রাষ্ট্রভাবনায় কিছু বিষয় যোগ করা হলো
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিয়ে যে ভাবনাগুলো প্রচলিত আছে, তা একান্তই গতানুগতিক। আশপাশে যে কাঠামো বিদ্যমান, তার ছাপ বা ছাঁচের বাইরে বেরিয়ে নতুন কোনো চিন্তাই দেখা যায়নি সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অন্তত গত ৩৫ বছরে।
এ ৩৫ বছরের হিসাবটি আমি ১৯৯০ সালের পর থেকে গণনা করছি। এর আগের সময়ে আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই; রাজনীতি নিয়ে তেমন কোনো পড়ালেখাও নেই। জুলাই বিপ্লব, আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, সংবিধান পুনর্লিখন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন ইত্যাদি নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে, দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। যদিও আলোচনা বহু আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এগুলো তখন কল্পনার ফানুসের মতই মনে হতো। ফ্যাসিবাদের প্রবল অন্ধকার মানুষের মানস জগৎ এমনভাবে ছেয়ে রেখেছিল যে, অনেকের পক্ষেই তার চিন্তা জগতের ফসলকে প্রকাশ্যে আনতে সাহস করেনি।
বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে বিষয়টি প্রচণ্ডভাবে আলোচিত হচ্ছে তা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়েও কথা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক কী হবে ইত্যাদি।
যারাই আলোচনা করছেন, বেশিরভাগই ওয়েস্ট মিনস্টার কাঠামোটা মাথায় রেখে আলোচনা করছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে কথা বললেও পার্লামেন্টের ক্ষমতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা লক্ষ করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ মার্কিন পদ্ধতি নিয়েও কথা বলছেন। কেউ কেউ ভোটের গণিত নিয়েও কথা বলছেন।
যেমন মোট ভোটারের মধ্যে কোনো দল পায় ৩৫ শতাংশ, অন্য একটি দল পায় ৪০ শতাংশ, অন্যান্য ছোট দল মিলে পায় ৫ শতাংশ, আর ২০ শতাংশ ভোটার অনুপস্থিত থাকে। ৪০ শতাংশ ভোটে জেতা লোকরাই বাকি ৬০ শতাংশ লোকের উপর জুলুম-নির্যাতন কায়েম করে দেয়। ওই অর্থে সংখ্যালঘুর নিষ্পেষণ চলে সংখ্যাগরিষ্ঠের উপরে। কাজেই এসব ক্ষেত্রে কীভাবে একটি ভারসাম্যমূলক সহনশীল সহাবস্থান তৈরি করা যায় তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা জরুরি বলে অনেকেই মনে করেন। আলোচ্য প্রস্তাবনার রূপরেখা নিম্নরূপ-
১. কোনো সরকারের মেয়াদ ৪ বছরের বেশি হবে না।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা, প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট এবং রাষ্ট্রপতি (উপরাষ্ট্রপতি) একটি ত্রিভুজ ভারসাম্যে আছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থাটি এক অর্থে একেবারেই সরলরৈখিক গভীর অর্থে কেন্দ্রীভূত। নতুন বাংলাদেশে মার্কিনীয় এ ত্রিভুজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ যুক্ত করে একটি চতুর্ভুজ ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা করা যায় ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট বিভাজন ও বিন্যাসের মাধ্যমে।
৩. গণপরিষদে কোনো প্রতিনিধি, সিনেটর দুবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না এবং পরপর দুবার নির্বাচিত হতে পারবেন না। একবার নির্বাচিত হলে তার পরবর্তীবার তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, এমনকি পরবর্তীবার তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ, জামাতা, আপন ভাই, আপন বোন একই নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ যদি স্থায়ীভাবে অন্য কোনো নির্বাচনি এলাকায় বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। যা পরে ভেবে দেখা যায়।
৪. কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে তাকে অন্তত একবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসতে হবে। একবার মন্ত্রী, একবার প্রধানমন্ত্রী এটি তার সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ। মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের ভোটে এবং সিনেটে ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন, এরূপ ক্ষেত্রে গণপরিষদের প্রতিনিধিরা এবং সিনেটররা ভোট প্রয়োগে স্বাধীন থাকবে।
৫. রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সরাসরি জনভোটে নির্বাচিত হতে হবে। কোনো রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি পরপর দুবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। একজন ব্যক্তি যদি একবার উপরাষ্ট্রপতি হন, তাহলে তিনি মাত্র আরেকবার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
৬. সিনেটের সদস্যরা মনোনীত হবেন জাতীয় গণপরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের প্রাপ্ত জাতীয় ভোটের সংখ্যা অনুপাতে। সিনেটের মনোনীত সদস্যদের সংখ্যা হবে ৬৪। উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে সিনেটের স্পিকার/চেয়ার হবেন। এ ৬৫ জন সদস্য মিলে হবে সিনেট। দলগুলো সিনেটরদের মনোনীত করবেন এমন ব্যক্তিদের, যারা সরাসরি তাদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়।
বিবেচ্য দৃষ্টিতে নিরপেক্ষ, তবে তাদের ভাবাদর্শের সঙ্গে মিল আছে এরূপ ব্যক্তি যারা সমাজে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক-বিচারিক-প্রশাসন প্রতিরক্ষা-পররাষ্ট্র সম্পর্ক-শিক্ষক এ ধরনের কাজ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই দলের প্রাপ্য অংশের ১/৪ অংশ ওইসব ব্যক্তিকে মনোনীত করা যাবে, যারা কখনো জাতীয় গণপরিষদ/বা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে অন্তত ৪ বছর উত্তীর্ণ হয়েছে, এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে। নিম্নে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা হলো-
(ক) বিষয়টি একটু জটিল হওয়ায় একটি উদাহরণসহ আমি ব্যাখ্যা করছি। ধরা যাক কোনো একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে দল ‘ঙ’ পেল কাস্টিং ভোটের ৩৯ শতাংশ, দল ‘ঞ’ পেল ৩৭ শতাংশ, দল ‘ণ’ পেল ১৩ শতাংশ, দল ‘ন’ পেল ৭ শতাংশ ভোট। অন্যরা মিলে পেল ৪ শতাংশ ভোট। এখানে একটি শর্ত ধরে নিতে হবে, যদি কোনো দলের বা জোটের জাতীয় ভোটে ৫টি আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয় বা ৫ শতাংশের নিচে ভোট পায়, জাতীয় পরিষদে একটিও আসন না পায়, তারা সিনেটে কোনো প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে পারবেন না। তাদের অংশ সংখ্যানুপাতে অন্যান্য দলের অধিকারভুক্ত হয়ে যাবে। এ উদাহরণে অন্যান্য দল বা জোটের ৪ শতাংশের বেশি ভোটপ্রাপ্ত দলগুলোর মধ্যে বিভাজন করা হলে ফলাফল দাঁড়ায় নিম্নরূপ-
(ক) ‘ঙ’=৪০.৫৬ শতাংশ, ‘ঞ’=৩৮.৪৮ শতাংশ, ‘ণ’=১৩.৫২ শতাংশ এবং ‘ন’=৭.২৮ শতাংশ। এরূপ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সিনেটের আসন বিভাজিত হবে যথাক্রমে ‘ঙ =২৬টি, ‘ঞ’=২৫টি, ‘ণ’=৯টি, ‘ন’=৫টি। সাধারণ গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করলে সিনেটের বিভাজিত আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫। এরূপ ক্ষেত্রে যে দলের ভগ্নাংশের মান কম, তিনি গাণিতিক হিসাবের চেয়ে একজন সদস্য কম মনোনয়ন দেবেন। আমাদের উদাহরণে সেক্ষেত্রে ‘ঞ’ দলকে ২৫-এর স্থলে ২৪ জনকে মনোনয়ন দিতে হবে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে দলগুলো তাদের প্রাপ্য আসনের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি ব্যক্তিকে মনোনীত করবেন, যাদেরকে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের ভোটের জন্য পেশ করা হবে।
এরূপ ভোটের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদের সদস্যরা সবাই নির্দলীয় হিসাবে ভোট প্রদান করবেন। এরূপ ভোটে যারা সার্বিক ভোট পাবেন, তারা সিনেটের জন্য নির্বাচিত হবেন। জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য ভোটদানে বিরত থাকতে পারবেন না। এখন যদি ‘ঞ’ দল নিয়ে একটি উদাহরণ দেই, তাহলে বিষয়টি সবার বোধগম্য হবে বলে আশা করি। সিনেটে ‘ঞ’ দলের আসন ২৪টির ২৫ শতাংশ বেশি ব্যক্তিকে মনোনীত করলে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ৩০, যার মধ্যে ২৪-এর ১/৪ অংশ= ৬ জন অতীতে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন ব্যক্তি অবশিষ্ট ২৪ জন কথিত অর্থে দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত নয়, এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করবেন।
এ ৩০ ব্যক্তিকে জাতীয় পরিষদের ভোটের জন্য পেশ করা হবে। জাতীয় পরিষদের সব দলীয় বা নির্দলীয় সদস্য ভোটে অংশগ্রহণ করবেন। প্রাপ্ত ভোটের বিবেচনায় যে ২৪ জন ব্যক্তি বেশিসংখ্যক ভোট পাবেন, তারা সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রেই এরূপ পৃথক পৃথক ভোটাভুটি হয়ে মোট ৬৪ জন সিনেটর নির্বাচিত হবেন। কোনো ব্যক্তি তার সমগ্র জীবনে দুবারের বেশি সিনেটে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
(গ) আমার ধারণা, আমার এ জটিল গণিত দেখে অনেকের মাথা চক্কর দেবে। অনেকে বলবেন, একজন ব্যক্তির স্বাধীনতায় অনেক খর্বতা আসবে। কাউকে অনন্তকাল ছলেবলে ক্ষমতায় রাখার ছিদ্র সম্পূর্ণ বন্ধ করতে এর বিকল্প নেই। এতকিছুর পরও এ রাজনীতিকরা কত ছলাকলা করবে, তা এখনো আমাদের সাধারণ গাণিতিক মাথায় ধরছে না। এ বিধান কার্যকর হলেও একজন সৎ বা অসৎ রাজনীতিবিদের পক্ষে সারা জীবনে দুবার জাতীয় পরিষদ সদস্য, দুবার সিনেটের, দুবার রাষ্ট্রপতি/উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অর্থাৎ ৪x৬=২৪ বছর তিনি বিভিন্ন স্তরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হবেন। এটি কম কথা নয়।
৭. সরকারের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে ক্ষমতার একটি সুনির্দিষ্ট বিভাজন এবং সীমারেখা টানতে হবে। প্রথম ওই প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদ কোনো নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন না। নির্বাহী দায়িত্ব থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান কাজ হবে জাতীয় উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ করা, আইন বিধিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন হলে তার প্রস্তাব/খসড়া জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন। জাতীয় উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো মাঠ পর্যায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে। বর্তমানেও তাই আছে।
বর্তমানে মন্ত্রীদের কাছে নির্বাহী ক্ষমতা থাকায় আমলা-রাজনীতিবিদ জোটবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি করছে। রাজনীতিবিদদের কাজ দুর্নীতি করা নয়, আমলাদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি আইন ও বিধিবিধান অবজ্ঞা ও লংঘন করে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শৈথিল্য করে বা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে আপিল করা যাবে (অর্থাৎ মন্ত্রীরা Appellate Jurisdiction-এর অধিকারী হবেন, Executive Jurisdiction bq)। কোনো পক্ষ যদি আপিলের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সিনেট কমিটিতে প্রেরণ করা হবে। এ বিষয়ে সিনেট কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য স্থাপিত হবে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা বা প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির সুযোগ হ্রাস পাবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
কোনো বিষয় যদি তীব্র সংকট বা জটিলতা তৈরি করে, সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করবেন। রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে তার অফিস থেকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রেরণ করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি যদি কোনো বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশের বিষয়ে আরও পর্যালোচনা বা পুনঃবিবেচনা প্রয়োজন মনে করেন, তা আলোচনা এবং করণীয় নির্ধারণের জন্য সিনেট ও জাতীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে প্রণয়ন করবেন। ওই কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা সিনেটে আলোচনা ও বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করবেন।
প্রয়োজনে সিনেট ও জাতীয় পরিষদের যৌথ সভায় আলোচনাপূর্বক গৃহীত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করবেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি যদি জাতীয় পরিষদ বা সিনেটের কাছে পেশ না করেন, তাহলে যে কোনো নাগরিক তা সংশ্লিষ্ট সিনেট কমিটি বা জাতীয় পরিষদ কমিটির কাছে লিখিতভাবে পেশ করতে পারবেন। এ বিষয়ে সিনেট বা জাতীয় পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক বা না করুক, তা লিখিতভাবে ওই ব্যক্তিকে কারণ উল্লেখপূর্বক জানাতে হবে। এ ধরনের বিষয়ে কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। তবে তার আগে অবশ্য তাকে জাতীয় পরিষদ বা সিনেটে প্রতিকার প্রার্থনা করতে হবে।
৮. কোনো ব্যক্তিকে জাতীয় পরিষদে, বা রাষ্ট্রপতি পদে, বা উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে কাস্টিং ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি এবং ওই নির্বাচন এলাকার ভোটারের সংখ্যার অন্যূন ৪০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। সিনেটের নির্বাচন কীভাবে হবে তা আগেই আলোচনা করেছি। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জাতীয় পরিষদ প্রতিনিধির মধ্য থেকে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের একটি সম্ভাব্য তালিকা করবেন। ওই তালিকায় প্রয়োজনের তুলনায় ২৫ শতাংশ ব্যক্তিকে বেশি মনোনীত করবেন।
জাতীয় পরিষদ ও সিনেট যৌথভাবে ভোট প্রদান করবে। কেউ ভোটদানে বিরত থাকতে পারবেন না। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাধিক্য বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বিভাজন করবেন রাষ্ট্রপতি। তবে তিনি প্রয়োজন মনে করলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবেন। জাতীয় পরিষদ যে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে অপসারণের প্রস্তাব আনয়ন করতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদ নির্দলীয়ভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে।
৯. কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় মনোনয়ন প্রথা বাতিল করতে হবে। জাতীয় পরিষদ সদস্য, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে প্রাইমারির মাধ্যমে নমিনেশন চূড়ান্ত করতে হবে। যা হোক, আজকের আলোচনা এ পর্যন্তই। আরও বিভিন্ন প্রশ্নের বিপরীতে আমার ভাবনা লিখব বলে আশা করি।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন : অতিরিক্ত সচিব