর পায়নি। ফলে উপকূলবাসীর জন্য ঘূর্ণিঝড়টি ছিল একটি আকস্মিক ঘটনা। কারণ, তখন কার্যত কোনো সতর্ক ব্যবস্থা ছিল না। পাকিস্তান আবহাওয়া দপ্তর ১২ নভেম্বর দুপুরে শুধু একটি বিপদ বার্তা প্রচার করে। তখন কোনো সাইক্লোন শেল্টার ছিল না। ফলে ফলাফল যা হওয়ার, তা-ই হয়। ঘূর্ণিঝড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৬ লাখ মানুষ। আর বাড়িঘর ধ্বংস হয় ৮৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়ায় ৮৬ মিলিয়ন ডলার; যা বর্তমান হিসাবে ১ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
গতিবেগের দিক থেকে ভোলা সাইক্লোন অতি প্রবল না হলেও তখনকার দুর্বল সংকেত ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, জনসচেতনতার অভাব, অবকাঠামো, রাষ্ট্রীয় অবহেলা ইত্যাদি কারণে এর আঘাতে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি ছিল এক কথায় ব্যাপক। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়টি ’৭০-পরববর্তী অনেক ঘূর্ণিঝড়ের সমান অথবা অধিক গতিসম্পন্ন ছিল না; যেমন-২৯ এপ্রিল ১৯৯১ সংঘটিত ক্যাটাগরি-৫ সাইক্লোনটির গতি ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার, যার আঘাতে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আবহাওয়া বিভাগের আগাম পূর্বাভাস প্রদানের সক্ষমতা, কমিউনিটিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, আশ্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি হতো আরও বিধ্বংসী। যা হোক, ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় পাকিস্তান রেডক্রস এবং কেয়ার দুর্গতদের সেবায় মাঠে থাকলেও পাকিস্তান সরকার সময়মতো উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু না করায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। এমনকি ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তীকালে বিশুদ্ধ পানি সংকটে উপকূলজুড়ে কলেরা দেখা দেয়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় দুর্গত এলাকায় সামগ্রিক ত্রাণ কার্যক্রম বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হয়। পাকিস্তান সরকার অবশ্য ভারতকে দোষারোপ করে বলে-ভারত অনুমতি না দেওয়ায় তারা উদ্ধার ও ত্রাণবাহী বিমান পাঠাতে পারেনি। যা হোক, ঘূর্ণিঝড়ের আগে বিপদাপন্ন জনগণকে সতর্কবার্তা না দেওয়া এবং উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে গাফিলতির জন্য পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক (পূর্ব পাকিস্তান) সরকারকে বিশ্বব্যাপী সমালোচনায় পড়তে হয়। এ অবহেলা ও ব্যর্থতার জন্য ১৯ নভেম্বর ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল করে এবং ২৪ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে র্যালি হয়। দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে চীন সফররত প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ইসলামাবাদে ফেরার পথে ঢাকায় আসেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। ইসলামাবাদে ফেরার আগে তিনি প্রেস কনফারেন্সে ঘূর্ণিঝড় পূর্ব ও পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতা স্বীকার করেন। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে তিনি অর্থ বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেন। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ৯ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত ও মানবিক বিপর্যয় হলেও তিনি ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিত করেননি।
এর পরপরই জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর সরকার আর্থিক, লজিস্টিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলে। জাতিসংঘের অনুরোধে লীগ অব রেডক্রস (বর্তমান আন্তর্জাতিক রেডক্রস রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশন বা আইএফআরসি) ডেনমার্কের নাগরিক ক্লাস হেগস্ট্রমকে রিলিফ ডেলিগেট হিসাবে বাংলাদেশে পাঠায়। তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেডক্রসের সঙ্গে যৌথভাবে উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেন। হেগস্ট্রম তার মিশন শেষে ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছু প্রস্তাব রাখেন; যেমন-ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত উদ্ভাবন এবং ঝড়ের আগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রচার, বিপদাপন্ন মানুষকে অপসারণ এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন ইত্যাদি। এসব প্রস্তাবের সূত্রেই ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ২৮ এপ্রিল ১৯৭৩ তৎকালীন সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির (বিডিআরসিএস) একটি যৌথ কার্যক্রম হিসাবে অনুমোদিত হয়। সিপিপির অধীনে ঢাকা থেকে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা, থানা (বর্তমানে উপজেলা) ও ইউনিয়নের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ স্থাপন এবং সতর্ক সংকেত নির্ধারণ ও তা প্রচারের জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালী জেলার ২৩ থানার উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। বর্তমানে ৪২টি উপকূলীয় উপজেলায় ৭৬ হাজার ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপ্তি ও ব্যাপকতা বাড়ছে। এ বিবেচনায় নতুন নতুন এলাকা সিপিপির কর্ম এলাকাভুক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ এবং এ বছর কক্সবাজারের রামুকে সিপিপির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সিপিপি প্রতিষ্ঠায় বিডিআরসিএসের উদ্যোগ ও ভূমিকায় অনেক ক্ষেত্রেই অবজ্ঞা করার প্রবণতা লক্ষণীয়, এমনকি অনেক আলোচনা ও প্রকাশনায় যৌথ কর্মসূচি উল্লেখ না করে সিপিপিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একক কর্মসূচি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তবে স্বীকার্য, সরকারি স্বীকৃতি না পেলে সিপিপিকে টেকসই করা হয়তো সম্ভব হতো না। উল্লেখ্য, সরকার সিপিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও প্রশাসনিক ব্যয় বহন করে এবং বিডিআরসিএস তার সহযোগীদের (আইএফআরসি, আমেরিকান রেডক্রস, ইউএসএইআইড, অন্যান্য) কারিগরি প্রশিক্ষণ ও উপকরণ ব্যয় বহন করে। যা হোক, সরকারের দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি বা এসওডি-তে সিপিপির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং বিভিন্ন কমিটি ও কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য উল্লেখ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঘূর্ণিঝড়ের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সিপিপির সফলতা এখন বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে স্বীকৃত। মনে আছে, ২০০৯ সালে মিয়ানমারে সংঘটিত সাইক্লোন নার্গিসের আঘাতে সেদেশের প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হলে ঢাকায় কর্মরত মিয়ানমারের তখনকার রাষ্ট্রদূত বিডিআরসিএস সদর দপ্তরে এসে জানতে চান, আমরা কীভাবে সাইক্লোনে মৃতের সংখ্যা বিস্ময়করভাবে একক সংখ্যায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
’৭০-পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-উড়িরচর সাইক্লোন (১৯৮৫), সাইক্লোন ১৯৮৮, সাইক্লোন ১৯৯১, সাইক্লোন ১৯৯৭, সাইক্লোন সিডর ২০০৭, সাইক্লোন আইলা ২০০৯, সাইক্লোন মহাসেন ২০১৩, সাইক্লোন রোয়ানু ২০১৬, সাইক্লোন ফনি ও বুলবুল ২০১৯, সাইক্লোন আম্ফান ২০২০, সাইক্লোন ইয়াস ২০২১, সাইক্লোন সিতরাং ২০২২, সাইক্লোন মোচা, মিধিলি ও রিমেল ২০২৩ এবং সবশেষ সাইক্লোন রিমেল ২০২৪। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম, সংখ্যা, ধরন, তীব্রতা, গতি-প্রকৃতি, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ইত্যাদি পরিবর্তিত হচ্ছে। ২০২৪-এ একমাত্র ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন রিমেল উপকূলে আঘাত হানলেও আরও কয়েকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার কোনোটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছে অথবা কোনোটির গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভারতে আঘাত হানে। এছাড়া জলবায়ুর প্রতিঘাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছরই জোয়ারের সময় উপকূলের জনপদ অধিক হারে প্লাবিত হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। ২০২২ সালে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে সাইক্লোনের সময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাধীনতার ৬৪ বছরেও সাইক্লোন শেল্টারের সংখ্যা প্রয়োজনানুসারে বাড়েনি। অপরদিকে পুরোনো, বিশেষত ’৭০-এর দশকে নির্মিত শেল্টারগুলোর অধিকাংশই জরাজীর্ণ হয়ে এখন ঝুঁকিপূর্ণ অথবা ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে নতুন নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্তি হলেও এবং স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত শেল্টারের অভাবে অনেক মানুষই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাক্কালে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাড়িতেই অবস্থান করে। মনে আছে, ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেক প্রতিষ্ঠান ও দাতাসংস্থা হাজার হাজার শেল্টার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও থমকে যায়; যেমনটা ঘটেছে ’৯১-পরবর্তী বিভিন্ন সাইক্লোনের পরে। এমনকি গত ১৬ বছরে উন্নয়নের অনেক ছবি দেখা গেলেও ঘূর্ণিঝড়ে জীবন রক্ষাকবচ অর্থাৎ পর্যাপ্ত শেল্টার নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণহানি কমাতে হলে পর্যাপ্তসংখ্যক শেল্টার নির্মাণের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা ও অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সহজবোধ্য সংকেত ব্যবস্থা প্রবর্তন ও তার প্রচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতিসংঘের ‘সবার জন্য পূর্ব সতর্ক সংকেত’ (Early warning for Alll-EW4ALL) প্রচারণার উদ্যোগ বাস্তবায়নে শামিল হতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী ও তাদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণিঝড়ের আগেই তাদের কাছে সহযোগিতা পৌঁছানোর উদ্যোগের সূচনা হয়েছে, যা প্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড (Anticipatory Action) হিসাবে অভিহিত। এ ধরনের নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা এবং তার সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই সম্ভব ভবিষ্যৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা।
এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি; দুর্যোগ, জলবায়ু ও মানবিক বিষয়ক বিশ্লেষক
halim_64@hotmail.com