নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হোক
মো. আব্দুল হাই
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলা সাহিত্যের দুজন শীর্ষ কবি ‘নদী’ শিরোনামে যে দুটি কবিতা রচনা করেছেন তা সাহিত্য পদবাচ্য হলেও নদীবিষয়ক অনেক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে। রবীন্দ্রনাথ যখন লেখেন, ‘নদী কোথা হতে এলো নাবি, কোথায় পাহাড় সে কোনখানে, তাহার নাম কি কেহই জানে’ তখন নদীর উৎপত্তি ও গতিপথ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা আমরা পেয়ে যাই, যা নদীর বিশ্বজনীন সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যায়। নদী সৃষ্টির আবশ্যিক পূর্বশর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে পানির স্থায়ী এবং প্রাকৃতিক উৎস। সেটি বরফগলা পানি অথবা বৃষ্টির পানিও হতে পারে। বৃষ্টি সারা বছর নাও হতে পারে। ফলে নদীর সৃষ্টির জন্য বৃষ্টি খুব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক নয়। তবে বৃষ্টিবহুল অববাহিকা বিশেষ করে মেঘালয়-চেরাপুঞ্জি এলাকায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর অন্যত্র পাহাড় চূড়ার বরফগলা পানি থেকেই নদী সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ কারণেই রবীন্দ্রনাথ তার নদী কবিতায় পাহাড়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া নদীর সৃষ্টির জন্য অন্য শর্তগুলো হচ্ছে, ভূমির স্বাভাবিক ঢাল, একটি নির্দিষ্ট গতিপথ বা নদী খাত এবং নিয়মিত প্রবাহ। তবে প্রবাহ ও মৌসুমভেদে শীর্ণ অথবা শুষ্ক হতে পারে, তাতে নদীর সংজ্ঞার তারতম্য ঘটে না। এদিক থেকে জাতীয় নদী কমিশনকৃত নদীর সংজ্ঞা, পানি বিজ্ঞানের বিশ্বজনীন সংজ্ঞার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু নদীর সংজ্ঞা নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে নানা ধরনের স্ববিরোধী ধারণা ছড়িয়ে রয়েছে। এ ধারণাগুলো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ, সংখ্যা ও গণনার কাজকেও কঠিন করে তুলছে। এ ভুল ধারণাগুলোর নিরসন প্রয়োজন।
নদীর সংজ্ঞার মতো দেশে নদীর সংখ্যা নিয়েও রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ‘বাংলাদেশের নদ-নদী’ শীর্ষক গ্রন্থে ১১৮২টি নদীর কথা উল্লেখ করেছেন। গবেষণা সংস্থা সিইজিআইএস দেশে ৪৪৫টি নদীর কথা বলেছে এবং নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় দেশে ৪৯৬টি নদীর সংখ্যা উল্লেখ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী’ শীর্ষক প্রকাশনায় ৪০৫টি নদীকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন ২০১৯ সালে ৭৭০টি নদী, ২০২৩-এর ১০ আগস্ট ৯০৭টি নদী এবং সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ ১০০৮টি নদীর তালিকা প্রকাশ করেছে। সম্ভবত এটিও পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত তালিকা নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যায়, এখনো কিছু নদী তালিকাভুক্ত হয়নি। সুন্দরবন এলাকার অসংখ্য নদী তালিকার বাইরে থেকে গেছে। অনেক আন্তঃসীমান্ত নদী স্বীকৃতি পায়নি। তবু জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের কৃতিত্ব এখানেই যে, এ রকম একটি জনগুরুত্ব সম্পন্ন কাজে তারা মনোযোগ দিয়েছে। কারণ নদীর তালিকা তৈরির সঙ্গে নদীর দখল-দূষণ প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক ও আন্তঃসীমান্ত নদীতে পানির অধিকার ও প্রাপ্যতার বিষয়টি জড়িত। তাই নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ ও তালিকা তৈরির প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
নদীর তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রশ্নটি উত্থাপন জরুরি সেটি হচ্ছে, কোন প্রক্রিয়ায় নদীর তালিকা তৈরি অধিক বিজ্ঞানসম্মত। এটি প্রশাসনিক বিভাগভিত্তিক, কৌণিক অঞ্চলভিত্তিক, নাকি অববাহিকাভিত্তিক হওয়া উচিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কৌণিক অঞ্চলায়নের ভিত্তিতে দেশে নদীর তালিকা তৈরি করেছিল। তাদের তালিকায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ১০২টি, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ১১৫টি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৮৭টি, উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৬১টি, পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলে ১৬টি, এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ২৪টি নদী দেখানো হয়েছিল। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন নদীর উৎস ও পতন মুখ চিহ্নিত করলেও তাদের তালিকা মূলত উপজেলা, জেলা ও বিভাগভিত্তিক। বাস্তবে কৌণিক অঞ্চল এবং প্রশাসনিক বিভাগ অনুসারে যেমন নদীর সৃষ্টি হয় না; তেমনি নদীর সমাপ্তিও ঘটে না। নদী সৃষ্টির ক্ষেত্রে পানির উৎস, ভূমির অঙ্গসংস্থান (Morphology) এবং টপোগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভূমির স্বাভাবিক ঢাল যেহেতু উত্তর থেকে দক্ষিণে তাই নদীগুলোও উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত। এ কারণে উত্তর থেকে তিনটি প্রধান নদী ও নদী পদ্ধতি: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনা বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে এবং তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা জালের মতো পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত দেশে ছড়িয়ে থাকা শত শত নদীর আদি উৎস মূলত এ তিনটি প্রধান নদী। তাই দেশে নদীর তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান নদীগুলোর অববাহিকাভিত্তিক তালিকা হলে তা হতো অধিক যুক্তিসঙ্গত। নদীর শাখা-প্রশাখা গণনা অধিকতর নির্ভুল হতে পারত।
কমিশনকৃত তালিকা পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় পাউবো প্রস্তুতকৃত পূর্ব তালিকার ২৩টি নদী এখানে বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাতটি নদী যথাক্রমে-কালিন্দি, ঘাঘর, তেলিগঙ্গা, বুড়িশ্বর, বিশারকান্দা-বাগদা, শাতলা-হারতা-নাফার কান্দা নদী, ও সাপমারা-হাবড়া। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি নদী যথাক্রমে-কুমলাল-নাওতারা, গিদারী নদী, বুল্লাই নদী, রামচণ্ডী নদী, রাক্ষসিনী তেঁতুলিয়া নদী ও লেংগা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী যথাক্রমে-বাউলাই নদী, বালই নদী ও মহারশি নদী। উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পাঁচটি নদী যথাক্রমে-টঙ্গী নদী, নাঙ্গলা নদী, নাংলী নদী, বোশখালীর নদী ও লাবুন্ধা নদী। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দুটি নদী যথাক্রমে-ডাসাডিয়া নদী ও বিজলি নদী। কী কারণে এ নদীগুলোকে কমিশনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো অথবা বাদ পড়ল তার ব্যাখ্যা প্রদান করা জরুরি ছিল।
উচ্চারণ বিভ্রাট
পাউবো ও কমিশনকৃত তালিকায় অনেক নদীর নামের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষণীয়। আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কারণে উচ্চারণ ও ভাষাগতভাবে নামের ভিন্নতা প্রচলিত হলেও এক্ষেত্রে যে কোনো একটি নাম বা উচ্চারণকে স্বতঃসিদ্ধ ধরা উচিত ছিল। তালিকার ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের বিচ্যুতি না হলেও নির্ভুলতার জন্য এটি করা প্রয়োজন। পাউবোতে উল্লেখিত উদাহরণগুলো যথাক্রমে- ‘অর্পণগাছিয়া’ কমিশনে হয়েছে ‘আপানগাসিয়া’ (৩১নং)। ‘খালসিডিঙ্গি’ হয়েছে ‘খলিসাডাঙ্গা’(১৯৭নং)। ‘ঘিরনাই’ কমিশনে হয়েছে ‘ঘৃণাই’ (২৭৭নং)। ‘চিতলখালী নদী’ হয়েছে ‘চিল্লাখালী’ (৩১৯নং)। ‘জালিয়া’ কমিশনে হয়েছে ‘জালিয়াছড়া নদী’ (৩৫৭নং)। ‘গুমাই’ কমিশনে ‘গোমাই’ (২৬০নং)। ‘খাজাচিং’ হয়েছে ‘খাজাঞ্চি’ (১৯৯নং)। ‘চামতি নদী’ কমিশনে হয়েছে ‘চামটি’ (৩০৪নং)। ‘মালিজি নদী’ কমিশনে হয়েছে ‘মালিঝি’ (৭৯৬নং)। পাউবোতে তিনটি দীর্ঘ নামযুক্ত একটি নদী (পাবিজুড়ি-কুশিগাঙ-কুশিয়া নদী) রয়েছে। কমিশন এটিকে একটি নামে দেখিয়েছে (পাবিজুড়ি কুশিগাঙ ৫৪১নং)। একইভাবে পাউবোর নয়াগাং নদী, নয়া গাং নদী নামের দুটি নদী কমিশনে একটি নদী হয়ে যায় নয়াগাং/ নয়াগাং(খাসিয়ামারা) ৪৮০নং। এ ধরনের আরও অনেক নাম বিভ্রাট রয়েছে।
দ্বৈত নাম
পাউবো এবং কমিশনকৃত তালিকা পর্যালোচনা করলে আর এক ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। তালিকায় এক নামের একটি অথবা একাধিক নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর নিরসন হওয়া প্রয়োজন। পাউবোর তালিকায় ‘সতি-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী’ নামে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি মাত্র নদী রয়েছে। কিন্তু কমিশনকৃত তালিকায় সতি, স্বর্ণমতি ও ভাটেশ্বরী তিনটি আলাদা নদী। নদী তিনটির ক্রমিক যথাক্রমে ৯০৫, ৯৭২ ও ৭১৬। পাউবোতে যমুনা নদী (পঞ্চগড়) নামে একটি নদীর উল্লেখ রয়েছে। কমিশনে ৮১৯ ও ৮২০ ক্রমিকে দুটি যমুনার অস্তিত্ব রয়েছে। পাউবোতে তিস্তা নদী, তিস্তা নদী (পঞ্চগড়) নামে দুটি নদী দেখানো হয়েছে। কমিশনে তিস্তা একটি মাত্র নদী (৪০৮নং)। তবে এটি মোটেই পঞ্চগড়ের নদী নয়। পাউবোতে কামারখালী নামে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি মাত্র নদী রয়েছে। কমিশনে কামারখালী নামের ১২৫ ও ১২৬ ক্রমিকে দুটি নদী রয়েছে। একটি নেত্রকোনায় অন্যটি সুনামগঞ্জ-সিলেট জুড়ে। পাউবোতে তিতাস নদী, পুরোনো তিতাস নদী নামে দুটি নদীর কথা বলা হয়েছে। কমিশনে ৪০৫, ৪০৬ ও ৪০৭ ক্রমিকে তিতাস নামে তিনটি আলাদা নদী দেখানো হয়েছে। পাউবোর তালিকায় উত্তরকেন্দ্রীয় অঞ্চলে আইমান-আখিলা নদী এবং আইমান-মোবারি নদী নামে দুটি নদীর কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কমিশনের তালিকায় ২৮নং ক্রমিকে ‘আয়মান’ নামের একটিমাত্র নদী দেখানো হয়েছে। এগুলোরও ব্যাখ্যা হওয়া প্রয়োজন।
অঞ্চল বিভ্রাট
কমিশনকৃত নদীর তালিকায় সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাটি হচ্ছে কোনো কোনো নদীর ক্ষেত্রে সম্ভবত অঞ্চল বিভ্রাট ঘটেছে। পাউবো একটি নদীকে যে অঞ্চলে উল্লেখ করছে, কমিশন তা অন্য অঞ্চলে দেখাচ্ছে। এটি অনবধানজনিত কিনা জানা প্রয়োজন। পাউবোর তালিকায় মরা জিঞ্জিরাম উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি নদী; কিন্তু কমিশনের তালিকায় ৩৫৯ ক্রমিকে জিঞ্জিরাম কুড়িগ্রামের নদী এবং ৩৬০ ক্রমিকের জিঞ্জিরাম জামালপুরের একটি নদী। নদী দুটির উৎস ও পতনমুখ উল্লেখ না থাকায় এ দুটি একই নদীর কিনা সন্দেহ থেকে যায়। পাউবোর তালিকায় সুতী উত্তরকেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি নদী। কমিশনের তালিকায় ৯৫৫ ও ৯৫৬ ক্রমিকে সুতী নামে দুটি আলাদা নদী রয়েছে। একটি ময়মনসিংহ বিভাগে এবং অন্যটিকে ঢাকা বিভাগে দেখানো হয়েছে। আসলে দুটিই ময়মনসিংহ বিভাগে হবে। পাউবোতে কাটাখালি নামে উত্তরকেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি নদীর কথা বলা হয়েছে। কমিশনের তালিকায় কাটাখালি নামে যথাক্রমে ১১০, ১১১ ও ১১২ ক্রমিকে তিনটি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে যা তিনটি বিভাগে ঢাকা, খুলনা ও রংপুরে অবস্থিত। পাউবোতে চিলাই উত্তরকেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটিমাত্র নদী। কমিশনে তা ৩১৭ ও ৩১৮ ক্রমিকের দুটি ভিন্ন নদী। একটি গাজীপুরে অন্যটি সুনামগঞ্জে। পাউবোতে বুড়ি নদী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী। কমিশনের তালিকায় বুড়ি নামের তিনটি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। যাদের ক্রমিক যথাক্রমে-৬৬৬, ৬৬৭, ও ৬৬৮। এর মধ্যে প্রথমটি চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি যথাক্রমে সিলেটের ওসমানীনগরে অবস্থিত। আবার পাউবোর তালিকায় ‘সোনাই’ নদীকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বলা হলেও কমিশনের তালিকায় এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী যার ক্রমিক নং ৯৬০ (হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)। পাউবোর তালিকায় মেঘনা আপার, মেঘনা লোয়ার নামে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দুটি নদীর উল্লেখ রয়েছে। কমিশনের তালিকায় ৮১১ থেকে ৮১৪ পর্যন্ত মেঘনার চারটি পৃথক নদীর উল্লেখ করা রয়েছে। এর মধ্যে ৮১১নং ক্রমিকের মেঘনার প্রধান প্রবাহকে তিনটি বিভাগে যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালে দেখানো হলেও বাস্তবে তা হবে ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালজুড়ে চারটি বিভাগে।
পাউবোর তালিকায় আপার-লোয়ার নামকরণ করে পাঁচটি নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন নাগর আপার-নাগর লোয়ার, বড়াল আপার-বড়াল লোয়ার, মহানন্দা আপার-মহানন্দা লোয়ার, বানার আপার-বানার লোয়ার, মেঘনা আপার-মেঘনা লোয়ার প্রভৃতি। উৎস ও প্রবাহের এলাকা ভিন্নতর হওয়ায় কমিশন সেগুলোর সংশোধিত তালিকা করেছে। কিন্তু উৎস এক হওয়া সত্ত্বেও ১৬৬ ও ১৬৭নং ক্রমিকের নদীকে যথাক্রমে কুমার আপার (মাদারীপুর) ও কুমার লোয়ার (মাদারীপুর) নামে দুটি পৃথক নদী হিসাবে দেখানো কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখা যেতে পারে।
নদী তালিকায় এতসব অসঙ্গতি থাকার পরও একটি কঠিন ও আয়াসসাধ্য কাজে মনোনিবেশ করার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। ভবিষ্যতে এ কাজ চলমান থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাহলেই নদীর একটি নির্ভুল ও অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা যাবে এবং নদীর সংজ্ঞা, সংখ্যা ও গণনাবিষয়ক বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হবে।
মো. আব্দুল হাই : অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া