বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং ক্রনি ক্যাপিটালিজম
সাকিব আনোয়ার
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রনি ক্যাপিটালিজম হলো পুঁজিপতি ও রাজনীতিকদের মধ্যকার বন্দোবস্ত, যার মাধ্যমে পুঁজিপতিরা বৈধ বা অন্য উপায়ে সম্পদ আহরণ করেন এবং রাজনীতিকরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখেন। এ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল, রাজনীতিক, মন্ত্রী, আমলারা অর্থের জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করার বিনিময়ে তাদের নৈতিক-অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য থাকে। দেশে সুশাসনের অভাব হলে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটে।
কখনো কখনো এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, এ বৃত্তের মধ্যে থাকা ব্যবসায়ীরা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তখন এ ব্যবসায়ী শ্রেণি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশে অতি ধনী বৃদ্ধির পেছনে ক্রনি ক্যাপিটালিজম কাজ করে, যা আমরা ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পরিবার বা মেক্সিকোর কার্লোস স্লিমের অতি ধনী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার দিকে তাকালে বুঝতে পারি। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ক্রনি ক্যাপিটালিজমের একটি উদাহরণ বলা যেতে পারে।
রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মধ্যে চলতি বছরে গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফায় ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। বাজেটের আগে বা পরে খুচরা এবং পাইকারি উভয় পর্যায়েই আরেক দফা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এর আগে বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণ করত বিদ্যুতের দাম।
পরবর্তী সময়ে আইন সংশোধন করে এ ক্ষমতা হাতে নিয়েছে সরকার। বলা হচ্ছে, এখন থেকে প্রত্যেক মাসেই সরকারের নির্বাহী আদেশে সমন্বয় (বাড়ানো) করা হবে বিদ্যুতের দাম। চলতি বছরে বাণিজ্যিক পর্যায়ে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে গ্যাসের দাম। নতুন করে গ্রাহক পর্যায়ে দুই চুলায় ৫০০ টাকারও বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। আগস্টে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম একলাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় সরকার। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে হাস্যকরভাবে লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমানো হয়।
এমনিতেই নিত্যপণ্যের অসহনীয় উচ্চমূল্যে দিশেহারা মানুষ। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। এমন অবস্থায় নিয়মিত বিরতিতে বাড়ছে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম। বলা হচ্ছে, ভর্তুকি কমাতে এ দাম বাড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ঋণ দিচ্ছে, তাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার শর্ত রয়েছে। ভর্তুকি ও কোম্পানিগুলোর লোকসান কমাতে সমন্বয়ের নামে সরকারের নির্বাহী আদেশে এভাবে নিয়মিত বিরতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামীতে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর ভর্তুকি দেবে না।। জাতীয় সংসদে দেওয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে সরকার যে দামে গ্যাস আমদানি করে, শিল্প মালিকদের সে দাম পরিশোধ করতে হবে।
এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি। গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।’ গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে ৪০, ৫০ বা ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলে সেটা সরকার কীভাবে দেবে; এ প্রশ্ন রেখেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রতিমন্ত্রীও একাধিকবার বলেছেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় না। এ তথ্য সঠিক কিনা সেই আলোচনায় পরে আসছি।
প্রশ্ন হলো, ভর্তুকি কেন দিতে হচ্ছে এবং সেই ভর্তুকির টাকা কোথায় যাচ্ছে, কারা পাচ্ছে? সরকারের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে, কোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও এলএনজির দাম বাড়ার কারণেই এ সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর জন্য সরকারের ভুল এবং স্বজনতোষী নীতি দায়ী করছেন অনেকে। সরকার দেশের গ্যাস সম্পদ নতুন করে অনুসন্ধান ও আহরণের চেষ্টা করেনি।
২০১১ সালে ফরাসি প্রতিষ্ঠান স্ল্যামবার্জার সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছিল, বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কিছু সংস্কার ও পরিবর্তন আনলে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব। সরকার নিজ উদ্যোগে স্ল্যামবার্জারকে দিয়ে এ সমীক্ষা চালালেও পরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথে হাঁটেনি। গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। এর পরিবর্তে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের পরামর্শে এলএনজি আমদানি শুরু করে। এক্ষেত্রেও স্থায়ী আমদানি চুক্তির পরিবর্তে স্পট মার্কেট থেকে কেনার দিকে বেশি আগ্রহী ছিল সরকার। এভাবে জ্বালানি খাতকে প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করা হয়, যা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আমদানিনির্ভর ও ব্যয়বহুল তরল জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি মালিকানার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পিডিবিকে। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্রমবর্ধমান ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা যত বেড়েছে, পিডিবির লোকসান তত বেড়েছে। ২০২০-২১ সালে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল ৬ টাকা ৬১ পয়সা, যা ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৮৪ পয়সা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কারণে বেসরকারি খাতের কোনো কোনো আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে ৫৫ টাকা এবং রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট ২৭ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।
ফলে এটি স্পষ্ট যে, বেসরকারি খাতের আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়েই পিডিবির লোকসান বাড়ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার একটা বড় অংশ সারা বছর অব্যবহৃত থাকে। ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১২ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। এসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে ডলারে পেমেন্ট করতে হয়। বাকিগুলোকে করতে হয় ডলারের বিনিময়মূল্য অনুসারে টাকায়। এ কারণে রেন্টাল কেন্দ্রগুলো একদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করছে, অন্যদিকে ডলারের বিনিময় হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্টের পরিমাণও বাড়ছে। এ কারণে প্রতিবছর বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের পরিমাণ এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে পিডিবির লোকসান, ভর্তুকি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চাপ।
২০১২-১৩ সালে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট, তখন পিডিবির লোকসান ছিল ৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ২১ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে লোকসান হয় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লোকসানের পরিমাণ। সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং ভুলনীতির কারণে ভর্তুকি বা ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আর এ লোকসান সামাল দিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের পকেট থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন আইএমএফ’র শর্ত মেনে হোক আর পিডিবি তথা সরকারের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য হোক, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভুক্তভোগী হচ্ছে জনগণ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দিকে ফেরা যাক। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশ জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয় না। প্রকৃতপক্ষে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া ২৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির দেওয়া তথ্যমতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান ভর্তুকি দেওয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে, যার পরিমাণ সে দেশের জিডিপির ৪.৭ শতাংশ। ইরানের পরপরই ভর্তুকিতে শীর্ষে আছে যথাক্রমে চীন ও ভারত। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারের মতো ধনী রাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেনের মতো দেশগুলো জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়। যেসব দেশ জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয় তাদের মধ্যে অনেকে জ্বালানি রপ্তানি করে। এ তালিকায় বাংলাদেশের মতো এমন অনেক দেশ আছে, যারা জ্বালানি তেল আমদানি করলেও ভর্তুকি দেয়। ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয় জ্বালানি খাতে।
বাড়তি অর্থ ভর্তুকি থেকেই আসুক কিংবা দাম বাড়িয়েই সংগ্রহ করা হোক, দুই ক্ষেত্রেই তা কিন্তু জনগণেরই অর্থ। আলটিমেটলি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অর্থ হলো, লোকসানটাকে সহনীয় রেখে পিডিবি কর্তৃক বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার মেকানিজমটাকে অক্ষুণ্ন রাখা।
জ্বালানি খাতে এ স্বজনতোষী নীতির কারণে আজকে এ খাত চরম সংকটে। এ খাত থেকে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আয়ের পথ তৈরি করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ সংসদে পাশ করা হয়। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চরম ঘাটতির কথা উল্লেখ করে আপৎকালীন এই আইন পাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে চাহিদার তুলনায় প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ঘোষণা করে সরকার বিদ্যুৎ উৎসব পালন করলেও দফায় দফায় এ আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে।
এ আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এ আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোনো কার্য, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’ অর্থাৎ জ্বালানি খাতে যাচ্ছেতাই করার বৈধতা এবং আদালতের এখতিয়ার, এমনকি ন্যূনতম প্রশ্ন করার অধিকার রহিত করা হয়েছে।
আপৎকালীন অর্থাৎ ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ডলারে কিংবা ডলারের মূল্যমানের বিপরীতে টাকায় এ চার্জ পরিশোধের ফলে তা রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করছে।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, রিজার্ভ সংকটের কারণে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। কয়লা সংকটে চলতি বছরে দুই দফায় বন্ধ রাখতে হয়েছিল রামপাল। কয়েকদিন আগে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার দুটি ইউনিটই পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে একই কারণে। ৩০ কোটি ডলার বকেয়ার কারণে জ্বালানি তেল আমদানিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অথচ এ পরিস্থিতিতেও থেমে নেই লুটপাট।
কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে চলমান বিদ্যুৎ সংকট এবং সমাধান নিয়ে কথা বলেছিলেন। সেখানে তিনি সংকটের কারণ হিসাবে জানালেন, ডলার সংকটের কারণে কয়লা, এলএনজি এবং জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না সরকার।
সমাধান হিসাবে বললেন, কয়েকদিনের মধ্যে এস আলম গ্রুপের (বেসরকারি) নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। অদ্ভুত বিষয় হলো, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও পায়রার সমান সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট। এ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এস আলমের জন্য কয়লা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ডলার সংকট বাধা হয়নি। তার মানে সরকারি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার ব্যবস্থা করছে সরকার।
এভাবেই ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
সাকিব আনোয়ার : অ্যাক্টিভিস্ট, প্রাবন্ধিক