Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাইফোকাল লেন্স

নতুন বছরে জনমনে স্বস্তি আসুক

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন বছরে জনমনে স্বস্তি আসুক

আজ ১ জানুয়ারি ২০২৪ সাল। চরম এক নির্বাচনি উত্তেজনা নিয়ে আমরা নতুন বছর শুরু করলাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা, দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ এবং নির্বাচন-উত্তর দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, সে আশঙ্কা নিয়ে ২০২৪ সালের যাত্রা শুরু হলো। আর কদিন পরই নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে অংশগ্রহণকারী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ব্যাপক শোরগোল চলছে, সে তুলনায় সাধারণ মানুষের ভেতর তেমন আগ্রহ জন্মেছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে নির্বাচনের আরও কয়েকদিন বাকি আছে। এরই মধ্যে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অংশগ্রহণকারী দলগুলো যদি সে পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তাহলে মানুষ আগ্রহী হবে বৈকি। বিদায়ি বছর ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চরম অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে এমনিতেই ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল, এর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল এবং তাদের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নিত্যদিন যে গালাগালি, হানাহানি ও খুনোখুনি চলছে তা যদি বজায় থাকে, তাহলে নিরাপত্তাজনিত কারণেই ভোটের মাঠে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হবে না।

নতুন বছরের প্রথম দিনে দাঁড়িয়ে যদি পেছনে তাকাই, তাহলে ২০২৩ সালকে আমরা কীভাবে দেখতে পাই? আগেই উল্লেখ করেছি, গত বছরটি ছিল ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চরম অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার বছর। শুধু গত বছর বললে ভুল হবে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি চলে আসছে। ২০২৩ সাল ছিল ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণহীন অপরাজনীতির চর্চা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বছরব্যাপী বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক পরিবেশকে ভারী করে তুলেছে। বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি বছরের প্রথমে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও শেষভাগে এসে সে ধারা বোধকরি আর ধরে রাখতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষায়-তারা অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়েছে, যা আজও বিরাজমান।

গত বছর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল তমসাচ্ছন্ন। ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক লুটপাটের বছর ছিল ২০২৩ সাল। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার এবং বাজার সিন্ডিকেটদের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণ, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অতিমাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ইত্যাদি ছিল নিত্যদিনের খবর। এতসব মন খারাপ করার মতো ঘটনার পরও ভালো কিছু যে হয়নি তা নয়। এ সময়ে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজও হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে এমন বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন শেষে উদ্বোধন হয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হতেও শুরু করেছে।

বছরজুড়েই বিভিন্ন অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশের অর্থনীতি ছিল ভীষণ চাপে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে ঝুঁকি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও তারল্য সংকটের কারণে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ব্যাংক খাত। চরম তারল্য সংকটে দেশের ৬১টি ব্যাংকের বেশির ভাগই এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি। ৪টি সরকারিসহ ১৪টি ব্যাংক মূলধনের ঘাটতির মুখে পড়েছে। অপরদিকে পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন বন্ধের ঝুঁকিতে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে এসব ব্যাংকের ঘাটতি ছিল। ফলে অন্যান্য ব্যাংকে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানযোগ্য হলেও এসব ব্যাংকে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনেও।

রাজনৈতিক চাপে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের নতুন রেকর্ড হয়েছে গত বছর। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা ৩৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। বছরের শেষ পর্যায়ে এসে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত ১৫ বছরে বিরাট অঙ্কের অর্থ লুটপাটের খবর প্রচার করে চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে। তারা বলেছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ২৪টি বিধিবহির্ভূত লেনদেনের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

২০২২ সালের মার্চে যে ডলার সংকট শুরু হয়েছিল, গত বছরেও তা বজায় ছিল সমানতালে। ডলার সংকট সমাধানে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। ডলারের দাম তিন দফায় কমানো হয়েছে। ডলারের বর্তমান আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা। খোলাবাজারে ডলার সর্বোচ্চ ১১৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও ১২২ টাকার নিচে তা মিলছে না। মাঝে বাজার অস্থিরতার জন্য ১২৭ টাকায়ও ডলার বিক্রি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চাপে ছিল বছরজুড়ে। আইএমএফের দেওয়া ৬৯ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় সামান্য বেড়েছে দেশের রিজার্ভ। চলতি মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের ঋণ শোধ করলে রিজার্ভ আবার কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫.৮২ বিলিয়ন ডলারে। তবে খরচ করার মতো রিজার্ভ আছে ২০.৪১ বিলিয়ন ডলার।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার নৈরাজ্য এবং মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে শ্রমজীবী ও স্বল্প-আয়ের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে নাভিশ্বাস ওঠার বছর ছিল ২০২৩ সাল। চাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি ছিল গরিবের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এসবের জন্য দায়ী বলে অভিযোগ আছে। বিদায়ি বছরে বাজারের ওপর সরকারের মোটেও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে জনগণের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বড় বড় এসব চিহ্নিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লোকদেখানো নোটিশ দিয়ে কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব শেষ করেছে। অথচ বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এসব মজুতদার, কালোবাজারি, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ধরতে আইন করে গিয়েছিলেন। এ আইনে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এতে অনুমান হয়, সম্ভবত এ আইনটি এখন আর কার্যকর নেই।

আগেই উল্লেখ করেছি, এতকিছুর পরও দেশের উন্নয়নের গতি কিন্তু থেমে থাকেনি। মনে ভালো করে দেওয়ার মতো অনেক খবরও আছে। ২০২৩ সাল ছিল বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বা আংশিক শেষ হওয়ার বছর। যেমন: মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চ্যানেল, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-কক্সবাজার রেল সংযোগ। এক সরকারের শাসনামলে দেশের এমন উন্নয়মূলক কাজ এদেশে এর আগে হয়নি। যদিও ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করা হয়েছিল। এ বছরের ৪ নভেম্বর তা বাড়িয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হয়েছে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ২১.২৬ কিলোমিটারের এ প্রকল্পের জন্য ৩৩ হাজার ৪৭১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে। ২৮ অক্টোবর বহুলপ্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল চালু করা হয়েছে। নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেল এটি। সংযোগ সড়কসহ এ টানেলে দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মোট ১৯.৭৩ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয় ২ সেপ্টেম্বর। এ সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট, যা আগে ১ ঘণ্টারও বেশি লাগত। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে গত ১০ অক্টোবর চালু হয়েছে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন ট্রেন সার্ভিস। এটি যশোর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। পরবর্তীকালে রাজধানীর সঙ্গে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলকে যুক্ত করা হবে। ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় মাতারবাড়ী ও ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস। একই সঙ্গে মাতারবাড়ী চ্যানেলে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি চালু হলে আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলোর বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে পণ্য পরিবহণ খরচ অনেক কমবে। এ বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে ব্যাপক শিল্পায়নসহ গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল; যা জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভূত অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হলেও ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রেল সার্ভিস চালু হয়। এ রেল সার্ভিস চালু হওয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষের বহুদিনের একটি আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। এ সার্ভিস চালুর হওয়ায় কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে চালু হয়েছে উচ্চগতির পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। ১৪ লেনের এ মহাসড়ক ঢাকার পূর্ব থেকে পশ্চিমে নতুন সংযোগ তৈরি করেছে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে হলো ঢাকার নতুন গেটওয়ে। উল্লিখিত প্রতিটি প্রকল্প এদেশের মানুষের অনেকদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে। এসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে উপার্জিত অর্থ জাতীয় অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। উল্লিখিত প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির যত কথাই উঠুক না কেন, এগুলো যে বর্তমান সরকারের সাহসী পদক্ষেপ ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। এসব প্রকল্প থেকে বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই, ভবিষ্যৎ নাগরিকরাও সুফল ভোগ করবে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষ করতে চাই নির্বাচন-উত্তর কিছু সম্ভাবনার কথা বলে। দেশের অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে জনগণ, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এখন জটিল এক রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্ত পার করছে। সরকার যদি ভেবে থাকে, ভোটে বেশি ভোটার সমাগম ঘটাতে পারলে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলা যাবে, সম্ভবত সেটা না-ও হতে পারে। এবার যেভাবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে এ ধরনের কথা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো যে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে-তাদের হয়তো আরও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। নির্বাচন ছাড়াও শ্রম আইন ও শ্রম অধিকার নিয়েও বাংলাদেশের ওপর চাপ আসতে পারে। ১ জানুয়ারি গার্মেন্ট সেক্টরে শ্রমিকদের যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে, তার লক্ষণও ভালো নয়। এ ধর্মঘট মোকাবিলায় সরকারকে খুব সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না, আবার সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এমন কাজও করা যাবে না। বলা যায় না, এ ধর্মঘট থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পোশাকশিল্পের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসে কি না। কিছুদিন ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা শোনা যাচ্ছে। এর প্রয়োগ কতটুকু হবে বা আদৌ হবে কি না, এখনো তা বোঝা যাচ্ছে না।

কোনো কারণে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে পোশাকশিল্প। এতে দেশের অর্থনীতি আরও বড় সংকটে পড়ে যাবে। শুধু পোশাকশিল্প নয়, পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সেক্টরও সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের যাওয়া নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপের দিকে যাবে। তবে আমরা চাই, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে আসুক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাক এবং বাংলাদেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম