সংবিধান বাতিল, নাকি সংশোধন?
জেহসান ইসলাম
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের সংবিধান নিয়ে দুটি মত বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। দুটি মত নিয়েই সব পর্যায়ের আলোচকরা দুভাগে বিভক্ত। মত দুটি আমরা সবাই জানি-সংবিধান সংশোধন, নাকি পুনর্লিখন বা বাতিল? দুটি মতের কোনটি সঠিক তা বলার আগে বিশ্বের প্রধান কয়েকটি দেশে স্বাধীনতা লাভ বা বড় রকমের বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর রচিত সংবিধান ও এর ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।
অধিকাংশ দেশে নতুন করে সংবিধান রচিত হয়েছে দেশকে বহিঃশাসন থেকে মুক্ত করার পর অথবা সফল বিপ্লবের মাধ্যমে প্রচলিত শাসনব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তনের পর। আধুনিক যুগে বিপ্লবের কথা এলে প্রথমেই আসে ফরাসি বিপ্লবের প্রসঙ্গ। এ বিপ্লব ছিল দুনিয়ার বুকে সাড়া জাগানো অন্যতম বিপ্লব। এ বিপ্লবের মাধ্যমে শুধু যে অভিজাততন্ত্রের পতন হয়েছে তাই নয়, এ মহাঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ইতিহাসে রচিত হয়েছে বিশ্বসেরা দর্শনগুলো। জন্ম নিয়েছেন রুশো, ভলতেয়ার, মন্টেস্ক্যু’র মতো জাঁদরেল দার্শনিকরা, যারা এখনো সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক।
ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয় একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে দেড়শ বছরে নানাভাবে শাসন ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তাদের সংবিধানও কয়েকবার পরিবর্তিত হয়। সর্বশেষ ১৯৫৮ সালে নতুনভাবে বর্তমান সংবিধান প্রণীত হয় এবং এর মাধ্যমে সেখানে পঞ্চম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পর গৃহীত জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত এখনো বহাল আছে।
ফরাসি বিপ্লবের এক যুগেরও বেশি আগে ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৭৮৯ সালে (ফরাসি বিপ্লবের বছর) যুক্তরাষ্ট্র যে সংবিধান প্রণয়ন করে, সে মূল সংবিধান এখনো বহাল আছে, যদিও প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে তারা এযাবৎ ওই সংবিধানে শুধু ২৭টি সংশোধন এনেছে। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই রুশো, ভলতেয়ার, মন্টেস্ক্যু, জনলক প্রমুখ আধুনিক দার্শনিকদের মতবাদ ধারণ করা হয়। এটিকে একটি উদারনৈতিক, গণমুখী এবং রাষ্ট্রের প্রধান তিন অঙ্গ-নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংবলিত লিখিত আকারে রচিত প্রথম সংবিধান বলেও গণ্য করা হয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে ৩৭০ বছরের জার শাসনের অবসান ঘটে এবং বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় ১৯২৪ সালে প্রথম সংবিধান রচিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে চারবারে চারটি সংবিধান প্রণীত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বর্তমান রাশিয়ান ফেডারেশন গঠিত হয় এবং নতুন করে ১৯৯৩ সালে সংবিধান প্রণীত হয়। এরপর ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় কিছু অংশকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিসহ অন্যান্য কয়েকটি কারণে (মূলত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকেন্দ্রিক) পাঁচবার সংশোধিত হয়।
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ভারত ১৯৫০ সালে প্রথম যে সংবিধান প্রণয়ন করে, তা এখনো অব্যাহত আছে। তাদের এ সংবিধান বিভিন্ন সময়ে এযাবৎ ১০৬ বার সংশোধিত হয়েছে। পাকিস্তানের সংবিধান কখনো সুসংহতভাবে প্রণীত হয়নি প্রধানত সামরিক বাহিনী কর্তৃক বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের কারণে।
চীন, ইরান, কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে বিপ্লবের পর সম্পূর্ণভাবে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়। কারণ এসব বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বের শাসনব্যবস্থাকে পুরোপুরিভাবে উপড়ে ফেলা হয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার আগে ওইসব দেশে বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বা আদর্শকে ধারণ করে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছিল এবং তাদের বিপ্লব সফল হলেও তারা ক্ষমতায় গেলে ওইসব এজেন্ডা বা আদর্শ তারা যে বাস্তবায়ন করবে, সে প্রতিশ্রুতি তারা জনগণকে জানিয়ে রেখেছিল। বিপ্লব সফল হওয়ার পর ক্ষমতায় গিয়ে সেসব দেশে সেভাবেই নতুন করে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল ও তাদের প্রতিশ্রুত আদর্শ বাস্তবায়নে এখনো তারা কাজ করে যাচ্ছে। ফলাফল কতটা ভালো বা মন্দ হয়েছে বা হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে; যা একটি ভিন্ন বিষয়।
আমরা যদি আমাদের ইতিহাস ১৯৬৬ থেকে শুরু করি, তাহলে দেখা যায়, ওই সালে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণকে আকৃষ্ট করতে সফল হয়েছে। কারণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এর ভিত্তিতে তারা পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পায়; কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করার কারণে পরিস্থিতি দুঃখজনক অধ্যায়ের দিকে মোড় নেয় এবং ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু একথা মানতে হবে, ছয় দফা ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের কাঠামোতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসন অর্জন, স্বাধীনতা নয়। ফলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক আদর্শ বা এজেন্ডা কী হবে, তার জন্য আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনেরই কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না; যা হয়েছে সবই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল ওই সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে। ১০ এপ্রিল সরকার গঠনের আগে স্বাধীন বাংলাদেশের একটি ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হয় এবং তা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলের ১৬৭ জন সদস্য কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বলা যায়, এ ঘোষণাপত্রই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের প্রাথমিক ভিত্তি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন সরকারের অন্যতম কাজ ছিল সংবিধান প্রণয়ন ও তদানুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ঠিক করা। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধান জারি করে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সরকার সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে সে কাজটা সম্পন্ন করেছেন বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকে এমনও মনে করেন, বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে সংবিধান সতেরোবার সংশোধন করা হয়েছে এবং এসব সংশোধনের মধ্যে দুটি ব্যতীত (দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ) বাকি সবই করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বা ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের সুবিধার্থে, জাতীয় স্বার্থে নয়। যে কারণে এসব সংশোধন নিয়ে বিপুল সমালোচনা আছে এবং এজন্য কেউ কেউ এটিকে ‘সঙ-বিধান’ বলেও আখ্যায়িত করছেন। যত সমালোচনাই থাকুক না কেন, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত সংবিধান পুরোপুরি বাতিল বা পুনর্লিখনের কোনো কথা শোনা যায়নি।
জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক (মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্রদের আন্দোলন ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে, যে কোটা প্রথা ২০১৮ সালে বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এ আন্দোলন সারা দেশে ছাত্রসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরিক্রমায় তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় এবং সব শ্রেণি-পেশার জনগণ এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। বহু মানুষের হতাহতের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এ আন্দোলনে কখনো কোনোভাবে সংবিধান সংশোধন বা বাতিল বা পুনর্লিখনের কোনো দাবি বা প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এ দাবি উঠেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোনো কোনো মহল থেকে।
বিভিন্ন সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে অশুভ উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের ফলে এসব সংশোধন নিয়ে বহু মানুষের আপত্তি আছে, কিন্তু কোনো বিশেষ সংশোধনের পক্ষে বা বিপক্ষে কতজন তা নিরূপিত নয়। কিছু কিছু সংশোধনের বিষয়ে প্রায় সবার আপত্তি আছে বলে অনুমান করা যায়। যেমন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল। আবার কোনো কোনো সংশোধনীর বিষয়ে কোনো কোনো দল বা পক্ষের আপত্তি থাকলেও জনগণের বিশাল অংশের ঐকমত্য আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। যেমন, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন এবং অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে ‘রাষ্ট্র ধর্ম’ হিসাবে ঘোষণা। যত আপত্তিই থাকুক, কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দুটি সংশোধনকে বাদ দেওয়ার মতো দুঃসাহস কি দেখাতে পারবেন?
মূলত এ দেশের সাধারণ মানুষের সংবিধান নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ এ জটিল বিষয়ে তাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা বা আগ্রহ না থাকাই স্বাভাবিক। তারা যা চায় তা হলো, যেভাবেই দেশ চালানো হোক না কেন, সেটা যেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে হয়, রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক সাধারণ মানুষের জীবনকে নানাভাবে দুর্বিষহ না করা হয়, দুর্নীতি বা অর্থ পাচার না হয় ইত্যাদি; অর্থাৎ মোদ্দা কথা, দেশে যেন সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আর চায় বিভিন্ন নির্বাচনে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। তাদের এসব চাওয়া পূরণের জন্য বিদ্যমান সংবিধান বাতিল বা পুনর্লিখনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং এ ধরনের উদ্যোগে জাতির মধ্যে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে, যার পরিণাম বিপজ্জনকভাবে সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
স্বাধীনতা হলো যে কোনো দেশ বা জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। অন্য কোনো অর্জনই এর সমতুল্য হতে পারে না। না অতীতে, না ভবিষ্যতে। একটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে সে স্বাধীন দেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে, সেটিকে এক ফুৎকারে বাতিল করার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সহজ হবে না। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজম, অপশাসনকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাটা সাধারণ মানুষ মেনে নেবে বলে মনে হয় না। অনেকেই বিশ্বাস করেন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিও সংবিধান বাতিলের পক্ষে সহমত পোষণ করবে না। বর্তমান প্রজন্মের পরে ভবিষ্যতে আরও বহু প্রজন্ম আসবে, তাদের কথাও বর্তমান প্রজন্মের সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। ২৫০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সংবিধান বাতিল করার প্রয়োজন দেখেনি, এমনকি মাঝখানে একটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরও। তাহলে আমাদের এমন কী হলো, পুরো সংবিধানই বাতিল করতে হবে?
তারপরও যদি সংবিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে জনগণ বিদ্যমান সংবিধান বাতিল চায় কী চায় না, তার ওপর একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। ভবিষ্যতে সংবিধানের যে কোনো সংশোধনের জন্য গণভোট আয়োজনের বিষয় বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
জেহসান ইসলাম : অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব