Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাইফোকাল লেন্স

এ দিনেই তৈরি হয়েছিল গণহত্যার মাস্টারপ্ল্যান

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এ দিনেই তৈরি হয়েছিল গণহত্যার মাস্টারপ্ল্যান

আজ ১৮ মার্চ। একাত্তরের এই দিনেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে নিঃশেষ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নৃশংস গণহত্যার নীলনকশা রচনা করে। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে এ নীলনকশা অনুযায়ীই বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি নরপিশাচের দল। দেশজুড়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, লুটপাট করে বসতবাড়ি, দোকানপাট, হাটবাজার। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা বাঙালির মৃতদেহ হয়ে ওঠে কাক-শেয়ালের খাবার। এভাবেই বাংলাদেশ পরিণত হয় শ্মশানভূমিতে। বিদেশি সাংবাদিকদের হিসাবে ওই একরাতেই বর্বর বাহিনী শুধু ঢাকা শহরেই ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং গ্রেফতার করে ৩ হাজারেরও বেশি; কিন্তু বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী, সেদিন রাতে সারা দেশে হায়নার দল ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছিল। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করে ১৮ মার্চকে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এ নীলনকশা যখন রচিত হয়, তখন প্রহসনমূলক আলোচনার নামে পাকিস্তানি জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়া খানসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সামরিক ব্যক্তি রাজধানী ঢাকায় হাজির ছিলেন।

শুধু ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নয়, এরও আগে, একাত্তরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক বোঝাপড়ার পাশাপাশি সামরিক অভিযানের পরিকল্পনাও করেন। এ সামরিক অভিযানের নাম দেন তিনি ‘অপারেশন ব্লিৎজ’। তারও আগে ইয়াহিয়া খান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় বসতে দেবেন না। সেই লক্ষ্যে ১ মার্চ আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করবেন। ঘোষণার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী মাঠে নামাবেন। এ অভিযানের মূল্য উদ্দেশ্য ছিল, সব রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে মার্শাল জারি করা। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক নেতারা যদি সরকারি নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে যে কোনো সময় তাদের বন্দি করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হয়, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে মেজর জেনারেল নজর হুসেন শাহ্-এর অধীন ৯ পদাতিক ডিভিশন এবং খাঁরিয়া থেকে মেজর জেনারেল শওকত রেজার অধীনে ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে আকাশপথে ঢাকায় আনা হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, একাত্তরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকালের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম সেনা দলটি ঢাকায় পৌঁছে যায়। সেদিনই রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা ইউনিট প্রেরণ করা হয়। সেই সুযোগে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত বাঙালি সেনাসদস্য সংখ্যাধিক্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের কমান্ড স্ট্র্যাকচার ভেঙে দেওয়া হলো। সেসময় ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট যশোর, ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর, ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৈয়দপুর, ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লা, ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট চট্টগ্রাম এবং নবগঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ঢাকায় অবস্থান করছিল। এসব ব্যাটালিয়নকে ছোট ছোট দলে অর্থাৎ কোম্পানিতে ভাগ করে সেনানিবাস থেকে বের করে দেওয়া হলো, যাতে তারা সম্মিলিত শক্তি হিসাবে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধ রুখে দাঁড়াতে না পারে।

এ অবস্থায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান, ইয়াহিয়াকে শেষবারের মতো বোঝাতে চেষ্টা করেন, যেন ৩ মার্চের নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতুবি না করে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনা হয়। ইয়াহিয়া খান তাতে রাজি হলেন না, বরং উলটো তাকে অপসারিত করে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে গভর্নর পদে নিযুক্ত করেন। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণার পর, দেশব্যাপী ঘণ্টায় ঘণ্টায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত দ্রুত পালটাতে থাকে, সামরিক জান্তারা ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ শুরু করার আর সাহস করলেন না। বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এবং জনগণের মারমুখী আন্দোলন জান্তা গোষ্ঠীর ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ রাওয়ালপিন্ডিকে জানিয়ে দেয়-এমন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ পরিস্থিতিতে ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ শুরু করা সম্ভব নয়। সঙ্গে এও জানিয়ে দেওয়া হয়, শুধু সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করা সমীচীন হবে।

ইয়াহিয়া শেষ পর্যন্ত সে পথেই হাঁটলেন। তবে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে নয়-বরং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, সামরিক আঘাত হানার সময়ক্ষেপণের জন্য। এ প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ইয়াহিয়া খান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। দেশবাসী যখন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার জন্য ব্যস্ত, ঠিক সেদিন বিকাল ৪টায় টিক্কা খান চুপিসারে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ওদিকে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি হয়ে ওঠে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, বিভিন্ন গ্যারিসনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সব স্থানীয় প্রশাসনিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের স্টাফরাও কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সৈনিকদের নিত্যদিনের খাদ্যের তাজা রসদ সরবরাহও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে সৈন্যরা বাধ্য হয়ে শুকনো রেশন খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন, যা তাদের জন্য ছিল চরম অমর্যাদাকর ও কষ্টদায়ক। এমন পরিস্থিতির জন্য সামরিক বাহিনী কখনো প্রস্তুত ছিল না। এরই মধ্যে জেনারেল টিক্কা খান জেনারেল ইয়াকুব খানের স্থলাভিষিক্ত হলেন। অর্থাৎ তিনি একই সঙ্গে ইস্টার্ন কমান্ড এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর টিক্কাখান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সবুজ সংকেত দিতেই রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা এসে উপস্থিত হলেন।

১৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসলেও তার মাথা থেকে সামরিক অভিযানের চিন্তা দূর হয়নি। তারপরও তিনি প্রহসনের আলোচনা চালিয়ে গেলেন। ১৭ মার্চ ইয়াহিয়া টিক্কা খানকে ডেকে সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে নির্দেশ দেন। সেদিন সন্ধ্যায় টিক্কা খানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বা জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার দেখা হলে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আকস্মিকভাবে কোনো সামরিক অভিযান চালিয়ে লাভ হবে না। প্রদেশজুড়ে সম্মিলিতভাবে অভিযান চালাতে পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে আরও সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু কে শোনে তার কথা। রাত ১০টার পর টিক্কা খান টেলিফোনে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ডেকে পাঠান। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদও উপস্থিত ছিলেন। টিক্কা খান তাদের উভয়কে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা তৈরি করে ১৮ মার্চ রাতে আলোচনা করতে বলেন। জেনারেল খাদিমকে পুরো দেশের এবং জেনারেল রাও ফরমানকে ঢাকা গ্যারিসনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে বলা হয়।

পরদিন সকালে জেনারেল খাদিম ও জেনারেল ফরমান ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির অফিসে বসে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় জেনারেল খাদিমের অধীন কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিয়ে অফিসের বাইরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলোচনার প্রথমেই তারা রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তারপর পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী ধরনের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করেন। এ কাজ করতে সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর তারা নির্ভর করেন। এছাড়া বিভিন্ন গ্যারিসনে দায়িত্বরত পাকিস্তানি সামরিক কমান্ডারদের পাঠানো পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তারপর পরিকল্পনার একটি প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করেন। রূপরেখা তৈরির সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর এবং পুলিশের বাঙালি সদস্যদের মনমানসিকতা এবং গতিবিধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। কারণ, এসব বাহিনীর সব বাঙালি সদস্যের হাতেই মারণাস্ত্র আছে। কাজেই এক্ষেত্রে বাঙালি সদস্যদের পক্ষ থেকে কী ধরনের বাধা আসতে পারে, তাও বিবেচনায় রাখা হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নকালে যেসব বিপজ্জনক ও অপরিহার্য বিষয়গুলোর ওপর তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেগুলো হলো বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর এবং পুলিশ ছাড়াও সমাজের যে কোনো অংশ থেকে বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা গেলে তা ‘চূড়ান্ত বিদ্রোহ’ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং দৃঢ়হস্তে তা দমন করতে হবে। অভিযানে সাফল্য পেতে হলে অভিযানের আকস্মিকতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, শত্রুকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ডিসেপশন প্ল্যানও থাকতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, যে করেই হোক বাঙালি সেনাসদস্য, ইপিআর ও পুলিশ সদস্যদের নিরস্ত্র করতে হবে। বিশেষ করে পিলখানার ইপিআর, রাজারবাগের রিজার্ভ পুলিশের অস্ত্রাগার এবং চট্টগ্রামের অস্ত্রাগারে রক্ষিত সব অস্ত্র দখলে নিতে হবে, যাতে অস্ত্রগুলো বাঙালি বিদ্রোহীদের হাতে চলে না যায়। অপারেশন চলাকালে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং পরবর্তীকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সুবিধামতো সময়ে যোগাযোগব্যবস্থা চালু করা যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো ঘেরাও করে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। তল্লাশি করে অস্ত্র উদ্ধার করা এবং চিহ্নিত ছাত্রনেতাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ধরতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে হবে। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের পাওয়া গেলে নিজেদের হেফাজতে নিতে হবে।

অতঃপর জেনারেল খাদিম ও জেনারেল ফরমান আলী পরিকল্পনাটির রূপরেখার ব্যাপারে একমত হয়ে যে যার অংশের ডিটেইল অপারেশন প্ল্যান লিখে ফেলেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযানের জন্য সেনাবিন্যাস ও তাদের করণীয় কাজ, লজিস্টিক সাপোর্ট, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলসহ অন্যান্য আভিযানিক সমন্বয়সাধন ইত্যাদি সব বিষয় ডিটেইল অপারেশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডাররা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করবেন বলে উল্লেখ করা হয়। অতএব, দিনব্যাপী পরিকল্পনার লিখিত অংশ শেষ করে ১৮ মার্চ রাতে তারা উভয়েই জেনারেল টিক্কা খানের সরকারি বাসভবনে যান। সেখানে যথারীতি সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদও উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে মূল পরিকল্পনা ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় ব্রিফ করা হয়। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই তাদের রচিত পরিকল্পনাটি গৃহীত হয়ে যায়। এ আভিযানিক পরিকল্পনার নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এভাবেই সেদিন নরঘাতকদের হাতে গণহত্যার নীলনকশা রচিত হয়েছিল। অতঃপর ২৪ মার্চের মধ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর মৌখিক আদেশ অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গ্যারিসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

২৫ মার্চ বেলা ১১টার মধ্যেই ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার থেকে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার কাছে হুকুম আসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কার্যকর করার। অপারেশন শুরুর সময় নির্ধারিত হয় ২৫ মার্চ মধ্যরাত। সন্ধ্যায় বিমানযোগে ইয়াহিয়া খান চোরের মতো ঢাকা ত্যাগ করেন। তার পাকিস্তানে পৌঁছানোর খবর পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগেই শুরু হয়ে যায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। রকেট লঞ্চার, রিকোয়েলেছ রাইফেল, মর্টার, মেশিনগান এবং ট্যাংকের বিকট হুংকার দিয়ে নরপিশাচের দল সেনানিবাস থেকে বাঙালি নিধনে বেরিয়ে পড়ে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম