সেমিস্টারের ফাঁদে বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এম এল আর সরকার
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকার বারবার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই সঠিকভাবে কার্যকর হওয়ার কোনো শুভ লক্ষণ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। এতদিন শিক্ষা বিষয়টি বারবার ঢেলে সাজানোর কাজটি হয়েছে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে। বর্তমানে ঢেলে সাজানোর রোগটি আস্তে আস্তে বিস্তৃতি লাভ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য ইউজিসি যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সেমিস্টার পদ্ধতি প্রণয়ন।
দেশের অধিকাংশ স্বায়ত্তশাসিত/সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো বাৎসরিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু আছে। ইউজিসির নতুন প্রেসক্রিশন অনুযায়ী সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে বলা হচ্ছে। সেমিস্টার পদ্ধতি নিয়ে উপরওয়ালাদের মতামত হচ্ছে, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেমিস্টার পদ্ধতি চালু না করলে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্রিডেটেশন বা স্বীকৃতি পাবে না। অনেকেই একটু আগ বাড়িয়ে বলছেন অ্যাক্রিডেটেশন না পেলে সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য থাকবে না। আর সার্টিফিকেটের মূল্য না থাকলে ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পাবে না। কী আজব কথাবার্তা!
অ্যাক্রিডেটেশনের সংঙ্গে কোর্স কারিকুলাম, শিক্ষক সংখ্যা ও যোগ্যতা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, পাঠদান পদ্ধতি ও অবকাঠামোর যোগসূত্র রয়েছে। কিন্তু সেমিস্টার পদ্ধতি না থাকলে অ্যাক্রিডেটেশন হবে না, চাকরি হবে না-এ যুক্তি কোথা থেকে আসছে তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। আমি নিজে বাৎসরিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়েছি এবং এখনো আমার ছাত্রছাত্রীরা একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার নিজের বিদেশে পড়াশোনা বা বিদেশে শিক্ষকতা, এমনকি আমার ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরির ক্ষেত্রে অদ্যাবধি সেমিস্টার সিস্টেম না থাকার কারণে কোনো অসুবিধা হয়নি। তারপরও যখন এসব অবান্তর কথাবার্তা শুনতে হয় তখন কিছুই বলার থাকে না।
হ্যা, বিশ্বের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতেই পড়াশোনা করানো হচ্ছে। এমনকি আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেমিস্টার পদ্ধতি বিদ্যমান। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, যদি সেমিস্টার পদ্ধতিতে পড়াশোনা করাতে অন্যদের অসুবিধা না হয়, তাহলে আমাদের অসুবিধাটা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া অসম্ভব, তাই বিষয়টি নিচে বিশদভাবে আলোকপাত করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতির মোটামুটি নিয়ম হচ্ছে প্রায় ৩ মাস পাঠদান, ২ সপ্তাহ পরীক্ষার প্রস্তুতি, ২ সপ্তাহ পরীক্ষা এবং ২ সপ্তাহ পরীক্ষার ফল প্রকাশ। বাকি সময়টুকু হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন এবং অন্যান্য ছুটি। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ ইত্যাদি সবকিছুই থাকে পূর্বনির্ধারিত। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগস্ট/সেপ্টেম্বরে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয় এবং নির্দিষ্ট ৪ বছরেই তারা ডিগ্রি অর্জন করে। সেশনজট, ধর্মঘট, সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, পরীক্ষা পেছানো, ভর্তি পরীক্ষার সময় পরিবর্তন এসব কিছুই নেই।
পক্ষান্তরে, বাৎসরিক পদ্ধতিতে মোটামুটি নিয়ম হচ্ছে প্রায় ৬ মাস পাঠদান, ১ মাস প্রস্তুতি, এক থেকে দেড় মাস পরীক্ষা এবং এক থেকে দেড় মাস পরীক্ষার ফল প্রকাশ। বাকি সময়টা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ছুটি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে পাঠদান বা পরীক্ষার সময়ের যে ব্যাপ্তি তাতে সেমিস্টার পদ্ধতি এবং বাৎসরিক পদ্ধতির তেমন কোনো বড় পার্থক্য নেই। ইচ্ছা করলেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাৎসরিক পরীক্ষা পদ্ধতির বদলে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে পারে। হ্যাঁ, সরকার বা ইউজিসি এ চিন্তা মাথায় রেখেই সপ্তাহ অনুযায়ী সময় ভাগ করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান চালু করতে বলছে।
অনেক বিভাগ ও অনুষদ, বিশেষ করে যেসব অনুষদ ও বিভাগ বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিগত বিষয়াবলির সঙ্গে সম্পর্কিত, তারা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং এখনো করছে। আমি নিজেও বিভিন্ন সভায় এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি। সেমিস্টার পদ্ধতিতে যেতে অনিচ্ছুকদের মতামত হচ্ছে, সময়ের বিবেচনায় বিষয়টি সহজ হলেও আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার, ছাত্রছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফল প্রকাশ পদ্ধতি, ছাত্র রাজনীতি ইত্যাদি অনেক কিছুই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়। কেন নয় এবং অসুবিধা কোথায়, তা আমাদের অনেকেরই জানা, তারপরও কিছুটা আলোচনা করছি।
একাডেমিক ক্যালেন্ডার : বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার আছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার নেই। আছে ছুটির ক্যালেন্ডার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও চেষ্টা করছে একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছাত্রছাত্রী কবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করবে এবং কবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে তার কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ কারোই জানা নেই। বছর প্রায় শেষ, এখনো ২০২৩ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়নি। আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। অবস্থা এতটাই হযবরল যে, ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার আগেই এক বা দুই সেমিস্টারের সময় শেষ। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে দিনক্ষণ ঠিক করে বিদেশিদের মতো একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে ভর্তি, ক্লাস ও পরীক্ষা নেবে?
পরীক্ষার প্রক্রিয়া : আমাদের আছে পরীক্ষা কমিটি, বহিঃসদস্য, প্রশ্নপত্র মডারেশন, দুজন পরীক্ষক এবং তৃতীয় পরীক্ষক। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এসবের কোনো বালাই নেই। আছে শুধু শ্রেণি শিক্ষক, যিনি নিজেই পরীক্ষক। ফলে বিদেশিদের পরীক্ষার সময় আমাদের তুলনায় অনেক কম। বিদেশিদের মতো আমরাও এসব কমিটি-ফমিটি, দ্বিতীয় পরীক্ষক, তৃতীয় পরীক্ষক ইত্যাদি তুলে দিলে আমাদেরও পরীক্ষার সময় কম লাগবে। কিন্তু কতজন ছাত্রছাত্রী যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলা মুশকিল। বর্তমান পদ্ধতিতে পরীক্ষা কমিটি এবং দুজন পরীক্ষক আছে বললেই আমরা সাবধানতার সঙ্গে উত্তরপত্র পরীক্ষণ করি। তারপরও কিছু উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষণের প্রয়োজন হয়।
ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা : বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ব্যবহারিক পরীক্ষা নেই। শ্রেণি শিক্ষক তার কোর্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন এবং ক্লাস চলাকালীন ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর প্রদান করেন। আমাদের দেশে তত্ত্বীয় পরীক্ষার পর কমপক্ষে ৭ দিন বিরতি দিয়ে পরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এতে পরীক্ষা গ্রহণের সময় বেশি লাগে, কিন্তু সেই আগের মতোই বলতে চাই, সময় বেশি লাগলেও এ পদ্ধতি সঠিক মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা মৌখিক পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি যা বিদেশে করা হয় না। মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষা কমিটি ছাড়াও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক থাকেন, যিনি ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা যাচাই-বাছাই করেন। আমি মনে করি, মৌখিক পরীক্ষা শুধু বিভিন্ন কোর্সের ওপর ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান-দখল বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে না, অধিকন্তু পরে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়তা করে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মৌখিক পরীক্ষার জন্যও অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন।
পরীক্ষার সময় : বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয় একদিন অথবা দুদিন পর। এমনকি ছাত্রছাত্রীদের কোনোদিন হয়তো দুটি পরীক্ষাও দিতে হয়, যদি ছাত্রছাত্রী অন্য বিভাগ থেকে কোর্স নিয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা কোনো প্রতিবাদ করে না। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে দুটির বেশি পরীক্ষা নিতে গেলেই গণ্ডগোল। শুধু তাই নয়, ফলাফল উন্নয়ন পরীক্ষা, অসুখ-বিসুখ, আত্মীয়স্বজনের মৃত্যু, মারামারি ইত্যাদি অনেক কারণেই আমাদের পরীক্ষা পেছাতে হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা নিতে হয়।
ফল প্রকাশ পদ্ধতি : বিদেশে কোর্স শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট তারিখে তার কোর্সের নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রদান করেন। শিক্ষকের কাজ এখানেই শেষ। ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যায়। পক্ষান্তরে আমাদের ফল প্রকাশ পদ্ধতিটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। প্রথমত, তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ব্যবহারিক পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রজেক্ট ওয়ার্কের নম্বর সংগ্রহ করি এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরীক্ষা কমিটির অন্য সদস্যদের প্রেরণ করি। দ্বিতীয়ত, সব কোর্সের প্রথম এবং দ্বিতীয় পরীক্ষককে অনুরোধ করে তাদের কোর্সের নম্বরপত্র প্রদান করি। অনুরোধ করতে যে কত সময় পার হয়ে যায়, তার কোনো ঠিক নেই। যদি জুনিয়র শিক্ষক পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হন, তা হলে তো তার জীবন শেষ। তৃতীয়ত, সব নম্বরপত্র পাওয়ার পর সব সিলবদ্ধ নম্বরপত্র খুলি এবং কমিটির সব সদস্যকে এক কপি করে নম্বরপত্র প্রদান করি। সদস্যরা ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে অথবা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে খসড়া টেবুলেশন শিটে উঠান। কমিটির সব সদস্যের এ কাজটি সম্পন্ন হলে একটি সুবিধাজনক সময়ে মিলিত হয়ে কোন কোর্সের কয়টি উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষণের জন্য পাঠাতে হবে তা নির্ধারণ করি। অতঃপর উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষণের জন্য পরীক্ষক নির্ধারণ করে তার কাছে উত্তরপত্র প্রেরণ করে নম্বরের জন্য অপেক্ষা করি। চতুর্থত, তৃতীয় পরীক্ষকদের নম্বরপত্র পাওয়ার পর আবারও আমার খসড়া টেবুলেশনশিটের কাজ শেষ করে ফল যাচাই-বাছাই করার জন্য একত্রে মিলিত হই। ফলে কোনো অসুবিধা না থাকলে আমরা মূল টেবুলেশনশিটে ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বর ওঠানোর কার্য সম্পন্ন করি। মূল টেবুলেশন শিটের ফল উঠানোর পর ফল যাচাইয়ের জন্য আবারও মিলিত হই। ফল যদি ঠিক থাকে তখন শুরু করি সব টেবুলেশনশিটে সব সদস্যের স্বাক্ষরের কাজ। স্বাক্ষর শেষ হলে ফলসহ আমরা যাই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে বেশকিছু অফিশিয়াল কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কাজ শেষ হলেই শেষ হয় আমাদের বেদনাবহুল কাজ। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর কয়েক দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করতে পারছি না। আমরা সঠিক সময়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতেও ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের পরীক্ষা প্রক্রিয়া পদ্ধতি, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা, পরীক্ষার সময়, ফল প্রকাশ ইত্যাদি সবই সময়সাপেক্ষ। একটি পরীক্ষা নিয়েই আমরা যখন ১-২ বছর সেশনজটে নিমজ্জিত আছি, তখন এ অবস্থায় বছরে দুটি পরীক্ষা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে শুধু পরীক্ষা ও সেশনজটময় হবে, তার কী হবে?
আমরা সবকিছু জেনেবুঝেও কেন এই গোলকধাঁধায় পড়তে যাচ্ছি বা চাচ্ছি, তা আমি জানি না। অনেককেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘বলুন তো, সেমিস্টার পদ্ধতির সুবিধা কী?’ কিন্তু কোনো সদুত্তর নেই! হাস্যরসের ছলে অনেকেই বলেছে, ‘বেশি বেশি পরীক্ষা বেশি বেশি টাকা’, যদিও এটি তাদের মনের কথা নয়। অনেকেরই উত্তর হচ্ছে, ‘উপরওয়ালারা যখন চাচ্ছে তখন আমাদের করার কী আছে?’
আমরা যে পদ্ধতিতে আছি তাতে অসুবিধা কী? সবকিছুই বিদেশিদের কাছ থেকে নিতে হবে কেন? বরং বাৎসরিক পরীক্ষা থাকায় আমরা প্রয়োজনে ৬ মাসের পরিবর্তে ৫ মাস, এমনকি সাড়ে ৪ মাস পাঠদান করে সেশনজট কমানোর চেষ্টা করি; কিন্তু সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদানের সময় মাত্র ৩ মাস। ছুটিছাঁটা বাদ দিয়ে যেকটি দিন থাকে তা কমিয়ে সেশনজট কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
হ্যা, সেমিস্টার পদ্ধতিতে যদি যেতেই চান, তাহলে আগে বিদেশিদের মতোই সবকিছুর ব্যবস্থা করুন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি কি আমাদের বর্তমানে বিদ্যমান? যদি তা না হয়, তাহলে কেন এ অন্ধকার যাত্রা? তাড়াহুড়ো করে কেন শুধু শুধু কাকের পুচ্ছে ময়ূরের পেখম লাগাতে যাচ্ছেন? সময় নিন, ময়ূরের ডিম সংগ্রহ করুন। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বড় করুন। অতঃপর, ময়ূরের পেখমের সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
ড. এমএলআর সরকার : অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
lrsarker@yahoo.com