বাইফোকাল লেন্স
দেশপ্রেমের আয়নায় নিজের মুখ
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভয়েস অফ আমেরিকার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া এক বক্তব্য নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে সোচ্চার। এর মধ্যে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাবাসসুম ঊর্মি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’ এ নিয়ে চারদিকে হইচই পড়ে গেছে। অনেকেই তার সাহসী বক্তব্যের জন্য প্রশংসা করছেন, আবার অনেকেই তার এ বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তাবাসসুম ঊর্মি প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন কিনা। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন কিনা। ফলে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথমে তাকে ওএসডি করে এবং বিভাগীয় তদন্তের স্বার্থে পরে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাবাসসুম উর্মি বলেছেন, ‘যখন যেই গভর্নমেন্ট আসবে, দুই ধরনের কন্ট্রাডিক্টরি কথা বলবে, একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে, আরেকজন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলবে, আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করব, এটি হিপোক্রেসি। দুটি কন্ট্রাডিক্টরি মতে একমত পোষণ করা, এটি হিপোক্রেসি।’ নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যদি দেখি মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলতে চায়, আমি তার বিপক্ষে কথা বলব। আমি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি হতে পারব না। তিনি আরও একটি কথা বলেছেন, ‘আমি যদি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে না-ও থাকতাম, আমি সেইম কথাটা বলতাম।’ তার এ বক্তব্য নিয়েও কিছু কথা বলার সুযোগ আছে, যা আমি পরে আলোচনা করব।
তাবাসসুম ঊর্মির কথা শুনে ভালোই লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন হয়ে তার এ কথা আমার ভালো না লেগে পারে না। কিন্তু যখন তার কথা এবং বাস্তবতার মধ্যে ফারাক দেখেছি, তখন খারাপ লেগেছে। ভয়েস অফ আমেরিকার প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস যে কথা বলেছেন, তা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। আমি তার বক্তব্যের কোথাও মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলা বা ওই ধরনের কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন কিছু খুঁজে পাইনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বিনষ্ট করা, ১৫ আগস্টে সরকারি ছুটি বাতিল করা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বীকৃত ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সে বিষয়ে প্রশ্নকর্তা ড. ইউনূসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘আপনি পুরোনো দিনের কথাবার্তা বলছিলেন। এরই মধ্যে একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেছে, এটি বোধহয় আপনার স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। কাজেই নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটাকে দেখতে হবে তো। কত ছেলে প্রাণ দিল, সেটা নিয়ে আপনার প্রশ্ন নেই। কেন প্রাণ দিল? সেগুলো আসুক। কাজেই প্রথমে স্বীকার করতে হবে, ছাত্ররা বলেছে, আমরা রিসেট বাটন পুশ করেছি। এভরিথিং ইজ গন। অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। দেশের মানুষও তা চায়। নতুন ভঙ্গিতে চলার জন্য যেটা আছে, সেটা আমাদের সংস্কার করতে হবে।’ এখানে ড. ইউনূসের বক্তব্যের কোথাও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ আসেনি। প্রশ্নকর্তার প্রশ্নেও মুক্তিযুদ্ধের কোনো প্রসঙ্গ ছিল না। তাহলে, ‘রিসেট বাটন পুশ করেছি’, ‘এভরিথিং ইজ গন’ কিংবা ‘অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে’ বলতে তিনি মুক্তিযুদ্ধকেই বুঝিয়েছেন, এমন উপসংহার টানা হলো কেন? কী উদ্দেশ্য নিয়েই বা বিতর্কের সৃষ্টি করা হলো? প্রশ্নকর্তা যদি তখনই এ বিষয়গুলো ড. ইউনূসকে আরও পরিষ্কার করে বলতেন, তাহলে এ বিতর্কের হয়তো সূত্রপাত হতো না। ১১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে অবশ্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে ড. ইউনূসের উল্লিখিত বক্তব্যটি পরিষ্কার করা হয়েছে।
আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ আছেন, যারা সবকিছুর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকে টেনে নিয়ে আসতে পারলে খুশি হন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেখানে প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন এবং ড. ইউনূসের উত্তরের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের কোনো প্রসঙ্গই ছিল না, সেখানে মুক্তিযুদ্ধেকে টেনে এনে বিতর্ক জুড়ে দিলেন। এ শ্রেণির মানুষ মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করা। কিন্তু আওয়ামী লীগও যে জনগণ এবং দেশবিরোধী কাজ করতে পারে, শেখ হাসিনার মতো স্বৈরশাসক তা প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন। তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে একই পাল্লায় মাপার চেষ্টা করেন। তারা ভুলে যান, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-উত্তর পটপরিবর্তনের পর রেজিস্টার্ড করা আওয়ামী লীগে নির্লোভ, ত্যাগী ও প্রকৃত নেতাকর্মীদের স্থান হয়নি। তাদের স্থান দখল করে নিয়েছে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প শুনিয়ে এক শ্রেণির তথাকথিত ব্যবসায়ী, অর্থলোভী, সন্ত্রাসী, অর্থ পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরার দল। বিগত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে ফেরি করে বেরিয়েছেন, সে বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করেই শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে একটানা ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসকের মতো দেশ চালিয়েছেন। এ সময় তিনি যে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের কবর রচনা করেছিলেন, মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে করেছিলেন রুদ্ধ, বাকস্বাধীনতা খর্ব করে মুক্ত ও খোলা মনে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন, দেশকে গুম, খুন ও অর্থ লোপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন, এ নিয়েও এ শ্রেণির মানুষের বক্তব্য কদাচিত শুনতে পাই।
১০ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের একটি ফেসবুক গ্রুপে হঠাৎ করেই একটি পোস্ট দেখে চোখ আটকে গেল। পোস্টে চোখ বুলিয়ে দেখি আমার ইমিডিয়েট জুনিয়র এক কর্মকর্তা সুন্দর করে ড. ইউনূসের রিসেট বাটন পুশ করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন। তার ব্যাখ্যার সঙ্গে ১১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া ব্যাখ্যার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি। এ কারণে ওই পোস্টের চুম্বক অংশটুকু এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। ‘রিসেট বাটন ও ঊর্মি কাহিনী’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, রিসেট বাটন পুশ করা মানে মুল সফ্টওয়্যার মুছে ফেলা নয়। জাংক কিংবা অপ্রয়োজনীয় ডাটা মুছে ফেলা। তা প্রায়ই করতে হয়, বিশেষ করে এ ধরনের অতিরিক্ত ময়লা ডাটার কারণে সেট যখন ওভারলোডেড হয়ে যায়। এরকমই এক জাংক ওভারলোড নিয়ে চলতে থাকা বাংলাদেশকে রিসেট বাটন চাপ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর ছাত্ররা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সফলতা এনে দিয়েই তা করে দেয়। তাতে মুছে যায় হাসিনার লোড করা সব নোংরা জাংক ডাটা। যেমন, ভুয়া চেতনা, দাসত্বের পররাষ্ট্রনীতি, ভোট কারচুপির গণতন্ত্র, গুম-খুনের শাসন ইত্যাদি। আর সে কথাই ড. ইউনূস বলেছেন তার সাক্ষাৎকারে।
আগেই বলেছি, তাবাসসুম ঊর্মি ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। তার মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেম দেখে তাকে অনেকেই অনেক বিশেষণে আখ্যায়িত করেছেন। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তো দেখলাম ঊর্মিকে এ যুগের ‘প্রীতিলতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ভাবখানা এমন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে সেই যুগের ইংরেজদের মতো আচরণ করছে। ঊর্মির সাহসী বক্তব্য শুনে আমিও আগ্রহী হয়েছিলাম। কিন্তু যখন গত ৫ অক্টোবর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তার ফেসবুক পোস্টটি দেখি, তখন রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছি। একি! সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনিও যে আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো কথা বলছেন। উড়ে এসে জুড়ে বসা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত যেমন আবু সাঈদকে ‘ড্রাগ এডিক্ট’ বলেছিলেন, উর্মিও একই কায়দায় আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘আবু সাঈদ! বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী একটা ছেলে যে কিনা বিশৃঙ্খলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতেই মারা পড়ল, সে নাকি শহিদ! এটাও এখন মানতে লাগবে! আর এ আইন ভঙ্গকারী সন্ত্রাসীর জন্য দেশের ‘অথর্ব’ অতি প্রগতিশীল সমাজ কেঁদে কেটে বুক ভাসিয়েছে। তার এ বক্তব্য সত্যিই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কোনো বিবেকবান ব্যক্তিরই এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। অথচ ঊর্মি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, এগুলো সবই মীমাংসিত সত্য। কিন্তু ‘চেতনা বিক্রি’ কিংবা ‘২০২৪-এর গণহত্যা’ এগুলো সবই তদন্তসাপেক্ষ। এগুলো তো প্রুভড না। তার কথা ধরে যদি বলি, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে, তাহলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তিনি কীভাবে তাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিলেন? আবু সাঈদ নিজের দলের লোকের হাতেই মারা গেছেন, এ মীমাংসায় বা তিনি এলেন কীভাবে? এসব কথা তো আমরা আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে শুনেছি। পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুঁজলে তাদের সেই বক্তব্য এখনো পাওয়া যাবে। ‘চেতনা বিক্রি’ কিংবা ‘গণহত্যা’ প্রমাণের জন্য যদি তদন্ত সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তিনি হিপোক্রেটের পর্যায়ে পড়লেন না? অথচ তিনি নিজে ‘হিপোক্রেসি’ বা ভণ্ডামি করতে পারবেন না বলে জোর গলায় মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিয়েছেন, যা এ লেখার প্রথমে উল্লেখ করেছি।
তাবাসসুম ঊর্মির হিপোক্রেসির আরও উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক বলে জোর দাবি করেছেন। অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে না থাকলেও তিনি একইভাবে রিঅ্যাক্ট করতেন জানিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি যা বলেছেন, তা-ই যদি মিন করতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী সরকার যখন রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল, তখন তিনি কোথায় ছিলেন? তখন কি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের এ ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক কাজের জন্য যেসব মুক্তিযোদ্ধা মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন, তাদের পক্ষ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন? তখন তো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। অথবা এক-দেড় বছর আগেও আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, লে. কর্নেল ফারুক খান এবং আ হ ম মুস্তফা কামাল যখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন, তখন তো ঊর্মিকে এখনকার মতো প্রতিবাদী হয়ে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি! আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের এ খবর তখন তো সব জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তখন তিনি সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি করেননি, কারণ তিনিও জানতেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ডিজিটাল আইনে তার চাকরিটাই শুধু খেত না, তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে চিরতরে তার মুখ বন্ধ করে দিত।
কে জানে, শেখ হাসিনার পতনের পর তার রেখে যাওয়া অশুভ শক্তি অন্তর্বর্তী সরকারকে অজনপ্রিয় করার জন্য যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে, ঊর্মির এ ঘটনা তারই অংশ কিনা। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশ ও বিদেশে বসে গোপনে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাবাসসুম ঊর্মি না বুঝেই তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন কিনা। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা সম্পর্কে তিনি নিশ্চয় ভালোভাবেই অবগত আছেন। তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, বিভাগীয় তদন্ত চলবে বলে। তদন্তের মাধ্যমেই জানা যাবে তার এমন আচরণের আসল কারণ। তিনি সত্যিই কি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই প্রতিবাদী হয়েছেন, নাকি অন্য কিছু? অবশ্য তদন্তে যদি তার এ আচরণের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের সুযোগ রাখা হয়। তবে আমরা যারা দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেলে উৎসাহিত হয়ে উঠি, তারা আরও একবার দেশপ্রেমের আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে নেই, ঊর্মির ভাষায়, আমরাও হিপোক্রেট বা ভণ্ডের মতো আচরণ করছি কিনা!
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক