Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ট্রাম্পের বিজয় একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করবে

Icon

মার্টিন কেটল

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাম্পের বিজয় একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করবে

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি এমনকি ২০১৬ সালে তার প্রথম বিজয়ের চেয়েও বেশি কিছু। এটি পরিবর্তনের একটি বিশেষ মুহূর্ত, যা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বাকি বিশ্বের জন্যও। কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বিশ্বের জন্য অপরিহার্য ও নির্ভরযোগ্য একটি দেশ। কিন্তু তা আর থাকা হবে না। এমনকি একদিন তারা আমাদের (ইউরোপের) বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ১৯৪৫-পরবর্তী প্যাক্স আমেরিকানার কফিনে চূড়ান্ত পেরেকগুলোর একটি স্থাপন করবে বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর থেকেই সেই পুরোনো স্বাভাবিক অবস্থাটি ভেঙে যাচ্ছে। জর্জ ডব্লিউ বুশের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এটির সমাধানের চেয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল বেশি। বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন উভয়েই আমেরিকার ক্ষমতা প্রয়োগে অনিচ্ছুক ছিলেন, অতি সম্প্রতি এবং দুঃখজনকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে। যদিও এ বাস্তবতা এখন আর গোপন নেই।

ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্বব্যাপী এজেন্ডার পরিবর্তন হবে, আমরা এটি পছন্দ করি বা না করি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাগ্রস্ত হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও বেশি লেনদেনের বিষয় হয়ে উঠবে। রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াই ব্যাহত হতে পারে এবং তাইওয়ান থাকবে চীনা বন্দুকের ব্যারেলের মুখোমুখি। ব্রিটেনসহ সর্বত্র উদার গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে পড়বে।

আমেরিকান ভোটাররা এ সপ্তাহে একটি ভয়ানক এবং ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে। আমাদের বলা অত্যুক্তি হবে না যে, ১৯৪৫ সাল থেকে যেসব নীতি ও নিয়মের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্ব গড়ে উঠেছে, তা থেকে তারা সরে এসেছে। আমেরিকানরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ট্রাম্প ‘অদ্ভুত’ (যা বলা ফ্যাশনে হয়ে দাঁড়িয়েছিল) নন, বরং মূলধারার একজন ব্যক্তি। মঙ্গলবার বিপুলসংখ্যক ভোটার তাকে ভোট দিয়েছে। এর পরিণতি নিয়ে আমেরিকানদের বাঁচতে হবে।

ব্রিটেন ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে কী ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং এটি কেবল শুরু। অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও ঠিক ততটাই বাস্তব। ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী, সুরক্ষাবাদী এবং অসন্তোষ-ইন্ধনযুক্ত বার্তাগুলোর প্রতি গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সাড়া দিতে হবে অনেক বেশি সংযত ও দৃঢ়তার সঙ্গে। আমরা যদি একই ধরনের শক্তির দ্বারা আবিষ্ট হওয়া এড়াতে চাই, রাশিয়ার মতো বৈরী শক্তির কাছে আমাদের আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে রেখে যেতে না চাই, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের সক্রিয় হতে হবে, নিষ্ক্রিয় নয়।

ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অজ্ঞতাপ্রসূত প্রতিক্রিয়া হবে আমাদের চোখ ও কান বন্ধ করে রাখা এবং আমাদের উদারনৈতিক কপটতার আগের চেয়ে আরও জোরালো পুনরাবৃত্তি করা। ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন একটি চমকপ্রদ ঘটনা, তবে এই ধাক্কাটি গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং অভিবাসন সংক্রান্ত ভীতির বিরুদ্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করা উচিত।

ব্রিটেনের জন্য, যে দেশটি এতদিন ধরে বিভ্রম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অলস অনুসরণ আঁকড়ে আছে, এবারের মার্কিন নির্বাচন ছিল তার কাছে কঠিন পছন্দের একটি মুহূর্ত। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের জনপ্রিয়তা ইতোমধ্যে স্খলিত; এখন তিনি তার ভূমিকার কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি, যেমনটি তিনি কমন্সসভায় বলেছেন, যেন ট্রাম্প ধারাবাহিকতা প্রদান করেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি ইউক্রেন এবং একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে তাকে সঠিকভাবেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। স্টারমারকে এসব সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।

তবে ব্রিটেনের ক্ষেত্রে আরও বড় কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। এ দেশটি এই বিশ্বাস আঁকড়ে আছে যে, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক উপভোগ করে। সর্বোপরি, দেশ দুটির মধ্যে রয়েছে অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং কিছু ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অভিন্নতা। এ সম্পর্ক ব্রিটেনকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পরও কি এটা বজায় থাকবে?

বাস্তবতা হলো, আমরা, যেমন অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, একটি অভিন্ন ভাষা দ্বারা বিভক্ত দুটি দেশের মানুষ। আমেরিকানরা এটি প্রমাণ করার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এ দেশে ভোটগ্রহণ অন্যদিক থেকে একটি বিষয়ে গুরুত্ব বহন করে। সাম্প্রতিক একটি জরিপ অনুসারে মাত্র ২১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ মনে করে, ট্রাম্পের বিজয় ‘একটি ভালো কিছু’ হবে। অন্য এক জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ ব্রিটিশ কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন; আর ট্রাম্পের পক্ষে ছিলেন মাত্র ১৬ শতাংশ। মনে রাখতে হবে, ব্রিটেন এসব বিষয়ে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে অনেকটাই সংগতিপূর্ণ।

যেহেতু ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বেশিরভাগ ইউরোপীয়র কাছে হুমকিস্বরূপ, সেহেতু ব্রিটেনের উচিত কি ইউরোপের কাছাকাছি যাওয়া? এটি একটি আইনগত প্রশ্ন, এবং শুধু ব্রেক্সিট কঠিন করে তোলে বলে এ প্রশ্নকে এড়ানো যাবে না। নিঃসন্দেহে, ব্রিটেনের প্রধান পররাষ্ট্র সম্পর্ক এখন ইউরোপকে কেন্দ্র করেই নিহিত হবে, অন্য কোথাও নয়। তবে ব্রেক্সিটের সব ক্ষত আবার জাগিয়ে তোলার কোনো মানে নেই। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে ইউরোপের সঙ্গে লেবার সরকারের সম্পর্ক পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি একটি অধিকতর বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবেই রয়ে গেছে।

ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন থেকে একটি ছোট সম্ভাব্য সান্ত্বনা রয়েছে : ঘটনাটি এতটাই মর্মান্তিক যে, এটি শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদেরকে আমেরিকানদের ভিন্ন এবং নিজেদেরকে আমাদের মতো দেখতে সাহায্য করতে পারে, অনুমিত বিশেষ সম্পর্কের ক্রাচের ওপর আর নির্ভরশীলতা নয়। সব ক্ষয়প্রাপ্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের নিজ নিজ উত্তরাধিকারীর সঙ্গে লড়াই করছে, যেমন ১৯ শতকের শক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স, এমনকি রাশিয়াও বিভিন্ন উপায়ে করছে। অনেক পরের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবেমাত্র এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তরিত

মার্টিন কেটল : গার্ডিয়ানের কলামিস্ট

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম