Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নতুন কিছু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে

Icon

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এই অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স খুব বেশিদিন হয়নি, দুমাসের মতো হয়েছে। এর মাঝেই অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের এ সফরটা উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে জাতিসংঘে তার যাওয়া এবং সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে একাধিক নেতার সঙ্গে তার দেখা করার মধ্য দিয়ে। যেমন, জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমেরিকা সব ধরনের সাহায্য করতে রাজি আছে বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকারকে, বিশেষ করে সংস্কারগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে, সে বিষয়ে। এখন দেখা দরকার, সব ধরনের সাহায্য বলতে আসলে কী বোঝাচ্ছে। একইভাবে আমরা দেখেছি ইতালির প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী, এর পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। এখন দেখা দরকার, এ সফরের মাধ্যমে যে কথাবার্তা হয়েছে এবং যে আশ্বাস পাওয়া গেছে, সেটা যথেষ্ট কিনা। বড় আকারে অর্থনৈতিক যে স্থবিরতা বাংলাদেশে এখন আছে, সেটাকে কাটিয়ে তোলা যাবে কিনা। বিশেষ করে বিনিয়োগ আসবে কিনা। কারণ বিনিয়োগকারীরা সব সময় বড় ধরনের স্থিতিশীলতা চায়। খেয়াল রাখা দরকার, বিনিয়োগটা এমন হওয়া দরকার, যাতে জনগণের স্বার্থরক্ষা হয়, অর্থাৎ কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে বড় আকারের বিনিয়োগ যদি করতে হয়, তাহলে অবকাঠামোগত উন্নয়নও একটা বড় বিষয়। কারণ সেখানে প্রচুর লোক কাজে নামতে পারে। কাজেই এমন কোনো বিনিয়োগ যেন না হয়, যেটা বড় আকারের হবে, কিন্তু বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে না।

আরেকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণের প্রথমেই বলেছেন, তা হলো অর্থ পাচার। পত্রিকায় দেখলাম, দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফেরত আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সেটা হলে তা হবে বড় ধরনের অগ্রগতি। সেটা কবে হবে, এ ব্যাপারে সবারই একটা নজর থাকবে। কারণ যখনই আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করি, তারা সব সময়ই বলে যে, পাচার করা অর্থ ফেরত পাঠানো জটিল প্রক্রিয়ার বিষয়। কোনো এক মন্ত্রী নাকি পাচার করা অর্থ দিয়ে বিদেশে ৩ শতাধিক বাড়ি কিনেছেন। যিনি বিদেশে এতগুলো বাড়ি কিনেছেন, বোঝাই যাচ্ছে ওই অর্থ বৈধভাবে যায়নি।

ড. ইউনূসের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন নীতিনির্ধারকের ব্যক্তিগতভাবেই সম্পর্ক রয়েছে, ক্লিনটন ফ্যামিলির সঙ্গে তো বটেই। দেখার বিষয়, এখন সেই সম্পর্কের মাধ্যমে এক্ষেত্রে নতুন কিছু করতে পারবেন কিনা, যারা অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে বড় আকারের সম্পদ গড়েছেন, সেটা ফেরত আনার বিষয়টা নিশ্চিত করা যাবে কিনা। এক্ষেত্রে আমেরিকা যদি সহায়তা করতে পারে, তাহলে আমি মনে করি, অন্য দেশের সঙ্গে করাটাও সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে, আমরা জানি যে কানাডা ছাড়াও ইউরোপের একাধিক দেশে, এমনকি অস্ট্রেলিয়ায়ও বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। বলা হয় যে, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেহেতু টাকাগুলো গিয়েছে, সেহেতু তারা কিছু করতে পারে না। কিন্তু এটা না বোঝার কোনো কারণ নেই যে, যার এত সম্পদ রয়েছে ওখানে, তা যে দেশের মাধ্যমেই আসুক না কেন, সে যদি বাংলাদেশি হয়, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে এটা বৈধ পন্থায় আসেনি।

বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তারা দেশে বড় আকারের একটা স্থিতিশীলতা চাইবে। তারা যদি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না দেখে, তাহলে সেভাবে বিনিয়োগ করতে নাও চাইতে পারে। বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। আবার একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা দেশে তাদের নিজেদের যে কাঠামো, সেই কাঠামোর মধ্যে তারা এ দেশে নির্বাচিত সরকারই চাইবে। বছরের পর বছর অনির্বাচিত সরকার থাকলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের যেসব নিয়মকানুন আছে, তাতে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য সেটা আমেরিকা হয়তো গ্রহণ করতে পারে; কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা বেশ জটিল।

প্রধান উপদেষ্টা বেশকিছু বিষয় বিশ্বনেতাদের অবহিত করেছেন। যেমন, দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে, কেন তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করলেন। আঞ্চলিকভাবে রোহিঙ্গার বিষয়টাও তুলে ধরেছেন তিনি। আমি মনে করি, সেখানেও দেখা দরকার নতুনত্ব আসছে কিনা। হয়তো এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কিছু চিন্তাভাবনা আছে। তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই যেহেতু চেনেন। তিনি এক্ষেত্রে নতুন কিছু করতে পারেন কিনা, যাতে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে, তা দেখা দরকার। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বেশকিছু বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। গাজায় গণহত্যার ব্যাপারে, ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে, বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। এখন দেখা দরকার, তিনি সরকারে থাকায় বাংলাদেশ এসব ব্যাপারে লিডারশিপ নেবে কিনা, সব নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে।

আমার মনে হয়, এ সফরের অর্জন বুঝতে হলে আমাদের ৫ থেকে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই যে বিভিন্ন দেশ-সংস্থা-ব্যক্তি পর্যায়ে সাক্ষাৎ, আলাপ-আলোচনা হলো, তার অগ্রগতি ও ফলাফল সম্পর্কে তখন আমরা বলতে পারব।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ : শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম