Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ

Icon

ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ

খেলাপি ঋণ

বর্তমানে যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলছেন। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলে আসছেন। সংস্কারের অভাবে এ খাতের অবস্থা দিন দিন সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন। এ সংস্কার নানাভাবে হতে পারে। অবকাঠামোগত সংস্কার, আবার কার্যক্রমগত সংস্কারও হতে পারে। সংস্কার কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হতে হবে ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও দূরীকরণের মাধ্যমে এ খাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা, যাতে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খাতটি যথাযথ অবদান রাখতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই সমস্যাভিত্তিক সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে অনেক ব্যাংকের অবস্থা বর্তমানে মোটেও ভালো নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অন্তত ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে এবং সে মোতাবেক প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে সংস্কার করা হবে? আর শুধু কি সেগুলোকেই সংস্কার করা হবে, নাকি সমস্যাগ্রস্ত অন্যান্য ব্যাংককেও সংস্কারের আওতায় নিয়ে আসা হবে? এ ব্যাপারে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দেশের ব্যাংক খাতের সমস্যা কিন্তু হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এ মুহূর্তে দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণের বিপুল উপস্থিতি। বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে অঙ্গীকার করা হলেও তা রক্ষিত হয়নি।

যেমন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না। সেই সময় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অবশ্য এটি দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

বাস্তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা সহজীকরণ, ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ এবং ব্যাপক মাত্রায় পুনঃতফসিলিকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। এছাড়া মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণাঙ্ক খেলাপি ঋণের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা মোতাবেক ঋণ হিসাব শ্রেণিকরণ করা হলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে যাবে বলে অনেকেই মনে করেন। এ বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা হবে, তা নিয়ে আমাদের প্রথমেই ভাবতে হবে। কারণ, ব্যাংক খাতে অনেক ধরনের সমস্যার মূলে রয়েছে পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণের উপস্থিতি।

খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়াসহ অন্য অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে এ খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব। ব্যাংক খাতে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। সত্যি কথা বলতে কী, এ খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের বিষয়টিতে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে কোনো একটি বা দুটি বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে কোনো লাভ হবে না। ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে খাতটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে পারে।

যে কোনো খাতের সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। ব্যাংক খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে সংস্কার করা হলেই এ খাতের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে না। বিভিন্ন সময় ব্যাংক খাতে নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়। অব্যাহত সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে সেসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অব্যাহত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কারের লক্ষ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রথমে দিয়েছিল সিপিডি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণও করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থমন্ত্রী সংস্কারের কথা বেমালুম ভুলে যান।

বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবারও ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথাটি বহুল আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিজেও এ খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন। ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, এই টাস্কফোর্স প্রধানত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংক খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ, প্রধান ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করবে।

এছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আমি মনে করি, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়েও একটি টাস্কফোর্স গঠিত হতে পারে। তারল্য সংকটের কারণ ও তা সমাধানে কী করণীয় তা নির্ধারণের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হতে পারে। এভাবে প্রতিটি সমস্যার গুরুত্বানুসারে টাস্কফোর্স গঠিত হতে পারে।

ব্যাংক খাতে অনেক দিন ধরেই অভ্যন্তরীণ সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে এ সমস্যাটি মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করেছে। সার্বিক অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবের কারণে ব্যাংক খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এ খাতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

কিন্তু অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবের কারণে ব্যাংক খাত দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে পারছে না। যদি ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে অনেক সমস্যা আপনাআপনিই সমাধান হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গাইডলাইন আছে। যারা ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে মনোনীত হবেন, তাদের মূল কাজ হচ্ছে পলিসি বা নীতি প্রণয়ন করা। আর ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব হবে সেই নীতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বেশি। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বেশি। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের দায়িত্ব হচ্ছে নীতি প্রণয়ন করা। তারা কোনোভাবেই ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে থাকে। ঋণদান থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই, যেখানে তারা প্রভাব বিস্তার করেন না। সমস্যা শুরু হয় এখান থেকেই। পরিচালনা বোর্ডে এমনসব ব্যক্তিকেও নিয়োগদান করা হয়, যাদের ব্যক্তিগত সততা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কিত জ্ঞানের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড ও প্রশাসন যদি তাদের নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকত, তাহলে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা অনেকটাই সহজ হতো।

যারা ব্যাংকে পরিচালক হিসাবে মনোনীত হন, তাদের অনেকেই ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা জ্ঞান রাখেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের কোনো ব্যাংকের পরিচালকরা প্রশিক্ষণ নিতে চান না। যদি সঠিকভাবে পরিচালক নিয়োগ করা যায়, ব্যাংকিং কার্যক্রম যদি সঠিকভাবে মনিটর করা যায় এবং সর্বোপরি সব পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় এক ধরনের দ্বৈতশাসন চলছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক যতটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা পারে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা একান্তই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সেখানে বাদ সেধেছে।

প্রসঙ্গক্রমে সর্বশেষ যে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়, তার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে এতগুলো ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নতুন ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সে সময় বলেছিলেন, দেশে এ মুহূর্তে নতুন কোনো ব্যাংক স্থাপনের আবশ্যকতা না থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ৯টি ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই ভালো চলছে না।

ব্যাংক ঋণ আবেদন প্রাপ্তির পর তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হলে সেই ঋণ হিসাব পরবর্তীকালে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। বিশেষ করে ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে যে সম্পত্তি জামানত হিসাবে বন্ধক দেওয়া হয়, তার সঠিক মূল্যায়ন করা খুবই জরুরি। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা অধিকাংশ সময় বন্ধকযোগ্য সম্পদের অতিমূল্যায়ন করে থাকেন। বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে সম্পদের মূল্যায়নের পাশাপাশি স্বীকৃত এবং ব্যাংকের তালিকাভুক্ত অডিট ফার্ম দিয়ে প্রস্তাবিত বন্ধকিযোগ্য সম্পদের ভ্যালুয়েশন করানো হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত অডিট ফার্মের পক্ষেও ব্যাংক ম্যানেজারের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে বন্ধকিযোগ্য সম্পদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না।

সম্পদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ম্যানেজারের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া না হলে ভবিষ্যতে সেই অডিট ফার্মকে দিয়ে আর কোনো সম্পদের মূল্যায়ন করানো হয় না অথবা মূল্যায়ন করানো হলেও বিল প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত অডিট ফার্ম ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন। ঋণদানের আবেদনপ্রাপ্তির পর তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করা হলে বা কোনো ধরনের অনিয়ম সংঘটন করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সাধারণত কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। আর যেসব কর্মকর্তা ঋণদানের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, ঋণের কিস্তি আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের কোনো দায় থাকে না।

কারণ, ঋণ আদায়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন অন্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যেসব কর্মকর্তা ঋণ অনুমোদনকালে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের যদি কোনোভাবে ঋণ আদায়ের সঙ্গে যুক্ত করা যেত, তাহলে ঋণদানকালে তারা আরও সতর্কতা অবলম্বন করতেন। ঋণদানকালে কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি বা অন্য কোনো দুর্বলতা থাকলে সেই কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ঋণখেলাপি হলে উদ্যোক্তা বা ঋণগ্রহীতাদের যেভাবে দায়বদ্ধ করা হয়, ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনকারী কর্মকর্তাদের সেভাবে দায়বদ্ধ করা হয় না।

খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য যেসব আন্তর্জাতিক মানের রীতি প্রচলিত ছিল, তার বেশিরভাগই সংশোধন বা পরিবর্তনের মাধ্যমে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। যেমন, ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা ও পুনঃতফসিলিকরণ নীতিমালা সহজীকরণ করা হয়েছে। আগে গোষ্ঠীভুক্ত কোনো একটি প্রকল্প ঋণখেলাপি হলে গ্রুপের অন্যান্য প্রকল্পে ঋণদান করা হতো না। এ বিধান বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে সহায়ক অথবা আদায় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে এমন আইনগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে আরও কঠিন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।

ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনকালে যদি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, তাহলে সেই ঋণ হিসাব পরবর্তীকালে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা চাপের মুখে অযোগ্য ব্যক্তিকেও ঋণদানে বাধ্য হয়। বর্তমানে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বন্ধকি সম্পত্তি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার কথা শোনা যাচ্ছে। এটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদক্ষেপ হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। (অনুলিখন : এমএ খালেক)

ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম