শিক্ষক নেতারা আন্দোলন থেকে সরে আসতে পারেন
ড. আসিফ নজরুল
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’-এর বিষয়ে আমি শিক্ষকসমাজের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে, প্রথমত সরকারের প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের মধ্যে বর্তমানে একটা প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় : যে কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়ে তারা যে সুপিরিয়র, তা বোঝাতে চান। অর্থাৎ অন্য চাকরিজীবীদের চেয়ে তারা যে সুপিরিয়র, তাদের মধ্যে এটা বোঝানোর চেষ্টা থাকে। এই পেনশন প্রকল্পের মধ্যেও এমন প্রতিফলন রয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, এই পেনশন প্রকল্পটাকে কেউ কেউ এভাবে দেখছেন : যেহেতু সরকারের হাতে টাকা নেই, তাই চাকরিজীবী কিংবা যেই হোক, কীভাবে তাদের কম টাকা দেওয়া যায়, এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সরকার সেই চেষ্টা করছেন বলে তারা মনে করছেন। শিক্ষকরা মনে করছেন, অনেক পরে কত টাকা তারা পাবেন বা লাভ পাবেন, এসব প্রলোভন দেখিয়ে বর্তমানে সরকার যে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে, এর অংশ হিসাবে এটা করা হচ্ছে। সেখানে একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, সরকার যখন বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সামিট গ্রুপ বা এরকম গ্রুপকে কুইক রেন্টালের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়ে দিচ্ছে, সরকার যখন ভারতকে বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে; তখন সরকারের কোনো চিন্তা নেই, শুধু সীমিত আয়ের লোকদের কম অর্থ দেওয়ার চেষ্টায় যত চিন্তা। এমন পদক্ষেপের কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে?
তৃতীয়ত, আমি মনে করি শিক্ষকদের এ আন্দোলনটি ন্যায়সংগত। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে করি, শিক্ষক নেতাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত যে, এরকম একটা ন্যায়সংগত আন্দোলন করেও তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি পাচ্ছেন না। কারণ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছেন, সেটা ছাত্রসমাজ হোক, শ্রমিক শ্রেণি হোক, নিপীড়িত রাজনৈতিক সমাজ হোক-তখন কিন্তু শিক্ষকসমাজ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কারণ আমাদের শিক্ষকসমাজের নেতারা অনেক ক্ষেত্রে সরকারের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করেছেন। এই ভূমিকাটা ছিল খুবই ন্যক্কারজনক এবং ধারণা করা হয়, তাদের অনেকেই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি পাওয়ার লোভে এটা করেছেন। ফলে এ ধরনের একটি আন্দোলন, যাকে আমি মনে করি যৌক্তিক, সাধারণ মানুষের যতটা সহানুভূতি পাওয়ার দরকার ছিল, সেটা পাচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান শিক্ষক নেতৃবৃন্দের যে অবস্থা, আমি মনে করি সরকার যদি শক্ত ভূমিকা নেয়, তাহলে এই আন্দোলন থেকেও তারা সরে আসবেন। এই হচ্ছে আমার আশঙ্কা।
ড. আসিফ নজরুল : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়