রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে দৃষ্টি দিতে হবে
ড. মির্র্জ্জা আজিজুল ইসলাম
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাজেট প্রণয়ন এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। অর্থমন্ত্রী জুনের প্রথমদিকে নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) জন্য প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেট নিকট অতীতের যে কোনো বাজেটের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। প্রায় দুবছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ শতাংশের উপরে ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা শুরু হয়েছিল। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, যা ছিল দেশটির ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) পলিসি রেট বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
বস্তুত বিশ্বের অধিকাংশ দেশই উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে ইতোমধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে খুব একটা সফল হয়নি। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। অনেকেই ধারদেনা করে সংসারের ব্যয়নির্বাহ করছেন। সম্ভবত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়, এ বিষয়টিই হবে আগামী বাজেটের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। যদিও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ৫ মে জাতীয় সংসদে ভাষণদানকালে আশা প্রকাশ করেছেন, চলতি অর্থবছরের শেষে মূল্যস্ফীতি সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। তিনি আরও বলেছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সরকারের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর এ আশাবাদ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হয়। এসব আমদানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার যদি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু সরকার যদি এসব পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এমনিতেই আমাদের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বা হার খুবই কম। বিশ্বের যেসব দেশের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
বিভিন্ন সময় রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করা হলেও কার্যত এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। নেপালে জিডিপি-ট্যাক্স রেশিও ১৮-১৯ শতাংশ। ভারতে এটা ১২-১৩ শতাংশ। আমরা অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু ট্যাক্স-জিডিপি রেশিওর ক্ষেত্রে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো না যায়, তাহলে সরকারকে তার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থানীয় ও বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ একটি দেশের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক হতে পারে না। তাই আমাদের যে কোনো মূল্যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্ব আহরণের নতুন নতুন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে করের আওতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কর আদায়ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে।
আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত কর হ্রাস করলেই যে স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য কমে আসবে, সেটা নাও হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী চক্র তৎপর রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে শুধু কর হ্রাস করে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাবে না। দেশে ভোক্তা অধিকার আইন আছে। কিন্তু সেই আইন কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু একটি মহল মাঝেমধ্যেই পণ্যের জোগান কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে ব্যাপারে আগামী বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে পণ্য রাপ্তানি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স। কিন্তু পণ্য রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স খাতের অবস্থা বর্তমানে খুব একটা ভালো নয়। এ দুই খাতের প্রবৃদ্ধি মোটেও সন্তোষজনক নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে পণ্য রপ্তানি খাতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর জনশক্তি রপ্তানি খাতে জুলাই-মার্চ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের মতো। জনশক্তি রপ্তানি খাতে আহরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই কমে গেছে।
মার্চে রেমিট্যান্স আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। এ সময় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় মাইনাস ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত পণ্য রপ্তানি এবং জনশক্তি রপ্তানি খাতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত না হওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। কাজেই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে।
ব্যাংক খাত নিয়েও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাত নানা কারণেই বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব কোনোভাবেই দূর করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের মাত্রা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক, এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু বাস্তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। অবলোপনকৃত ঋণ হিসাবের কাছে পাওনা, পুনঃতফশিলীকরণকৃত ঋণ হিসাবের কাছে পাওনা এবং মামলাধীন প্রকল্পের কাছে দাবিকৃত অর্থ যোগ করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ পৌনে চার লাখ কোটি টাকা হবে বলে অনেকেই মনে করেন। বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও এর কোনোটিই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেনি। ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক এবং ঋণগ্রহীতাদের পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে বড় বড় ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঋণ মঞ্জুর করছেন। এসব ঋণের কিস্তি পরে আর আদায় হচ্ছে না।
ব্যাংক খাতে বিদ্যমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে ব্যাংক খাত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা আসতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হতে শুরু করেছে। কাজেই শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ কতটা সুফল দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছুদিন আগেই ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এ মুহূর্তে ব্যাংক ঋণের সুদের হার যদি পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সুদের হার অনেক বৃদ্ধি পাবে। কারণ, আমানতের প্রবৃদ্ধি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনো বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থানে পরিণত হতে পারেনি। তাই ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা তাদের পুঁজির চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে থাকে। বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিনির্ভর একটি দেশ, তাই ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেলে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্যসহ সব ধরনের আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সুদের হার বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন তুলনামূলক ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার জন্য আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে। এখানে কিছুটা ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে। আমি মনে করি, এ পথে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে। আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক এ মুহূর্তে যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পণ্য রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যারা এখন হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছেন, তারা হয়তো বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবেন। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ের যে অংশ এখন দেশে আসছে না, তাও হয়তো দেশে আসবে। কিন্তু এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আমরা আগামী দিনে পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে, তখন আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। কারণ, সে সময় বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধাগুলো প্রত্যাহৃত হবে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুল্কছাড় সুবিধা হারাবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুল্কারোপ করা হলে দেশের রপ্তানির পরিমাণ সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। কানাডায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ, ভারতে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, জাপানে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং চীনে ৭ শতাংশ হারে শুল্কারোপিত হতে পারে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জিএসপি+ সুবিধা না পায়, তাহলে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যের গন্তব্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। এ খাতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর (২০২৩) বাংলাদেশ মোট ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে রেমিট্যান্স বাবদ। গত বছর বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক ১৩ লাখ নতুন কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গমন করেছে। সে তুলনায় রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। বাংলাদেশ থেকে যারা কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান, তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ অথবা আধা দক্ষ শ্রমিক। ফলে তারা বিদেশে গিয়ে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন না। কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলেও বেতনভাতা পান তুলনামূলকভাবে কম। তাই আগামী দিনে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীদের বিদেশে প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবী বিদেশে রপ্তানি করা গেলে তুলনামূলক কম জনশক্তি রপ্তানি করেও বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। পণ্য রপ্তানি এখনো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। কিন্তু রপ্তানি খাতের জন্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হয় বলে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানি খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, তার প্রায় পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। (অনুলিখন : এম এ খালেক)
ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : অর্থনীতিবিদ; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা