বাইফোকাল লেন্স
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা দেয়?

একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লাগাতার তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম ও তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, মার্কিন ইতিহাসে নতুন কোনো ঘটনা না হলেও বিরল নয়। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ জয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেক হিসাবকেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। বেপরোয়া স্বভাব, দুর্নীতি, অপকর্ম ও একাধিক ফৌজদারি মামলায় জড়িত হয়ে ভোটের আগে এক ধরনের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ট্রাম্পের। নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারলে, হয়তো জেলে যেতে হতো তাকে। মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা তো দিতে হতোই। কিন্তু তার এ অনবদ্য প্রত্যাবর্তন সবকিছু কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত বহন করছে বলেই মনে হয়। ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং পপুলার ভোট উভয় ক্ষেত্রেই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রানিংমেট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ব্যাপক হারে হারিয়ে দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অশ্লীল ভাষায় কথা বলায় অভ্যস্ত। এ বিষয়টি সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তারপরও এবার তারা ট্রাম্পের এ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছেন। নানা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিপাবলিকানরা বেশি জোর দিয়েছিল। মূল্যবৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। কমলা হ্যারিসের মূল লক্ষ্য ছিল, স্প্যানিশভাষী ল্যাটিনোজ, আফ্রিকান-আমেরিকান, মহিলা, কলেজশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ যুবসমাজ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের সমর্থন পাওয়া। কিন্তু শেষ চারটি ক্ষেত্রেই কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মূল্যবৃদ্ধিতে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে অর্থনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। গ্রামীণ ভোটারদের বড় অংশ চিরাচরিতভাবে রিপাবলিকান দলের সমর্থক। শহরের শ্রমিক-কর্মচারী শ্রেণি সাধারণভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত অনেক ডেমোক্র্যাট ভোটার ট্রাম্পকে অপছন্দ করলেও এবার শেষ মুহূর্তে তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থক আবার বুথমুখো হননি। ‘দোদুল্যমান’ অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটও এবার ট্রাম্পের পক্ষেই গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ বিজয়ে বিশ্বনেতাদের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানা গেলেও ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম হয়েছেন। নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তিনি শুভকামনা ব্যক্ত করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরাও তাদের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। ট্রাম্প আবারও ফিরে আসায় ইউরোপীয় দেশের নেতারা খুব বেশি সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হয় না। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ন্যাটোসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। সে বিচারে ট্রাম্পের ফিরে আসা তাদের জন্য স্বস্তির না-ও হতে পারে। তবে ইসরাইলে ট্রাম্পের বিজয়োৎসব পালিত হয়েছে। ট্রাম্পের এ প্রত্যাবর্তন বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য যে বার্তা দিচ্ছে, বাংলাদেশের জন্যও তা প্রযোজ্য। নতুন মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কতটুকু মান্য করেন, তার ওপর নির্ভর করছে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পথচলা কেমন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ কম ছিল না। বিশেষ করে বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের ফলে এ আগ্রহের মাত্রা যেন আরও বেশি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কী নীতি গ্রহণ করেন, তা এখন দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যাকেই সমর্থন দিক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রকাশ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনে সামরিক ঘাঁটি করবে বলে যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা এতদিন বিষোদগার করে এসেছেন, সেই যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতি পেতেই এখন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পরও তিনি তার পতনের অন্যতম কারণ হিসাবে সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১ নভেম্বর থেকে নিউইয়র্কে অবস্থান করার সুবাদে পরিচিত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাঙালি কমিউনিটিতে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট চাইতে দেখেছি। আমার ঘনিষ্ঠ পরিচিত বন্ধু আওয়ামী লীগের দু-একজন নেতার সঙ্গেও এ বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারাভিযান ও ভোট দেওয়ার জন্য তাদের নেত্রীর নির্দেশ আছে বলে তারা আমাকে জানিয়েছেন। যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এত বিদ্বেষ, সেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আপনার নেত্রীর এত আগ্রহের কারণ কী, জিজ্ঞেস করতেই এক বন্ধু জানালেন, ‘ডেমোক্র্যাটের সঙ্গে ড. ইউনূসের বরাবরই ভালো সম্পর্ক, বিশেষ করে বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। গত নির্বাচনে ইউনূস সাহেব সরাসরি ডেমোক্র্যাটদের সাপোর্ট দিয়েছিলেন। আমাদের নেত্রী চেষ্টা করছেন, এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে যদি ট্রাম্পের কাছাকাছি আসা যায়। এর জন্য তো কিছু কাজ করে দেখাতে হবে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্য নেত্রীর নির্দেশ, ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ট্রাম্প যদি জিতে আসেন, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য ভালোই হবে।’
অতঃপর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আওয়ামী শিবিরে উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যেতে দেখেছি। এমনকি বাংলাদেশে অনেককেই নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে ট্রাম্পের বিজয়োৎসব উদযাপন করতে দেখা গেছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটে আবারও দেখা হলে, আমি আমার বন্ধুটিকে অভিনন্দন জানিয়ে একই প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করি, ট্রাম্প তো ক্ষমতায় ফিরে আসছে। এখন আপনারা কী করবেন? উত্তরে তিনি বললেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করা এবং গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আমরা কাজ করব। আমি তাকে প্রশ্ন করি, আপনি তো এ দেশের নাগরিক। আপনি ভালো করেই জানেন, ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। আপনি কী মনে করেন, আপনার নেত্রী যে আশা করছেন ট্রাম্প তা করবেন? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন, এ কথা অবশ্য ঠিক, তবে ট্রাম্প বলে কথা। তিনি প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক অনেক ক্ষমতাই মিসইউজ করেছেন। এসব তার জন্য কিছু নয়। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প শুধু দাপটের সঙ্গেই হোয়াইট হাউসে ফিরছেন না, তার রিপাবলিকান দল সিনেটে ও প্রতিনিধি পরিষদে আধিপত্য ফিরে পেয়েছে। সাধারণত সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে প্রেসিডেন্টের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। যে কোনো নীতি বাস্তবায়ন, আইন পাশ করতে সমস্যা হয় না। একবার যদি ট্রাম্পকে ‘ফিট’ করা যায়, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধাই হবে। আমি ‘ফিট’ বলতে কী বুঝিয়েছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, বিল ও হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের নেত্রীর যদি অনুরূপ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, মন্দ কী! একটু দম নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি মনে করেন এ দেশে, ব্যক্তিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে আপনার নেত্রীর তুলনা চলে? বন্ধুটি উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন। তিনি যাতে অস্বস্তিতে না ভোগেন, তাই দ্রুত অন্য প্রশ্নে চলে যাই। প্রশ্ন করি, ট্রাম্পের কাছাকাছি হওয়ার ব্যাপারটি ঘটবে কী করে? বন্ধুটি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সম্পর্ক। শেখ হাসিনা তো এখন মোদির সন্নিকটেই আছেন। সেদিক দিয়েও চেষ্টা করা যেতে পারে। আমি বললাম, আপনি কি মনে করেন, আপনি যা বলছেন, আপনার দলের অন্যদেরও একই ধারণা? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার তো তাই মনে হয়।’ আমি আর কথা না বাড়িয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিই। বিদায় নেওয়ার সময় আমার বন্ধুটি অনুরোধ করে বলেন, এ বিষয়ে তার নাম যেন প্রকাশ না করি; প্রকাশ পেলে তার বিপদ হতে পারে।
আমার বন্ধুর কাছে জেনেছি, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে ট্রাম্প যে টুইট করেছিলেন, সেটি তাদেরই চেষ্টার ফল। এ বিষয়ে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদেরও সহযোগিতা ছিল বলে জানান। ট্রাম্পের টুইটের পর এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বেশ উৎসাহবোধ করেছিল বলে জেনেছি। তবে ভোটের আগে ট্রাম্প টুইট করে এখানকার লাখ লাখ ভারতীয় হিন্দুদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন, এ কথা বুঝতে পারলেও তারা অসন্তুষ্ট নন। তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, নেত্রীসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা মনে করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির যেহেতু অন্তরঙ্গ সখ্য রয়েছে, এ সখ্যকে কাজে লাগিয়ে তাদের ভাষায় ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি’র বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতে মোদি নিশ্চয়ই ট্রাম্পকে উৎসাহিত করবেন। এভাবেই হয়তো বাংলাদেশে ড. ইউনূস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কাজটি সম্পন্ন করা যাবে। আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীর এ সরলীকরণ বাস্তবে কতটুকু কাজ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ডিঙিয়ে ট্রাম্প কিছু করবেন, সে ধারণা অনেকেই করেন না। যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো এখন আর ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে না। চীন নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র যেমন ভারতকে কাছে টেনে নিয়েছে, একইভাবে তারা বাংলাদেশকেও কাছে রাখবে আশা করা যায়। মনে রাখতে হবে, নিজেদের স্বার্থে কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সরকারই কোনো নীতি গ্রহণ করলে, পরবর্তী সরকার তার বিচ্যুতি ঘটায় না। সুতরাং বাংলাদেশ নীতিতে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্ত যে সহজেই পালটাবে না, তা বলাই যায়। যেমন, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের শেষদিকে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের যে ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন, বাইডেন ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মাথায় আফগানিস্তান থেকে সেই সৈন্য বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের কোনো হেরফের হবে, তা মনে করার কোনো কারণ দেখি না।
বাংলাদেশে সফল গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ এতদিন যে গণতন্ত্রের কথা বলে এসেছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে খুব বেশি উৎসাহিত নয়, তা বোঝা গেছে। কাজেই ভারতের কথায়, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ফর্মুলার কোনো গণতন্ত্রের উত্তরণ হোক, তা ট্রাম্পও চাইবে না। সুতরাং বাংলাদেশ আবার অস্থিতিশীল হোক, সেটা সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনেরও কাম্য নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বৈশ্বিক একটা ইমেজ আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দল ছাড়াও মূলধারার থিংকট্যাংক, একাডেমিক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ড. ইউনূসের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক, যারা বাংলাদেশ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে যথেষ্ট গাইড করেন। সাবেক ও বর্তমান অনেক রিপাবলিকান সিনেটর আছেন, যারা ড. ইউনূসের ভক্ত। তারাও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভালো পরামর্শ দেবেন আশা করা যায়। কাজেই ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে যেভাবে তছনছ করে গেছে, তার যথাযথ সংস্কার করে ড. ইউনূস যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন, তাহলে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো হস্তক্ষেপ হবে বলে মনে হয় না।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা