Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাইফোকাল লেন্স

প্রশাসন থেকে বিতর্কিত আমলাদের সরাতে হবে

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশাসন থেকে বিতর্কিত আমলাদের সরাতে হবে

ফাইল ছবি

৮ সেপ্টেম্বর দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম, বহুল আলোচিত নিম্নপদস্থ একজন সরকারি কর্মকর্তার বদলির আদেশ নিয়ে সংবাদ শিরোনাম করেছে। কর্মকর্তাটির নাম মো. নাজিম উদ্দিন। তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পরে কিশোরগঞ্জের ইটনায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসাবে পদায়ন করা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, একজন ইউএনও’র বদলির আদেশ নিয়ে দেশের প্রায় সব পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে কেন? বিভিন্ন জেলায় একাধিক পদে চাকরিকালীন এ ব্যক্তি এখতিয়ারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ঘুস বাণিজ্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, সাংবাদিক তুলে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জেল-জরিমানার হুমকি দেওয়া, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে নিরীহ বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে ঘাড় ধরে টেনেহিঁচড়ে অপদস্ত করা ইত্যাদি অপকর্মের জন্য তিনি ইতোমধ্যেই বেশ দুর্নাম কামিয়েছিলেন। কাজেই এমন নাম কামানো ব্যক্তির বদলি আদেশ নিয়ে খবর হবে, এটাই স্বাভাবিক।

বেশকিছু দিন ধরেই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমলাদের পদোন্নতি ও বদলির আদেশ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের খবর শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে নাজিম উদ্দিনের এ বদলির আদেশটি আলাদাভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার এ বদলি আদেশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরদিনই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে যোগদানের আদেশ জারি করে। তবে প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দপ্তরে নাজিম উদ্দিনের মতো বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তাকে দেখতে চান না। তারা ইতোমধ্যে নাজিম উদ্দিনের বদলি আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। নাজিম উদ্দিনের মতো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট কর্মকর্তার পদায়ন তাদের প্রতিষ্ঠান, ভোক্তাসাধারণের স্বার্থসংরক্ষণ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের কোথাও নিয়োগ দেওয়ার সময় কিছু নীতিমালা মান্য করা হয়। ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীগণের পদায়ন নীতিমালা-২০২২’ অনুযায়ী, পদায়নের আগে যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রথমে ফিটলিস্ট করা হয়। এ ফিটলিস্ট প্রণয়নের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হয়। ইউএনও পদের জন্য প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তি ও ন্যূনতম ছয় বছর চাকরিপূর্ণ করতে হবে এবং সর্বশেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রেকর্ড ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। এ পাঁচ বছরের গোপনীয় অনুবেদনের গড় নম্বর ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ হতে হবে। ইউএনও হিসাবে বিবেচনাধীন কর্মকর্তার বিগত চাকরিকালের সততা ও সুনাম বিবেচনা করা হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কমপক্ষে এক বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ফিটলিস্ট করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে নাজিম উদ্দিনকে কোন বিবেচনায় ইউএনও পদে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছিল বোধগম্য নয়। যে ব্যক্তি এতগুলো অভিযোগে অভিযুক্ত, যিনি একজন ফৌজদারি মামলার আসামি, তাকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের বিষয়টি বিস্মিত করেছে সবাইকে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিকে ২০২০ সালের মার্চে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়ায় ভুক্তভোগী থানায় এজাহার করলে হাইকোর্টের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলার তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও আরও দুজনসহ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয়। গত ৪ বছরেও সেই মামলা আলোর মুখ দেখেনি। এ সময়ের ভেতর মামলার আসামি হিসাবে নাজিম উদ্দিন আদালতে আত্মসমর্পণও করেননি। তার বিরুদ্ধে সেই ফৌজদারি মামলা চলমান। এমনকি তিনি সেই মামলায় জামিনও নেননি। সুতরাং, আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখনো একজন পলাতক আসামি। ফৌজদারি আসামি হওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার আমলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনবহির্ভূতভাবে তাকে নতুনভাবে পদায়নও করেছিল। সে কারণেই হাইকোর্টে রিট করা হয়। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ার পরও তাকে কেন নতুন পদায়ন করা হয়েছিল জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন; কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন এমনই কর্তৃত্বপরায়ণ ছিল, তারা আদালতের রুলের কোনো জবাব তো দেয়নি, বরং উলটো আদালতকে উপেক্ষা করেই নাজিম উদ্দিনসহ চার আসামিকেই নতুন পদায়ন করেছিল। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সে সময় বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ‘গুরুদণ্ড’ হিসাবে নাজিম উদ্দিনকে এক ধাপ পদাবনতি করে; সঙ্গে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু নাজিম উদ্দিন ও সুলতানা পারভীন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শাস্তি মওকুফ চেয়ে আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে রাষ্ট্রপতি নিঃসংকোচে তা মঞ্জুর করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনকে যে দলীয় আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। পেশাগত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয় এবং শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আনুগত্যই ছিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলের চাবিকাঠি। এসব কারণে প্রশাসনের এসব ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা না হয়ে দলীয় সেবাদাসে পরিণত হয়েছিলেন। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে থানার ওসি এবং ইউএনও পদ দুটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি কর্মকাণ্ডের সুফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের দায়িত্বও কম নয়। অথচ শেখ হাসিনার শাসনামলে এমন অনেক থানার ওসি ও ইউএনওকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তার খোলস পালটিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে হাজির থাকতে দেখা গেছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১) ধারা অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ, আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার মঞ্চে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে থানার ওসি এবং ইউএনওকে বসে থাকতে দেখা যেত। শুধু তাই নয়, মঞ্চে মাইকে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগদলীয় স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে একাধিকবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এটিই ছিল শেখ হাসিনার শাসনকালে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের আচরণের প্রকৃত চিত্র। উচ্চপদ দখলকারী আমলাদের আচরণের চিত্রও ভিন্ন ছিল না। বরং আরও বেশি অমার্জনীয় ও দৃষ্টিকটু ছিল। বিসিএস ক্যাডারভুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে নাম লেখানোর উদাহরণও আছে। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটিতে অন্তত পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তার দলীয় পদ পাওয়ার খবর গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এসব কর্মকর্তা সে সময় ফেসবুক প্রোফাইলে পদপ্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। শুধু কী তাই! আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি দিয়ে দলের গর্বিত সদস্য হওয়ার খবরও প্রচার করেছিলেন।

ডিসি বা জেলা প্রশাসক হলেন জেলার প্রধান প্রশাসনিক ও রাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি একাধারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা কালেক্টর ও ডেপুটি কমিশনার। ফলে তিনি একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। বাংলাদেশের সংবিধানমতে, বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হওয়ায় জেলা প্রশাসকরা জেলাতে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধি। তিনি সরাসরি সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগকারী ক্ষমতাপ্রাপ্ত জেলার একমাত্র কর্মকর্তা। আগে জেলা প্রশাসককে ডেপুটি কমিশনার বলা হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, ইংরেজি Deputy Commissioner-এর অর্থ জেলা প্রশাসক হয় কীভাবে? জেলা প্রশাসক শব্দটি ডেপুটি কমিশনার শব্দের বঙ্গানুবাদ নয়, বরং দুটো আলাদা পরিচিতিকে নির্দেশ করে। বিজ্ঞজনরা বলেন, স্বাধীনতার পর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ আমলারা সচেতনভাবেই Deputy Commissioner-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে ‘জেলা প্রশাসক’ শব্দটি নির্বাচন করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, জেলা পর্যায়ে ডিসি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সব মন্ত্রণালয়ের, সব বিভাগের, সব কাজের তিনিই সর্বেসর্বা। ব্রিটিশ আমলে সাদা চামড়ার ডিসিরা নিজেদের শাসকই মনে করতেন। সেই মনমানসিকতা থেকে আমাদের আমলারা এতটুকুও বেরিয়ে আসতে পারেননি। সেই ভাবনা থেকেই ‘জেলা প্রশাসক’ শব্দটি নির্বাচন করা হয়েছিল বলে কথিত আছে। ‘জেলা প্রশাসক’। আহ! কী অভিজাত একটি নাম। কী মোহময় একটি শব্দ! কী অলৌকিক ক্ষমতাবান একটি পদমর্যাদার নাম! দেশ স্বাধীন হয়েছে তেপ্পান্ন বছর পেরিয়ে গেছে। ব্রিটিশরা গেছে আটাত্তর বছর আগে। একটি মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা নিজেদের নিজেরা শাসন করি। বাস্তবিক ক্ষেত্রেও এসব আমলা নিজেদের এমনভাবে গড়ে তোলেন, মাঝে মধ্যেই জেলা পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের চলাফেরায় ও আচার-আচরণে শাসকের গন্ধ পাওয়া যায়। এ নিয়ে অতীতে ডিসি-এসপিদের জমিদার বলে উচ্চ আদালত তির্যক মন্তব্যও করেছিলেন। বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে ‘প্রশাসক’ শব্দের অর্থ হলো, ‘শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি’। আমলাদের দেওয়া এ বঙ্গানুবাদ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারও মেনে নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডেপুটি কমিশনারের বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে জেলা প্রশাসক-এর ব্যবহার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রশাসনে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া আমলাতান্ত্রিক জঞ্জাল সাফ-সাফাই করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। ডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন করতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, নতুন দুই দফায় পদায়নকৃত ৫৯ ডিসির মধ্যে ৫৬ জনই আওয়ামী লীগের তালিকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বারংবার পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এ ৫৬ জন বিগত সরকারের আমলে দাপটের সঙ্গেই চাকরি করেছেন এবং তারা সবাই আওয়ামী লীগের করা ফিটলিস্টেও ছিলেন; নতুন ফিটলিস্টেও তাদের রাখা হয়েছে। নতুন ফিটলিস্ট তৈরির সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, এবার নতুন ডিসি নিয়োগের মানদণ্ড হবে মেধা, দক্ষতা ও সততা। কিন্তু দেখা গেছে, প্রথম দফায় যে ২৫ জনকে ডিসি পদে বসানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ১১ জন মেধায় চাকরি পেয়েছেন। বাকি ১৪ জনই বিভিন্ন কোটায় সুযোগ পাওয়া চাকরিজীবী ছিলেন। তীব্র হট্টগোল ও প্রতিবাদের মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ আশীর্বাদপুষ্ট আটজনের নিয়োগ বাতিল করেছে। তারপরও বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা পিছু হটেননি। তাদের বক্তব্য, নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের বড় অংশ দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাড়তি সুবিধাভোগী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, তারা সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারপ্রধানের সুনজরে আসার জন্য নিজের বিবেককে বিকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও পদবি আঁকড়ে ধরেছিলেন। এখনো খোঁজ নিলে এমন আরও অনেককেই পাওয়া যাবে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস পদায়নের আগে এসব কর্মকর্তা সম্পর্কে ভুল তথ্য এবং সঠিক তথ্য গোপন করা হয়েছিল বলে স্বীকারও করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দেড় মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনেককেই ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে দুর্নীতি জেঁকে বসেছিল, তা দূর করা প্রয়োজন। দুর্নীতি ও ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে পদলেহনচর্চার অবসান ঘটাতে হবে। দলদাসবৃত্তি নির্মূল করতে হবে। অতএব, নতুন পরিবেশে, নতুন নতুন প্রত্যয় নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারের সব প্রশাসন থেকে বিতর্কিত আমলাদের বিতাড়িত করতে হবে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম